মানুষের জীবনে তিনটি মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের মধ্যে নতুন কোনো চাহিদা যোগ হলে প্রথমেই চলে আসবে ইন্টারনেট। ইন্টারনেট হলো টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে তথ্য আদান প্রদান। ইন্টারনেট শব্দটি আসলে ইন্টারকানেক্টেড নেটওয়ার্ক এর সংক্ষিপ্ত রূপ। কম্পিউটার আবিষ্কারের পরই ইন্টারনেট আবিষ্কারের চিন্তা শুরু হয়। এটি সমস্ত পৃথিবীকে একটি গ্লোবাল ভিলেজ বা বিশ্বগ্রামে পরিণত করেছে। যা বড় পরিবর্তন এনেছে আমাদের জীবন যাত্রা ও যোগাযোগ মাধ্যমে। একজন মানুষ পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক না কেন ইন্টারনেটের মাধ্যমে মুহূর্তেই সে অপর প্রান্তে যোগাযোগ করতে পারছে। যোগাযোগের জন্য পৃথিবীতে ইন্টারনেটের চেয়ে সহজ কোনো মাধ্যম আর নেই। আমরা বিশ্বের সকল মানুষ জেনে না জেনে, বুঝে না বুঝে, ইচ্ছায় অনিচ্ছায় প্রতিনিয়ত ইন্টারনেট ব্যবহারের সাথে কোনো না কোনোভাবে সম্পৃক্ত রয়েছি বা এর সুফল ভোগ করছি। ইন্টারনেট মানুষের জীবনে এমন প্রভাব বিস্তার করছে যে, একজন মানুষ হয়তো দু’দিন না খেয়ে থাকতে পারবে কিন্তু ইন্টারনেট ছাড়া একটি মুহূর্তও না। আজ যদি এক মিনিটের জন্যও ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয় তবে লাখ লাখ টাকা লোকসান হয়ে যাবে। তবে যত রাতারাতি আমরা ইন্টারনেটের সুফল ভোগ করছি ততো সহজে কিন্তু ইন্টারনেট আবিষ্কার হয়নি, এবং এটি একক প্রচেষ্টার ফসলও নয়। বরং বহু বিজ্ঞানী; বহু বছর এ আবিষ্কারের সাথে সম্পৃক্ত থেকে ঝরিয়েছে তাদের মেধা, শ্রম ও ঘাম। ১৯৫০ সালে ইন্টারনেট সম্পর্কে প্রথম ধারণা দেন মার্কিন অধ্যাপক লিওনার্ড ক্লেইনরক (Leonard Kleinrock)। লিওনার্ড গবেষণাগার ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া (UCLA) থেকে আরপানেটের (ARPANET) মাধ্যমে একটি বার্তা স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট (SRI)তে পাঠান। সেখানে নেটওয়ার্ক সরঞ্জামের দ্বিতীয় অংশ স্থাপিত করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ১৯৬০ সালে তাদের গবেষণা সংস্থা Advanced Research Project Agency (ARPA)-এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাগারের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে প্যাকেট সুইচিং পদ্ধতিতে একটি বিশেষ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। প্যাকেট সুইচিং পদ্ধতিতে তৈরি করা এই নেটওয়ার্ক আরপানেট (ARPANET) নামে পরিচিত ছিল। প্যাকেট সুইচিং নেটওয়ার্ক বলতে ইউকের এনপিএল, মেরিট নেটওয়ার্ক, টিমনেট, সিক্লিডিস এবং টেলেনেট এর অর্পানেটে, মার্ক ইত্যাদি।
আরপানেট (ARPANET) বিশেষভাবে নেতৃত্ব দেয় ইন্টারনেট ওয়ার্কিং (Internet working) প্রটোকল উন্নয়নের লক্ষ্যে, যেখানে নেটওয়ার্কসমূহের একাধিক পৃথক নেটওয়ার্ক একটি নেটওয়ার্কের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। কিন্তু সেটা ছিল সীমিত আকারে সরকারি অফিসিয়ালি গবেষকদের জন্য। বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের কোনো অনুমোদন ছিল না।

তবুও অধ্যাপক লিওনার্ড ক্রাইনরকে এককভাবে ইন্টারনেট আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেয়া যায় না। কারণ আগেই বলেছি বহু বিজ্ঞানী বহু বছর এ আবিষ্কারের সাথে সম্পৃক্ত ছিলো। তাই স্বভাবতই আরও বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানীর নাম চলে আসে। এদের মধ্য থেকে দু’জন বিজ্ঞানীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। একজন হলো Dr. Vinton Cerf Dr. . অন্যজন এবংBob Kahn.
১৯৬৯ সালে কম্পিউটারের মধ্যে long distance networking প্রথমবার সম্পন্ন হয়। UCLA I Stanford এর দুটি রিসার্চ টিমের মাধ্যমে এটা প্রথম experiment করেছিলেন। তারা প্রথমে পাশের কম্পিউটারে লগইন করার সঙ্গে সঙ্গে পুরো সিস্টেম ক্র্যাশ হয়ে যায়। এই পরীক্ষার সাথে প্রথম packet switching প্রক্রিয়া টেস্ট করে। এবং তারা এই প্রক্রিয়ায় এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ডাটা আদান প্রদানে সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়। এই নির্দেশিকা দুইটা হলো CTP/IP বা Transmission Control Protocol Ges Internet Protocol.
Protocol এর PCT এর কাজ হলো ডাটাগুলোকে নেটওয়ার্ক-এর মধ্যে দিয়ে প্রেরণ করা বা পরিবহন হওয়ার আগে packing করা এবং পৌঁছানোর সাথে সাথে সেগুলোকে npacked করা হয়। আর IP উপাদানটি ভ্রমণ সমন্বয়কারী হিসাবে কাজ করে। যার মূল কাজ হলো তথ্যগুলোকে শুরু বিন্দু থেকে শেষ বিন্দু পর্যন্ত সঠিক পথে নিয়ে যাওয়া।
তবে, Vinton Cerf এবং Bob kahn এর TCP/IP করে থাকে এটা একটি দক্ষ এবং বড় তবে পরস্পর সংযুক্ত থাকা নেটওয়ার্কগুলোর ওয়েব এর মূল আঁধার। আর এভাবে নাম হয় ইন্টারনেট।
১৯৯০ সালে অর্পানেট বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯৫ সালে ইন্টারনেটকে বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত হয়। তবে ১৯৮৩ সালের পহেলা জানুয়ারি ইন্টারনেটের অফিসিয়াল জন্মদিন হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে। কারণ এর আগের কম্পিউটার গুলোর মধ্যে যোগাযোগের জন্য এর থেকে উন্নত কোনো উপায় ছিলো না। তবে শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্র হিসেবে ইন্টারনেট আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেয়া হয় মার্কিনিদের।

Share.

মন্তব্য করুন