বিজয়ের কথা বলতে হলে আগে বলতে হবে বিজয়ের আনন্দ ও মর্যাদার কথা। এই বিজয়ের জন্য এক সাগর পরিমাণ রক্ত দিতে হয়েছে আমাদের। নয় নয়টি মাস যুদ্ধ করে অনেক জীবন দিয়ে আমরা বিজয় পেয়েছি। এত রক্ত দিতে হয়েছে এত জীবনের বিনিময়ে যে বিজয় পেয়েছি আমরা তার তো গুরুত্ব অনেক বেশি হওয়ার কথা। তার মর্যাদাও অনেক অনেক হওয়াটা উচিত ছিলো। কিন্তু আমরা বিজয়ের সেই সম্মান কি দেখেছি! নাকি দেখতে পাই? বিজয় নিয়ে সেই আনন্দ কি আমাদের সমাজে পরিবারে আছে? বিজয়ের সেই মর্যাদাটুকু আমরা ধরে রাখতে পেরেছি নাকি? নাকি সম্মান রক্ষা করার কথা বলে আমরা নিজেদের সুযোগ সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করেছি শুধু। এখনও আজকের দিন পর্যন্তও আমরা নানান কায়দা কৌশল করে তাই করে যাচ্ছি। আমরা তেমন করে ভাবতেও পারিনি বিজয় দিবস নিয়ে! আমরা বিজয়ের সম্মানও রাখতে পারিনি মোটেই। আবার সম্মান রাখার কথা খুব শক্তভাবে ভাবতেও পারিনি এবং পারিনি যে সে কথাও আমাদের ভাবনায় জেগে ওঠে না।
আমাদের শিশু কিশোরেরা এখন বিজয় দিবস আসলে একটি আনন্দ করার সুযোগ পায়। কিন্তু আনন্দটা কেনো করছে সেকথা হয়তো সবাই জানেই না। অবাক বিষয় হলো যারা জানে না তারা জানার চেষ্টাও করে না। আবার আমরাও ঠিকভাবে জানাই না তাদেরকে। জানানোর চেষ্টাও খুব দুর্বল।
আজকের শিশু কিশোরদের জানতে হবে যে-
নয় মাস যুদ্ধ করে আমরা আমাদের গর্বের ও গৌরবের বিজয় অর্জন করেছি। যে বিজয় আমরা পেয়েছি সে বিজয়ের পঞ্চাশটি বছর পার হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। অথচ এই পঞ্চাশ বছরে আমাদের কত কিছুই না করার ছিলো। কত কত উন্নত হওয়ার কথা ছিলো। কত এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু আমরা এগিয়ে যেতে পারিনি। উন্নতি ঘটাতে পারিনি। কেনো পারিনি সে কথা আমাদের জানতে হবে। যে কারণে আমরা দেশকে এগিয়ে নিতে পারিনি সে কারণগুলো জানতে হবে বুঝতে হবে।
কোনো দেশের জন্য স্বাধীনতা বা বিজয়ের পঞ্চাশ বছর অনেক বড় সময়। বড় সময় বলতে আমরা বুঝি এই সময়ের মধ্যে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার কাজ করার যথেষ্ট সময় আমরা পেয়েছি। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে গেলো আমাদের ওপর দিয়ে। আমরা যে সময় পেয়েছি সে সময়ের সবটুকু কাজে লাগাতে পেরেছি কি? এটি একটি বড় প্রশ্ন। এই প্রশ্ন আজ আমাদেরকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। অথচ এর কোনো জবাব কিন্তু তাদের কাছে নেই যারা দেশ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। দেশের নেতা যারা তারা এর কোনো জবাব কিন্তু দিতে পারবেন না। কারণ তারা জানেন তারা নিজেরা তাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করেননি। যাদের ওপর দেশের পরিচালনার দায়িত্ব ছিলো তারা যদি কাজ না করেন তো কে করবে!
কাজ একেবারে হয়নি বা দেশ মোটেও এগিয়ে যায়নি এ কথা বলা যাবে না। কিন্তু যতটা উন্নত হওয়ার বা যতটা এগিয়ে যাওয়ার ততটা উন্নত হয়নি। ততটা এগিয়েও যায়নি।
আমাদের দেশে যারা মন্ত্রী এমপি হয়েছেন তারা কত দেশ ভ্রমণ করেন। কত দেশের রাজধানী দেখেন। দেখেন রাস্তা ঘাটসহ বিভিন্ন বিষয়ের সুন্দর সুন্দর ব্যবস্থাপনা। এসব দেখেও আমাদের মন্ত্রী এমপিদের মনে একটু স্বপ্নও জাগে না। একবার ভাবে না যে আমাদের দেশে ওসব দেশের মতো সুন্দর নিয়ম নীতি পরিচ্ছন্নতা এবং রাস্তা ও রাজপথ আমাদের দেশেও করা যায়! এমন স্বপ্ন কেনো জাগে না নেতা নেতৃবৃন্দের মনে! উন্নত দেশের মানুষগুলো সবাই নিজের কাজের প্রতি খুব মনোযোগী থাকে। অন্যের সমালোচনায় তারা একটু সময়ও ব্যয় করে না। ওসব দেশের নেতা বা শাসক যারা তারা সারাক্ষণ চিন্তা করে কিসে দেশের উন্নতি ঘটবে। কিসে মানুষের উপকার হবে। কি করলে কাজটি সহজে করতে পারবে মানুষ। আমাদের দেশেও কি সেই রকম নিয়ম পদ্ধতি চালু করা যায় না? নিশ্চয় যায়। কিন্তু হচ্ছে না কেনো তাহলে? হচ্ছে না কারণ আমাদের নেতা এবং শাসক শ্রেণি মানুষের উপকারের কথা একটুও ভাবেন না কিন্তু। যদি ভাবতেন তো আমাদের দেশের মতো সরল সহজ মানুষের দেশ হতো অনেক সুখের। আমরা মাছে ভাতে কিংবা দুধে ভাতে অথবা ডাল ভাতে সকলেই সুখে থাকতাম।
এখন তোমরা যারা যারা শিশু-কিশোর আগামী দিনের নাগরিক আছো তোমাদেরকে বড়ো হয়ে এদেশ পরিচালনার ভার নিতে হবে। কিন্তু কথা আছে। তার আগে তোমাদেরকে যোগ্য নাগরিক হয়ে বেড়ে উঠতে হবে। তোমরা হয়তো প্রশ্ন করতে পারো যে যোগ্য নাগরিক আবার কী? অথবা কিভাবে যোগ্য নাগরিক হওয়া যায়? যোগ্য নাগরিকের কথা আগে বলি। যোগ্য নাগরিক হলেন সেই ব্যক্তি যিনি দেশ পরিচালনায় অথবা সমাজ পরিচালনায় দক্ষতা অর্জন করবেন। দেশের কোথায় সমস্যা আছে এবং সেই সমস্যার সমাধান কী হতে পারে তা নির্ণয় করতে জানতে হবে। দেশের মানুষের প্রয়োজন কী! কোন কোন পদক্ষেপ নিলে দেশ ও সমাজের মানুষগুলো সুখে এবং শান্তিতে থাকতে পারবে এসব জানা থাকবে যার তিনি যোগ্য নেতা হবেন। এ ছাড়া যিনি যে বিষয়ে কাজ করতে চান তিনি যদি সে বিষয়টি খুব ভালো করে জানেন এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে পারেন তো তিনি যোগ্য নাগরিক।
এখন বলি যোগ্য নাগরিকের গুণগুলো কী কী হতে পারে। যোগ্য নাগরিকের জন্য প্রথমত ভালো শিক্ষা দরকার। সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। সততা থাকতে হবে একদমই। অসৎ লোক কখনও যোগ্য হতে পারে না। কারণ তার অসততাই সবচেয়ে বড় অযোগ্যতা।
সুন্দর চরিত্রের অধিকারী হতে হবে। যাকে আমরা বলি উত্তম চরিত্রবান। ভালো ব্যবহার থাকতে হবে মুখে এবং আচরণে। এ ব্যবহার থাকতে হবে ছোট বড় সবার সাথে। তাকে অবশ্যই বিনয়ী হতে হবে। নম্রতা না থাকলে মানুষ অকারণে অহঙ্কারী হয়ে ওঠে। আর অহঙ্কারী লোক দিয়ে উত্তম কোনো কাজ করার সুযোগ থাকে না। অহঙ্কারী মানুষ ন্যায় অন্যায় ভাবতে পারে না বা ভাবে না। সে তার ইচ্ছে মতো কাজ করার চেষ্টা চালিয়ে যায়।
যোগ্য নাগরিকের আরেকটি বড় গুণ হলো সে ইনসাফ করতে জানবে বা ইনসাফ করবে। ন্যায়ের ওপর অটল থাকবে। কাউকে ধোঁকা দেয়ার চিন্তা করবে না। অন্যের সম্পদ নিজে লুটে খাবে না বা কাউকে অন্যের সম্পদ খেতেও দেবে না। ধর্মের নিয়ম কানুন সুন্দর করে মেনে চলবে। এসব গুণ থাকলে একজন মানুষ যোগ্য নাগরিক হতে পারে। এমন যোগ্য নাগরিক হতে হবে তোমাদেরকে। তাহলে আমরা আমাদের বিজয়ের সঠিক ফলটি পাবো। বিজয় তখন সত্যিকার আমাদের হয়ে উঠবে। এবং যে বিজয় আমরা পেয়েছি সে বিজয় আমাদেরকে একটি সুন্দর ও সুখী বাংলাদেশ উপহার দেবে।

Share.

মন্তব্য করুন