স্বাধীনতা একটি মিষ্টি শব্দ। এই শব্দটির সুষমা -ব্যঞ্জনা বহুমাত্রিক। সব মানুষই স্বাধীনতার সৌন্দর্য উপভোগ করতে চায়। স্বাধীনতা শব্দটির তাৎপর্য ও মহিমা বুঝতে পারা মানুষগুলো কখনোই অন্যের অন্যায্য নির্দেশনা মেনে নেয় না। স্বাধীনতা শব্দটির সহজ অর্থ ‘নিজের অধীন’। অপরের দুঃশাসন, অন্যায় নির্দেশনা মেনে চলা স্বাধীনচেতা কোনো মানুষের কাম্য নয়। তাই বলে যা ইচ্ছে তাই করার স্বাধীনতা কোনো স্বাধীনতাই নয়। স্বেচ্ছাচার। স্বাধীনতা ও অধিকার পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। নীতি নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে অনধিকার চর্চা করার স্বাধীনতা কারোর নেই। সাধারণভাবে মানুষের স্বাধীনতাকে কয়েকটি শ্রেণীতে বিন্যাস করা যায়।
যেমন : কথা বলার স্বাধীনতা, ন্যায়ভাবে কাজ করে অর্থ উপার্জন করার স্বাধীনতা, সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে বাঁচার জন্য দেশ গঠনে অংশগ্রহণ করার স্বাধীনতা।
প্রতিটি মানুষের পরিবারে, সমাজে ও দেশে তার ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় নির্ভয়ে কথা বলার স্বাধীনতা রয়েছে।
সেই কথা কখনই অসুন্দর হওয়া উচিৎ নয়। কথা হতে হবে সাবলীল, সুন্দর, মার্জিত ও গঠনমূলক। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় মানুষের অতিকথন ও অশুভ্র কথা বলায় সমাজে, দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। বড় ধরনের ঝগড়া বিবাদ সৃষ্টি হয়। স্বাধীনতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন করার স্বাধীনতাও রয়েছে মানুষের। অর্থাৎ মানুষ জন্মগতভাবে যেমন স্বাধীন, পৃথিবীতে আমৃত্যু সুন্দর বেঁচে থাকার জন্য স্বাভাবিক সব ধরনের সুযোগ সুবিধা পাওয়ার স্বাধীনতাও রয়েছে মানুষের। সবার জানা প্রয়োজন শিক্ষা কি এবং কেনো তা জানা একান্ত জরুরি।

শিক্ষার তিনটি ধাপ, যেমন:
১. জ্ঞান অর্জন,
২. জ্ঞান কাজে লাগিয়ে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি ও
৩. আচরণিক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন।
শিক্ষার দ্বারা এই তিনটি বিষয়ের একটিও যদি অর্জন না হয় তবে বুঝতে হবে সেই শিক্ষা কোনো শিক্ষাই নয়। তাই নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, কথা বলার স্বাধীনতা অর্জন করতে হলে সুশিক্ষা অর্জন করা অতীব জরুরি।
প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে পৃথিবীতে মানুষ আসে, যায়। মানুষ যতো দিন বেঁচে থাকে এবং সুষ্ঠু সুন্দরভাবে বাঁচার জন্য নানাবিধ প্রয়োজন দেখা দেয়। যেমন খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান। প্রয়োজন মেটাতে অর্থের প্রয়োজন। অর্থ। উপার্জনের হাজার প্রক্রিয়া রয়েছে। তবে কালের বিবর্তনে প্রক্রিয়ার ধরন পাল্টায় এবং মানুষের কল্যাণে মানুষই তা পাল্টাতে ভূমিকা রাখে। মানুষ সৃষ্ট কোনো নিয়ম নীতি দ্বারা অর্থ উপার্জনে কোনো বিধি নিষেধ আরোপিত হলে তা কেউ মেনে নেয় না। কায়িক, মানসিক পরিশ্রম ছাড়া কখনও অর্থ উপার্জন সম্ভব নয়। এ জন্য প্রতিটি মানুষ শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হতে হবে। আবার সুস্থ হলেই অর্থ উপার্জনের সব ধরনের কাজের স্বাধীনতা আছে এমন নয়। চুরি ডাকাতি লুটতরাজের মাধ্যমেও অর্থ উপার্জন করা যায় তাই বলে সেইসব কাজ সভ্য মানুষের কাজ নয়। নীতি নৈতিকতাবর্জিত কাজের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের স্বাধীনতা কারো নেই। মানুষের রয়েছে একমাত্র সৎ ও ইতিবাচক কাজ দ্বারা অর্থ অর্জনের স্বাধীনতা। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের আইন ব্যবস্থা সুস্পষ্ট ও সাবলীল হওয়া প্রয়োজন। যে আইন শুধুমাত্র কতিপয় ব্যক্তির স্বার্থ সংরক্ষণ করে, যে আইন কারো ব্যক্তিগত ক্ষমতাকে পুঞ্জীভূত করে, যে আইন সশস্ত্রশক্তি প্রয়োগে প্রকারান্তরে মানুষের অধিকার হরণ করে তা প্রকৃত আইন নয়। এতে শুধু মানুষের সুসম স্বাধীনতাকে বিপর্যস্ত করে। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার পরিবর্তে বিপথগামী করে। একটি দেশের স্বার্থ রক্ষায় মানুষকে উজ্জীবিত করতে হলে মানুষের সম্মান ও মর্যাদার প্রতি যথাযথ গুরুত্ব থাকা চাই। সাধারণ মানুষের চাওয়া পাওয়ার, স্বপ্ন আকাক্সক্ষার কথা না ভেবে আইন বানানো হলে দেশে নৈরাজ্য দেখা দেয়। ক্ষমতাধর ও সুবিধাভোগী মানুষ মুখে স্বাধীনতা ও চেতনার দোহাই দিয়ে উল্টোপথে দেশের সম্পদ পাচার করার সুযোগ পায়। অধিকাংশ মানুষ রাষ্ট্রের সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। সর্ব সাধারণদের কল্যাণে দেশের আইনি ব্যবস্থা না থাকলে মানুষের ন্যায্য উপায়ে অর্থ উপার্জনের স্বাধীনতাও থাকে না। তাই আগামী প্রজন্মের জন্য কালাকানুনমুক্ত এমন বৈষম্যহীন আইনি কাঠামো নির্মাণ করতে হবে যাতে যে কেউ যোগ্যতা ও মেধার যথাযথ ব্যবহার করার সুযোগ পায়। দেশ পরিচালনায় পরিবার, গোত্র ও কোঠানির্ভর ব্যবস্থার পরিবর্তে সার্বজনীন এমন ব্যবস্থা থাকতে হবে যাতে মানুষ নিজ দেশে নিরাপদে সুখে শান্তিতে স্বাধীনভাবে বসবাস করতে পারে। মানুষ যেনো না হয় মানুষের প্রতিপক্ষ। মানুষ হোক মানুষের জন্য।

দেশ যারা পরিচালনা করছেন তাদের আচার আচরণ, কথাবার্তা, ভাবভঙ্গি আগামী প্রজন্ম অনুসরণ করবে, তাদের কর্মে অনুপ্রাণিত হয়ে পরবর্তী সময়ে দেশ পরিচালনার জন্য প্রস্তুত হবে। তাহলে আমরা কি আশা ও বিশ্বাস করতে পারি যারা দেশের পরিচালক তারা সঠিক পথে আছেন? তাদের বক্তব্য ও বিবৃতি কর্মপ্রবাহ দেশের জন্য কতটা মঙ্গল মঙ্গলজনক, দেশের মানুষের কতটুকু নিজস্ব মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আছে তা ভেবে দেখতে হবে। আমার কাছে মনে হচ্ছে যারা দেশের মানুষের উদ্দেশ্য বক্তৃতা বিবৃতি দিচ্ছেন তা আকাক্সিক্ষত। আশার সঞ্চার না হয়ে নিরাশার দোলা দৃশ্যমান। কথায় ও কাজে দশভাগ সত্যতাও খুঁজে পাওয়া যায় না। এরূপ চলতে থাকলে মানুষ নোঙরবিহীন নৌকোর মতো ঘুরপাক খাবে। আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। আগামী প্রজন্ম স্বাধীনতার সৌন্দর্যে অবগাহন করে সত্যের আশ্রয়ে নান্দনিকতা সৃষ্টির অভিপ্রায়ে, জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চার মধ্য দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে তার সঠিক পথ নির্মাণ করা চাই। অতীতের নষ্ট ইতিহাস বদলাতে হবে। বদলাতে হবে পুরাতন আচার। দেশের সৌকর্য ও গৌরব বৃদ্ধির জন্য পরমতসহিষ্ণু মনোভাব প্রদর্শন করতে হবে। শুধু ব্যক্তি অর্থনৈতিক জৌলুস বাড়ানোই মানুষের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়। দেশের সব মানুষের স্বাধীনতায় বিশ্বাস রেখে দেশপ্রেমে মহান ব্রতী হতে হবে। স্বাধীনতা শব্দটিতে সৃষ্টি হোক মানুষের অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস ।

Share.

মন্তব্য করুন