ছোট খোকা ইফতেখার। সে ক্লাস থ্রিতে পড়ে। ইফতেখারের বাবা-মা দু’জনই ডাক্তার। সকাল হতেই তারা হাসপাতালে চলে যান। ইফতেখারও স্কুলে চলে যায়। স্কুল ছুটির পর ইফতেখারকে সারাদিন বাসায় একাই থাকতে হয়। বাড়িতে আপনজন বলতে কেউ নেই। আছে শুধু বাড়ির কাজের লোকেরা। ইফতেখারের মন তাই খুব খারাপ থাকে। মন খারাপ থাকলে ইফতেখার গল্পের বই পড়ে। আবার কখনো ট্যাব দিয়ে গেমস খেলে। যখন আর ভালো লাগে না তখন সে মন খারাপ করে ঘুমিয়ে পড়ে।
ইফতেখারদের বাসায় একটি পোষা বিড়াল আছে। দু’মাস আগে বিড়ালটির দুটো ছানা ফুটেছে। একটি ছানা কে যেন নিয়ে গেছে। আরেকটি ছানা ইফতেখার পোষে। ইফতেখার পোষা ছানাটির নাম রেখেছে টুনি। টুনিকে ইফতেখার অনেক আদর করে। মজার মজার খাবার খাওয়ায়। ছানাটি আদর পেয়ে সবসময় ইফতেখারের পায়ের কাছেই বসে থাকে। মাঝে মাঝে ছানাটি লেজ নেড়ে নেড়ে আদর জানায়। গোলাপি ঠোঁট দিয়ে আস্তে করে বলে, মিউ। ইফতেখারের তখন খুব ভালো লাগে। সে ভুলে থাকে মা-বাবাকে ।
একদিন ইফতেখার স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে দেখে, বিড়াল ছানাটি নেই। ছানাটিকে অনেক খোঁজে। না পেয়ে পাগলপারা হয়ে যায় সে। বাড়ির কাজের লোকেরা সব জায়গায় তন্ন তন্ন করে ছানাটিকে খোঁজে। কিন্তু কোথাও ছানাটিকে খুঁজে পাওয়া যায় না। ছানাটির জন্য সারাদিন ইফতেখার কিছুই খায় না। কাজের লোকেরা ইফতেখারকে খাওয়াতে অনেক চেষ্টা করে। কিন্তু পারে না। শেষে ইফতেখারের আম্মুকে ফোন করে জানায়। ইফতেখারের আম্মু, কেয়ারটেকারকে বলে দেন, একটি রিকশা নিয়ে পুরো এলাকায় মাইকিং করতে। কেয়ারটেকার তাই করে। রিকশায় বসে মাইকিং করে। বলে, হ্যালো হ্যালো একটি নিখোঁজ সংবাদ। একটি নিখোঁজ সংবাদ। আজ দুপুরে শ্যামলী ২ নম্বর রোডের ১২ নম্বর বাসা থেকে একটি বিড়াল ছানা হারিয়ে গেছে। ছানাটির গায়ের রঙ লাল। যদি কোনো সহৃদয়বান ব্যক্তি ছানাটিকে পেয়ে থাকেন তবে ১২ নম্বর বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার জন্য বিনীত অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
এভাবে সারাটা বিকেল মাইকিং করা হয়। মাইকে নিখোঁজ সংবাদ শুনে অনেকেই হাসে। পাশের বাড়ির গার্ডও হাসে। কারণ ছানাটি সকালে যখন ভুল করে পাশের বাসায় চলে গিয়েছিল তখন সেই গার্ড ছানাটিকে তাড়িয়ে দিয়েছে।
মাইকিং করার পরও ছানাটিকে না পাওয়া যাওয়ায় ইফতেখার বিছানায় শুয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে। একেতো সারাদিনের সে ক্ষুধার্ত তারপর আবার ছানা হারানোর শোক। সব মিলিয়ে ইফতেখারের একেবারে করুণ দশা। বাড়ির কাজের লোকেরা ইফতেখারকে সব রকমের সান্ত¡না দিয়েও ব্যর্থ হয়। শেষে ইফতেখারের আম্মুকে আবার ফোন করে বলে,
– ম্যাডাম, বিড়াল ছানাটিকে পাওয়া যায়নি। ইফতেখার ভাইয়াকে কিছুই খাওয়ানো যাচ্ছে না। তাড়াতাড়ি বাসায় আসেন।
ইফতেখারের আম্মু হার্টের ডাক্তার। সারাদিন তাকে অনেক বড় বড় অপারেশন করতে হয়। ইফতেখারের এই খবর শুনে আম্মু তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসেন। ছেলের এই করুণ দশা দেখে ডাক্তার আম্মু ভাবেন, মা বিড়ালটিকে লাইগেশন করাতে হবে। নইলে বছরে বছরে বাচ্চা হবে আর বাড়িতে এ ধরনের ঝামেলার সৃষ্টি হবে। এমন সময় পেছনের বাড়ির একজন প্রতিবেশী ছানাটিকে নিয়ে আসে। ছানাটিকে দেখে খুশিতে ডগোমগো করে ওঠে ইফতেখার।
নীতিকথা: কোনো কিছুকে বেশি আদর করতে নেই। তাহলে কষ্ট পেতে হয়।
Share.