শত আলোচনা-সমালোচনাকে পেছনে ফেলে ২০ নভেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে ৯টায় কাতারের আল বাইত স্টেডিয়ামে হয়ে গেল কাতার বিশ্বকাপের বর্ণিল উদ্বোধন। কাতারের রাজধানী দোহা থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত এই স্টেডিয়ামটি দর্শক ধারণক্ষমতা ৬০ হাজার। উদ্বোধন শেষে প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হয় কাতার ও ইকুয়েডরের মাঠের লড়াই। স্বাগতিক কাতার হেরে যায় ২-০ গোলে, যা বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম। এর আগে কোনো স্বাগতিক দেশ বিশ্বকাপের শুরুর ম্যাচে হারেনি।
পৃথিবীর মানচিত্রে কাতার ছোট্ট একটি রাষ্ট্রের পক্ষে এত বড় আয়োজন নিয়ে ছিল শঙ্কা। বিশেষ করে ইউরোপিয়ান দেশগুলো শুরু থেকেই বিরোধিতা করে আসছিল। তবে আস্থা রেখেছিলেন তৎসময়ের ফিফা প্রেসিডেন্ট সেফ ব্লাটার। তাকে বিতর্কিতও করা হয়েছিল। বিশ্বকাপ মানেই নানা দেশের পর্যটক, দর্শকদের আগমন। তারা তাদের সংস্কৃতি প্রদর্শন করে থাকে আয়োজক দেশে। আয়োজক কাতার সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে কয়েক দিনের জন্য তারা তাদের ঐতিহ্য পরিবর্তন করতে পারবে না। কাতার সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে সমকামিতা, গার্লফ্রেন্ড নিয়ে হোটেলে থাকা, খোলামেলা পোশাক পরা, বিয়ার পান করা, উচ্ছৃঙ্খল গান-বাজনার বিপক্ষে। নানা সমালোচনা হলেও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ফিফার বর্তমান প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো কাতারের পক্ষ নিয়ে সকল সমালোচনার জবাব দিয়েছেন সুপরিসর মিডিয়ার সামনে। ইউরোপিয়ান সাতটি দেশ সমকামিতার পক্ষে ‘লাভ আর্মব্যান্ড’ পরে মাঠে নামার ঘোষণা দিলে ফিফা তাদেরকে বহিষ্কার করারও হুমকি দেয়।
এবারের বিশ্বকাপে অনেক কিছুই নতুন। উন্মাদনার কোনও খামতি ছিল না। মরুদেশে এই প্রথমবার বিশ্বকাপ হচ্ছে বলে কাতারের যে নিজস্ব সংস্কৃতি তা দেখার জন্য দর্শকরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন এবং বেড়াচ্ছেন। যে দেশে বিশ্বকাপ হয় সেই দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে বহির্বিশ্বের মানুষও মিলে যায়। ফুটবল জ্বরে কাঁপছে গোটা বিশ্ব। কাতার বিশ্বকাপের শুরু হয়েছে বেশ চমক জাগানিয়াভাবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মরুভূমির ছাপ, আরব সংস্কৃতি তো ছিলই।
মরুর বুকে ফুল ফুটিয়েছে আয়োজক কাতার। উদ্বোধনীতে করেছে বিশাল আয়োজন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন গানেম আল মুফতাহ। স্টেডিয়ামে স্থাপিত মঞ্চে ফ্রান্সের কিংবদন্তি ফুটবলার, ১৯৯৮ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক মার্শেল দেশাই প্রথমে বিশ্বকাপ ট্রফির প্রদর্শনী করেন। তুমুল করতালি এবং চিয়ার্স ধ্বনির মধ্য দিয়ে বিশ্বকাপ ট্রফি বরণ করে নেন দর্শকরা।
বিশ্বকাপের উদ্বোধনীতে সাধারণত আয়োজক দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি তুলে ধরা হয় বহির্বিশ্বের কাছে। এবারও এর ব্যত্যয় হয়নি। অনুষ্ঠানকে ঘিরে পুরো স্টেডিয়াম এলাকাজুড়েই ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। শুরুতেই পারফর্ম করেছেন কাতারের আঞ্চলিক শিল্পীরা। নাচ-গান এবং ভিজুয়াল প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন উপসাগরীয় দেশটির সংস্কৃতি। কাতারের আঞ্চলিক পারফরম্যান্সের মধ্যেই হুট করে মঞ্চে এসে হাজির হয়েছিলেন হলিউড কিংবদন্তি মরগান ফ্রিম্যান। মঞ্চে কয়েক মিনিটের উপস্থিতিতে দর্শকদের মাতিয়েছেন ‘দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশন’ সিনেমার বিখ্যাত এ অভিনেতা।
মরগ্যান ফ্রিম্যানের সঙ্গে মঞ্চে আসেন একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী গানিম আল মিফতাহ। এর মধ্যেই প্রদর্শিত হলো অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর পতাকা। মডেলদের দেখা গেলো প্রতিটি দলের জার্সি পরে মঞ্চে হাঁটতে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমেরিকার শিল্পী লিল ববি গাইলেন এবারের বিশ্বকাপের থিম সং ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ইজ ইওরস টু টেক’। আর থিম সং-এর সঙ্গে নাচলেন মরক্কোর নৃত্যশিল্পী মানাল ও রেহমা। তাদের সঙ্গে ছিল হার্ট থ্রব নোরা ফাতেহির উপস্থিতিও।
জনপ্রিয় ব্যান্ড বিটিএস সদস্য জাংকুক ‘ড্রিমার্স’ গানটি গাইলেন উপস্থিত দর্শকদের উদ্দেশ্যে। এ ছাড়াও ‘ব্ল্যাক আইড পিস’ ও রবি উইলিয়ামস গান গাইলেন। এই অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার গুঞ্জনও ছিল কলম্বিয়ান পপ তারকা শাকিরারও। তবে শেষ পর্যন্ত সেটি হয়নি। স্থানীয় সঙ্গীতশিল্পী ও নৃত্যশিল্পীদের সুযোগ দেয়া হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে টুর্নামেন্টের অফিসিয়াল মাসকট লা’ইবকেও উপস্থিত করা হয়। সবার শেষে আল বাইত স্টেডিয়ামের চারপাশ থেকে জ্বলে উঠলো কয়েক হাজার আতশবাজির আলোর ঝলকানি। অতঃপর ইতি টানা হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের।

গানিম আল মিফতাহ
কাতারেই জন্ম। মায়ের পেটে থাকতে কাউডাল রেগরেসোন সিন্ড্রোম নামের এক জটিল রোগ ধরা পড়ে তার। তাতে শরীরের নিচের অংশ বিকলাঙ্গ হয়ে যায় ধীরে ধীরে। জন্মের আগেই তাকে অপারেশন করে ফেলে দিতে বললেও রাজি হননি মুফতাহর মা। পরে ডাক্তাররা বলেছিলেন, তার ১৫ বছরের বেশি বাঁচার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। কিন্তু হাল ছাড়েননি মিফতাহ ও তার পরিবার। পেয়েছেন ফলও। গারসিয়া আইসক্রিম নামের একটি নিজস্ব কোম্পানি আছে মিফতাহর। কাতারে এটির আছে ছয়টি শাখা। স্বপ্ন দেখেন একদিন প্যারা অলিম্পিকে খেলার।
২০১৮ সালে টেড এক্স কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে একটি বক্তৃতার মাধ্যমে আলোচনায় আসেন গানিম। পরে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক পরিচিতি পান। ইনস্টাগ্রামে এক মিলিয়নেরও বেশি অনুসারী আছে তার।
অদম্য এই তরুণ থেমে থাকেননি এখানেই। স্কুলে থাকতে হাতে বুট লাগিয়ে খেলতেন ফুটবল, খেলেছেন আরও অনেক খেলাই। ওই সময়ই স্বপ্ন দেখতেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন। তিনি এখন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন নিজের পছন্দের বিষয়ে। এবারের বিশ্বকাপের অ্যাম্বাসেডরও তিনি। এ নিয়ে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘অ্যাম্বাসেডর হিসেবে আমি আমার সক্ষমতা দিয়ে আশা, সামগ্রিকতা, শান্তি ও মানবতার জন্য ঐক্যবদ্ধতার বার্তা ছড়িয়ে দিতে চাই।’
জীবনে অসম্ভব বলে যে কিছু নেই, তা প্রতি পদে পদে প্রমাণ করে চলেছেন গানিম। স্কেটবোর্ডিং থেকে সুইমিং। কী করছেন না! বাদ পড়েনি স্কুবা ডাইভিং আর হাইকিংও। উপসাগরীয় অঞ্চলের সর্বোচ্চ এই পবর্তশৃঙ্গও (৯,৮৭২ ফুট) জয় করেছেন গানিম।
গনিমের মতো শারীরিক সমস্যা নিয়ে জন্মানো বেশির ভাগ সাধারণ মানুষই হুইলচেয়ার ব্যবহার করবেন। কিন্তু তাহলে তো আর গনিম হয়ে ওঠা যায় না! গনিম নিজের ওয়েবসাইটেই এ বিষয়ে দর্শনটা পরিষ্কার করেছেন, ‘যা আমার নয়, তার দ্বারস্থ না হয়ে সৃষ্টিকর্তা জন্মের সময় যা যা দিয়েছেন, সেসবের পূর্ণ ব্যবহার করতে চাই।’

কিছু মানুষের চক্ষুশূল
ফুটবল বিশ্বকাপ এলেই কিছু মানুষের মধ্যে ধর্মের ব্যাপারটিকে সামনে নিয়ে আসেন। যদি আপনি ইসলাম ধর্মের কথা বলেন তাহলে এসকল খেলাধুলাকে আপনি কোনোভাবেই জায়েজ করতে পারবেন না। এই সকল খেলাধুলা শরিয়াহ বিরুদ্ধ। এখানে কোনো মুসলিম পরহেজগার খেলোয়াড় খেললেও সে ইসলাম বিরুদ্ধ কাজ করছে। এজন্য আপনি কোনো খেলোয়াড় মুসলিম বা দেশ হওয়ার কারণে অতি উৎসাহ দেখানোটাও সমীচীন নয়। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের দেশে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সমর্থক বেশি। এই দুটি দেশকে সমর্থন দিতে গেলে এক শ্রেণীর মানুষ বলে থাকেন ইহুদি নাসারার দেশকে সাপোর্ট করা তাদের পতাকা নিয়ে মাতামাতি করা চরম গুনাহর কাজ। যাই হোক সেটার বিস্তর বিশ্লেষণ করা মুফতি, মাওলানাদের কাজ।

মেসি-রোনালদো-নেইমার
বিশ্বমঞ্চে নিজেদের প্রিয় খেলোয়াড় লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও নেইমারের পারফরম্যান্স উপভোগের সময় কিছুটা হলেও বিষাদের ছায়া ভর করেছে ভক্তদের। কারণ আধুনিক বিশ্বের দুই সেরা মেসি, নেইমার ও রোনালদোর জন্য এটাই শেষ বিশ্বকাপ। ক্যারিয়ারে এখনো বিশ্বকাপের ট্রফিটি ছুঁয়ে দেখতে পারেননি এই ত্রয়ী। এই তিন সুপারস্টারের সামনে বিশ্বকাপ জয়ের শেষ সুযোগও এটি।
মেসি ও রোনালদো একে অপরের সাথে ব্যালন ডি’অরের ১৩টি ট্রফির মধ্যে ১২টি ভাগ করে নিয়েছেন, এর মধ্যে মেসি নিয়েছেন সর্বোচ্চ সাতটি। উভয়ই আঞ্চলিক সর্বোচ্চ টুর্নামেন্টের শিরোপা নিজ নিজ দেশকে উপহার দিয়েছেন। কিন্তু কখনই বিশ্বকাপের শিরোপা জিততে পারেননি। কাতার বিশ্বকাপ মেসির পঞ্চম বিশ্বকাপ। ২০০৬ সালে জার্মান বিশ্বকাপে অভিষেকে যখন তিনি গোল করেছিলেন তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৮। তার নেতৃত্বে ২০১৪ সালে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছিল। যদিও জার্মানির কাছে হারতে হয়।
এদিকে রোনালদোরও এটি পঞ্চম বিশ্বকাপ। গত বছর আন্তর্জাতিক গোলের তালিকায় ইরানের আলি দাইয়াকে পিছনে ফেলে শীর্ষস্থান দখল করেছেন। কিন্তু বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে কখনোই গোল করতে পারেননি। বছরের শেষে পর্তুগিজ এই অধিনায়ক ৩৮ বছরে পা রাখবেন। তারপরও শারীরিক ফিটনেসের দিক থেকে তিনি অনেককে পিছনে ফেলেছেন। এবারের মৌসুমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে করেছেন ২৪ গোল। মেসি-রোনালদো উভয়েই পঞ্চম বিশ্বকাপে গোল করেছেন। তবে মেসি এ নিয়ে চার বিশ্বকাপে গোল করেছেন। আর রোনালদো আরো একধাপ উপরে। তিনি পাঁচ বিশ্বকাপেই গোল করেছেন। এই বিরল রেকর্ড ফুটবল ইতিহাসে আর কারো নেই। ৫ বিশ্বকাপ মিলিয়ে মেসি ম্যাচ খেলেছেন ২১টি, গোল করেছেন ৮টি।
তবে বয়সের তুলনায় কিছুটা এগিয়ে ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার নেইমার। বয়স চলছে ৩০। সে হিসেবে পরের বিশ্বকাপে তার বয়স হবে ৩৪। ফর্ম বিবেচনায় এখনও নিয়মিত গোল করেন নেইমার। ফর্মে থাকলে হয়তো পরের বিশ্বকাপে দেখা যাবে নেইমারকে। তবে যেভাবে চোটের সাথে লড়াই করছেন তাতে আগামী বিশ্বকাপে যবনিকা টানতে পারেন সাম্বার এই ফুটবলার।

কাতার বিশ্বকাপে দামি ৫ দল
বিশ্বকাপের এই আসরে ৩২টি দলের মধ্যে সবচেয়ে দামি স্কোয়াড
১. ইংল্যান্ড : ইংল্যান্ড জাতীয় দল এবারের আসরে অন্যতম ফেবারিট। বিশ্বকাপে খুব একটা সফল না হলেও দলটির মূল্যটা কিন্তু সবার উপরে। ১.৩১ বিলিয়ন ইউরো তাদের মূল্য। সবচেয়ে দামি প্লেয়ার হ্যারি কেনের মূল্য ১০০ মিলিয়ন ইউরো।
২. ফ্রান্স : দ্বিতীয় স্থানে আছে আরেক হট ফেবারিট ফ্রান্স। দলটির মূল্য ১.০৬ বিলিয়ন ইউরো। তাদের সবচেয়ে দামি প্লেয়ার কিলিয়ান এমবাপ্পে। যার মূল্য ১৬০ মিলিয়ন ইউরো।
৩. ব্রাজিল : ল্যাতিন আমেরিকার জায়ান্ট ব্রাজিল এবারের আসরে হট ফেবারিট ব্রাজিলের মূল্য ১.০১ বিলিয়ন ইউরো। দলটির সবচেয়ে দামি তারকা ভিনিসিয়াস জুনিয়র। তার মূল্য ১০০ মিলিয়ন ইউরো।
৪. পর্তুগাল : ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল এবারের বিশ্বকাপে হট ফেবারিট না হলেও ডাক হর্স তো হতেই পারে। এই দলটির মূল্য ৮৪৪ মিলিয়ন ইউরো। দলটির সবচেয়ে দামি তারকা ব্রুনো ফার্নান্দেস, যার মূল্য ৯০ মিলিয়ন ইউরো।
৫. জার্মানি : এবারের আসরে হট ফেবারিট জার্মানি। চারটি বিশ্বকাপ জয়ী এই দলটির মোট মূল্য ৮০৪ মিলিয়ন ইউরো। দলটির সবচেয়ে দামি তারকা কিমিখের মূল্য ৮০ মিলিয়ন ইউরো।
বিশেষ বিমান
আর্জেন্টিনা সবশেষ বিশ্বকাপ জিতেছে ৩৬ বছর আগে। দেশটির একাধিক প্রজন্ম জানেই না বিশ্বকাপের জয়ের আনন্দ কী রকম। এবার বিশ্বকাপে অংশ নিতে কাতারে যাওয়ার জন্য আর্জেন্টিনার জাতীয় পতাকার রঙে বিশেষ বিমান তৈরি করেছে।
‘একটা দল, একটা দেশ, একটা স্বপ্ন’ স্লোগানটি লেখা রয়েছে বিশেষ বিমানের গায়ে। আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন আঁকিয়েছে মেসির ছবি। আরও আছে কোপা আমেরিকা জয়ের অন্যতম দুই কুশীলব আনহেল ডি মারিয়া আর রদ্রিগো ডি পলের ছবি। আর আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশনের লোগো তো ছিলই।

তিন নারী রেফারি
কাতার বিশ্বকাপে ৩৬ জন রেফারির মাঝে প্রথমারের মতো ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ইতিহাসের অংশ হওয়া তিন নারী রেফারি। তারা হলেন ফ্রান্সের স্টিফেনি ফ্র্যাপার্ট, রুয়ান্ডার সেলিমা মুকানসানগা ও জাপানের ইওসিমি ইয়ামাশিতা। সহকারী রেফারি হিসেবে আরো তিন নারী রেফারি ব্রাজিলের নুয়েজা ব্যাক, মেক্সিকোর কারেন দিয়াজ মেডিনা ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাথরিন নেসবিট।

বিশ্বকাপে কিছু দুর্দান্ত প্রযুক্তি
কিছু দুর্দান্ত প্রযুক্তির মাধ্যমে কাতার একটি যুগান্তকারী ইভেন্ট প্রদর্শনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। স্টেডিয়াম, কাতারের পরিবেশ, সামগ্রিক পরিবেশের মতো এই বিশ্বমানের ফুটবল টুর্নামেন্ট থেকে যা যা আশা করা যায় এমন সকল কিছুই থাকছে কাতার বিশ্বকাপে।
১. কুলিং প্রযুক্তি : মাঠের সঠিক তাপমাত্রা নিশ্চিত করতে শীতল করার প্রযুক্তিতে ডিজাইন করা হয়েছে। দর্শকদের এলাকা প্রায় ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় থাকবে। বাইরের তাপমাত্রা যাই হোক না কেন বিশেষভাবে ডিজাইন করা অগ্রভাগের মাধ্যমে ঠাণ্ডা বাতাস প্রবাহিত হওয়ার কারণে খেলোয়াড় এবং মাঠের দর্শকরা আরামদায়ক পরিবেশে থাকবেন।
২. নবায়নযোগ্য এনার্জি সলিউশন : স্টেডিয়ামের প্যারামিটার এবং পার্কিং লটে সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে।
৩. এলইডি লাইটিং : কাতারের সমস্ত স্টেডিয়ামে এলইডি লাইটিং করা হয়েছে। কারণ এলইডি লাইটগুলো এনার্জি এফিসিয়েন্ট, নন টক্সিক ও দীর্ঘস্থায়ী। রঙ-পরিবর্তনকারী এলইডি লাইটগুলো টুর্নামেন্টের উদ্বোধন ও সমাপ্তি এবং বিভিন্ন ধরনের প্রভাব প্রদর্শনের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।
৪. স্টেডিয়ামের ছাদ খোলা ও বন্ধ করা : তীব্র আবহাওয়ার অবস্থার উপর নির্ভর করে স্টেডিয়ামের ছাদগুলো খোলা ও বন্ধ করার জন্য পিছনে ও সামনের দিকে স্লাইড রয়েছে।
৫. স্মার্ট ওয়াইফাই এবং চার্জিং স্টেশন : এলপাম শেডিং উইন্ড টারবাইন সোলার প্যানেল এবং বাইফেসিয়াল ফটোভোলটাইক প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। ইউএসবি পোর্টের মাধ্যমে অথবা ওয়্যারলেসভাবে দ্রুত চার্জ করা যাবে। মোবাইল চার্জে দিয়ে অপেক্ষা করার সময় এলপামকে ওয়াইফাই হটস্পট হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
৬. দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য ডিজিটাল সামগ্রী : যা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ব্রেইলে রূপান্তরিত করার পরে ডিজিটাল কন্টেন্ট অ্যাক্সেস পেতে সাহায্য করে। এটি ব্যবহারের ফলে প্রতিবন্ধীরা অন্য সবার মতো বিশ্বকাপ ২০২২ উপভোগ করতে পারবে।
৭. সেন্সর ঘর : অটিজম সমস্যায় আক্রান্ত তরুণদের নিরাপদ এবং নিরিবিলি স্থান প্রদানের জন্য স্টেডিয়ামগুলোতে সেন্সর ঘর স্থাপন করা হয়েছে। ম্যাচ উপভোগ করতে তাদের জন্য সারি সারি ডেডিকেটেড আসনও রাখা হয়েছে।
৮. শার্টে ইলেকট্রনিকস ডিভাইস : বিশ্বকাপ চলাকালীন ক্রীড়াবিদ, বয়স্ক এবং দুর্বলদের চিকিৎসা জরুরি পরিস্থিতি এড়াতে সাহায্য করার জন্য এটি ব্যবহার করা হবে। একটি শার্টে সেন্সরের মাধ্যমে হার্টবিট, শ্বাস-প্রশ্বাস এবং হাইড্রেশন পরিমাপ করতে সক্ষম।
৯. বৈদ্যুতিক বাস : বিশ্বকাপ চলাকালীন বৈদ্যুতিক বাসগুলো ফ্যানদের স্টেডিয়াম এবং দোহার অন্যান্য অংশে নিয়ে যাবে। প্রকৃতপক্ষে, কাতারই প্রথম দেশ যারা একটি টুর্নামেন্টে এই বাসগুলো ব্যবহার করবে।

Share.

মন্তব্য করুন