প্রকৃতির রূপলীলায় সজ্জিত আমাদের বাংলাদেশ। মহান স্রষ্টা সৌন্দর্য দিয়ে সাজিয়েছেন আমাদের বাংলাদেশ, সৌন্দর্যের কারুকাজ মাখিয়ে দিয়ে করেছেন সম্পূর্ণ আনন্দময়!
ষড়ঋতুর দেশ আমাদের অপরূপ বাংলাদেশ। পালাক্রমেই আসে ছয় ঋতু। ছয় ঋতু বড়ই বৈচিত্র্যময়। এক এক ঋতু আসে এক এক সাজ নিয়ে, তখন বহুরূপে রূপায়িত হয় আমাদের প্রকৃতি। ষড়ঋতুর মধ্যে অন্যতম শীত ঋতু। এ ঋতুতেও বদলে যায় বাংলার প্রকৃতি। গাছে গাছে নতুন পাখি, নতুন ফল, নতুন ফুল, খেজুরের রস, ঘরে ঘরে রকমারি পিঠা। সবমিলিয়ে যেন অন্যরকম বাংলাদেশ। এটাতো গেল প্রকৃতিগত পরিবর্তন। কিন্তু জনজীবনে এর থেকেও বেশি ভয়ানক পরিবর্তন আসে। শীতে মানুষ জবুথবু হয়ে যায়। শীতের তীব্রতায় কুঁকড়ে-মুকড়ে শুয়ে-বসে থাকে। কাজে কামেও তেমন গতি থাকে না। সবার ভেতর আলসেমি ভাব থাকে। এই শীতে বেশি কষ্ট হয় দরিদ্র-অসহায় মানুষগুলোর। এদের না আছে পেটে ভাত, না আছে গায়ে কাপড়, না আছে থাকার জায়গা। অন্য দিকে ধনবান, বিত্তশালীরা শীতের কাপড় নিয়ে বিলাসিতা করে। আর গরিবেরা প্রয়োজনেরটিও পায় না, শীতের প্রকোপে প্রচণ্ড কষ্ট পায়।
পথশিশু, অসহায় বৃদ্ধ মানুষ রাস্তার পাশে কুঁকড়ে-মুকড়ে শুয়ে থাকে। একটি পাতলা চাদর বা কাঁথা গায়ে জড়িয়ে শুয়ে থাকে। কখনো কখনো চাদর, কাঁথাও জোটে না। পরনের কাপড়টাই গায়ে জড়িয়ে শুয়ে থাকে। এ চিত্র গ্রামে তেমন মেলে না। কিন্তু শহরের অলিগলিতে এমন চিত্র অনেক দেখা যায়। বিশেষ করে রাজধানী শহর ঢাকাতে এমন চিত্র অহরহ দেখা যায়। গুলিস্তান, পল্টন, শাহবাগ, গাবতলী, সায়েদাবাদ, কমলাপুর রেলস্টেশন এমন চিত্রে ভরপুর। সন্ধ্যার পরেই দেখা যাবে রাস্তার পাশে, ওভারব্রিজের নিচে, দোকানের পাশে এরা শুয়ে আছে। এ দৃশ্যগুলো দেখলে চোখে পানি চলে আসে। ছোট ছোট বাচ্চা আর বৃদ্ধ মানুষগুলোর জন্য বেশিই মন পড়ে। প্রচণ্ড শীতে থরথরিয়ে কাঁপতে থাকে এরা। আমরা কি এদের জন্য কিছু করতে পারি না? অল্পকিছু দিয়েও এদের শীত নিবারণ করতে পারি না?
সব দায়ভার যদিও সরকারের একার নয়। তবুও সরকারের দায়িত্ব বেশি। সরকার এদের ত্রাণ দিলেও তা এদের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায় না। আমাদের সমাজের নেতা নামক নরখাদকের পেটই ভরে না, ওদের কিভাবে দেবে? সরকারের ত্রাণতো ধাপে ধাপে উপর মহলের রাঘব- বোয়ালরাই গিলে ফেলে। আর শেষমেশ যতটুকু আসে, তাতে আর কারো পাতে দেওয়ার মতো থাকে না পেট ভরাতো দূরের কথা!
রাঘব বোয়াল বা উচ্চ শ্রেণির মানুষের এদের নিয়ে ভাবার সময় কই! তারাতো ব্যবসায়-বাণিজ্য, ব্যাংক-ব্যাল্যান্স, মিটিং-মিছিল নিয়েই ব্যস্ত থাকে। এরা মুখে মুখেই সহানুভূতি, সহমর্মিতার বাণী আওড়ায়, আর কাজের বেলায় নাই। তাই এই ছিন্নমূল মানুষের কথা আমাদের মধ্যবিত্তদেরকেই ভাবতে হবে। এ কাজটি তেমন কঠিনও নয়। আমরা চাইলে পারি এবং ভালোভাবেই পারি। আসুন না মিলে মিশে এক সাথে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করি। এ অসহায় মানুষদের সাহায্য করি। সম্পদের কিছু অংশ এদের জন্য ব্যয় করি। কিছু কম্বল আর শীতের কাপড় কিনে এদের মাঝে বিলাই। আজ এখানে, কাল ওখানে-এভাবেই সবার মাঝে বিলিয়ে দিই।
স্কুল, কলেজ, ভার্সিটির ছেলেমেয়েরাও এ কাজে অংশীদার হতে পারি। টিফিন, হাতখরচ বা টিউশনির টাকা বাঁচিয়ে শীতের কাপড় কিনে দরিদ্রদের মাঝে বিলাতে পারি।
তাছাড়া শহরের বিভিন্ন জায়গায় ‘মানবতার দেয়াল’ আছে। আমরা চাইলে সেখানেও কাপড় দিতে পারি। কিনে দিতে না পারলেও নিজের অতিরিক্ত কাপড়টাতো দিতে পারি। তাতেও কিছুটা শীত নিবারণ হবে।
আমাদের দেশের কথা, দেশের মানুষের কথা আমাদেরকেই ভাবতে হবে। কারোর উপর নির্ভর হয়ে বসে থাকলে চলবে না। তাই, আসুন প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গা থেকে উদ্যোগী হয়ে শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াই। শীতের কষ্টতো সবাই বুঝি। নিজের কষ্ট অনুভবের জায়গা থেকেই ছিন্নমূলদের জন্য ভাবি। বেশি নয়, প্রত্যেকে একটি কাপড় দিলেও যথেষ্ট হবে।
একটি একটি করে অনেক হবে। আমাদের একটি ওদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ওদের জীবন মরণ সমস্যা। বেঁচে থাকার উপায়। আমরা আমাদের মনটাকে উদার করি। এ উদারতার কারণে কত অসহায় মানুষের জীবন নিরাপদ হয়ে উঠবে তার কোনো হিসাব নেই।

Share.

মন্তব্য করুন