আমরা নতুন আমরা কুঁড়ি নিখিল বন-নন্দনে
ওষ্ঠে রাঙা হাসির রেখা জীবন জাগে স্পন্দনে।

প্রিয় বন্ধুগণ, তোমরা সুন্দর, তোমরাই সুন্দর বয়ে নিয়ে আসতে পারো। গতিময় এই সমাজে তোমরা বড় আদরের, বড় ভালোবাসার প্রিয় মুখ।
তোমাদের সুন্দর করে গড়ে তোলার জন্য তিনটি বিষয় খুব দরকার। তোমাদের স্বাস্থ্য রক্ষা, মানসিক বিকাশ ও চরিত্র গঠন। চলো বন্ধুরা, আজ আমরা তোমাদের মানসিক বিকাশের বিষয়টি আলোচনা করি।
মানসিক বিকাশ হলো- শিশুর আচার-আচরণ, চিন্তা-চেতনা, কথা বলা, অনুভ‚তি ও ভাবের আদান-প্রদানের ক্ষমতা অর্জন।
বন্ধুরা, তোমাদের জীবনে শারীরিক বিকাশ যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি মানসিক বিকাশও খুব দরকার। কিসে তোমাদের ভালো হবে এসব নিয়ে বাবা-মা সব সময় সচেষ্ট থাকেন।
বন্ধুরা, শরীর ও মন একে অপরের পরিপূরক। শরীর ভালো থাকলে মন ভালো থাকে। আর মানসিক সুস্থতা ও বিকাশ শারীরিক বিকাশেরই সহায়ক।
বুদ্ধিমত্তা, বিবেচনা শক্তি, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা- যে কোন কিছু করার ক্ষমতা, কাজের কৌশল শিক্ষা, খাপ খাওয়ানোর যোগ্যতা ইত্যাদি মানসিক বিকাশের উপাদান। এই সব জ্ঞান শুধুমাত্র বই পড়ে লাভ করা সম্ভব নয়। বন্ধুরা, এইসব জ্ঞান লাভ করতে দরকার কিছু কর্মসূচি। সেই কর্মসূচির মাধ্যমেই অভিজ্ঞতা অর্জন করা সম্ভব। শিশু-কিশোরদের প্রতিদিনের কাজগুলো- যেমন: খাওয়া-গোসল, পড়ালেখা, স্কুলে যাওয়া ইত্যাদি কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিনোদনের ব্যবস্থা করা খুব প্রয়োজন।
তোমরা নিশ্চয়ই আম্মু আব্বুর কাছ থেকে শুদ্ধ সুন্দর আদর মাখা ভাষা শুনতে পছন্দ কর। আব্বু-আম্মু যদি নরম ভাষায় বুঝিয়ে দেন কোন কাজটি করা উচিত আর কোনটি ঠিক নয়। তাহলে তোমরা সঠিক কাজটিই বেছে নেবে। তাই না? আম্মু তোমার পছন্দের খাবারটিই টেবিলে রাখার চেষ্টা করেন। সেটাও বুঝতে হবে। আম্মু-আব্বুর যেমন তোমাদের ব্যাপারে সদা সচেতন থাকা উচিত তেমনি তোমাদেরও তাদের কথা শোনা উচিত।
বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই মনে মনে চাও স্কুলে অন্যান্য ক্লাসের সাথে একটি বিনোদনমূলক ক্লাস থাকলে ভালো হতো। আমিও একমত। সাধারণ সব ক্লাসের সাথে একটি বিনোদনমূলক ক্লাসের ব্যবস্থা করা খুব প্রয়োজন। সে ক্লাসে বাচ্চাদের সাথে শিক্ষকগণও আনন্দে অংশ নেবেন। এ ব্যাপারে আমি সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
মজার গল্প, কবিতা আবৃত্তি, গান, বিভিন্ন ধরনের খেলা, টিফিনে সুন্দর নাস্তা, তোমাদের পছন্দ অনুযায়ী পোশাক কিনে দেওয়া ইত্যাদি কাজ তোমাদের আনন্দ দিতে পারে- তাইতো বন্ধুরা! আমিও তোমাদের সাথে একমত। আমি এবার সকল মা বাবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
একটানা স্কুলে যাওয়া এবং হোমওয়ার্ক করতে করতে তোমাদের মন এবং শরীরও ক্লান্ত হয়- তাই না বন্ধুরা! স্কুল আর পড়ার ফাঁকে চলো একদিন বাইরে ঘুরে আসি। হয়ে যাক একটি শিক্ষা সফর। তোমরা ছোট বলে শিক্ষা সফর না হওয়ার কোনো কারণ নেই। নতুন কোনো জায়গার নতুনত্ব উপভোগ করা যাবে এবং নতুন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যাবে। জায়গা পরিবর্তন মনে আনন্দের যোগান দেয়।
পাঠ্যবই পড়তে পড়তে আর ভালো লাগছে না, তাইতো? একটি কিশোর ক্ল্যাসিকাল আনন্দদায়ক বই পড়, কিংবা টেলিভিশনে কিশোর বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দেখতে পার। বছরে কয়েকবার পিকনিক তোমাদের যথেষ্ট আনন্দ দিতে পারে।
বন্ধুরা, তোমরা কি প্রতিদিন বিকেলে মাঠে কিংবা ছাদে খেলতে যাও? মোবাইল নিয়ে বসে না থেকে চলো প্রতিদিন মাঠে গিয়ে ফুটবল খেলি। যাদের মাঠ না আছে তারা ছাদে গিয়ে খেলতে পারি। চলো শারীরিক এবং মানসিক শক্তি অর্জন করি। চলো বন্ধুরা নির্মল প্রাকৃতিক বাতাসে উচ্ছল হয়ে উঠি। এভাবেই তোমাদের শরীরের সাথে মানসিক বিকাশ হবে। বলিষ্ঠ দেহ, আনন্দ উচ্ছল মন, প্রাণের চঞ্চলতা এই সবই খেলাধুলার সাথে জড়িত। সকল কাজে আনন্দ খুঁজে নিতে হবে বন্ধুরা। আনন্দহীন জীবনে সুন্দর মন তৈরি হয় না।
আধুনিক আর ডিজিটাল বাংলাদেশে তোমরা নেট ব্যবহার করছ, মোবাইল ব্যবহার করছ, তা ঠিক আছে কিন্তু ইউটিউব চ্যানেল বা অন্যান্য চ্যানেলেও অনেক অনেক শিক্ষার ব্যাপার আছে, অনেক সুন্দর কিছু আছে যা তোমাদের সঠিক আনন্দ দিতে পারে, সুন্দরের পথে নিয়ে যেতে পারে। এমন কিছু আছে যা তোমাকে অন্ধকারে ডুবিয়ে দিতে পারে। তোমাদের বুদ্ধি দিয়ে তোমরা সুন্দরের পথ বেছে নিও। তথ্য প্রযুক্তির যুগে তোমরা নিশ্চয়ই পিছনে থাকবে না। মোবাইল ব্যবহার করে দুই এক ঘণ্টা বিশ্বটাকে আপন হাতের মুঠোয় নিয়ে দেখ বন্ধুরা। সারাটা সময় একটি মেশিন নিয়ে পড়ে থেকো না। বন্ধুরা খোলা আকাশের নিচে জীবনকে উপভোগ করতে শেখো।
মাঝে মাঝে আব্বু-আম্মু, ভাই-বোন একসাথে বেড়াতে যাও সুন্দর কোন খোলা জায়গায়। মুক্ত বাতাস, খোলা জায়গায় সুন্দর চিন্তা করার সুযোগ হয়। চিড়িয়াখানায় যেতে পার নানা রকম পশু-পাখি দেখতে পারবে, তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে। এতে তোমার জ্ঞান ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হবে। তোমার মানসিক বিকাশ সাধন হবে। নতুন জায়গা পরিদর্শন করলে তোমাদের মনের ক্লান্তি দূর হবে।
বন্ধুরা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কিশোর মন সতেজ করে। তাদের সৃজনমূলক শক্তির বিকাশ সাধন হয়। আমাদের দেশে বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে। চলো বন্ধুরা, আমরা মাঝে মাঝে আমরা ঐসব জায়গা দেখতে যাই। কিছুদিন পর পর একদিন একদিন করে এক একটি ঐতিহাসিক স্থান দেখব এবং আমাদের অনেক কিছু দেখা হবে জানা হবে। এতে আমাদের বাঁধাধরা জীবনে বৈচিত্র্য আসবে। আমরা আনন্দ পাবো।
তোমাদের স্কুল ছুটি হলে চলো যাই নিজের গ্রামের বাড়িতে। হ্যাঁ বন্ধুরা, নিজের গ্রামের প্রতি মায়া বাড়াতে হবে। এভাবে দেশের প্রতিও ভালোবাসা জন্মাবে। দেশের মানুষদের ভালোবাসতে শিখবে। বন্ধুরা কে কে উপভোগ করেছ নিজ গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য? চলো যাই, গেলে তোমরা মুগ্ধ হয়ে যাবে। নিস্তব্ধ সকালে পাখির ডাকে ঘুম ভাঙা, চাঁদনী রাত, গ্রামের পাশ বয়ে চলা নদী, খাল-বিল দেখে কবিতা লিখতে ইচ্ছে করবে। গ্রামের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে কবিতা রচনা করতে পারবে, ছবি আঁকতে পারবে। এভাবে এইরকম বিনোদনের মাধ্যমেই তোমাদের মানসিক বিকাশ সাধন হবে।
আমাদের দেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা। সমুদ্রতীরে জোয়ার-ভাটা, সূর্য ওঠা, অস্ত যাওয়ার দৃশ্য দেখে তোমাদের কেমন লাগবে বন্ধুরা! একদিন চলো যাই সমুদ্র তীরে। ভ্রমণ এই রকম আনন্দ লাভের একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ মাধ্যম। শিশু-কিশোরদের বিনোদন লাভের জন্য ভ্রমণ একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। বন্ধুরা, এতক্ষণ আনন্দ লাভের জন্য যে বিষয়গুলো আলোচনা করা হলো সেভাবেই তোমাদের বিনোদন বা আনন্দ লাভ হবে।
তোমরা নতুন পথের যাত্রী। তোমাদের জীবনের প্রতিটি ধাপ হোক আনন্দময়। তোমাদের পথচলা হোক সুন্দরের আহŸানে। তোমরা এই দেশের, সমাজের স্বপ্ন-সারথি। তোমরাই আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশের কর্ণধার।

Share.

মন্তব্য করুন