ছেলেবেলা সবার জীবনের এক অনন্য ও মজার সময়। তেমনি রেজা, রাজু ও রুবেলেরও। তারা সমবয়সী। সব সময় একসাথে থাকে, একসাথে খেলাধুলা করে, একসাথে মিষ্টি মিষ্টি দুষ্টুমিগুলো করে। তাদের দিনগুলো বেশ আনন্দেই কাটে। তারা তাদের বাড়ির পাশে অবস্থিত নদীর পাড়ে খেলাধুলা, আনন্দ-ফুর্তি করে। কিন্তু তাদের প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা একটি করে স্বপ্ন ছিল। রেজার স্বপ্ন; সে অনেক বড় হবে, বড় হয়ে পড়াশোনা করে ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার হবে। নিজের ও বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করবে। আর রাজুর স্বপ্ন; সে পড়াশোনা করবে, পড়াশোনা করে অনেক বড় হবে। এ রকমভাবে তারা তিনজন প্রায়ই নদীর পাড়ে বসে বসে খেলাধুলা ও আনন্দ-ফুর্তি করে আর একে অপরের কাছে তাদের স্বপ্নের কথা শেয়ার করে। তাদের মধ্যে রুবেলের স্বপ্ন; সেও পড়াশোনা করবে, পড়াশোনা করে অনেক বড় ও ভালো মানুষ হবে।

একদিনের ঘটনা; পড়ন্ত বিকেল। দীপ্তিময় সূর্যের সোনালি আভা যখন ছড়িয়ে আছে প্রকৃতির মায়াবী মুখে। যে সময়টা রুবেলের পরম প্রিয়। তখন রুবেল জানালার পাশে বসা ছিল। সেখান থেকে নদীর পাড়ে চলে যায়। নদীর গা ঘেঁষা কয়েকটা গাছের বাতাসে দোল খাওয়া, সাথে বাড়ন্ত পাতাগুলোর নড়াচড়া। মাথার উপরে একঝাঁক অচেনা পাখি মিষ্টি মধুর কলরবে ডানা মেলে উড়ে যাওয়া। এ সবকিছু দেখতে দেখতে রুবেল ভাবনার জগতে চলে যায়। ভাবে, ইস! আমিও যদি পারতাম যেতে, ওই পাখিদের সাথে, স্বপ্নের ভুবনে, দূরে বহু দূরে! কিন্তু অসম্ভব আর অসাধ্য অক্ষমতার দুয়ার পেরিয়ে কি যাওয়া সম্ভব? পারবে না। তাই সে তার স্বপ্নের ছবি আঁকে হৃদয়ের ধূসর পাতায়।

মুঠো মুঠো শুভ্র মেঘ ভেসে যাচ্ছিল। কী জানি কোথায়! কোন্ ঠিকানায়! একটু দাঁড়ানোর অবকাশ যেন তাদের নেই। তার ব্যথা কি ওরা বোঝে? চোখ বন্ধ করে আবার তাকায়। তখনই স্থির, অটল-অনড় সূর্যের প্রতিবিম্ব তার দৃষ্টিতে প্রতিভাত হয়। সূর্য তো তার দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তোবা সে তার ব্যথা বোঝে। হয়তো চুপি চুপি সে বলছে- তুমি মেঘের দিকে তাকিয়ে কষ্ট পাও কেন? ভাবতে পারো ওরা সময়ের মতোই বাধাহীন। সময় যেমন কখনো দাঁড়িয়ে থাকে না। শত কামনা তুচ্ছ করে চলে যায় এই অবিরাম গতিতে। সময়কে তো আর দেখা যায় না। বরং মেঘকে দেখা যায়, এই মেঘ দেখেই তুমি উপলব্ধি করো, এই মেঘের মতোই ভেবে নাও সময়। এখন সে মেঘ হয়ে চলে যাচ্ছে। এই মেঘ দেখেই কিন্তু তুমি শিক্ষা নিতে পারো। মেঘ যেভাবে সময়ের চলন্ত রূপ নিয়ে সবকিছু পেছনে ফেলে চলে যায়। তেমনি তুমিও সকল অবসন্নতা, জড়তা, ব্যথা-বেদনা, দুঃখ-হতাশা, অপ্রাপ্তির বঞ্চনা আর না পাওয়ার বেদনা, নিরাশার প্রাচীর মাড়িয়ে এগিয়ে যাও সম্মুখপানে।

অতঃপর সে ভাবছে তাইতো! সময় যেমন থেমে থাকে না আমিও কেন নিশ্চল ভাবনার মাঝে ডুবে থাকব? সে তার সাথীদেরকে বললো, আজ থেকে আমাদেরকে সময়ের সাথে মিতালি করতে হবে। সে চলে যাচ্ছে যাক, তাতে ক্ষতি কী? আমরাও তার সাথে পাল্লা দিয়ে জীবনকে সফলরূপে এগিয়ে নিয়ে যাবো। আর আকাশের মতো উদার, পাখির মতো স্বাধীন, সাগরের মতো বিশাল মনের অধিকারী হতে আপ্রাণ চেষ্টা করব। আর সূর্যের কাছ থেকে শিক্ষা নেব তার মতোই যেন আমরা আলো ছড়িয়ে হেসে উঠতে পারি। অপসংস্কৃতির অন্ধকার দূরীভূত করে, সন্ধ্যার আঁধারে ডুবে না গিয়ে আলো ছড়াতে পারি, মানুষের মতো মানুষ হতে পারি। মোটকথা, তারা ছেলেবেলার স্বপ্ন ও ভাবনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে এবং সে অনুযায়ী জীবন গড়ার ও স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার প্রতিজ্ঞা করলো।

Share.

মন্তব্য করুন