এ ঘটনাটি ভীষণ বিস্ময়কর! এটি ঘটেছে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা.-এর চাচা আব্বাস রা.-এর পরিবার নিয়ে। আব্বাস রা. মহানবী সা.-এর চাচা। কিন্তু দুজনের বয়সের ব্যবধান খুব বেশি ছিলো না। মাত্র দুই বা তিন বছরের হবে। অর্থাৎ আব্বাস রা. রাসুল সা.-এর চেয়ে বেশি হলে তিন বছরের বড় হবেন। যে কারণে দুজনের মধ্যে সম্পর্ক ছিলো বন্ধুত্বপূর্ণ। তিনি ছিলেন কুরাইশদের একজন প্রভাবশালী নেতা।
মহানবী সা. নবী হলেন। তাঁর কাছে জিব্রাইল আ. ওহী নিয়ে আসলেন। তিনি হয়ে গেলেন মহান আল্লাহ তায়ালার শেষ নবী। এ সময় মক্কায় অনেকেই মুসলমান হয়ে গেলেন। কিন্তু আব্বাস রা. প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণ করলেন না। তবে তিনি মুসলমানদের পক্ষে কাজ করতেন। তাদের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। যারা অসহায় মুসলমান। কিংবা যারা সমস্যায় ছিলেন তাদের তিনি সাহায্য করতেন উদারভাবে।
এর মধ্যে রাসুল সা. মদীনায় হিজরত করলেন। বদর যুদ্ধ হলো। বদর যুদ্ধে আব্বাস রা. কোরাইশদের পক্ষ হয়ে যুদ্ধে যোগ দিলেন। যুদ্ধে মুসলমানেরা বিজয় লাভ করলেন। কোরাইশদের অনেকে বন্দি হলো মুসলমানদের হাতে। এ বন্দিদের মধ্যে আব্বাস রা.-ও ছিলেন। এ বন্দিদের মুক্ত হওয়ার জন্য রাসুল সা. মুক্তিপণ নির্ধারণ করে দিলেন।
আব্বাস রা. অনেক সম্পদের মালিক ছিলেন। তাই তার মুক্তির জন্য তার উপযুক্ত মুক্তিপণ নির্ধারণ করা হলো।
এদিকে হযরত আব্বাস রা. মা ছিলেন মদীনার খাজরাজ গোত্রের কন্যা। তাই খাজরাজ গোত্রের লোকেরা বললো- আব্বাস আমাদের ভাগ্নে। আমরা তার মুক্তিপণ মাফ করে দিলাম। কিন্তু মহানবী সা. এটি নীতি বিরোধী কাজ বলে তাদের দাবী বাতিল করে দিলেন।
আবার আব্বাস রা. এতো বেশি পরিমাণ অর্থ দিতে অপারগতা প্রকাশ করলেন। সেই সাথে বললেন – আমি তো মনে মনে আগেই মুসলমান হয়েছিলাম। কোরাইশেরা আমাকে জোর করে যুদ্ধে নিয়ে এসেছে।
এর জবাবে মহানবী সা. এমন একটি কথা বললেন যা চিরকাল স্মরণীয় বরণীয় এবং করণীয়। তিনি বললেন- আপনার দাবী যদি সত্যি হয় তবে মহান আল্লাহ তায়ালা আপনাকে তার পুরস্কার দেবেন। কিন্তু এর জন্য প্রকাশ্য বিষয়ে আপনাকে কোনো সুবিধা দেয়া যাবে না। এতে সকল মুসলমান বিস্মিত হলেন এইজন্য যে মহানবী সা. ন্যায় বিচারের ক্ষেত্রে তাঁর চাচাকেও এক চুল ছাড় দেননি।
আব্বাস রা. কোরাইশদের সাথে থাকলেও তিনি মুসলমানদের পক্ষে ছিলেন। কোরাইশদের গতিবিধি রাসুল সা. কে জানাতেন। যাই হোক আব্বাস রা. মুসলমান হলেন প্রকাশ্যে।
একদিন রাসুল সা. তাঁর চাচা আব্বাস রা.-কে বললেন- আগামীকাল আমি না আসা পর্যন্ত আপনারা কেউ ঘর থেকে বের হবেন না। আপনাদের সাথে আমার বিশেষ দরকার আছে।
মহানবী সা.-এর কথামতো পরদিন তাদের পরিবারের কেউ ঘর থেকে বের হলেন না। সবাই রাসুল সা.-এর জন্য ঘরে বসে অপেক্ষা করতে লাগলেন। ঠিক সময়ে মহানবী সা. আসলেন। চাচা আব্বাসের সাথে কুশল বিনিময় করলেন। তাদের খোঁজ খবর নিলেন। এরপর সবাইকে এক জায়গায় জড়ো হয়ে বসতে বললেন।
নির্দেশ পেয়ে সবাই এক জায়গায় বসে গেলেন। মহানবী সা. একটি চাদর দিয়ে সবাইকে ঢেকে দিলেন। এরপর তিনি মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে তাদের জন্য দোয়া করলেন- হে আল্লাহ ইনি আমার চাচা। আমার পিতার মতো তিনি। আর এরা সবাই আমার বংশের লোক। আজ আমি যেভাবে চাদর দিয়ে এদের ঢেকে রাখলাম তুমিও এদেরকে দোজখের আগুন থেকে হেফাজত করো।
রাসুল সা.-এর এই দোয়ার সাথে সাথে ঘরের দেয়াল এবং দরোজার চৌকাঠ বলে উঠলো- আমীন! আমীন!

Share.

মন্তব্য করুন