কাল সন্ধ্যা থেকে মুন্নার খুব মন খারাপ। আজ স্কুলেও গেল না সে। অবশ্য স্কুলে আজ তিন পিরিয়ডের পর আর ক্লাস হবে না। স্পোর্টসের জন্য হিট, মানে প্রাকটিস হবে। ছেলেরা যে যে বিষয়ে নাম দিয়েছে সেই খেলাগুলো, মানে ওই দৌড়-ঝাঁপ, চাকতি নিক্ষেপ, লোহার বল ছোঁড়া ইত্যাদি করে শরীর ঝালিয়ে নেবে। খায়ের, রঞ্জু, রতন খেলাধুলায় পটু। স্পোর্টসে ওরা দৌড়ায়, হাই জাম্প দেয়। পুরস্কারও পায় কেউ কেউ। মুন্না এসবের মধ্যে নেই। প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলায় থাকতে কেউ তাকে দেখেনি কখনো। সে বরং আবৃত্তি করে, স্কুলের ‘কালচারাল উইক-এ অভিনয় করে।
স্বরচিত পদ্য পাঠ করে। সহপাঠী রতন, রঞ্জুরা তাকে কবি বলে ক্ষ্যাপাতে চায়। মুন্না অবশ্য ক্ষ্যাপে না। নিঃশব্দে মুল মুল করে মৌরি হাসি হাসে!
বেশির ভাগ সময়েই মুন্নার মুখ হাসি-হাসি। আজ তার সত্যিই মন খারাপ। আজ বিষণœœতায় পেয়েছে তাকে। মুন্না স্কুলে না গিয়ে এখন শুয়ে আছে পড়ার ঘরের সিঙ্গল বেডে। তার চোখ খোলা জানালার ভেতর দিয়ে এখন বাইরে, অনেক দূরে। আকাশে অনেকটা ওপরে তিনটা চিল পাশাপাশি উড়ছে। পাখা না নাড়িয়ে তারা খুব ধীর গতিতে উড়ছে ঘুরে ঘুরে। মুন্না ভাবে, এরকম ঘুরে ঘুরে ওড়ে কেন ওরা! অনেক উঁচু থেকে নামতে হলে ঘুরে ঘুরে উড়তে হয়?
মুন্নার মা, মনোয়ারা খাতুন, এক গ্লাস দুধ রেখে গেছে টেবিলের ওপর। গ্লাসের মুখটা পিরিচ দিয়ে ঢাকতে ঢাকতে বলেছে, তাড়াতাড়ি খেয়ে নিস; দেরি করিস না!
মনোয়ারা খাতুন চলে গেছে মিনিট পনের হলো। মুন্না এখনো শুয়েই। অন্য সময় হলে একটু পরে উঠেই ঢক ঢক করে মেরে দিতো। আজ তার মন ভালো নেই তো, তাই উঠবে উঠবে করেও উঠলো না এখনও। প্রথমে ‘বশিরুল আলম’ পরে ‘বিলকিস বানু’ নাম দুটো আবার মাথায় আসে মুন্নার। মুন্নার যে কীরকম লাগছে বোঝানো যাবে না! সে মনে মনে উচ্চারণ করে- ‘বশিরুল আলম’। দাঁত কিড়মিড় করে আবার বলে- ‘বশিরুল আলম’! এই বাশিরাই যতো ঝামেলার গোড়া। নাহলে এত কিছু হয়? বকাবাজি আর দু’চারটি ধমকের ওপর দিয়ে শেষ হয়ে যতো। দুধটা বোধ হয় জুড়িয়েই গেল, ভেবে মুন্না শোয়া থেকে উঠে বসেছে মাত্র ঠিক এই সময় কলিংবেল বেজে উঠলো। দরজা খুলে দিতেই দেখা গেল রতনকে। আয় আয় বলে তাকে ভেতরে ডেকে নেয় মুন্না। সে খেয়াল করে, রতনেরও মুখটা ভার-ভার। রতন পড়ে রংপুর হাই স্কুলে। ওখানে জেলা স্কুলের মতো এত কড়াকড়ি নাই। সে মাঝে মাঝেই ক্লাস ফাঁকি দেয়। হাতল অলা চেয়ারটার পা ছড়িয়ে বসেই বলে, কী থেকে কী হয়ে গেল, না?
মুন্না বলে, আর বলিস না!
রতন বলে, তোর কী মনে হয়? বিলকিসই ওর বপি কে লেলায় দিচ্ছে আমাদের এগনস্টে?
মুন্না জিজ্ঞেস করে, লেলায় দিবে ক্যান?
রতন যুক্তি দ্যায়, হিসাব সোজা। প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য! আমরা তো আর কম জ¦ালাইনি ওকে?
মুন্নার ঠোঁটে স্মিত হাসি। ও! আমরা যে ওকে নানান কথা বলে ক্ষেপাই সেটা মিন করলি? আমার তো মনে হয় ব্যাপারটা ও এনজয়ই করে। তা না হলে তো অনেক আগেই কমপ্লেন যেতো আমাদের নামে।
‘তোর মাথায় কী রে! রতন বিরক্ত হলে বলে, আমরা ওকে টিজ করতাম। সেটা ও কখনোই ভালোভাবে নেয়নি। তাছাড়া আগেরগুলো আর এবারের ঘটনা একরকম না। এবার আমরা ওকে চিঠি দিছি! আর সেই সুযোগটাই নিছে ও।
মুন্না বলে, বিলকিসকে আমার কখনো এমন মনে হয় নাই। তুই দ্যাখ কতো ফ্রেন্ডলি ও। আমাদেরকে কতো সাপোর্ট করে! বড় ম্যাচগুলোতে বান্ধবীদের দল নিয়ে মাঠে হাজির হবেই। খেলার সময় রঞ্জু বা ফজলু যখন দু’তিন জনকে পাশ কাটিয়ে গোল পোস্টের দিকে এগিয়ে যায়, গোল হয়-হয় অবস্থা তখন বান্ধবীদের মাঝখানে বসে, মাথার ওপর মুষ্ঠি হাত ছুঁড়ে সবচেয়ে বেশি চিল্লায় কে? বিলকিসই তো!
রতন এবার বলে, ঠিক আছে বুঝলাম। কিন্তু দোস্ত মেয়েরা যে কী চিজ তুই জানিস না। আমি একটু একটু জানি। ওই ঘটনার পর নিশ্চয় এর বাপ ঠেসে ধরছিলো বিলকিসকে। আর চাপে পড়ে মেয়েটাও নিশ্চয় বলছে তার কোনো দোষ নাই। যতো দোষ নন্দ ঘোষ!
এবার বিষয়টা ঢোকে মুন্নার মাথায়। সে ভাবে, হতে পারে, নট ইম্পসিবল। যে দেমাগি মেয়ে! তাছাড়া আমরা ওকে যতটা বন্ধু ভাবি সে আমাদেরকে ততটা নাও ভাবতে পারে! মুন্না হঠাৎ অন্য মনস্ক হয়। এখন সে নিজেকে দেখতে পাচ্ছে বন্ধুদের মাঝখানে। রতন, খায়ের, রঞ্জু আর মুন্না চার বন্ধু জড়ো হয়েছে চাঁদমারির মাঠে : এই মাঠ থেকে বিলকিসদের বাসা তিনশ/সাড়ে তিনশ গজের বেশি হবে না। বাড়ির তিন দিকেই গাছপালা। আম কাঁঠাল জাম গাছগুলো বেশ উঁচু। একটা দিক অবশ্য ফাঁকা আছে। তবে স্পেস অল্প। খুব হলে দশ-বারো হাত হবে। ওই অপরিসর খোলা স্থান দিয়ে ঘুড্ডি নামাতে হবে। সেটা একেবারেই সহজ কাজ নয়। নেপালের পাহাড়ি এয়ারপোর্টে প্লেন ল্যান্ড করানোর মতো কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ। রতনের হাতে লাটাই ও ঘুড্ডি। অতিরিক্ত আরেকটা ঘুড্ডি মুন্নার হাতে।
প্রথমটা টার্গেট মিস করে যদি গাছের ডালে আটকে যায়, তাহলে দ্বিতীয়টা ওড়ানো হবে। সেজন্য চিঠিরও অতিরিক্ত কপি রেখেছে ওরা। ঘুড্ডি নামানোর কাজটা রঞ্জু করতে চেয়েছিল। খায়ের ভেটো দিয়েছে। তার কথা হলো, রতন ঘুড্ডি ওড়ানোর ওস্তাদ। কাইট ফ্লাইং কার্নিভ্যালে সে প্রত্যেক বছর ফার্স্ট/সেকেন্ড হয়। অতএব এই কাজে সেই সবচেয়ে ফিট।
মুন্না ঘড়ি দেখলো। পাঁচটা চব্বিশ!
রতন অনুমতি চায়, উড়ায় দেই; কি বলিস?
মুন্না বলে, আরে নাহ! আরেকটু পরে, এই ধর দশ/বারো মিনিট।
রতন দুই হাতের তালুতে লাটাই রেখে বেশ কায়দা করে অনেকক্ষণ ঘোরায়। সে দেখে নিলো লাটাই ঠিক আছে কিনা। কারণ ঘুড্ডিকে গোত্তা খাওয়ানোর আগে হঠাৎ সুতা ছেড়ে দিতে হয় কিছুক্ষণ। তারপর ঘুড্ডির মাথা একদিকে কাত হয়ে পড়লে সুতায় হ্যাচকা টান মেরে কাজটা শেষ করতে হয়। অনেক সময় সেটা একবারে হয় না। দু’বার বা তিনবার গোত্তা খাওয়াতে হয় ঘুড্ডিকে। শেষ মুহূর্তটাই সবচেয়ে ইম্পরট্যান্ট। স্থানের সুবিধা/অসুবিধা বুঝে গন্তব্যের পঁচিশ-তিরিশ হাত ওপরে থাকতেই লাটাই থেকে সুতা অনবরত ছেড়ে দিতে হয় ঘুড্ডি জায়গা মতো না পৌঁছা পর্যন্ত। লাটাইয়ের মুভমেন্ট স্মুথ না হলে অসুবিধা। সেজন্য রতন একটু পরীক্ষা করে নিলো।
পাঁচটা আটতিরিশ বাজে। চমৎকার বিকেল। আলো বেশ স্পষ্ট। আর বাতাসও দিচ্ছে মুলমুল করে। রঞ্জুকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল বাড়ির ভেতরে, মানে উঠোনে স্পেস কতখানি তা দেখে আসার। গতকাল সকালেই সে বুদ্ধি খাটিয়ে সেটা করেছে। আজ তার কাজ ছিল, যে ফাঁকা জায়গাটা দিয়ে ঘুড্ডি নামানো হবে তার আশেপাশে বা কাছাকাছি কোনো তার বা দড়িটড়ি আছে কিনা সেটা দেখে আসা। রঞ্জু এসে বললো, ঠিক আছে; কোনো সমস্যা নাই।
রতন বললো, তাহলে এবার শুরু করতে পারি আমরা?
সবাই সম্মতি জানালো। মুন্নার হাত থেকে ঘুড্ডিটা নিয়ে খায়ের কিছুদূর হেঁটে গেল। দু’ পা ফাঁক করে দাঁড়িয়েছে সে। ঘুড্ডির দুই কাঁধ সমানভাবে ধরে তার মাথা বরাবর রেখে ওটা উড়িয়ে দিলো। খায়েরের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে আর রতনের হাতে থাকা লাটাইয়ের সুতার টান খেয়ে লাল ঘুড্ডিটা এখন তরতর করে উঠে যাচ্ছে ওপরে। দেখতে দেখতে অনেকখানি ওপরে উঠে গেল ওটা।
রঞ্জুর ঘড়িতে এখন ঠিক পাঁচটা তেতাল্লিশ। হ্যাঁ, এটাই উপযুক্ত সময়। ঠিক সময়ই বেছে নিয়েছে ছেলেরা। বিলকিস বানু লাঞ্চের পর এক-দেড় ঘন্টা রেস্ট নেয়। তারপর ঘন্টা দু’য়েক কাটায় পড়ার টেবিলে। সাড়ে পাঁচটা বাজলে আর সে স্টাডিতে থাকবে না। এই সময়টা সে ভেতর-উঠোনে আধা ঘন্টা পায়চারি করবে। ফুল গাছগুলো দেখবে। ফুলগাছের গোড়ায় পানি দেবে। মোটকথা এই তিরিশ-চল্লিশ মিনিট সে উঠোনে বা তার আশেপাশেই থাকবে। সুতরাং এই সময়টার মধ্যে ঘুড্ডি নামানোই সবচেয়ে নিরাপদ ও সুবিধাজনক। কেননা তাহলে ঘটনাটা তার চোখের সামনেই ঘটার কথা। একটা ঘুড্ডি উঠোনে পড়ে যেতে দেখলে সে এগুবে না? আর কাছে গেলেই তো দেখতে পাবে তার গায়ে একটি চিঠি সাঁটানো! সেই চিঠি সে না নিয়ে পারবে না।
ঘুড্ডি উর্ধ্বাকাশে ওঠার দু’তিন মিনিটের মধ্যে বিলকিসদের বাসা বরাবর উপরে পৌঁছে গেল। পাশে একটা কড়ই গাছ আছে। ওই গাছটা এড়িয়ে আরেকটা গোত্তা খাওয়াতে হবে ঘুড্ডিটাতে। রতন এখন সুতা ছাড়ছে। খায়ের বলে, আর ছাড়িস না, এনাফ হইছে। এবার টান দে! ঘুড্ডি এ মুহূর্তে লাট খাচ্ছে। প্রথম টান দেয়ার পর পরই ওটার মাথা বাম দিকে কাত হয় এবং ওই ভাবেই কিছুক্ষণ থাকে। রঞ্জু বলে, এই তো! আর দেরি করসি না! ফাইন্যাল টানটা এবার মার। রতন দেখলো, মোটামুটি ঠিক আছে। তবে মাথাটা আরেকটু কাত করাতে পারলে পারফেক্ট হয়। এ অবস্থায় গোত্তা দিলে কড়ই গাছের ঝুঁকে পড়া সামনের ডালটায় ঘুড্ডি আটকে যেতে পারে। রতন অতএব জায়গা বদল করে। সুতা অল্প একটু ছাড়ে। আবার টান দেয়। আবার ছাড়ে। হ্যাঁ মাথাটা এবার ঠিক অ্যাংগেলে কাত হয়েছে মনে হচ্ছে। রতন এই মুহূর্তটার জন্য ওয়েট করছিল। সে আর এক সেকেন্ডও দেরি করে না। লম্বা টান দিয়ে লাটাই সমেত কয়েক পা পিছিয়ে আসে। কড়াইয়ের ওই ঝুঁকে পড়া ডালটার পাশ দিয়ে ঘুড্ডি এখন সাঁই সাঁই করে নেমে যাচ্ছে বিলকিসদের বাড়ির উঠোনের দিকে! এ পাশের উঁচু আমগাছের ঝাড়ের আড়াল হলে ঘুড্ডিটা রতনদের দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে গেল। আর তখন রতন কায়দা করে সুতা ছাড়ছে; সুতা ছেড়েই চলেছে। একটু পরে সে ঘুরন্ত লাটাই থামিয়ে দেয়। মুন্না সংশয় মেশানো গলায় বলে, কীরে? জায়গা মতো পড়ছে তো, কী মনে হয়?
রতন মুচকি হাসে, পড়ছে মানেএ? বিলকিসের একদম কলিজার ভিতরে ঢুকে গেছে! কাল যখন ওরা স্কুলে যাবে রিআ্যাকশনটা টের পাবি। তারপর রঞ্জুকে বলে, চিঠিটা তুই ঠিকমতো লাগাইছিলি তো?
রঞ্জু মজা করে, জি¦ কমরেড! উড়ানোর আগে চেকও করি দেখছি, ঠিকমতো আছে কিনা।

মুন্নার আম্মা দু’টো পিরিচে করে দু’বন্ধুর জন্য সুজির হালুয়া দিয়ে গেছে। মহিলা এখন চায়ের পানি বসাবে স্টোভে। একটা পিরিচ হাতে তুলে নেয় রতন, কোথাকার পানি কোথায় গড়ায় শেষ পর্যন্ত, কে জানে! এখন আমার কি মনে হচ্ছে জানিস, ঘুড্ডিটা কড়ই গাছের ওই ডালে আটকে গেলেই ভালো হতো! খালার বাসায় বেড়াতে যাওয়ার আর টাইম পেলো না মেয়েটা!
মুন্না বলে, যাই বল, ওইভাবে চিঠি পাঠানো আমাদের মোটেই ঠিক হয়নি।
রতন নিঃশব্দে হালুয়া খায়। তিন/চার চামচ খেয়ে বলে, তবে ঘুড্ডিতে করে চিঠি পাঠানোর আইডিয়াটা কিন্তু চমৎকার। তোর বুদ্ধির প্রশংসা করতেই হবে।
মুন্না বিষাদমেশানো কণ্ঠে বলে, রাখ তোর আইডিয়া! জানিস, কাল সন্ধ্যা থেকে আব্বা আমার সাথে কথা বলতেছে না! এটা আমাকে বেশি কষ্ট দিতেছে।
এত ঘাবড়াস না তো! দু’দিন পর দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে। মুন্না বলে, রতন, মুরুব্বিরা আমাদেরকে কান ধরে উঠবস না করালেও পারতো; বকাঝকা তো কম করেনি। আবার…
রতন বলে, তবু ভালো দশবার উঠবস করতে হয়েছে। পঞ্চাশ বার করতে হয়নি! বলে মিটমিট করে হাসে।
মুন্না অপমানিত, ব্যথিত। মুন্না ক্ষুব্ধ মুরুব্বিদের ওপর। কিন্তু কিছু করার ছিল না তার; তাদের। সে এখন বেদনাহত কণ্ঠে বলে, তুইই বল, চিঠি দিছি ঠিক আছে। কিন্তু ওই চিঠিতে আমরা তো খারাপ কিছু লেখি নাই তাই না? রতন বলে, খারাপ কথা লিখবো কেন? ওসব করে নোংরা ছেলেরা। আমরা তো ওরকম না। আমরা একটু দুষ্টু! তাছাড়া আমরা এখনও ছোট!
রতনের কথা বলার স্টাইল দেখে মুন্না বিষণœ ভঙ্গিতে হাসে। তারপর বলে, কোনো কিছুই তোকে স্পর্শ করে না। তুই পারিসও বটে!
রতন বলে, এখন ভুলে গেছি। কিন্তু আমারও কম খারাপ লাগেনি ফ্রেন্ড। অতগুলো লোকের সামনে কান ধরে উঠবস! ওফ, ভাবা যায় না!
ওসব হতোই না, বুঝলি; মুন্না যুক্তি দেয়, ওই গান্ডুটাই যতো ঝামেলা পাকালো, দেখলি না?
কার কথা বলতেছিস?
আরে এ ওই যে-, শান্টু না মন্টু কী যেন নাম! ওই লোক বিলকিসের মামা। শালিশের জমায়েতে ওই তো সবচেয়ে বেশি পটর পটর করছে!
রতন বলে, ওই তো চিঠিটা পড়ে শোনাইছে সবাইকে! ওইটা বহুৎ ফাজিল!
মুন্নার চোখ এ মুহূর্তে মেঝের ওপর। দুই উরুর মাঝখানে দু’হাত ঝুলিয়ে সে বিছানায় বসে আছে। রতন সামনে চেয়ারে বসা। রশীদ আঙ্কেলের তাকে লক্ষ্য করে বলা ‘পালের গোদা’ কথাটা মুন্নাকে বিঁধছে এখনো। বিঁধবে আরো কয়েকদিন। সে দেখতে পাচ্ছে, ওই গান্ডু, মানে বিলকিসের মামার হাতে সেই চিঠি। লোকটা অভিনয় করে পড়ে যাচ্ছে, ‘তুই তো আমাদেরই বন্ধু। বিলকিস, আমরা তোকে কতো ভালোবাসি। তুইও আমাদেরকে পছন্দ করিস! তারপরও দেমাগ দেখাস ক্যান? তোর এত দেমাগ ক্যান রে! এখন থেকে আমাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবি। আর দেমাগ দেখাবি না, কেমন?…’

Share.

মন্তব্য করুন