ছোটবেলা গরু ও ছাগল পালনের অদ্ভুত এক শখ ছিল। আম্মাকে বারবার বলার পর দু’টি বাছুর কিনে দেন। যদিও মাস কয়েক পর বিক্রি করে দেন। ঠিকমতো লালন পালন হচ্ছে না তাই।
এরপর ভাইয়েরা মিলে বলতে থাকি ছাগল কিনে দিতে। অনেক কাকুতি মিনতির পর কিনে দেন। তার কয়েকদিন পর ছাগলটি মারা গেল। এভাবে তিনটি ছাগল মারা যায়।
শেষমেশ সাত আট মাস পর আবার ছাগল কিনে দিতে জোর দাবি জানাই। না বুঝাতে পেরে আবার কিনে দেন। কয়েকদিন পর ছাগলটির কোল আলোকিত করে দু’টি ছাগল ছানা উপহার দেয়। এই মন অদ্ভুত খুশি হয়েছিলো। যদিও তার কিছুদিন পর ছাগলটিসহ একটি ছাগল ছানা মারা যায়। কিছু শোক হলেও তেমনভাবে দুঃখবোধ জন্মেনি অন্যটিকে দেখে।
ছাগল ছানাটি চকচকে সাদা ও খুবই মায়াবী চেহারার ছিলো। সবসময় পাশে পাশে থাকতো। এমনকি ঘুমানোর সময় কম্বলের ভেতরে ঢুকে পড়তো মানুষের মতো। তার মুখে নাকে কিংবা গায়ে হাত বুলালে তাকে খুশি মনে হতো। মাঝে মাঝে দাঁত দেখাতে বললে দাঁত দেখাতো দারুণভাবে। মনে হতো সে আমার সকল কথা বুঝে। অন্য কেউ তাকে মাঠে চরাতে গেলে সে হেঁটে হেঁটে যায়। কিন্তু আমি নিয়ে গেলে সে আর হাঁটতে চায় না। আমার কোলে চড়ে যাবে বলে। আমিও তার ভাবসাব ভালো করে বুঝতাম। তাই তার সকল দাবি মেটানোর চেষ্টা করতাম। এভাবে একসাথে চলতে চলতে তার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ ভালোবাসার চর্চা হয়। সেও আমাকে ভীষণভাবে ভালোবাসতো। এমনকি তাকে ছেড়ে কোথাও বেড়াতে গেলে আমার মনে একটি শূন্যতা ভর করতো। অদ্ভুত দুঃখবোধ অনুভব করতাম। এভাবে দিনকাল ভালোই যাচ্ছিল। সেও অনেক বড় হয়ে যায় আমাদের হাসিখুশিতে।
হঠাৎ একদিন খেলা শেষে বাড়িতে এসে দেখি ছাগল ছানাটি ভীষণ যন্ত্রণায় ছটফট করছে। পেটও ফেঁপে উঠছে। তাড়াতাড়ি বাজার থেকে ঔষধ এনে খাওয়াই। তাতেও যন্ত্রণা কমার লক্ষণ নেই। তার এমন অবস্থা দেখে আমারও ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল। না পারছি সইতে, না পারছি কিছু করতে। একবার আল্লাহর কাছে দোয়া করতেছি আল্লাহ তাকে শেফা দাও, আরেকবার বলছি নইলে তার মৃত্যু দাও। যাতে তার কষ্ট লাঘব হয়। এভাবে তার পাশে বসে গভীর রাত হয়। হঠাৎ দেখি ছাগল ছানাটি মারা গেছে। তার মৃত্যুতে ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলাম। এমনকি মাস পর্যন্ত কারো সাথে কথা বলার মন মানসিকতা ছিলো না। তাকে হাওরে ফেলে দেয়ার সময় তার নাকে ও গালে একটা চুমু খেয়েছিলাম মনের সকল স্নেহ ভালোবাসা থেকে। এখনও কোথাও সাদা ছাগল ছানা দেখলে ফিরে তাকাই। আজও অবসর সময়ে তাকে খুব মনে পড়ে। দেখার ইচ্ছে জাগে। এই মন কেঁদে যায় একান্ত নীরবে।
Share.
