দীঘির জলে শাপলা ফুল ফুটে আছে। দীঘির এক পাড়ে জঙ্গল। জঙ্গলের ভেতর জমিদারি আমলের পুরনো একটা দোতলা বাড়ি। বাড়ির চারপাশের দেয়ালে ছোট ছোট বটগাছ ও শ্যাওলা। প্লাস্টার খসে পড়ে ফ্লোর খুব নোংরা হয়ে আছে। চারদিক সুনসান। কোথাও কেউ নেই। তবে বাদুড় ইঁদুর চিকা পিঁপড়ে চোখে পড়ার মতো। স্যাঁতস্যাঁতে একটা  পরিবেশ। কাঠের সিঁড়ি বেয়ে ছাদে ওঠে আহাদ। ছাদ ফেটে চৌচির। দেখে মনে হচ্ছে যে কোন সময়  ধ্বসে পড়বে পুরো বাড়ি । এ সময় কোত্থেকে যেন একটা মেয়েলি কণ্ঠের কান্না ভেসে। সে হকচকিয়ে যায়। দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে গিয়ে পড়ে যায়। সে ওঠে বসে। এবার মেয়েলি কণ্ঠের গান ভেসে আসে। সে এ ঘর থেকে ও ঘর এ তলা থেকে ও তলা খোঁজ করে। না: কেউ নেই। হঠাৎ চোখ পড়ে একটা অ্যালবামের উপর। অ্যালবাম হাতে নিয়ে দেখে অনেকগুলো স্কেচ। একটা স্কেচে আঙুলের ছোঁয়া লাগতেই তার এসে দাঁড়ায় একটা মেয়ে। মেয়েটার শরীরে নাচের পোশাক। সে কিছু একটা বলতে গিয়ে থামে। মেয়েটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, সর্বনাশ!
সর্বনাশ কেন? সে ভয় পায়। তার হাত পা কাঁপে।
তোমার আগে অনেকেই এখানে এসে ছিল। কিন্তু তারা কেউ জীবন্ত ফিরে যেতে পারেনি।
ঘটনা কী? সে চুলে বিলি কেটে বলল। তার হাই ওঠে। মনে হচ্ছে গাঢ় ঘুম হবে। পুরো বাড়ি ঘুরছে। সে ধপাস করে পড়তে যাচ্ছিল এ সময় মেয়েটি দৌড়ে এসে তাকে ধরে।
একটু বিশ্রাম নাও। সব ঠিক হয়ে যাবে। মেয়েটি খানিক দূরে সরে যায়।
বিশ্রাম নেয়ার কোনো ইচ্ছে নেই। এ এলাকায় আমার নানার বাড়ি। দূর থেকে এ জমিদার বাড়ি দেখেছি অসংখ্যবার। এক সময় কঠিন সিদ্ধান্ত নিই। যে করে হোক এখানে পৌঁছব। যেই ভাবা সেই কাজ। আচ্ছা আর কাউকে দেখতে পাচ্ছি না যে?
অ্যালবামে রানি মা মানে আমার মায়ের ছবি আছে। সেখানে একটু ছুঁয়ে দাও।
সে সত্যি সত্যি রানি মায়ের ছবিতে একটু ছুঁয়ে দেয়। সিঁড়ি দিয়ে কারও উপরে উঠার শব্দ ভেসে আসে। একটু পর একজন সম্ভ্রান্ত মহিলা এসে উপস্থিত হয়। মেয়েটি বলল, উনি আমার মা। মা ও –।
দেখেই বুঝতে পারছি। রানিমা হাত উঁচু করে মেয়েটিকে থামিয়ে দেন। বড় অদ্ভুত ঘটনা! তার খুব পিপাসা পায়। সে আশপাশে চোখ বুলিয়ে নেয়।
মাঝে মাঝে পৃথিবীতে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যার ব্যাখ্যা কেউ জানে না। তুমি আমার ছেলের বয়সী। তাই মন থেকে আমি তোমার অমঙ্গল কামনা করতে পারি না। একটা কাজ করবে বাবা?
কী কাজ?
অ্যালবামের প্রতিটি ছবি ছুঁয়ে দাও। সব জীবন্ত হয়ে উঠুক। মন ভরে সব দেখি। রানি মা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন।
এতে আমার বিপদ হবে, তাই না? সে অবাক হয়ে বলল।
ভয় পেলে থাক। রানি মা ঘুরে ঘুরে সব দেখেন। সে একটা একটা করে ছবি ছুঁয়ে দেয়। মুহূর্তে সব জীবন্ত হয়ে ওঠে। সে চমকে ওঠে। রাজকন্যা খুশিতে নেচে ওঠে। সে প্রাসাদের জানালা দিয়ে দেখে পুরো দৃশ্যপট বদলে গেছে। দীঘির দক্ষিণ পাড়ে ঘোড়ার পিঠে চড়ে ছুটছে যুবরাজ। তার পিছু পিছু ছুটছে সৈন্যরা। দীঘির ঘাটে বসে গোসল করছে একটা মেয়ে। দু’জন দাসী তার শরীরে সাবান মাখছে। সে বলল, উনি কে?
ও সব নষ্টের মূল। ও আমাদের ধ্বংস করে দিয়েছে। ওর জন্য আজ আমাদের এ অবস্থা। রানি মা রাগে ফুঁসতে থাকেন।
তা না হলে বুঝলাম। কিন্তু উনি কে?
ছোট রানি গুলতেকিন। আমাদের ছোট মা। তার কোনো সন্তান নেই। অথচ তার টাকা চাই। আসল কথা শুনবে? রাজকন্যার চোখে জল।
২.
সব শুনবো সব। রানি মা বসেন। উত্তরের জঙ্গলে ধোঁয়া উড়ছে। কে যেন ঢোল তবলা বাজিয়ে গান গাইছে। গানের কথা বুঝা যাচ্ছে না। তবে সুর মিষ্টি।
টাকা পয়সা যেমন মানুষকে সুখ শান্তি দেয় আবার এ টাকা পয়সা মানুষের সুখ শান্তি সব কেড়ে নেয়। তুমি জীবিত এ কথা যেমন সত্য। আবার আমরা মৃত। এ কথা ও সত্য।
কি বলছেন কি? সে ভ্রু-কুঁচকে বলল।
রাজা মশাই ছোট রানিকে খুব বিশ্বাস করতেন। যে কোন কাজ করার আগে তার পরামর্শ চাইতেন। ছোট রানি খুব শিক্ষিত ছিল।
ছিল বলছেন কেন? উনি তো এখনও আছেন। দীঘির ঘাটে-!
বললাম না আমরা সবাই মৃত।  মন দিয়ে শুন। রাজার আশকারা পেয়ে ছোট রানি এক সময় সব বিষয়ে নাক গলাতে লাগলেন। রাজনীতি পররাষ্ট্রনীতি অর্থনীতি প্রায় সব বিষয়ে। ফলে ধীরে ধীরে রাজার গুরুত্ব কমে যায়। সভাসদরা বিষয়টি সহজভাবে নেয়নি।
না নেয়ারি কথা।
কিন্তু ছোট রানি ছিল খুব বিচক্ষণ। বিভিন্ন ফাঁদে ফেলে সবাইকে ম্যানেজ করে ফেললেন। তার কাছে দেশ বিদেশ থেকে প্রচুর কবিরাজ জাদুকর আসত। একদিন এক চিত্রকর আসল। অদ্ভুত সুন্দর তার গড়ন। এত সুন্দর করে কথা বলত যে কেউ তাকে ভালোবাসত। সে চিত্রকর ছোট রানির সহযোগিতায় নিখুঁতভাবে আঁকলেন রাজবাড়ীর ভেতর বাইর। আর–।
কিন্তু এতে সমস্যা কোথায়? চিত্রকরের কাজই তো ছবি আঁকা।
তোমার যুক্তি মানলাম। কিন্তু এ চিত্রকর সে চিত্রকর না।
মানে! সে চমকে ওঠে। দীঘির পাড়ে হৈ চৈ। দীঘির পর কয়েকটা ধানী জমি। তারপর নদী। পাল তুলে ধান ভর্তি নৌকা ছুটে চলছে উত্তরে। ছোট রানি গোসল সেরে পালকি চড়ে রাজপ্রাসাদের দিকে আসছেন। তার ভাবতে কষ্ট হচ্ছে। এসব প্রায় এক শ’ বছর আগের ঘটনা। হঠাৎ নিচের কোনো একটা রুম থেকে কারও চিৎকার ভেসে আসে। কাচ ভাঙার শব্দ। লোকজনের চিৎকার চেঁচামেচি হৈ চৈ হাঁক ডাক।
ভয় পেয়ো না। এ হচ্ছে রাজা মশাইয়ের আপন ছোট ভাই। সে পাগল না। তাকে পাগল অপবাদ দিয়ে একটা অন্ধকার ঘরে বন্দি করে রাখা হয়েছে। অবশ্য মাঝে মাঝে সে সত্যি সত্যি পাগলামি করে।
ঘটনা কী? একটু খুলে বলুনতো?
সব অমঙ্গলের মূলে টাকা। আবার বিপদের সময় টাকাই সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে।  ছোট জমিদার ছিলেন খুব শৌখিন। এক জামা কাপড় দুইবার পরতেন না। খাজনা আদায় করার দায়িত্ব ছিল তার। তার অত্যাচারে প্রজা সাধারণ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। চারদিক থেকে তার নামে অভিযোগ আসতে থাকে। এক পর্যায়ে ছোট রানি তাকে একটা ঘরে বন্দি করে রাখেন। আর চারদিকে রটিয়ে দেন ছোট রাজা পাগল হয়ে গেছে। সেই থেকে –।
সেই থেকে তার দুঃখের দিন শুরু। ছোট চাচা আমাকে খুব আদর করতেন। রাজকন্যা পুরো কথা শেষ করতে পারেন না। ফুঁপিয়ে ওঠে।
দক্ষিণের ওয়াল জুড়ে মস্ত বড় হরিণের চামড়া ঝুলানো। সেটি সরাতেই রাজদরবার দেখা যায়। রাজা মশাই ও তাঁর সভাসদগণ কী নিয়ে যেন আলোচনা করছেন। তার কাছে মনে হচ্ছে সব স্বপ্ন। রানি বললেন, আমার শ্বশুর ছিলেন পূর্বের রাজা ওমর শাহের প্রধান সেনাপতি। সুযোগ বুঝে…।
একজন লোক দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, বড় রানি ভেতরে আসতে পারি?
তুমি আর রাজকন্যা একটু পাশের ঘরে যাও।
ঠিক আছে। কিন্তু উনি কে? সে বলল।
সে হলো গুপ্তচর জগলুল পাশা। আমার খুব বিশ্বস্ত। রন্ধনশালায় কাজ করে। আমাদের সবার খাবারের উপর তীক্ষè নজর রাখে। কারণ কে শত্রু আর কে মিত্র বুঝা খুব মুশকিল।
ও। সে আর রাজকন্যা পাশের ঘরে গিয়ে দরজায় আড়ি পাতে। জগলুল পাশা ভেতরে ঢুকে।
কোনো খবর আছে? রানি মা উদ্বিগ্ন হয়ে প্রশ্ন করেন।
চিত্রকর আর ছোট রানির মতিগতি ভালো ঠেকছে না। আজ ভয়ঙ্কর কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে।
এখন আমরা কী করব? আমাদের কিছুই করার নেই? আমরা এতটাই অসহায়। রানিমা মুখে আঁচল চেপে কাঁদেন। জগলুল পাশা ছুটে বেরিয়ে যায়। রাজকন্যা আর সে ঘরে ঢুকে ।
আমি কি কিছু করতে পারি? সে বলল।
না:। তোমার কিছুই করার নেই। এটা তোমার জন্মের একশত বছর আগের ঘটনা। তুমি শুধু দেখতে পারবে।
৩.
তা ঠিক। সে বসে। বিশাল জানালা দিয়ে সূর্যের আলো এসে পড়ে একটা পুতুলের উপর। পুতুল মুচকি হেসে ওঠে এবং তার সাথে সাথে পুরো ঘর ঝলমল করে। চুড়ির ঝুনঝুন শব্দ শুনে চমকে ওঠে রানিমা ও রাজকন্যা।
ছোট রানি এদিকে আসছে। রাজকন্যা তার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় পাশের ঘরে। ছোট রানি ঘরে ঢুকেই হৈ চৈ শুরু করে, আমি যা বলব তাই হবে।
সেটাই তো হচ্ছে। তবে কি জানো বেশি বাড়াবাড়ি ভালো না। এ চিত্রকর তোমাকে সম্মোহন করেছে। সে কাল জাদু জানে। সে সবাইকে বশ করে রাজভাণ্ডার থেকে সব টাকা পয়সা নিয়ে চলে যাবে। আজ আমার কথা তেতো মনে হলেও একদিন বুঝবে। আর একটা কথা ছোট রানি?
কী?  ছোট রানি রাগে গজ গজ করে। ঘরের এ মাথা থেকে ও মাথা পায়চারি করে। তার নূপুরের শব্দে ঘম ঘম করে পুরো ঘর।
প্রজা সাধারণ ও মানুষ। তাদের কথা মাথায় রেখ।
তুমি আমাকে জ্ঞান দিচ্ছ? তুমি? আমি ত্রিপুরার জমিদার কন্যা। আমার শরীরে বইছে রাজা কমলকান্তের রক্ত।  তোমার স্বামী কৃষ্ণকান্ত সে আমার পরামর্শ নিয়ে রাজ্য পরিচালনা করে?
সব জানি সব। এখন তুমি আসতে পার। ছোট রানি চলে যায়।
জগলুল পাশা ঘরে ঢুকে বলল, গতকাল রাতে দেখি চিত্রকর এক গামলা পানিতে মন্ত্র পড়ে ফুঁ দেয় আর সাথে সাথে পানিতে ঢেউ ওঠে। অনেকক্ষণ পর ঢেউ থামে। ভেসে ওঠে এক দৈত্যের ছবি। দৈত্য কর্কশ ভাষায় বলল, সময় নষ্ট করিস না। সব নিয়ে কেটে পড়। ছোট রানি যদি একবার তোর মতলব বুঝতে পারে। তা হলে সব শেষ। বাকি জীবন তোকে অন্ধকার কারাগারে কাটাতে হবে।
ঠিক আছে দৈত্য। যা করার আজ রাতেই করব।
সব শুনে রানিমা তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন, তুমি রাজকর্মচারী হলেও আপন ভাইয়ের মতো কাজ করেছ। এই নাও তোমার পুরস্কার। রানি মায়ের দেয়া মণি মুক্তার হার নিয়ে চলে যায় জগলুল পাশা। সে ও রাজকন্যা আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে।
আমি কিছু একটা করতে চাই। এভাবে বসে থাকলে হবে? সে খুব সাহস করে বলল। তার কথা শুনে রানিমা ও রাজকন্যা মুখ টিপে হাসে।
তুমি একটা কাজ করবে? রানিমা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বল।
জি বলুন। আপনি যা বলবেন আমি তাই করব।
এই স্কেচ বুক নিয়ে রাজপ্রসাদের বাইরে চলে যাবে। তারপর স্কেচ বুকে আঁকা সমস্ত ছবি এক এক করে মুছে ফেলবে। যাতে আর কোনদিন কেউ এখানে পৌঁছতে না পারে।
কেন? পৌঁছলে কি হবে? সে অবাক হয়ে প্রশ্ন করে।
তোমার আগে যারাই এসেছে তারা কেউই আর জীবিত ফেরত যেতে পারেনি।
ও। হট্টগোল শুরু হয়ে গেল। এক সাথে অনেক মানুষের চিৎকার চেঁচামেচি হৈ চৈ আহাজারি। সিঁড়ি দিয়ে লোকজন ওঠার শব্দ। সে স্কেচ বুক নিয়ে সরে পড়ে। কিছু লোক এসে রানিমা আর রাজকন্যাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ যুদ্ধ করছে। কেউ ছুটাছুটি করছে। দুর্গের ফটক ভেঙে প্রাসাদ চত্বরে ঢুকে পড়ছে অশ্বারোহী। তুমুল যুদ্ধ। একটার পর একটা লাশ পড়ছে। একদিকে রাজা কৃষ্ণকান্তের সৈন্য বাহিনী অন্যদিকে চিত্রকরের সৈন্য বাহিনী। ছোট রানি চিত্রকরকে উদ্দেশ করে চিৎকার করে বলছেন, তোকে বিশ্বাস করে ভুল করেছি।
হ্যাঁ। আমি রাজত্ব চাই না। শুধু ধনদৌলত চাই।
বেশ। ধনদৌলত নিয়ে চলে যা। আর কখনও এ মুখো হবি না।
তোমাদের এ রাজপ্রসাদ  ও আশপাশের সব স্থাপনা স্কেচ করে রেখেছি। তাতে কী হয়েছে?
আমি ও আমার লোকজন এ রাজ্যে ছেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে তোমরা সবাই স্কেচ বুকে আজীবনের জন্য বন্দি হয়ে যাবে। তবে…।
তবে কী?
অনেক বছর পর এ প্রাসাদ চত্বরে একজন ভালো মানুষ আসবে। সে  এ স্কেচ বুক খুঁজে পাবে। তার হাতের স্পর্শে স্কেচ বুকে আঁকা সবকিছু জীবন্ত হয়ে উঠবে। কিন্তু …।
কিন্তু কী? ছোট রানি হুঙ্কার দিয়ে ওঠেন।
ততদিনে তোমরা সবাই মারা পড়বে। পৃথিবী থেকে রাজপ্রথা প্রায় ওঠে যাবে।
কী বলছিস কি এসব?
৪.
বেশি বুদ্ধিমান হওয়া ভালো না, বুঝলে? রানি মা ফুঁপিয়ে ওঠেন। রাজকন্যা ও কাঁদে।
আজকের এ ঘটনা সে ভালো মানুষ পরিষ্কার দেখতে পাবে। চিত্রকরের হাতের ইশারায় সবাইকে বন্দি করা হয়। এক সময় যুদ্ধ থেমে যায়। চিত্রকর ও তার লোকজন ও চলে যায়।
সে স্কেচ বুক ঘেঁটে একটার পর একটা ছবি মুছতে থাকে। আর তার চোখের সামনে মুহূর্তে অদৃশ্য হতে দেখে সব। এখন শুধু রাজবাড়ী মুছতে বাকি।  সে নিচে নেমে এদিক ওদিক হাঁটে। অনেক দূর থেকে কারও কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। সে চমকে ওঠে। একটা শিয়াল ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে এক দৌড়ে পালিয়ে যায়। এ গাছ থেকে ও গাছে ছুটে বেড়াচ্ছে অসংখ্য বানর। রাজপ্রসাদের বাইরে এসে প্রাসাদের দিকে মুখ করে দাঁড়ায় সে। কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো এক এক করে সাজায় নিজের মনে। স্কেচ বুকের পাতা উল্টে রাজপ্রাসাদের ছবি বের করে। তারপর ধীরে ধীরে প্রাসাদের ছবি মুছে। ব্যাস মুহূর্তে অদৃশ্য রাজপ্রাসাদ।
নদীর পাড়ে অসংখ্য মানুষ। পরস্পর পরস্পরের সাথে কথা বলছে। সবার চোখে মুখে কৌতূহল। সে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, ঘটনা কী?
এত বছরের পুরনো রাজবাড়ী এক মুহূর্তে হাওয়া হয়ে গেল। একজন বলল।
আমি সকাল বেলা যখন ক্ষেতে কাজ করতে যাই তখনও ছিল। একজন দিনমজুর বলল।
এমন না যে কোন ভূমিকম্প হয়েছে। বড় অদ্ভুত ব্যাপার। আর একজন বলল।
আর ভূমিকম্প হলেও তো রাজপ্রসাদের অবশিষ্ট থাকত! কিন্তু সেটাত নেই।
পৃথিবীটা বড় রহস্যময়। আর মানুষ এ রহস্যের কতটুকু বা জানে? সে বলল। তার কথা শুনে এ ওর মুখের দিকে তাকায়। চোখের ইশারায় বা ঘাড় নেড়ে সম্মতি প্রকাশ করে।
সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নদীর পাড় ধরে উত্তরের মূল সড়কের দিকে হাঁটে। তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে সব। এ ঘটনা কোনদিন ও ভুলতে পারবে না। ভাবতেই শরীর শিউরে ওঠে। রাজা, রানিমা, ছোট রানি, রাজকন্যা ও জগলুল পাশা তাদের জন্য মায়া হয়।
Share.

মন্তব্য করুন