গ্রামটির নাম বটতলা। এই গ্রামে আছে বহুদিনের পুরনো একটা বটগাছ। গ্রামের মোড়ল গাছটা কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিলো। গাছ কাটার লোক ঠিক করল। পরদিন সকালেই গাছ কাটা হবে। সে রাতে মোড়ল ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটা বয়স্ক ভূত আসল। ভূতটি মানুষের রূপ ধরে আসল যাতে মোড়ল তাকে দেখে ভয় না পায়।
মোড়ল ভূতকে দেখে বলল- তুই কে? এত রাত করে কী করতে এসেছিস?
ভূতটি বলল- আমি ঐ পুরনো বটগাছের ভূত।
মোড়ল বলল- হ্যাঁ তো আমার কাছে কী চাস?
ভূত বলল- আপনি দয়া করে ঐ পুরনো বটগাছটি কাটবেন না। কারণ আমরা সব ভূত ঐখানে বাস করি। আপনি গাছটি কেটে ফেললে আমরা কোথায় থাকবো? দয়া করে গাছটি কাটবেন না।
মোড়ল বলল- আমার গাছ আমি কাটবো তুই বলার কে? আর এই গাছ কেটে ফেললে তোরা অন্য গাছে চলে যাবি সমস্যাটা কোথায়?
ভূত বলল- আপনারা একে একে সব গাছ কেটে ফেলছেন। আমাদের বসবাসের জন্য এই গাছটি ছাড়া আর কোনো গাছ নেই। দয়া করে গাছটি কাটবেন না।
মোড়ল অনেক বদমেজাজি মানুষ। উত্তেজিত হয়ে বললেন, তোরা কোথায় থাকবি না থাকবি এটা তোদের ব্যাপার। গাছ আমি কাটবোই। পারলে তোরা ঠেকাস!
ভূত বলল- দেখুন আমরা ইচ্ছা করলে আপনাদের অনেক ক্ষতি করতে পারি, ভয় দেখাতে পারি। আমরা অনর্থক কারো ক্ষতিও করি না ভয়ও দেখাই না। আপনি যদি গাছ কেটে ফেলেন তাহলে আমরা গৃহহীন হয়ে পড়ব। তখন আপনাদের বাড়ি-ঘরে আমাদের চলে আসতে হবে, তখন কিন্তু আপনারা শান্তিতে থাকতে পারবেন না। ভূতের মুখে এসব শুনে মোড়ল রেগে ভূতকে লাঠিপিটা করে তাড়িয়ে দিলো।
পরদিন সকালে মোড়লের লোকজন বটগাছটা কেটে ফেলল। ঐদিন রাতে মোড়ল বাইরে থেকে বাড়ি ফেরার পথে ‘ওরে আল্লাহরে’ বলে চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেল।
কবিরাজ এলো, বদ্যি এলো। তারা বললো ভয়ঙ্কর ভূতের আছর। শুরু হলো চিকিৎসা, ঝাড়ফুঁক নানাভাবে নানা ধরনের। মোড়ল চোখ বন্ধ করলেই শুধু দেখতে পায়, তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে তালগাছের মতো বড় কুচকুচে কালো অসংখ্য ভূত। হাতির দাঁতের মতো দাঁত। বিশাল কান আর তিনটি চোখ, গা ভর্তি লোম। মোড়ল একটু পর পর চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে উঠে। আর আবোল তাবোল বকে। সামনে যাকে পায় তাকেই জড়িয়ে ধরে বলে আমাকে বাঁচাও আমাকে বাঁচাও। আমাকে তুলে নিয়ে গেল ভূতেরা। আমার সামনে হাজার হাজার ভূত, এসব বলে আর সারাদিন হাউমাউ করে কান্নাকাটি করে। বাড়ির সবাই চিন্তিত। মোড়লের যন্ত্রণায় বাড়ির সবার ঘুম নাওয়া খাওয়া সব হারাম হয়ে গেছে।
রাতের বেলায় অসংখ্য ভূত নানারূপে সারা গ্রামে ঘর বাড়িতে ঘোরাফেরা করে।
মোটা ভূত, চিকন ভূত, লম্বা ভূত, বেঁটে ভূত, ছোট ভূত, বড় ভূত, অদ্ভুত সব ধরনের ভূতে ভরে গেছে গ্রাম। ঘর থেকে বের হলেই সামনে পড়ে ভূত। যার সামনে পড়ে সেই ভয়ে চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে আবোলতাবোল কথা বলে। এ রকম অনেক ঘটনা শুরু হয়ে গেছে পুরো গ্রাম জুড়ে।
আবার মোড়লের সামনে সেই বয়স্ক ভূতটি এলো। এবার ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েই এলো। মোড়ল তার সামনে দু’হাত জোড় করে বলে এবার আমাকে ছেড়ে দে। কী চাস তুই? যা চাবি তাই দিব।
বয়স্ক ভূত বলে- আমরা কোথায় থাকবো তুই আমাদের বাসা ভেঙে দিয়েছিস। এখন আমরা তোদের গ্রাম ভেঙে শ্মশান করে দিবো।
এবার মোড়ল বলল- এমন করিস না, একটু দয়া কর আমাদের উপর। কী করতে হবে আমাকে বল আমি তাই করবো।
ভূত বলল- তাহলে তাড়াতাড়ি গাছ লাগা, না হলে খবর আছে!
মোড়ল বলল- আর খবরে কাম নাই বাপ, আমি এখনি গাছ লাগানো শুরু করবো।
মোড়ল গ্রামের সবাইকে ডেকে মিটিং করলো। শুরু করলো বৃক্ষরোপণ অভিযান। দেখতে দেখতে গাছে গাছে ছেয়ে গেলো পুরো গ্রাম। এখন অসংখ্য গাছের সবুজ ছায়ায় সুখে শান্তিতে বাস করে বটতলা গ্রামের মানুষ।

(গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয়, ছায়া দেয়। পরিবেশকে সুশীতল করে রাখে)

Share.

মন্তব্য করুন