কোরবানি শব্দটা বললে আমরা কি বুঝি? আমরা বুঝি এটি মুসলমানদের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসবের দিন। অর্থাৎ ঈদের দিন। একে বলা হয় কোরবানি ঈদ। আরেকটি ঈদের নাম রোজার ঈদ বা ঈদুল ফিতর। রোজার ঈদ আর কোরবানি ঈদ এ দুটো ঈদ বছরে হয় মুসলিম সমাজে। পৃথিবীর যেখানে যেই কোনো প্রান্তে মুসলমান আছে সেখানেই এই দুটি ঈদ খুব আনন্দ এবং আগ্রহের সাথে পালন করা হয়। ছোট বড় সবার জন্যেই এই ঈদ দুটো অনেক আনন্দের।
এখন কথা হলো কোরবানি অর্থ কি? কোরবানি অর্থ ত্যাগ। ইংরেজিতে এটাকে বলা হয় সেক্রিফাইস! যেহেতু মহান আল্লাহর জন্য পশু কোরবানি করা হয় তাই একে ত্যাগের ঈদ বা কোরবানির ঈদ বলা হয়। তার অর্থ হলো মানুষকে দেখানোর জন্য বা নাম কামানোর জন্য কোরবানি করা যাবে না। কোরবানি করতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য।
আমাদের ছোটবেলায় আমরা ঈদের আনন্দ করেছি খুব। খুব মজার আর খুশির ছিলো আমাদের ছোটবেলার ঈদ। তোমাদের মতো তখন আমাদের হাতে কোনো মোবাইল ছিলো না। ফলে ভিডিও গেম বা কার্টুন দেখার সুযোগও ছিলো না। ফলে ঈদের দিনের আনন্দ ছিলো আমাদের কাছে একেবারেই অন্যরকম আনন্দ! তাই ঈদের জন্য কতযে অপেক্ষা করতাম আমরা। অপেক্ষা করতে করতে মনে হতো হায়রে ঈদের দিন বুঝি আর আসবে না। কত দূর ঈদের দিন। নিজেরা নিজেরা বলতাম ঈদ কেনো আসে না। কেনো দিনগুলো তাড়াতাড়ি চলে যায় না। আহা যদি তাড়াতাড়িই দিনগুলো চলে যেতো। আর ঈদের দিনটি যদি আরও আরও অনেক বড় হতো। অনেক অনেক বড়। তবে কতইনা আনন্দ হতো। তবে কতইনা মজা হতো সারাদিন! এমনই কতরকম ভাবনা ভাবতামআমরা। যার জন্য খুব মজাও হতো আমাদের। আমরা এ মজা করতাম সবাই মিলে মন থেকে।
মানুষের কাছে আমাদের কাছে দিন আসে দিনের নিয়মে। এসে আবার চলেও যায় সেটাও তারই নিয়মে যায়। কারো জন্যে দিন বা সময় একটুও অপেক্ষা করে না। ঠিক তেমনই ঈদও আসে ঈদের নিয়মে বছর ঘুরে। তবুও আমরা সবাই অপেক্ষা করি ঈদের, কখন আসবে ঈদ।
তোমরা কি অপেক্ষা করো ঈদের দিনের? আমি জানি ঠিক ঠিক অপেক্ষা করো তোমরাও। অপেক্ষায় থাকো কখন আসবে ঈদ! কখন ঈদের আনন্দে মেতে উঠবে বন্ধুদের নিয়ে! এমনই মজার ভাবনায় চোখে ঘুম আসে না যখন ঈদের রাতে। তখন একটু পরপরই মনে হয় এই বুঝি সকাল হয়ে গেলো! এই বুঝি কোথাও মোরগ ডেকে উঠলো- কুক্ কুরুকু..। তারপরই মুয়াজ্জিন ফজরের আজান শুরু করে দেবে- আল্লহু আকবার, আল্লাহু আকবার! আর তখন পায় কে! তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে উঠে যেতাম আমরা।
নতুন জামাটি যত্ন করে বালিশের নীচে রেখে দেয়ার কথা আমরা ভুলি না। বিছানা থেকে উঠেই একবার নতুন জামা চেক করে নেয়ার সে কি মজা। এখনও মনে পড়ে – নতুন জামা লুকিয়ে রাখতাম যাতে করে বন্ধুরা দেখে না যায় ঈদের আগে। যেনো শুধু ঈদের দিনই দেখে। নইলে যদি একইরকম জামা কিনে ফেলে! তাহলে তো একদম খারাপ খবর! কারণ কমন হয়ে গেলে আলাদা নতুন জামার মজা থাকবে কি করে! এসব বড়ই মজার কাহিনি।
রোজার ঈদের অপেক্ষাটা খুব বেশি করতে হতো আমাদের ছোট বেলায়। কারণ রোজার ঈদ আসে একমাস রোজা পালন করার পর। একমাসে প্রতিদিনই হিসাব চলে কবে আসবে ঈদ? আর কতদিন আছে ঈদের? এসব হিসাব নিকাশ করতে করতে ত্রিশটি দিন পার হয়ে যায়। তারপর মহা আনন্দ সঙ্গে নিয়ে আকাশে ওঠে চিকন একটি নতুন চাঁদ। চিকন চাঁদটি যেনো আকাশের মুচকি হাসির মতো। উঠেই ঘোষণা দেয় কাল সকালে কিন্তু ঈদ!
কোরবানি ঈদের চাঁদ কিন্তু নতুন থাকে না। কারণ চাঁদের দশ তারিখের দিন কোরবানি ঈদ পালন করা হয়। যে কারণে রোজার ঈদের মতো কোরবানির চাঁদ নতুন না হয়ে পুরনো হয়ে যায়। এই পুরনো চাঁদটি বেশ বড় হয়ে ওঠে আকাশের বুকে। গোলগাল প্রায় পূর্ণিমা চাঁদের কাছাকাছি। সারারাত না হলেও রাতের বেশিরভাগ সময় ধরে চাঁদ থাকে আকাশে। ঠিক সকাল হলেই শুরু হয় কোরবানি ঈদের আয়োজন। অবশ্য তার আগেই কোরবানির গরু খাশি অথবা ভেড়া কিনে আনা হয়। তাই
কোরবানি ঈদের আনন্দও অন্যরকম। গরু কেনার বিষয়টি অনেক অনেক মজার! গরু কিনে এনে বাসায় বাড়িতে অথবা মাঠে রাখা হয়! গরুটিকে খাওয়াতে হয় নিয়ম করে। আদর সোহাগ দিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রাখতে হয়। কখনো কখনো পাহারাও দিতে হয়। ঈদের দিন ঈদের নামাজ শেষে শুরু হয় গরু জবাই । একে একে গরুগুলো জবাই করা হয়! আহা এ দৃশ্য অন্যরকম ত্যাগ ও মহিমায় জড়ানো! মহান আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্যে জবাই করা হয় গরু। কেউ খাসি কোরবানি করে। কেউ ভেড়া কোরবানি দেয়। কেউবা দুম্বা। উটও কোরবানি দেন কেউ কেউ। আবার কেউ মোষও কোরবানি দিয়ে থাকে।
যে যার বাড়ির সম্মুখে কোরবানির পশুটি জবাই করার ব্যবস্থা করে। আসলে এখানে একটি কথা মনে রাখতে হবে – আর তা হলো দিতে হবে শুধুমাত্র মহান আল্লাহর নামে। এবং আল্লাহর জন্যেই দিতে হয় কোরবানি। যদি কেউ শুধু খাওয়ার জন্য কোরবানি করে। অথবা লোক দেখানো কোরবানি দেয়! তবে তা আল্লাহর কাছে একদমই গ্রহণযোগ্য হবে না।
অনেকে আছেন কোরবানির জন্য মস্ত গরুটি কিনে নেন শুধু মাংস খাওয়ার জন্য। আবার লোক দেখানোর জন্য গরুর গলায় মালা পারন। শিং দুটিও মালায় মুড়িয়ে দেন। কখনো কখনো এসব মালার সাথে গায়ে রঙ মেখে আকর্ষণীয় করে গরুটি। তারপর পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লা মহল্লায় অথবা এলাকায় ঘুরিয়ে দেখায় সবাইকে। এসব কিন্তু মোটেই ভালো নয় কোরবানির জন্য।
সারা পৃথিবীতে এ কথা সত্য যে ঈদ হলো মুসলমানদের সবচেয়ে বড় আনন্দের উৎসব। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব ও খুশির দিনও এই ঈদের দিন। এক বছরে দুটি ঈদ আসে আমাদের কাছে। একটি ঈদ আসে রোজার শেষে। পুরো একমাস রোজা রাখার পর আসে এই ঈদ। এই ঈদের নাম- রোজার ঈদ। এই ঈদটি অনেকদিন পরে আসে বলে এ ঈদে আনন্দও বেশি হয়। আর দ্বিতীয় ঈদ হলো কোরবানি ঈদ। রোজার ঈদের দুইমাস দশদিন পর এই ঈদ এসে যায়। এসময়ই হজ্জও পালন করা হয়। মহান আল্লাহ তায়ালার ঘর কাবা ঘিরে লক্ষ লক্ষ মুসলমান একত্রিত হন এই কাবার চারিদিকে। হজ্জ এবং উমরাহ পালন করে আগত মুসলমানেরা। সারা দুনিয়া থেকে এখানে মুসলমানেরা এসাথ হয় হয়। একসাথে তাওয়াফ করে একসাথে নামাজ আদায় করে।
কোরবানি দিতে হয় শুধুমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। তোমরা তোমাদের বাবা মাকে বলবে তারা যেনো কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যেই কোরবানি করে। যদি তা না হয় তাহলে আল্লাহ তায়ালা এমন কোরবানি গ্রহণ করেন না। আগে তো নিয়ত ঠিক করতে হবে। নিয়ত ঠিক করে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোরবানি করেন যিনি তিনিই হয়ে যান মহান আল্লাহর কাছে প্রিয়। আমরা সবাই যেনো মহান আল্লাহর প্রিয় হতে পারি তেমন করেই করতে হবে কোরবানি। এ বিষয়ে কোনোরকম সামান্যতমও গড়মিল হলে চলবে না। কারণ মাংস খাওয়ার নিয়ত কিংবা লোকের চোখে বড় দেখানোর জন্য যদি কেউ কোরবানি করে তাদের নিয়ত অনুযায়ীই তারা ফল পাবে। তাই বন্ধুরা কোরবানির জন্য নিয়তটা শুদ্ধ করতেই হবে। অবশ্য শুধু কোরবানি কেনো সকল ভালো কাজে বিশেষ করে ইবাদতের ক্ষেত্রে অবশ্যই নিয়ত রাখতে হবে আল্লাহর জন্য। আমাদেরকে মহান আল্লাহ তৌফিক দিন আমীন।
Share.