আমি পূর্বের আড়ায় পেয়ারা বাগান করেছি, ওখানে আমড়া গাছ, লিচু গাছও আছে। বিকেলে তোমাদের নিয়ে যাব। দেখবে সারি সারি গাছ, এখনতো সিজন নয় তারপরও দু’চারটা পেয়ারা পাওয়া যাবে। জান, পেয়ারা পাড়তেও মজা, খেতেও মজা।’
‘সুহা ঘরে ফিরতেই দেখে ওদের নানা একটা হাত কোদাল বাইরে রেখে ঘরের সিঁড়িতে বসেন। পেছনে কালু, তার হাতে বড় কোদাল। দু’জনের শরীরে বালু আর কাদা লেপ্টে আছে।’
‘নানা একটু কায়দা করে বলেন, ‘তোমরা তো আজ দারুন কাজ করেছ, বীচিওলা সীম খুব মজা। এবার গলার স্বর গম্ভীর করে বলেন, শোন, আমার নাতিন, নাতিরা-সুখবর! সুখবর!! সুখবর!!! আজ মানে অদ্য বিকেল চার ঘটিকায় তোমরা প্রতিজনে দুটি করে গাছ লাগাবে। আমি গত পনের দিন আগে গর্ত করে গোবর, জৈব সার মিশিয়ে আজ বেড তৈরি করেছি। তিনটি পেয়ারা আর তিনটি লেবুর চারা নার্সারি থেকে এনেছি। তোমরা মানে আমার নাতিন-নাতিরা নিজ হাতে সে গাছ রোপণ করবে।’
‘আমরা মানে শাহান, ইজানও?’
‘অবশ্য তোমাদের সহায়তাকরণে থাকবে আমার সহকারী কালু পোদ্দার, ওরফে সুন্দর কালু হালদার। কি বল হে দারুণ হবে না?’
ইজানতো দাদুর অঙ্গভঙ্গি দেখে হাসতে হাসতে বসে পড়েছে। শাহান চিন্তিত, কি করে গাছ লাগাতে হয় জানে না। ইজানের আম্মু বলেন, বাবা আমিতো কখনো গাছ লাগাইনি। আমাকে যদি গাছের চারা এনে দেন… ‘বুঝেছি, শহরে থেকে ফ্ল্যাট থেকে ফ্ল্যাটে বাস করেছ।’
‘জ্বী ঠিক বলেছেন। মাটির ছোঁয়া পাইনি’
‘ঠিক আছে কালু আগামীকাল দশটা গাছের চারা এনে দিবে, আমার মেয়ে আর তুমি মিলে লাগাবে। আমি সকালে কালুকে নিয়ে ঘরের পেছনে বেড তৈরি করে দেব।’

পরদিন-
সকাল সকাল নানার হাঁক-ডাকেই সুহা আর শাহানের ঘুম ভেঙে যায়। নানা ফজরের নামাজ মসজিদে সেরে দোকান থেকে পারাটা নিয়ে এসেছেন। ঘরের বাইরে থেকেই নানা ছড়ায় ছড়ায় ডাকছেন সবাইকে-
‘আয় আয় আয়রে তোরা তাড়াতাড়ি আয়, গরম গরম পারাটা খেতে জলদি নেমে আয়, আয় আয় আয়, কইহে নাতি-নাতিনিরা।’
শাহান শুনেছে, রাতে নানু বলেছেন ঘরে আটা নেই, ডিম নেই সকালে ওদের নাশতা দেই কি দিয়ে? কাল কাজের চাপও বেশি ছিল, নানু পিঠা বানানোর সময় পাননি, নানু আবার বল্লেন, ঠিক আছে সুহার আব্বু চিতই পিঠা খেতে চেয়েছিল না হয় বানিয়েই ফেলি।
নানা বল্লেন, ‘চিতই পিঠা আমরা বিকেলের নাস্তায় খাব। এমনি এমনিতো খাব না, পায়েস করতে হবে। তখনতো পায়েস করার সময় পাবে না। তারচে বরং সকালে লেব্বার দোকান থেকে পারাটা নিয়ে আসবো, ওকে বল্লেই হবে, তৈল কম, হবে মচমচা।’
শাহান মচমচে পারাটার কথা শুনে আড়ালে থাকতে পারলো না। ফ্কি করে হেসে নানার কাছ ঘেষে দাঁড়ালো। নানা মজা করে বল্লেন, ‘সাথে এক ডজন আস্ত আস্ত ডিম্বও নিয়ে আসবো। শাহান খাবে, সুহা খাবে আমরা সবাই মজা করে ডিম্ব পারাটা খাব।’
শাহান ডিম্ব কথাটা শুনে কপাল কুঁচকে ফেলে, নানার লুঙ্গি টেনে বলে, ‘নানা ডিম্বটা কি?’ নানা দু’হাতের আঙ্গুল দু’বার মেলে গোল করে বলেন, ‘ডিম্ব, ডিম্ব মানে ডিম্ব। কাল সকালে দেখতেও পারবে খেতেও পারবে। যা মজার জিনিসনা।’
এদিকে নানুও হাঁক-ডাক দিচ্ছেন। ওরা শীতের কাঁথা কম্বল ছেড়ে দৌড়ায় বাথরুমে।
নানু রান্না ঘরে প্লেট, বাটি ধুতে ব্যস্ত। নানুকে সাহায্য করছে সুহার আম্মু। সুহা হিস্ হিস্ করে শীতের ভাব কাটিয়ে গায়ে জ্যাকেট চাপিয়ে দোতালা থেকে নেমে আসে। শাহান আম্মু আম্মু বলে ডাকছে, আবার সুহাপু সুহাপু ডেকে অনুনয় করে বলে, ‘আপু আমার জ্যাকেটা দাও। প্যান্টটা কোথায় পাচ্ছি না তো?।’ সুহা সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে জবাব দেয়, ‘চেয়ারের উপর দেখেছি। নিজে নিজে পরে নাও। জলদি নেমে আস।’
সুহার আম্মু বলেন, যাতো মা, ওকে জ্যাকেটটা পরিয়ে নিয়ে আয়। যা ঠাণ্ডা পড়েছে আবার না সর্দি কাশি লেগে যায়।’
নানা বাড়িতে ওদের দারণ মজার সময় কাটছে। দিনভর নানার সাথে এখানে সেখানে যায়। শাক তোলে, বাঁধা কপি খেত থেকে নিয়ে আসে। নানা লাউ কেটে দিলে বাচ্চা কোলে নেয়ার মতো করে ওড়নায় ঢেকে নিয়ে আসে। সব কিছুতেই ওদের মজা আর মজা। রাতে নানু ওদের গল্প শোনায়। ওরা কাঁথা-কম্বল গায়ে জড়িয়ে নানুর গল্প শোনে। শোবার আগে নানু সুহাকে বলেন, সুহা অমুক সুরাটা সহি-শুব্ধ করে বল। সুহা আউজুবিল্লাহ্ বিসমিল্লাহ বলে মাথায় কম্বল টেনে নানুকে শোনায়। শাহান চুপ থাকে, ও সুরা মুখস্ত পারে না শুধু সুহার সাথে সাথে ঠোঁট নাড়ায়।
রান্না ঘরে ডাইনিং-এর জানালা সব খোলা হয়নি। বাহিরের শীত ঢুকে যেতে পারে বলে নানুর সতর্কতা। বাহিরে নানার কথা শোনা যায় কালুর সাথে কি সব কথা হচ্ছে। আবার হাঁক মেরে সুর করে বলেন, সুহা, শাহান কই তোমরা। গরম গরম পারাটা, ডিম্ব এনেছি বারোটা। নানা ঘরে ঢুকতেই চাদর আটকে যায় দরজার সিটকিনিতে।
সুহা দৌড়ে এসে বলে, ‘নানা দাঁড়াও, সিটকিনি তোমাকে আটকে দিয়েছে।’ নানা তখনো বুঝতে পারেননি। দু’কদম এগুতেই গায়ের চাদরটা টান খেয়ে নিচে পড়ে যায়। নান পারাটার ঠোঙ্গা বাড়িয়ে ধরে বলেন, ‘এবার হাত বাড়াও।’ নানা নানুর হাতে পারাটার প্যাকেট ধরিয়ে ছন্দ মিলিয়ে বলেন, লেব্বা দিয়েছে ভাঁজ করে, ঠোঙ্গা করে ভরে ভরে, এবার হেসে বলেন, খুললেই ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। আগে ডিম্ব ভাজি কর, ডিম্ব গরম, পারাটা গরম। গরম-গরম, নরম, নরম সবাই এক সাথে খাব। এক সাথে খেলে বরকত হয় শাহান প্রশ্ন করে নানু বরকত কি?
‘তোমার নানাকে ডিজ্ঞেস কর। কথাটা তো আমি বলিনি, তোমার পণ্ডিত নানা বলেছেন।’
এবার শাহান প্রশ্ন করে, ‘নানু পণ্ডিত কি?’
নানু ডিম ভাজতে ভাজতে বলেন, ‘পণ্ডিত মানে? তোমার নানা। নানা পণ্ডিতকেই জিজ্ঞেস কর বরকত কী।’
নানা বল্লেন, ‘সবই হবে তোমরা হাত ধুয়ে বসে পড়। ডিম্ব পারাটা গরম গরম। শোন আজ আমার পারমিশন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে যাবে না।’ সুহা গরম গরম পারাটার টুকরা মুখে নিয়ে চোখ বড় বড় করে বলে, ‘বাইরে যাব-একশ বার যাব। আমরা এখন নানুর কমান্ডে আছি।’
নানু আরেকটা ডিম ভাজি নিজের প্লেটে নিয়ে বলেন, হলেন তো সকাল সকাল নাকাল। ওরা আজ আমার কমান্ডে চলবে, আমার সোনামনি বাহিনী। ওরা এখন আমার ডান-বাম হাতের লাঠি। কাজে কাজেই হে বহিশত্রুরা সাবধান।
নানা খাবার শেষ করে আস্তে করে বলেন, ‘আজ যে কার মুখ দেখে উঠলাম!’
নানুর কানে কথাটা ঢুকে যায়। ‘কার মুখ মানে, ওরা তো এলো আজ এগারো দিন, ওদের মুখ দেখেই উঠেছেন। তার আগে অন্য কারো মুখ দেখেছেন আমার ছাড়া?
তাইতো বলি ফজরের নামাজ পড়ে বাড়ি ফিরতে এতো এতো দেরি কেন প্রতিদিন? শুনি, কার মুখ দেখা হচ্ছে নিত্যদিন! আজ ওদের সামনে বলুন, যাহা বলিব-সত্য বলিব।’
সুহা, শাহান, নানাকে জব্দ হতে দেখে হি হি করে হেসে দেয়। সুহার আম্মু মুখে আঁচল টেনে হাসি লুকাচ্ছে। নানু দাঁত কড়মড়িয়ে অসহায় নানার দিকে তাকিয়ে বলেন কী পণ্ডিত মশাই, জবাব দিন।’
নানা ছোট্ট করে বলেন, ‘ইয়ে মানে ভুইয়া বাড়ি। ভুইয়া বাড়ির আলিফের চা দোকানে…’
‘বুঝেছি, আলিফের চা দোকানে সকাল সকাল যাওয়া না হলে, দিলে সুখ মিলে না।’
সুহা অবাক হয়, নানু কি বল্লে, ‘আলিফের দোকানে এত মজার কি জিনিস আছে?’
‘মানে বুঝোন! ওখানে বসে বসে খানিক্ষণ আড্ডা এক কাপ চা, একটা টোস্ট বিস্কুট চুবিয়ে চুবিয়ে খাওয়া…
‘ইয়ে মানে, আজ এ পর্যন্ত থাক। আমি…’
নানাকে ধমকে বসিয়ে দেন নানু। আজ কোথাও যাবেন না। আমার কমান্ড, আমার হুকুম। শাহান হাসতে হাসতে যেন চেয়ার থেকে পড়ে যায়। সুহা বলে, ‘তোমরা থামবে নাকি আদালত বসাবো? শোন নানা, আজ নানুর হুকুমত জারি হলো।’ নানা একটু মুচকি হেসে বলেন, ‘সুহামনি কুয়াশা কেটে গেছে জানালাগুলো খুলে দাও। সুহা-শাহান দ্রুত জানালাগুলো খুলে দেয়। বাইরে থেকে কু-উ-উ-ডাক আসে। নানা বুঝতে পারেন এটা কালুর সিগন্যাল।
নানু বলেন, ‘আজ ওরা মোরগ পোলাও খাবে। বাকি সব রেডি, শাহান, সুহা খেত থেকে শশা, লেবু, ধনিয়া পাতা আনবে। আর আপনি মসলা বাটবেন। আদা, রসুন, জিরা এসব।’
‘সেকি কথা, ওগুলোতো মেয়েদের কাজ-’
‘মেয়েদের আলাদা কাজ বলতে কিছুই নেই। কমান্ড আমার, হুকুম আমার। কি হে সেনাপতিরা তোমরা কি বল?
নানুর কথায় ওরা সায় দেয়। নানা ঘন ঘন জানালা দিয়ে তাকাছেন। এবার হাল ছেড়ে দিয়ে বলেন, ‘আজ মাফ করা যায় না?
‘না,’ নানুর এক কথাই।
‘নানা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, ‘সুহা, শাহান আমি যা দেখি তোমরা কি বাইরে তা দেখ?’
সুহা জানালার দিকে তাকিয়ে দেখে বাইরে আমগাছের ডালে দু’টো দোলনা বাঁধা, একটিতে কালু দোল খাচ্ছে।
সুহা, শাহান হুররে বলে দৌড়ে বেরিয়ে যায়। নানা আস্তে করে উঠে পা বাড়ান।
নানি সামনে এসে দাঁড়ান, বলেন, ‘মসলাগুলো আগে বেটে দিন। নানা গা ঝাড়া দিয়ে বলেন, ‘জী কমান্ডার আপনার কমান্ড ভেঙে গেছে। ওরাও বাইরে গেছে আমিও যাই। নানা যেতে যেতে বলেন, ‘কমান্ড এখন দোলনার রশিতে।’
সুহা দোল খেতে খেতে গাইছে-
‘দোল দোল দুলুনি
রাঙ্গা মাথার চিরুনী
এনে দেব হাট থেকে
মান তুমি করোনা’
শাহান গানটি না জানলেও সুহার সুরে সুরে ঠোঁট নাড়ছে। নানা সুহার দোলনার পেছনে দাঁড়িয়ে হালকা করে একটা ধাক্কা দিয়ে বলেন, ‘কালুকে দিয়ে রাতে বানিয়েছি- কেমন লাগছে?’
‘দারুণ, মজা মজা।’
‘বলতো দোল দোল দুলুনি, গানটা কার? মানে কে গেয়েছিল?’
তা তো জানি না নানা।’
‘জানতে হয়। তাহলে শোন, আবদুল আলীমের নাম শুনেছ তোমরা?’
সুহা মাথা নাড়ে।
‘আবদুল আলীমকে বলা হয় পল্লীগীতির সম্রাট। অনেক গান গেয়েছেন তিনি। ১৯৭৫ সালে তিনি মারা যান। আর আব্বাস উদ্দিনকে বলা হয়, ভাওয়াইয়া গানের সম্রাট। ও কি গাড়িয়াল ভাই- গানটা শুনেছ? তিনি মারা যান ১৯৫৯ সালে।’
‘সেই আমলে গান মানেইতো ছিল পল্লী গান আর ভাওয়াইয়া গান। এখনো মানুষ তাদের গানের দোলায় দোলে, মন ভরে ওঠে সুর আর ছন্দে।’
নানা কালুকে নিয়ে যাচ্ছেন নিড়ানি কোদাল হাতে পূবের আড়ায় কুমড়ো মুড়ায় জৈব সার দিতে হবে। নানার কানে যেন বাজছে, সেই দিনের কলের গানের সুর ‘দোল দোল দুলুনি…’

৫.
সুহা আর অয়ন বাড়ির সামনে এক্কা দোক্কা খেলছে। ওদের দেখাদেখি পুরান বাড়ির ফারহা আর সাফাও যোগ দিয়েছে। সুহা এর আগে কখনো এক্কা দোক্কা খেলেনি। এক পায়ে লাফাতে গিয়ে টাল সামলাতে না পেরে বার বার পড়ে যাচ্ছে। তাই দেখে পাশে দাঁড়ানো শাহান কুট কুট করে হাসছে।
সাঁই সাঁই করে হঠাৎ ওদের কাছাকাছি ব্রেক কষে একটা ইজি বাইক। সুহা ইজিবাইকের দিকে তাকিয়ে ‘নানু মনি নানু মনি, ইজান আসছে, ইজান আসছে বলে চিৎকার জুড়ে দেয়। ইজান সুহা আর শাহানের মামাতো ভাই। ওরা প্রায় দু’সপ্তাহ আগে একই সাথে ঢাকা থেকে এসেছে। গেল দুইদিন ইজান মা-বাবার সাথে নানাবাড়ি নোয়াখোলা গিয়েছিল। এটা সুহা আর শাহানের নানাবাড়ি আর ইজানের দাদার বাড়ি।
সুহার নানু রান্না ঘরেই ছিলেন, সুহার গলার আওয়াজ পেয়ে মাথার ঘোমটা টেনে দাদু ভাই, দাদু ভাই বলে ইজিবাইকের দিকে ছুটে আসেন।
ইজানকে কোলে নিয়ে চুমোয় চুমোয় ওর কপাল ভরিয়ে দেন। সুহার আম্মুও ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। ইজান এ কোল ও কোল বেয়ে ঘরে ঢুকে কোলে-কোলে।
ইজানের দাদি তার আবু-আম্মুকে বলেন, ‘তোমরা হাত মুখ ধুয়ে নাশ্তা খেয়ে নাও’ ইজানের আম্মু বলেন, ‘না মা আপনি ব্যস্ত হবেন না, আমরা নাশ্তা খেয়ে এসেছি, একটু পরে চা খাব।’
গ্রামের বাড়িতে সুহার নানা-নানি থাকেন। ইজানের আব্বু কতোবার বলেছে ঢাকায় যেতে। তারা কেউ রাজি না। ইজানের দাদির হাঁস-মুরগি, গাছ-গাছালি, পাখ-পাখালি এসব ছেড়ে শহরের বন্ধ খাঁচায় ঢুকতে চান না।
খালি বলেন, ‘তোরা কি করে চার দেয়ালের ঘেরে বন্দি থাকিস্ আমারতো দম বন্ধ হয়ে আসে। ইজানের দাদা মাঝে মধ্যে এক দু’দিনের জন্য নারকেল, কলা, আম, জাম, কাঁঠাল নিয়ে ঢাকায় আসেন। তিন দিন এক নাগাড়ে কখনো থাকেননি।
শাহানের আম্মু শাহানকে নিয়ে ঘরের পেছনে গাছ-গাছালির নাম পরিচয় করিয়ে দেন। মাঝে মধ্যে আকাশের দিকে তাকিয়ে নীলাকাশ, উড়ে যাওয়া পাখ-পাখালি দেখান, এর মধ্যে তাকে বর্ণশিক্ষা দেন। ‘অ-তে অতনু। ঐ যে আমাদের পুরান বাড়ির অতনু তোমার বন্ধু।’ আ-তে আমগাছ বলে আমগাছ তলার নিয়ে যান। ক-তে কলাগাছ বলে কলাগাছের পাশে দাঁড়ান। খ-তে খড়ি বলে লাকড়ির মাচার নিচে দাঁড়ান। গ-তে গাব গাছ বলে গাবগাছ তলে নিয়ে যান। বর্ষায় সিঁদুর রঙের পাকা গাবের কথা শোনান মুখ চিবিয়ে বলেন, ‘আমাদের গাছের গাব ফল খুব মিষ্টি হয়। সেবার তোমায় নানা নিয়ে গিয়েছিলেন ঢাকায় তুমি মাত্র এক টুকরা খেয়েছ।’
শাহান এখন আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, নারকেল, সুপারি, নিম গাছ সবই চিনে।
ওর খুব হাসি পায় যখন তার সুহাপু কদম গাছটি চিনতে পারে না।
নানা সেদিন পুকুরে বড়শি ফেলে একটা ইয়া বড় চিতল মাছ ধরে ফেলেন, সুহা চেচিয়ে বলে, ‘নানু-নানু নানা বড় একটা ইলিশ মাছ বড়শিতে ধরে ফেলেছে।’ নানার সে কি হাসি। ‘কি বল্লে ইলিশ মাছ? পুকুরের ইলিশ তাও আবার বঁড়শিতে ধরা’। বোয়াল মাছের দাঁতাল, হা দেখে ওতো গিয়ে নানুর পেছনে লুকায়-বলে, ‘দৈত্য মাছ।’
এ কয়দিনে সুহা কই, পুঁটি, মলা, রুই, কাতলা মাছ চিনে ফেলেছে। এমনকি কাল কাল ভূতের ছাওয়ের মতো মেনি মাছও চিনেছে।[আগামী সংখ্যায় সমাপ্য]

Share.

মন্তব্য করুন