দেশ নিয়ে আমার অনেক ভাবনা। অনেক কিছু চিন্তা। কতদূর এলো দেশ। কতদূর যাবে সেকথাই ভাবি। ভাটির দেশ আমাদের। ভাটিয়ালি গানের সুর ভাসে। সেই বাদাম ওড়ানো নাও এখন কমে গেছে। কিন্তু নদীর বুকে ঢেউ চলমান। নদী বয়ে যায়। কুলুকুলু শব্দে চলে দুকূল প্লাবন তুলে।
নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখার সৌন্দর্য আছে। গ্রামবাংলা এখনো এত সুন্দর এত সবুজ, এর তুলনা পৃথিবীর কোথাও খুঁজে পাইনি। কত দেশ ঘুরেছি,নিজের দেশের মতো নেই। আজও মনে হয় সবচেয়ে সুন্দর দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। ভাবনা, তবুও কেনো দেশের মানুষ ভালো নয়! কেনো মিলেমিশে থাকতে পারে না। ক্ষমতা আমাদের কাবু করে ফেলে। আমরা ভালো হই না।
শুধু একটু মনটাকে সুন্দর দিকে প্রবাহিত করলেই নতুন মানুষে পরিণত হই। অনেকে ভালবাসা জানায় এই অধমকে, পিতার কারণে, মাতার কারণে, ভগ্নির কারণে, স্ত্রীর কারণে, ভাইয়ের কারণে, কন্যাদের কারণে। গান শুনতে চায়, কথা বলতে চায়। কেউ কেউ বলে আপনাকে দেখলে মনে হয় যেন তারুণ্য স্থির হয়ে আছে। নিজের দিকে তাকালাম, তা তো নয়। চুল দাড়ি সাদা। মুখে বয়সের ছাপ। চোখের জ্যোতি কমে গেছে। প্রায় ঘোলা হয়েছে চোখ। কখন ডাক আসবে। কখন ছেড়ে যেতে হবে জানি না।
চলে যাবার দলে আমরা। আমার বন্ধুরা চলে গেছে অনেকেই। ‘আসি’ ‘আসি’ করছি আমিও। জন্ম হলেই মরণ আছে। মরতে হবে। চলে যেতে হবে সবাইকে। যে বছর বড় ভাইকে সঙ্গে নিয়ে যাই কবর জিয়ারতে পিতা ও মাতার। পাঁচ দিন পর আমাদের ছেড়ে চলে যান বড় ভাই। মুস্তাফা কামাল, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি। জীবনের ভরসা কই। আজ আছি কাল নেই। যারা ছিলো তারা নেই। এখন আছে, পরে থাকবে না। তাই আহ্বান সবার কাছে: সবাই মিলে আজকের দিনটিকে সুন্দর করে তুলি। নিজে সুন্দর না হলে পরিবেশ সুন্দর হবে না, দেশ সুন্দর হবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে তার নিজ গতিতে। এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সাধারণ মানুষ, যারা বক্তৃতা করছে তারা নয়। যারা মঞ্চে তারা নয়। গ্রাম বাংলার জনসাধারণ। তাদের কষ্ট খেয়ে পরে বাঁচার। দাম আকাশ চুম্বি সবকিছুর।
নতুন স্বপ্নের কথা লিখি নিঃসংকোচে লিখি। বিশ্বাস পরিত্যাগ করব না, মরলেও নয়। নিজ বিশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকব। আমি ইতিহাসের ছাত্র, ইতিহাসের শেষ পাঠে কি, জানা আছে। সুন্দর আমাদের জন্যে প্রতীক্ষিত, কারণ আমরা সুন্দরের প্রতীক্ষায়।
ব্যাবিলনের স্মৃতি মনে পড়ে। ব্যাবিলনের শূণ্য উদ্যানের জায়গাটায় পর পর পাঁচ বছর ইরাক সরকার ব্যাবিলন সংগীত সম্মেলনের আয়োজন করে। বিরাট স্টেজে গান গেয়ে এসেছি কয়েক বছর। ঢাকা থেকে ভালো ভালো শিল্পীদের নিয়ে গেছি। পুরনো স্থানে নতুন করে ব্যাবিলনের শূণ্য উদ্যান তৈরি হয়েছে। বেশ ভাল করে ঘুরে দেখেছি।
দেশকে যারা গড়তে চায় আগে তাদের নিজেদের গড়তে হবে। ছাত্র-ছাত্রীদের যা কাজে আসতে পারে এমন কিছু কথা বলি-
নিজ শরীরকে বাগে রাখব। এমন খাবার খাব না, যা আমার শরীরকে বিগড়ে দেবে। ফাস্টফুড খাব না, চটকদার বিজ্ঞাপনে ভুলব না। শরীরের ওজন কমাব, বেশি ব্যায়াম করব, ভাল খাব, মদ্য জাতীয় খাবার পরিহার করব। ধূমপান করব না, নিজের নখ কামড়াব না, পুরনো বদঅভ্যাসগুলো পরিত্যাগ করব একে একে।
মানসিকভাবে নিজকে প্রস্তুত করব। যা কিছু হ্যাঁ বাচক, থাকব তার সঙ্গে। বেশি হাসব, জীবনকে উপভোগ করব।
অর্থনৈতিকভাবে নিজকে আরো শক্ত করব, ঋণ শোধ করব, অর্থ সঞ্চয় করব এবং সঞ্চয়ে বিনিয়োগ করব।
নিজের পেশাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব, বর্তমান চাকুরীতে উন্নতি করব, আরো ভাল চাকুরী খুঁজব, নিজ ব্যবসায়ে লাভের দিকে ধাবিত হব।
নিজের শিক্ষা আরো উন্নত করব, ভাল গ্রেড পাব, ভাল শিক্ষার দিকে নিজকে নিয়োজিত করব, নতুন কিছু শিখব [যেমন নতুন একটি ভাষা অথবা নতুন একটি গান] প্রায়ই পড়াশোনার মধ্যে নিজকে নিয়োজিত করব, নতুন নতুন বই পড়ব, নিজের গুণকে আরো সমৃদ্ধ করব।
নিজকে উন্নতির দিকে ধাবিত করব, আরো সুশৃঙ্খল হব, স্ট্রেস কমাব, সময়ের মূল্য বুঝব, আরো স্বাবলম্বী হব, কম টিভি দেখব, ভিডিও গেমস কম খেলব।
কাউকে সাহায্য করব, যা জানি তা শেখাব, নাগরিক দায়িত্ব কাঁধে নেব, যারা স্বেচ্ছাসেবী তাদের সঙ্গ দেব।
ভাল লোকদের সঙ্গে মিশব।নিজ পরিবারের জন্যে সবচেয়ে ভাল সময় দেব। কিছু সময় একাকী থাকব, প্রভুকে খুঁজব, তার জন্যে অশ্রু বিসর্জন দেব, আধ্যাত্মিক মানুষে রূপান্তরিত হব।
এসব কাজ যদি করা যায় তো বড়ো হওয়া যাবে। বড় মানুষ হওয়া যাবে। বড় মানুষ হতে হবে। চরিত্রবান হতে হবে। সুন্দর মনের মানুষ হতে হবে। মানুষ সুন্দর হলে সমাজও সুন্দর হবে। তাই সুন্দর মনের মানুষ চাই।

Share.

মন্তব্য করুন