স্বপ্ন দেখাটা দোষের কিছু না কিন্তু স্বপ্ন দেখে ভুলে যাওয়াটা দোষের।
এ. পি. জে. আব্দুল কালাম বলেছেন, ‘যে মানুষ স্বপ্ন দেখতে পারে না, সে মানুষ নয়।’ সেই স্বপ্ন তুমি দেখ যে স্বপ্ন তোমাকে ঘুমাতে দেয় না। কিন্তু আমরা স্বপ্ন দেখি, সাজাই, তারপর স্বপ্নের পেছনে ছুটি না। স্বপ্নগুলো আস্তে আস্তে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়। আমরা ভেঙে পড়ি, কখনো মুখ লুকিয়ে কাঁদি। স্বপ্নগুলোকে লালন করতে শিখো, একদিন সফল হবেই।
আচ্ছা, স্বপ্নের কি জীবন আছে? আবশ্যই, কিন্তু স্বপ্নের জীবন হচ্ছে আত্মবিশ্বাস, যার জোরে গ্লাসের টুকরোর মতো হয়ে যাওয়া স্বপ্নগুলো আবারো জেগে ওঠে। তেমনি ভেঙে যাওয়া স্বপ্ন আবার জোড়া দিয়ে সব অসম্ভবকে উপেক্ষা করে জীবনযুদ্ধে জয়ী হয়েছিল এ বাংলার সন্তান সোহান। গ্রামের আজপাড়াগাঁ হতে উঠে আসা এক সাধারণ ছেলে। ছোটবেলায় যখন বইগুলো বুকে নিয়ে স্কুলের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতো তখন সে স্বপ্ন দেখতো সে পাইলট হবে। ক্লাস ফাইভ হতে ষষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে না হতেই তার জীবনে ঘটে গেলো এক দুর্বিষহ ঘটনা। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তিকে সে হারালো। সোহানের বাবা হারানোর পর তার স্বপ্নগুলো বাবার সাথে গোরস্থানে চলে গেলো। থমকে গেলো তার পৃথিবী। তবুও সে দমে থাকেনি। সে আবারও স্বপ্ন দেখা শুরু করল। ভালোবাসতে লাগলো তার লালিত স্বপ্নগুলোকে। দুঃখে কষ্টে তার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শেষ হয়। সে ভর্তি যুদ্ধে উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করে। সোহানদের স্বপ্নগুলো দমে থাকে না। হাজারবার চুরমার হওয়া স্বপটা জোড়া দিয়ে তার জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেরাই বুঝে তাদের কতটুকু দুঃখ কষ্ট পাড়ি দিয়ে জীবনের পথে এগিয়ে যেতে হয়। একটা ছেলে যখন উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে তার মা-বাবা, পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ছেড়ে শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হয় তখন একমাত্র সেই বুঝে, ‘প্রত্যাশার চাপটা কত ভারী।’
আচ্ছা, অভিনেতার অভিনয় দেখার জন্য কি সুদূরে যাওয়া দরকার? আমাদের চারপাশে তো শত শত অভিনেতা। রঙিন পর্দায় অভিনয় না করলে কি অভিনেতা হওয়া যায় না? টিভিতে দেখা যায় না বলে কি আমরা অভিনেতা না? মধ্যবিত্ত পরিবার হতে উঠে আসা সকল ছেলেরাই জীবন নামক পরিবারের অভিনেতা। তারাও নিজেদের কষ্ট বাবা-মা ও প্রিয়জনদের বুঝতে না দেয়ার অভিনয় করে, প্রতিনিয়ত এই অভিনয় করার জন্য পর্দার সামনে যেতে হয় না। আমাদের বাবা-মারাও বড় অভিনেতা। হ্যাঁ বাবার কথা বলছিলাম, যিনি আমাদের চাহিদা পূরণ করতে নিজের চাহিদা মাটি চাপা দেন। আমি সেই বাবা নামের অভিনেতার কথা বলছিলাম, যিনি তার পকেটে পর্যাপ্ত টাকা না থাকা সত্ত্বেও চাকরি থেকে সারা রাস্তা হেঁটে এসে সেই টাকা দিয়ে ছোটকালে আমাদের বায়না করা জিনিসটা কিনে এনে আমাদের মুখে হাসি দেখে সব ক্লান্তি ভুলে যান। আমি সেই অভিনেতা বাবার কথা বলছিলাম, যিনি নিজের আনন্দকে তুচ্ছ করে দিয়ে, ঈদে কাপড় লাগবে না বলে নিজে না কিনে ছেলে মেয়েদের কিনে দেয়। যেখানে প্রতিটি মধ্যবিত্ত পরিবারের বাবারাই অভিনেতা, সে পরিবারের ছেলেরাই বা কেন অভিনেতা হবে না? হ্যাঁ, প্রতিটি মধ্যবিত্ত পরিবার হতে উঠে আসা প্রতিটি ছেলেই এমনভাবে অভিনয় করে প্রতিনিয়ত। আসলে মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেরা জানে তাদেও স্বপ্নগুলো হয়তো বাস্তবায়িত হবে না। তবে তারাও স্বপ্ন দেখে যায়।
আমাদের সমাজে এমন অনেক সোহান আছে যাদের স্বপ্নগুলো মাটিচাপা পড়ে যায়, কিন্তু তারা দমে যায় না। একদিন অল্প বয়সে বাবা হারানো সোহানরাই আমাদের সমাজে নেতৃত্ব দেবে। দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। পরিবারের আশার চাপে পিষ্ট হওয়া ছেলেটিও একদিন পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে পারে। সমাজে সকল সোহানেরা যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকুক, মাটিচাপা পড়া স্বপ্নগুলো আলো ছড়াক সমাজ নামক শব্দটায়।
Share.