শাহজাদা সালমান পঙ্খিরাজ ঘোড়ার পিঠে বসে দুরন্ত বেগে ছুটছে। বনবাদাড়, জঙ্গল-পাহাড়, সব পেছনে ফেলে ছুটতে এক সময় ধু-ধু মরুভূমিতে এসে পড়ে। যে দিকে চোখ যায় শুধু বালিয়াড়ি। মানুষের বসতি কিংবা অন্য কোনো প্রাণীর আনাগোনা নেই এখানে। মাথার ওপর সূর্যটা যেন নেমে এসেছে খুব কাছে। প্রচন্ড গরমে আর পানির তৃষ্ণায় কাহিল হয়ে পড়েছে পঙ্খিরাজ ঘোড়া। আগের মতো আর ছুটতে পারছে না সে। তার ভীষণ প্রিয় ঘোড়ার মেজাজ-মর্জি সব জানে শাহজাদা সালমান। কখন তার কী প্রয়োজন, সে কী চাইছে- সবই বুঝতে পারে সে।
মেহরান রাজ্যের শাহজাদা সালমানের অনেক সুনাম আর খ্যাতি বুদ্ধিমান, দুঃসাহসী বীরযোদ্ধা হিসেবে। অভিযানপ্রিয় শাহজাদা প্রায়ই তার পঙ্খিরাজ ঘোড়ায় চড়ে বেরিয়ে পড়ে নতুন নতুন জায়গা দেখার নেশায়। নতুন জায়গার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি সেখানকার মানুষদের সাথে কথা বলে, বন্ধুত্ব করে তাদের খুব কাছাকাছি আপনজন হয়ে যেতে তার বেশি সময় লাগে না। কারণ, বাদশার সন্তান হলেও শাহজাদা সালমানের মনে কোনো অহঙ্কার কিংবা দাম্ভিকতা নেই, সে কোনো কিছুতেই নিজের শক্তি, ক্ষমতা, দাপট দেখায় না। সাধারণ মানুষের পাশে তাদের মতো একজন হয়ে থাকতে ভালো লাগে তার। এ কারণে মেহরাব রাজ্যের সবাই তাকে অনেক ভালোবাসে, পছন্দ করে।
ধু-ধু মরুভূমি অনেকটা পথ পেরিয়েও সালমান কোথাও পানির দেখা পায় না। অনেক দূর পর্যন্ত কোনো গাছপালার অস্তিত্বও নেই। এই উত্তপ্ত মরুভূমিতে একটা গাছের নিচে ছায়ায় বসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ারও সুযোগ নেই। একটানা ছুটতে ছুটতে এতোদূর এই অচেনা জায়গায় চলে এসেছে। অথচ, এটা কোনো রাজ্য জানে না সে। দুটি চোখ যেদিকে গেছে ঘোড়া নিয়ে সেদিকেই ছুটেছে সে। অন্য কোনো দিকে এতক্ষণ তার খেয়াল ছিল না।
নিজের ভুল বুঝতে পেরে ধিক্কার দিলো সে নিজেকে। সাধারণত এ রকম ভুল কিংবা বোকামি সে করে না। এখন নিজেকে অনেকটা অসহায় মনে হয় তার। ঘোড়ার পিঠ থেকে আরো আগেই নেমে গেছে সে। পঙ্খিরাজের কষ্ট দেখে ভীষণ মায়া লাগে সালমানের। ঘোড়ার পাশে হাঁটতে হাঁটতে সে ভাবতে থাকে, এরপর কী করবে? কোনদিকে যাবে?
মনোবল হারায় না সে অনেক কঠিন বিপদেও, সৃষ্টিকর্তার ওপর ভরসা করে সাহায্য প্রার্থনা করে- সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর সাহায্য চায়। এই বিপদ থেকে মুক্ত করে দিতে হলে সে।
এ ভাবে সারাদিন হাঁটতে হাঁটতে এক সময় একটা অদ্ভুত জায়গায় এসে পড়ে সে আর পঙ্খিরাজ। তখন সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।
ক্ষুধায়, পিপাসায় কাতর এবং ক্লান্ত হয়ে একটা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ কাছেই একটা পুরনো ভাঙা বাড়ি দেখতে পায় সালমান। এই নির্জন বিরান মরুভূমিতে মানুষজনের চিহ্ন দেখা যায়নি এতক্ষণ। অথচ এখানে পুরনো ভাঙা ঘরবাড়ি দেখে অবাক হয় শাহজাদা। ব্যাপারটা অদ্ভুত এবং রহস্যময় মনে হয় তার কাছে। কৌতূহলী হয়ে দ্রুত পায়ে রহস্যময় বাড়ির দিকে এগিয়ে যায় পঙ্খিরাজ ঘোড়া নিয়ে। কাছে যেতেই খেয়াল করে এটা সাধারণ কোনো মানুষের বাড়ি-ঘর নয়। এটা পুরনো বিধ্বস্ত একটি রাজপ্রাসাদ। সুনসান, নীরব পরিবেশ চারদিকে। উঁকি দিয়ে ভেতরে তাকালেও তেমন কাউকে চোখে পড়ে না। ব্যাপারটা তাকে আরো বেশি উৎসাহী করে তোলে।
পুরনো এই রাজপ্রাসাদ এলো কিভাবে মরুভূমিতে? এখানে কি কেউ থাকে? নাকি ভূত-প্রেতের আস্তানা এটা- দ্রুত ভাবতে থাকে সালমান। ভয় না পেয়ে আরো ভেতরে ঢুকে পড়ে সে।
কিছুদূর এগিয়ে যেতেই একজন অসুস্থ বৃদ্ধা নারীকে দেখতে পায় সালমান। ক্ষুধায়, পিপাসায় কাতরাচ্ছে বৃদ্ধা। এখানে পুরনো ভাঙা নির্জন রাজপ্রাসাদে একাকী কী করছে বৃদ্ধা? তাকে সেবা শুশ্রƒষা করারও কেউ নেই। সালমান সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যায় তার কাছে। তাকে সাহায্য করার জন্য অস্থির হয়ে ওঠে। কিন্তু এই মরুভূমিতে অসুস্থ ক্ষুধার্ত এই বৃদ্ধার জন্য খাবার-দাবার, পানি এবং ওষুধ কোথায় পাবে সে? তারপরও হাল ছেড়ে না দিয়ে বৃদ্ধাকে আশ্বস্ত করতে নরম গলায় বললো, মা জননী আপনি ভয় পাবেন না, একটু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন। আপনার জন্য খাবার-দাবার, পানি, ওষুধ, ফলমূল আমি জোগাড় করে আনছি। আমি যেভাবেই পারি এসব জোগাড় করবো আপনার জন্য।
এ কথা বলার পর শাহজাদা মনে মনে চিন্তা করে, অসুস্থ বৃদ্ধাকে আশ্বস্ত করতে বললেও এখন এই বিরান মরুভূমিতে কিংবা পুরনো রাজপ্রাসাদে খাবার-দাবার, পানি কোথায় পাবে?
তার আশ্বাস শুনে বৃদ্ধার চোখে-মুখে আশার আলো জ্বলে ওঠে। ম্লান মুখে শুধু বলে, ঠিক আছে বাবা, তুমি যখন বললে, আমি অপেক্ষা করছি। দোয়া করছি, তুমি এ কাজে সফল হও।
এরপর শাহজাদা সালমান তার পঙ্খিরাজ ঘোড়াকে সেখানে রেখে খাবার-দাবার, পানি আর ওষুধের খোঁজে ছোটাছুটি শুরু করে।
ধু-ধু মরুভূমিতে পানি খুঁজে পাবার চেষ্টা বৃথা। সেখানে পানি না পাওয়া গেলে খাবার-দাবার, ফলমূল, ওষুধ, পথ্যও পাওয়া যাবে কিভাবে- ভাবতে থাকে সে। হঠাৎ কী মনে করে পুরনো ভাঙা রাজপ্রাসাদের মধ্যে অনুসন্ধান শুরু করে। যে কোনো ভাবেই হোক একজন অসুস্থ বৃদ্ধাকে বাঁচাতে হবে। এ কাজে সফল হতেই হবে তাকে। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করলো সে মনে মনে। পুরো রাজপ্রাসাদ তন্নতন্ন করে খুঁজেও কোথাও এতটুকু খাবার কিংবা পানি পেল না শাহজাদা। ওষুধ-ফলমূল পাওয়া তো দূরের কথা।
হতাশ হয়ে একটা বড় পাথরের ওপর বসে ভাবতে থাকে সালমান। তাহলে কী অসুস্থ বৃদ্ধা নারীটিকে কোনোভাবেই সাহায্য করতে পারলো না। একজন শাহজাদা হয়েও কিছু করতে পারছে না সে। নিজেকে দারুণ অসহায় মনে হয় তার। ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত, অসুস্থ একজন নারীকে চোখের সামনে মারা যেতে দিতে পারে না সে।
হঠাৎ পাথরের পাশে একটি বড় গুহার মুখ দেখতে পায় শাহজাদা। গুহার মধ্যে অল্প আলো জ্বলছে। সঙ্গে সঙ্গে লাফ দিয়ে ওঠে সে। গুহার ভেতরে কী রয়েছে দেখতে হবে তাকে।
ভেতরে ঢুকে ভয়ে ভয়ে এগোতে থাকে সে। ওখানে নতুন কোনো বিপদ তার জন্য অপেক্ষা করছে কী না, কে জানে? হাঁটতে হাঁটতে অল্প কিছুদূর যেতেই একটি বড় ঘর দেখতে পায় সালমান। সেখানে ঢুকতেই থরে থরে সাজানো নানা রকম খাবার-দাবার, ফলমূল দেখতে পায়। পানিও রয়েছে। পাশের আরেকটি ঘরে পা রাখতেই বিভিন্ন ধরনের ওষুধ-পথ্য দেখা যায়। আশ্চর্য ব্যাপার, এখানে কোনো মানুষজন নেই। তাহলে কার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে খাবার-দাবার, পানি, ওষুধ-পথ্যগুলো নেবে সে। এজন্য যতটা মূল্য দিতে হয় তা দিতে পারবে শাহজাদা। কারণ, তার সঙ্গে প্রচুর স্বর্ণমুদ্রা রয়েছে।
সেখানে কাউকে না পেয়ে ফলমূল, পানি আর ওষুধপথ্যের দাম হিসেবে বেশ কিছু স্বর্ণমুদ্রা রেখে দেয়। বিনা অনুমতিতে দাম না দিয়ে এখান থেকে কিছু নিতে চায় না সে।
দ্রুতই খাবার-দাবার, ফলমূল, ওষুধ-পথ্য নিয়ে গুহা থেকে বেরিয়ে ছুটতে ছুটতে অসুস্থ, ক্ষুধার্ত বৃদ্ধার কাছে আসে শাহজাদা। কিন্তু অবাক ব্যাপার! যেখানে তাকে রেখে খাবার-দাবারের খোঁজে বেরিয়েছিল, সেখানে নেই বৃদ্ধা নারী। কোথায় হারিয়ে গেল সে? দুর্বল অসুস্থ শরীর নিয়ে তার পক্ষে তো কোথাও যাওয়া সম্ভব নয়। তাহলে এতো দ্রুত কোথায় হারিয়ে গেল বৃদ্ধা? এতো ছুটোছুটি করে গুহার ভেতর থেকে খাবার-দাবারগুলো সংগ্রহ করে কী লাভ হলো? যার জন্য আনা সে-ই তো অদৃশ্য হয়ে গেছে। মন খারাপ হয়ে গেল সালমানের। সে চুপচাপ বসে ভাবতে থাকে, কেন এমন হলো? সেই অসুস্থ বৃদ্ধার কোনো উপকার করতে না পারার দুঃখ তাকে জর্জরিত করতে লাগলো।
হঠাৎ করেই দারুণ সুন্দরী একজন রাজকন্যাকে সেখানে উপস্থিত হতে দেখে ভীষণভাবে চমকে উঠলো শাহজাদা। এই পুরনো রাজপ্রাসাদে তো অসুস্থ ক্ষুধার্ত বৃদ্ধা নারীটি ছাড়া কেউ ছিল না এতক্ষণ। তাহলে এই রূপসী রাজকন্যা এলো কোত্থেকে, কিভাবে?
চমকে গিয়ে সে জানতে চাইলো, আচ্ছা, এখানে যে বৃদ্ধা অসুস্থ নারী ক্ষুধা, পিপাসায় কাতর হয়ে পড়েছিল তাকে তুমি দেখেছো? আমি তো অনেক কষ্ট করে তার জন্য খাবার-দাবার, পানি, ওষুধ-পথ্য, ফলমূল জোগাড় করে এনেছি। এখন কোথায় চলে গেল সেই বৃদ্ধা? আমি তাকে খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়ে যাচ্ছি। তুমি কী তাকে আশপাশে কোথাও দেখেছ?
শাহজাদার কথা শুনে হাসতে থাকে অচেনা রাজকন্যা। সে হাসতে হাসতে বলে, তুমি তো তাকে কোথাও খুঁজে পাবে না?
কেন সে কী মরে গেছে? মরে গেলেও তার লাশটাও তো দেখছি না, অধীর হয়ে বলে শাহজাদা।
ওহ, সে তো মরেনি, দিব্যি বেঁচে আছে এবং সে সুস্থভাবে দাঁড়িয়ে আছে তোমার সামনেই, রাজকন্যার কথা শুনে মহা ধাঁধায় পড়ে যায় শাহজাদা সালমান। সে নিজে অনেক বুদ্ধিমান, সাহসী এবং নানা বিষয়ে চৌকসও বটে।
অচেনা এক রাজকন্যার হঠাৎ আবির্ভাব এবং রহস্যময় কথা শুনে রাগ ধরে যায় মনে। সে আসলে কী বলতে চাইছে?
তুমি কে? কিছু সময় আগে যখন আমি এখানে এসেছিলাম, তখন তো শুধুমাত্র ঐ বৃদ্ধা অসুস্থ নারী ছাড়া তোমাকে কিংবা অন্য কাউকে দেখিনি; হঠাৎ তুমি এখানে এলে কিভাবে?
শাহজাদার কথায় ভড়কে যায় না অচেনা রাজকন্যা। সে নিজের পরিচয় দেয়, আমি কিরগিস্তানের রাজকুমারী ফাইরুজ। আমার আব্বা বাদশাহ নাহিয়ানের অন্যায়-অত্যাচারে গোটা রাজ্যের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। এক বুজুর্গ দরবেশের অভিশাপে একদিন গোটা রাজ্যে কেয়ামত নেমে আসে। সেদিন প্রচন্ড ঝড় তুফানে আমাদের রাজপ্রাসাদ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। সেই অভিশাপে ভাঙা বিধ্বস্ত রাজপ্রাসাদের মধ্যে আটকা পড়ে যান আমার আব্বা-আম্মাসহ আরো অনেকেই। আমিও সেই অভিশাপ থেকে মুক্ত থাকিনি। একজন বৃদ্ধা নারীতে পরিণত হয়েছিলাম। তবে সেই অভিশাপ থেকে মুক্ত করতেই তুমি এসেছ এখানে। তুমি মেহরান রাজ্যের শাহজাদা সালমান। তোমার উদারতা, বীরত্ব, সাহসী মনোভাব, শিক্ষা-দীক্ষার কথা সবাই জানে। তুমি মহান সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাতেই আমাদের এই অভিশপ্ত বিধ্বস্ত জনপদে তুমি এসেছ। এখানে তোমার পা রাখার পর থেকেই সবকিছু বদলে যেতে শুরু করেছে। এক অসুস্থ বৃদ্ধ নারীকে একাকী পড়ে থাকতে দেখে তার জন্য খাবার-দাবার ওষুধ-পথ্য জোগাড় করতে তুমি যখন ছুটোছুটি করছিলে তখন সেই বুজুর্গ দরবেশ আবার আবির্ভূত হন এখানে। তিনি আমার কাছে এসে বললেন, ‘শাহজাদা সালমান আমার অনেক প্রিয় একজন মানুষ। সে যখন তোমার দুরবস্থা দেখে তা লাঘবের জন্য এতো অস্থির হয়ে ছুটোছুটি করছে, তা দেখে আমার মনটা গলে গেল। তাই তোমাকে অভিশাপমুক্ত করে দিলাম। তুমি আবার আগের মতো রাজকন্যা হয়ে যাবে’। আমি সেই দরবেশের কাছে আমার আব্বার অপরাধের সাজা মাফ করে গোটা কিরগিস্তানকে আগের মতো সুন্দর স্বাভাবিক ফুলে ফলে মানুষজনে সমৃদ্ধ করে দিতে আবেদন জানালে তিনি বললেন, ‘যদি শাহজাদা সালমান তোমাকে সাহায্য করতে এ রাজ্যের শাসনকর্তা হিসেবে দায়িত্ব নিতে রাজি হয়, তাহলে কিরগিস্তান আগের চেয়ে আরো ভালো একটি রাজ্যে পরিণত হবে। আমি দোয়া করে দিচ্ছি। মহান আল্লাহ্পাক তার প্রতি সহায় হোন।’ তার কথা শোনার পর আমি তোমার অপেক্ষায় এখানে দাঁড়িয়ে আছি শাহজাদা। তুমি কি আমাকে সাহায্য করবে সেই ভয়ঙ্কর অভিশাপ থেকে এই রাজ্যকে মুক্ত করতে?
শাহজাদী ফাইরুজের কথা শুনে অবাক হয়ে যায় সালমান। সেই বুজুর্গ দরবেশের কথা শুনে তাঁকে চিনতে পারে সে। বেশ কয়েক বছর আগে গহিন জঙ্গলে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সেই দরবেশ। শাহজাদা সালমান সেই জঙ্গলে ঘুরতে গিয়ে অসুস্থ মানুষটিকে দেখে সঙ্গে সঙ্গে তাকে নিয়ে গিয়েছিল নিজেদের রাজপ্রাসাদে। সেবা শুশ্রƒষা আর উন্নত চিকিৎসা দিয়ে সারিয়ে তুলেছিল তাঁকে। সেই দরবেশ তখন অনেক দোয়া করেছিলেন।
‘তোমার কারণে অনেকের মঙ্গল হবে, তারা অভিশাপমুক্ত হয়ে নতুন জীবন লাভ করবে, মহান আল্লাহ্ পাক তোমাকে সেই সামর্থ্য দান করবেন- আমি দোয়া করছি,’ তখন তিনি বলেছিলেন শাহজাদা সালমানকে।
তোমাদের কিরগিস্তান রাজ্য যদি আমার কারণে অভিশাপমুক্ত হয়ে আগের মতো স্বাভাবিক সুন্দর হয়ে উঠে তাহলে আমি তোমাকে সাহায্য করবো অবশ্যই। ফাইরুজ, আমার মনে তোমার আব্বার সিংহাসনের কোনো লোভ নেই। আমি তোমাদের রাজ্যের বাদশাহ হতে চাই না। তোমাদের সাহায্যে শুধু পাশে দাঁড়াতে চাই। তুমিই এ রাজ্যের শাসক হয়ে ঠিকভাবে শাসন করবে, প্রজাদের উপকার করবে। তাদের ওপর অন্যায়-অত্যাচার করবে না। তাদের সেবক হয়ে কাজ করবে- তাহলেই চলবে।
সালমানের কথা শুনে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে রাজকন্যার মুখ।
উচ্ছ্বসিত হয়ে সে তার হাত ধরে অনুরোধ করে, তুমি অনেক বড় মনের একজন মানুষ। আমি তোমার উদারতায় মুগ্ধ। তোমাকে আমি জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে চাই। আমি তোমাকে পাশে পেলে কিরগিস্তানকে সব অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে পারবো ইনশাআল্লাহ্।
রাজকন্যার কথা শুনে সালমানের মন আরো নরম হয়ে যায়।
কিরগিস্তান রাজ্যের কল্যাণে নিজেকে নিবেদন করতে রাজি আমি। শাহজাদী আমি তোমার পাশে থাকতে চাই, তোমাকে জীবনসঙ্গী করতে আপত্তি নেই আমার। কিন্তু তার আগে আমার আব্বা-আম্মার সম্মতি নিতে হবে আমাকে, বিনয়ী গলায় সে জানায় তার মনের কথা।
এরপর মেহরান রাজ্যের বাদশাহ ও বেগমের সম্মতিতে তাদের পুত্র শাহজাদা সালমানের সাথে কিরগিস্তানের রাজকন্যা শাহজাদী ফাইরুজের বিয়ে হয়ে যায় মহা ধুমধামে।
ধীরে ধীরে সব অভিশাপমুক্ত হয়ে কিরগিস্তান আবার আগের মতো স্বাভাবিক সুন্দর সমৃদ্ধ সময়ে ফিরে আসে। রাজ্য থেকে অন্যায়, অবিচার, অনিয়ম, দুঃশাসন দূর হয়ে শান্তি-সুখ স্বস্তিতে ভরে ওঠে সবার জীবন।

Share.

মন্তব্য করুন