নাম, রঙ, লোগো আর মোড়কে বারবার বদলেছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। আগের আট আসরে পাঁচ দল, চার বিভাগ বা জেলার হয়ে জিতেছে শিরোপা। রান খরার টুর্নামেন্টে সব রান যেন ঢাকার বাইরে ছিল। আইপিএলের চার বছর পর বিপিএলের আত্মপ্রকাশ। বিগ ব্যাশের প্রায় সমসাময়িক। পিএসএলের চার বছর আগে। অনেক স্বপ্ন আর সম্ভাবনার গল্প নিয়ে ২০১২ সালে গড়ায় প্রথম আসর। যুগ পেরিয়ে গেলেও এ টুর্নামেন্টটি বিশ্বের অন্যতম অপরিকল্পিত আর জোড়াতালির টুর্নামেন্ট।
প্রতি বছর বিপিএল হলে এবারের আসরটি হওয়ার কথা ছিল ১২তম। তবে ফিক্সিংয়ের থাবায় ২০১৪ আর করোনার অজুহাতে ২০২০ আর ২০২১ সালের আসর হারিয়ে যায়। আগের আট আসরের সফলতম দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। তিনবারের চ্যাম্পিয়ন। সবশেষ আসরেও কুমিল্লা সেরা। ঢাকাও সমান চ্যাম্পিয়ন। তবে দুটি ভিন্ন নামে। গ্ল্যাডিয়েটর্স দু’বার আর একবার ডায়নামাইটস। এবার খেলছে ঢাকা ডমিনেটর্স নামে। একবার করে শিরোপা জিতেছে রংপুর রাইডার্স ও রাজশাহী রয়্যালস।
নয় আসরে বারবার দলের নাম বদলেছে, কোনো নামই স্থায়ী হয়নি। সবচেয়ে বেশি ছয়বার নাম বদলেছে সিলেটের। রয়্যালস, সানরাইজার্স, থান্ডারস, সুপারস্টারস, সিক্সারস হয়ে এবার স্ট্রাইকার্স। ব্যতিক্রম কেবল কুমিল্লা। বিভাগ না হয়েও যারা খেলছে এই আসরে। বিপিএলে দলীয় সর্বোচ্চ স্কোর রংপুর রাইডার্সের। ২০১৯ সালে ২৩৯ রান তুলেছিলো। আর সর্বনিম্ন ৪৪ রান করে খুলনা টাইগার্স। মজার ব্যাপার হলো বিপিএলে দলীয় সর্বোচ্চ রানের প্রথম ছয়টি হয়েছে চট্টগ্রামে। আর সর্বনিম্ন ছয়টি মিরপুরে।
ব্যক্তিগত সাফল্যে এগিয়ে দেশের দুই শীর্ষ তারকা তামিম ইকবালের। ৭৯ ম্যাচে ২৬২৮ রান। আর বল হাতে রাজত্ব করেছেন সাকিব আল হাসান। ৮৭ ম্যাচে ১২২ উইকেট। সবচেয়ে বেশি ৫ সেঞ্চুরি ক্রিস গেইলের। সবচেয়ে বেশি ১৪৩টি ছয় হাঁকিয়েছেন এ ইউনিভার্স বস। এখন পর্যন্ত ছয়টি হ্যাটট্রিক হয়েছে বিপিএলে। যার তিনটি বাংলাদেশী আল আমিন হোসেন, আলিস ইসলাম ও মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর।
নানা আলোচনা-সমালোচনা, তর্ক-বিতর্কের মধ্য দিয়ে ৬ জানুয়ারি থেকে মাঠে গড়িয়েছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) নবম আসর। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) পর বিপিএলকে মর্যাদার আসর ধরা হলেও পর্যায়ক্রমে এটি রঙ হারিয়েছে। অর্থের ঝনঝনানিতে বিদেশী তারকা ক্রিকেটাররা শুরুর দিকে আগ্রহ দেখালেও নবম আসরে তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। একই সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দুবাইয়ে টি-টেন ও টি-২০ হওয়াতে এবং সেখানে বেশি অর্থ থাকায় ওদিকেই ঝুঁকেছে নামী-দামি তারকারা।
৬ জানুয়ারি উদ্বোধনী দিনে বেলা আড়াইটায় মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে মাঠে নামে সিলেট স্ট্রাইকার্স ও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। পর্দা নামবে ১৬ ফেব্রুয়ারি। প্রথম বারের মতো আইসিসি টিভি এবং ভারত, কাতার, ওমান, মালয়েশিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাসহ বিশ্বের ১৫টি দেশে বিপিএল সম্প্রচার করা হচ্ছে।
১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকায় পর্বের খেলা শেষে দুই দিনের বিরতি দিয়ে ১৩-২০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম পর্বের খেলা। এরপর ২৩ ও ২৪ জানুয়ারি ঢাকায় খেলা শেষে ২৭ জানুয়ারি থেকে হবে সিলেট পর্বের খেলা। এই পর্বের খেলা চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। এরপর বিপিএলের বাকি সব ম্যাচই ঢাকায় হবে। এলিমিনেটর ও প্রথম কোয়ালিফায়ারের পরদিন রাখা হয়েছে রিজার্ভ ডে। এ ছাড়া দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ও ফাইনালের পরদিনও থাকবে রিজার্ভ ডে।

সিইও হতে চাইলেন সাকিব আল হাসান
বিপিএলের শুরু আগে হঠাৎ করেই বিপিএলের কঠোর সমালোচনা করে বসলেন সাকিব আল হাসান। পৃথিবী সেরা এই অলরাউন্ডার বলেছেন, বিপিএলের ক্ষতি হয়েছে এবং এসব সমস্যা সমাধানে ম্যানেজমেন্টের ইচ্ছার অভাব রয়েছে। আমাকে সিইওর দায়িত্ব দিলে দু’মাসেই সব ঠিক করে দিবো। ট্রফি উন্মোচনের দিন বিপিএল নিয়ে সাকিবের বক্তব্যের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেন সাবেক টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।
বিপিএল কর্তারা জবাবে সাকিবকে আমন্ত্রণ জানান সিইও হতে। তবে এবার যেহেতু সাকিব খেলছেন, সেহেতু আগামী বছর থেকে তাকে দায়িত্ব নেয়ার কথা জানান বিপিএল চেয়ারম্যান শেখ সেলিম। কম গেলেন না সাকিব আল হাসানও। তিনি জানালেন, বিপিএল সিইও হবো কেন। হলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতিও হতে পারি।

ডিআরএস বিতর্ক
বিপিএলের শুরু থেকেই ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম (ডিআরএস) নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। বিসিবি বলেছে এডিআরএস নিয়ে কাজ চালাবেন। প্রশ্ন উঠেছিল অন্যান্য আয়োজকরা আইসিসি থেকে ডিআরএস সুবিধা পেলেও বাংলাদেশ কেন পাচ্ছে না। কারণ প্রযুক্তি ও লজিস্টিক সব কিছু পড়ে আছে কিন্তু লোকবল নেই। ম্যাচ শুরুর দ্বিতীয় দিনেই এডিআরএস নিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি হয়। তবে বেশি প্রভাব পড়ে চট্টগ্রাম পর্বে কুমিল্লা ও বরিশালের ম্যাচে। সকলের কথা মাঠের আম্পায়ার ভুল করাটা স্বাভাবিক কিন্তু থার্ড আম্পায়র টিভি রিপ্লেতে দেখে কেন ভুল করবেন। তারা কি কারো স্বার্থে কাজ করছেন।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স স্কোয়াড
দেশী : মোস্তাফিজ, লিটন, মোসাদ্দেক, তানভীর, ইমরুল, আশিকুজ্জামান, জাকের, সৈকত আলি, রনি, নাঈম হাসান, মুকিদুল,
বিদেশী : মোহাম্মদ রিজওয়ান (পাকিস্তান), শাহীন আফ্রিদি (পাকিস্তান), হাসান আলি (পাকিস্তান), খুশদিল শাহ (পাকিস্তান), মোহাম্মদ নবি (আফগানিস্তান), আবরার আহমেদ (পাকিস্তান), শন উইলিয়ামস (জিম্বাবুয়ে), চ্যাডউইক ওয়ালটন (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।

ঢাকা ডমিনেটর্স স্কোয়াড
দেশী : তাসকিন, মিঠুন, সৌম্য, শরিফুল, আরাফাত সানি, নাসির হোসেন, আল-আমিন, অলক কাপালি, মনির হোসেন, আরিফুল, মুক্তার আলি, মিজানুর, দেলোয়ার,
বিদেশী : শান মাসুদ, আহমেদ শেহজাদ (পাকিস্তান), উসমান ঘানি (আফগানিস্তান), সালমান এরশাদ, চামিকা করুনারতেœ (শ্রীলঙ্কা), দিলশান মুনাওয়ারা (শ্রীলঙ্কা)

চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স স্কোয়াড
দেশী : আফিফ, মৃত্যুঞ্জয়, শুভাগত হোম, মেহেদী হাসান, ইরফান শুক্কুর, মেহেদী মারুফ, জিয়াউর, তাইজুল, আবু জায়েদ, ফরহাদ রেজা, তৌফিক খান তুষার,
বিদেশী : বিশ্ব ফার্নেন্দো, আশান প্রিয়ঞ্জন (শ্রীলঙ্কা), কার্টিস ক্যাম্পের (আয়ারল্যান্ড), ম্যাক্স ও ডাউড (নেদারল্যান্ডস), উন্মুক্ত চাঁদ (ভারত)।

ফরচুন বরিশাল স্কোয়াড
দেশী : সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, মিরাজ, ইবাদত, বিজয়, কামরুল রাব্বি, ফজলে মাহমুদ রাব্বি, খালেদ আহমেদ, সাইফ হাসান, কাজী অনিক, সানজামুল, সালমান,
বিদেশী : ইফতেখার, হায়দার আলী, ওমর কাদির, ওয়াসিম জুনিয়র (পাকিস্তান), রাহমানুল্লাহ গুরবাজ, ইব্রাহিম জাদরান, করিম জানাত (আফগানিস্তান), রাহকিম কর্নওয়েল, কেসরিক উইলিয়ামস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ), চতুরাঙ্গা ডি সিলভা (শ্রীলঙ্কা)।

সিলেট স্টাইকার্স স্কোয়াড
দেশী : মাশরাফি, মুশফিক, শান্ত, রেজাউর রাজা, নাবিল সামাদ, তৌহিদ হৃদয়, রুবেল, জাকির হাসান, অপু, আকবর, শরিফুল্লাহ, তানজিম সাকিব,
বিদেশী : আমির, মোহাম্মদ হারিস (পাকিস্তান), রায়ান বার্ল (জিম্বাবুয়ে), কামিন্দু মেন্ডিস), ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, থিসারা পেরেরা (শ্রীলঙ্কা), টম মুরস, গুলবদিন নাইব (আফগানিস্তান) ।
খুলনা টাইগার্স স্কোয়াড
দেশী : তামিম ইকবাল, সাইফুদ্দিন, ইয়াসির চৌধুরী, নাসুম, নাহিদুল, মুনিম, সাব্বির, শফিকুল, প্রীতম, হাবিবুর সোহান, মাহমুদুল হাসান জয়,
বিদেশী : দাসুন শানাকা, পল মিক্রিন, আবিস্কা ফার্নেন্দো (শ্রীলঙ্কা), ওয়াহাব রিয়াজ (পাকিস্তান), নাসিম শাহ (পাকিস্তান), আজম খান (পাকিস্তান)।

রংপুর রাইডার্স স্কোয়াড
দেশী : নুরুল হাসান সোহান, শেখ মেহেদী, হাসান মাহমুদ, নাঈম শেখ, রাকিবুল, শামীম পাটোয়ারী, রিপন মন্ডল, রনি তালুকদার, পারভেজ ইমন, রবিউল, আলাউদ্দিন বাবু,
বিদেশী : শোয়েব মালিক, হারিস রউফ, মোহাম্মদ নাওয়াজ (পাকিস্তান), জেফ্রি ভ্যান্ডার্সি, পাথুম নিশাঙ্কা (শ্রীলঙ্কা), সিকান্দার রাজা (জিম্বাবুয়ে), আজমাতুল্লাহ ওমরজাই (আফগানিস্তান), অ্যারন জোন্স (যুক্তরাষ্ট্র)।

রাইডার্সের নিজস্ব অনুশীলন মাঠ
বিপিএলের ইতিহাসে এবারই প্রথম নিজস্ব মাঠে অনুশীলন করেছে রংপুর রাইডার্স। আছে ভিন্ন ঘরানার ম্যানেজমেন্ট, যারা এখন পর্যন্ত বিপিএলে পেশাদারিত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছে। একবার চ্যাম্পিয়ন হওয়া এই দলটি গত মৌসুমে ছিল না।
ঢাকা পর্ব শেষে কে কোথায়
ঢাকার প্রথম পর্বে মোট ম্যাচ হয়েছে আটটি, যার মধ্যে চারটিই খেলেছে সিলেট স্ট্রাইকার্স। বাকি দলগুলো খেলেছে দু’টি করে ম্যাচ। চার ম্যাচের সবগুলোতে জয় নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে ছিল মাশরাফির সিলেট। তারা প্রথম ম্যাচে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে ৮ উইকেটে, দ্বিতীয় ম্যাচে সাকিবের ফরচুন বরিশালকে ৬ উইকেটে, তৃতীয় ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে এবং সবশেষ ঢাকা ডমিনেটর্সকে ৬২ রানের হারায়।

টেবিলের দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল নুরুল হাসান সোহানের রংপুর রাইডার্স। কুমিল্লার বিপক্ষে ৩৪ রানের জয়ের পর সবশেষ ম্যাচে সাকিবের ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে হেরেছে।
ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ রান করেছেন সিলেট স্ট্রাইকার্সের তৌহিদ হৃদয়। চার ম্যাচে তিনটি অর্ধশতকে ১৯৫ রান। দ্বিতীয় স্থানে একই দলের ক্রিকেটার নাজমুল হোসাইন শান্ত। চার ম্যাচ এক অর্ধশতকে করেছেন ১৬৭ রান। বল হাতেও চমক দেখিয়েছে দেশী পেসাররা। চার ম্যাচে সিলেট স্ট্রাইকার্সের অধিনায়ক মাশরাফির সংগ্রহ ৭ উইকেট।
এ ছাড়া রয়েছেন আল আমিন। তার সেরা বোলিং ২৮ রানে ৪ উইকেট।

Share.

মন্তব্য করুন