আজকের দুনিয়ায় আমরা মোবাইলফোন দ্বারা একটি কাজ যত সহজে সম্পাদন করতে পারি প্রচীনকালে এমনটি ছিল না। তখন কোনো স্থানে যোগাযোগের জন্য মানুষকে সশরীরে যেতে হতো। চলতে হতো দিনের পর দিন। ধীরে ধীরে মানুষ বৈজ্ঞানিক চিন্তা ও সভ্যতার ধারাবাহিক বিকাশের সাথেই পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয় এই পৃথিবীর। একটি মোবাইলফোন মুঠোয় ভরে নিমিষেই দুনিয়া যে খবর আমরা দেখতে পাই সে অনুযায়ী প্রাচীনকালের দুনিয়ার কথা কল্পনা করা অনেক কঠিন ব্যাপার। ভাবাই যায়না মোবাইলফোন ছাড়া ছিল একটা দুনিয়া! সে যুগের কথা না হয় বাদই দিলাম। কারণ আজ বিশ্বের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে মোবাইলফোনের মাধ্যমে আমরা নিমিষেই যে কাজ বা কোনো বার্তা পৌঁছে দিতে পারি ২০০০ সালের কিছু পূর্বেও মানুষ এটা চিন্তাও করতে পারেনি। তখনও মানুষ এসব কাজ করতো চিঠির মাধ্যমে বা সশীরের গিয়ে। তাতে সময় এবং শ্রম উভয়ই ক্ষয় হতো। যদিও মোবাইলফোনের আগের যুগ ছিল টেলিফোনের। সেটা দিয়েও সময়, শ্রম ততোটা বাচানো যেত না। কেননা তার যুক্ত এই ডিভাইস সঙ্গে নিয়ে বাইরে যাওয়ার কোনো উপায় ছিল না। যার ফলে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল অসম্ভব। তাই যেকোনো কাজ সম্পাদনের জন্য আগে মানুষ বার্তা পৌঁছাতো টেলিফোনে। তারপর সশরীরে গিয়ে কাজটি সম্পাদন করতো। এ ক্ষেত্রে মোবাইলফোন একেবারেই আলাদা। এ ডিভাইস দ্বারা যেকোনো সম্পাদনের জন্য সে স্থানে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। ৯৫ ভাগ তারও বেশি কাজ এ ডিভাইসের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। বিজ্ঞানের আশ্চর্য আবিষ্কার এই মোবাইলফোন কিভাবে এই পর্যায়ে এলো সে ইতিহাস অনেক দূরূহ এবং হাস্যকরও বটে। যার জ্বলন্ত উদাহরণ আমেরিকান নাগরিক মোবাইলফোনের জনক মার্টিন কুপার। কুপার চিন্তা করলেন তারও ১০০শত বছর আগে টেলিফোন আবিষ্কার হয়েছে এই পৃথিবীতে। কিন্তু এটি দিয়ে সব সময় যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব নয়। তাছাড়া এটি সঙ্গে বহনযোগ্যও নয়। তিনি চিন্তা করলেন এমন একটি যন্ত্রের কথা যার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা সম্ভব এবং যা হবে বহনযোগ্য বা সঙ্গে রাখা যায়। এখন সেটা বাস্তবে প্রতিফলিত হলেও তখন সেটা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ছাড়া অন্য কিছু নয়। অবশ্য সে কল্পনার বাস্তব নমুনাও দেখা যায়। ষাটের দশকে আমেরিকায় স্টারট্রেক নামক একটি টিভি শো খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। এই টিভি শো’তে দেখা যায় অভিনেতারা হাতে একটি কমিউনিকেটর বা হাতঘড়ির মতো যন্ত্র দিয়ে সার্বক্ষণিক তাদের যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। যা ছিল ছোট এবং সহজে বহনযোগ্য।
কুপার তখন বিশ্বের বিখ্যাত প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মটোরোলা টেলিকম কোম্পানিতে কাজ করতেন। এই ডিভাইসটি দেখেই কুপার সর্বপ্রথম মোবাইলফোন আবিষ্কারের ধারণা মাথায় আসে। যেই চিন্তু সেই কাজ। ১৯৭৩ সালের এপ্রিল মাসে নিউইয়র্কে মার্টিন কুপার এক বিস্ময়ের জন্ম দিলেন। কুপার এবং তার দল পৃথিবীর প্রথম মোবাইল ফোনের প্রোটোটাইপ উপস্থাপন করেন। যা আজকের মোবাইলফোনের সাথে তুলনাই চলে না। কারণ সে মোবাইলফোন ছিল দৈর্ঘে ১০ ইঞ্চি ও প্রস্থে ছিল ২ ইঞ্চি। যা আকৃতিতে ছিল বিশাল এবং ওজনে ছিল প্রায় দুই কেজির মতো। শুধু কি তাই। এই মোবাইলফোনে কথা বললে মাত্র ৩০ মিনিটেই চার্জ ফুরিয়ে যেত। তারপর আবার ১০ ঘণ্টা চার্জ দিতে হতো সেটি। মাত্র ত্রিশটি নাম্বার সেভ করে রাখা যেত। সেই সঙ্গে মটোরোলা কোম্পানি হয়ে যান বিশ্বের প্রথম মোবাইফোন তৈরির খেতাব। তার মডেল ছিল DynaTAC 8000X। সেই মোবাইল দিয়ে ৩ এপ্রিল ১৯৭৩ সালে নিউ ইয়র্কের সিক্সথ অ্যাভিনিউ থেকে মার্টিন কুপার তার বন্ধু জোয়ায়ল ঈঙ্গলকে সর্বপ্রথম ফোন করেন। তার বন্ধু ছিল এটিঅ্যান্ডটি কোম্পানির একজন ইঞ্জিনিয়ার। সেসময় কুপার নিউ ইয়র্কের রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলেন। আবিষ্কারের পর সেই ফোন নিয়ে কত তামাশাই না করেছিল লোকেরা। কেউ বলতেন এটি একটি ইট বা দি ব্রিক (The Brick)। আবার অন্যরা বলতো সু ফোন (Shoe Phone)। তবে মার্টিন কুপার এর নাম দিয়েছিলেন ডায়নামিক অ্যাডাপটিভ টোটাল অ্যারিয়্যা কভারেজ; সংক্ষেপে ডায়নাট্যাক। লোকেরা হাসাহাসি করলেও সত্যিকার অর্থে ওই সময়ে এরকম একটি ফোন তৈরি করা ছিল এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। কুপারের সেই মোবাইল কালক্রমে আধুনিক থেকে অত্যাধুনিক হয়ে পৌঁছে গেছে মানুষের হাতে হাতে। যা আজ বিশ্বের প্রায় সকল মানুষ এই মোবাইলফোনের সুফল ভোগ করছে।

Share.

মন্তব্য করুন