আমরা জানি, ব্যাঙের কোনো লেজ নেই। যদি টিকটিকির মুখের দিকে তাকাই, কী দেখা যায়? আমরা দেখি, টিকটিকির গাল নেই। গাল বলতে যা আছে, তা অতিমাত্রায় চ্যাপ্টা। ঘাড়ের সঙ্গে লাগানো। অদ্ভুত একটা আকার। সব সময় কিন্তু এমনটা ছিল না। আদ্যিকালের উগান্ডায় ব্যাঙের বড়োসড়ো লেজ ছিল। টিকটিকিরও সুন্দর গাল ছিল। সেসব কেন, কিভাবে উধাও হয়ে গেল? এই গল্পে আছে এই দু’টি প্রশ্নের উত্তর।
সে বহু বহু কাল আগেকার কথা। এক ছিল টিকটিকি। এক ছিল ব্যাঙ। টিকটিকির বসতি ঘন ঝোপালো শ্যাওড়া গাছে। ডালে ডালে দিনভর মহানন্দে হুটোপাটি করে বেড়ায় সে। পোকা-মাকড় শিকার করে খায়। বেশ চলে যায় দিনকাল। শ্যাওড়া গাছের অদূরেই বিরাট একটা পুকুর। তার মধ্যিখানে ব্যাঙের আস্তানা। ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ ডাকাডাকি করে, রকমারি খানা-খাদ্য খেয়ে বেশ আছে সে। সুখ-শান্তির কোনো অভাব নেই।
দু’জনার মধ্যে বন্ধুত্ব হলো। ব্যাঙ আর টিকটিকির মধ্যে। একজন থাকে স্থলভাগে। অন্যজন জলাশয়ের বাসিন্দা। তাতে কী! বন্ধুত্ব ওদের গাঢ় হলো দিনকে দিন। রোজই আড্ডা, ঘোরাফেরা, গল্পগুজব হয় চুটিয়ে। কখনো সখনো দুই বন্ধু বেড়াতেও বেরোয় এক সঙ্গে। ভালোই কাটছে সময়।
বন্ধুতা আরো গাঢ় এবং স্থায়ী করা দরকার। দু’জনেই এ ব্যাপারে একমত। সেটা করতে হলে পরস্পরের বাড়িঘর কেমন চেনাজানা দরকার। বন্ধু কোথায় কিভাবে কোন্ পরিবেশে থাকে, কিসব খায় দায়, সেটা জানা থাকলে ভালো। এই ধরনের চিন্তা প্রথমে এলো টিকটিকির মাথায়। একবার টিকটিকির জন্মদিন উপলক্ষে ভোজের আয়োজন করা হলো তার বাড়িতে। ঠিক হলো, এই খানাদানার অনুষ্ঠানে দাওয়াত করা হবে তার ব্যাঙ বন্ধুকে। ব্যাঙ এই দাওয়াত পেয়ে মহাখুশি। পরানের বন্ধুর বাড়িতে যাওয়ার চমৎকার সুযোগ পাওয়া গেল একটা। যেতেই হবে। নতুন, রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হবে এই দাওয়াতে গেলে। উহ, দারুণ হবে। টিকটিকি বন্ধুকে প্রাণ খুলে অজস্র ধন্যবাদ জানায় ব্যাঙ।
যেদিন ভোজ, ঠিক সময়ে ব্যাঙ এসে হাজির। থপথপিয়ে লাফাতে লাফাতে চলে এলো ব্যাঙ। শ্যাওড়া গাছের নিচে এসে থমকে দাঁড়াতে হলো তাকে। আর এগোনো যাচ্ছে না। কী কারণ? ব্যাঙ তো গাছে উঠতে জানে না। জন্মেও কোনোদিন কোনো গাছে ওঠেনি সে। তার দরকারই হয়নি আসলে। সে জলচর প্রাণী। পানিতে জন্ম। সেই পানিতেই বেড়ে ওঠা। বসবাস মরণ অবধি। গাছে উঠবে কেমন করে? হতবুদ্ধি হয়ে বসে পড়েছে ব্যাঙ। মনটা দারুণ খারাপ। কিভাবে বন্ধুর নেমন্তন্ন রক্ষা করবে, গালে হাত দিয়ে সেটাই ভাবছে বসে বসে। তার যে লম্বাটে পা, সেগুলো সাঁতার কাটবার উপযোগী। গাছে ওঠার জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়। কী আর করা! হতবুদ্ধি হয়ে ভ্যাবলার মতো বসে থাকতে হচ্ছে।
একটু পর হইহই শোনা গেল। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন নিয়ে হইচই করতে করতে টিকটিকি এসে হাজির ঘটনাস্থলে। ওই তো প্রাণের বন্ধু চলে এসেছে তার। ব্যাঙকে দেখে উচ্ছ¡সিত কণ্ঠে বলে, আরে তুমি এসে গেছো তাহলে? এসো এসো বন্ধু। আমার বাড়িতে স্বাগত জানাই তোমাকে। এতক্ষণ ধরে তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম আমি।
ব্যাঙ প্রত্যুত্তরে বলে, বেশ বেশ। ধন্যবাদ তোমাকে। তা একটা যে সমস্যা হয়েছে বন্ধু। তোমার বাসা তো গাছের ওই মগডালে। আমার পক্ষে কিন্তু এতটা উঁচুতে ওঠা সম্ভব না। গাছ বেয়ে ওঠার কায়দা-কৌশল ভাই আমার একটুও জানা নেই। বুঝতে পারছি না, এই জটিল সমস্যার সমাধান এখন কিভাবে হবে।
টিকটিকি হাসতে হাসতে বলে, ও নিয়ে একটুও চিন্তা কোরো না তুমি। এরকমটা যে হতে পারে, সে আমি জানতাম। আমি সে কথা আগেই ভেবে রেখেছি। তুমি যাতে গাছে উঠতে পারো, সে ব্যবস্থা করছি। এখনই।
ব্যাঙ বিশেষ ভরসা পায় না এ কথায়। চিন্তিত হয়ে বলে, তোমার এই শ্যাওড়া গাছটা তো দেখছি ভীষণ উঁচু। উরে বাপরে! দেখলেই কেমন ভয় ভয় লাগে। না রে বাপু। আমি অত উপরে উঠতে পারবো না। আমি বরং পুকুরেই ফিরে যাই।
টিকটিকি বড্ড বেজার হয়ে যায় এ কথা শুনে। মন খারাপ করে বলে, সেটা কী হয় নাকি বন্ধু? তোমার জন্যই কিনা এত উদ্যোগ আয়োজন করলাম। কতই না কষ্ট হলো তাতে। আর তুমিই যদি না থাকতে পারো, সমস্ত বিফল। আমি সেই দুঃখ সইতে পারবো না। সেটা হয় না। আমি তোমাকে গাছে উঠতে সহায়তা করবো। সে দায় দায়িত্ব আমার। তুমি কোনো দুশ্চিন্তা কোরো না। এখুনি ব্যবস্থা করছি।
ব্যাঙের দুশ্চিন্তা দূর হয় না। সে ভেবেই পাচ্ছে না কিভাবে, কোন্ উপায়ে এতটা উঁচুতে উঠতে পারা যাবে। বিচলিত হয়ে বন্ধুকে শুধায় সে, কিভাবে তুমি কী করবে, আমি সেটা বুঝতে পাচ্ছি না। ঝামেলা হলে বাদ দিয়ে দাও না হলে। আমি আমার মতো করে নিজের আস্তানায় ফিরে যাই।
টিকটিকি হাল ছাড়বার পাত্র নয়। বন্ধু ব্যাঙকে সে বলে, তোমার লেজের সঙ্গে শক্তপোক্ত একটা দড়ি বেঁধে নেবো। দড়িটার একটা প্রান্ত থাকবে আমার হাতে। টেনে টেনে ওপরে তুলে ফেলবো তোমাকে। কী, এবার বুঝতে পারলে? খুবই সহজ সরল ব্যাপার।
ব্যাঙের উদ্বেগ দূর হয় না এ কথা শুনে। টিকটিকিকে বলে, তাই নাকি? সেই দড়ি যদি ধড়াম করে ছিঁড়ে যায়, কী হবে তখন? আম-ছালা দুটোই যে যাবে। হাড়গোড় ভেঙে পড়ে থাকতে হবে আমাকে।
আরে না, না। সেটা হবেই না। বড় মজবুত এই দড়ি। জঙ্গলের সবচেয়ে পোক্ত লতা দিয়ে তৈরি। আগে আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি।
হুঁ, তা তো বুঝলাম। দেখো ভাই, দায়িত্ব কিন্তু তোমার। আমার কেমন ভয় ভয় লাগছে। এখনো সময় আছে। সিদ্ধান্ত পাল্টাও। আমি চলে যাই আমার মতো।
কোনো ভয় নেই। তুমি চোখ বুজে থেকো। আমার বাসায় পৌঁছে যেতে বেশি সময় লাগবে না। এই কয়েক মিনিটের মামলা। ঐ তো আমার বাসা দেখা যাচ্ছে।
ব্যাঙ এ কথার উত্তর দেয় না। তার চোখেমুখে দুশ্চিন্তার ছাপ।
টিকটিকি দড়ি দিয়ে ব্যাঙের লেজ বেঁধে ফেলে। তারপর তরতর করে উঠতে থাকে উপরের দিকে। টিকটিকি জোরে টান দেয়। তার সঙ্গে অন্য টিকটিকিরাও হাত লাগায়। অন্য যারা দর্শক, সেই টিকটিকিরা খুব আনন্দ পায় মজার এই দৃশ্য দেখে। তারা চেঁচিয়ে বলে, জোরসে টানো, হেঁইয়ো। উঠে যাচ্ছে, হেঁইয়ো। টান মারো রে, হেঁইয়ো।
টিকটিকির দল দড়িতে হ্যাঁচকা টান দেয়। প্রবল টানের চোটে দড়ি যায় ছিঁড়ে। ধপাস করে মাটিতে পড়ে যায় ব্যাঙ। আহা রে বেচারা! তার লেজ ছিঁড়ে গেছে। গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছে। যা আশঙ্কা করা হয়েছিল, তাই ঘটল। রাগে দুঃখে অপমানে টিকটিকির সঙ্গে একটা কথাও কইলো না সে। রক্ত ঝরানো লেজে খুব যন্ত্রণা হচ্ছে। কোনোমতে নিজেকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে কোঁকাতে কোঁকাতে ফিরে গেল জলাশয়ে।
লেজ আর নেই। ছিঁড়ে গেছে। মুরুব্বি গোছের বুড়ো ব্যাঙ একটা ছিল মহল্লায়। ঝানু কবিরাজ সে। তার কাছে ধরনা দিতে হয়। কবিরাজ-ব্যাঙ শ্যাওলা-বাটা মেখে দেয় ছিঁড়ে যাওয়া লেজে। বেশ কাজ হয় এতে। যেন ম্যাজিক! কয়েকদিনের মধ্যেই সুস্থ স্বাভাবিক হয়ে ওঠে ব্যাঙ। টিকটিকির সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে গিয়ে এই উটকো বিপদে পড়তে হলো। ভালো মাশুলই দিতে হয়েছে তাকে। সময়মতো এর বদলা নিতে হবে। মনে মনে এই প্রতিজ্ঞা করে ব্যাঙ। উপযুক্ত সময়ের জন্য অপেক্ষায় থাকে। ঠিক সময়ে ঠিক কাজটি করতে হবে। যেভাবেই হোক বদলা নিতে হবে ওই অপমানের।

২.

ওই ঘটনার কয়েক মাস পেরিয়ে গেছে। ব্যাঙ ভুলতে পারেনি তার লেজ-হারানোর দুঃখজনক সেই ঘটনা। ভোলা কি সম্ভব? তক্কে তক্কে আছে সে। কখন আসবে সেই মোক্ষম সুযোগ। টিকটিকিকে জন্মের মতো উচিত শিক্ষা দিতে হবে। জীবনেও যেন না ভোলে, তেমন কঠিন একটা শিক্ষা। তারপরে ঝামেলা চুকবে। হালকা হবে মনটা। তার আগে শান্তি নেই কোনো। স্বস্তি নেই।
একদিন ডাঙায় ব্যাঙের সঙ্গে দেখা টিকটিকির। খুবই মোলায়েম উষ্ণ ব্যবহার করলো ব্যাঙ। টিকটিকি মুগ্ধ। অভিভ‚ত। যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে সে। যাক, সেই বিচ্ছিরি দুর্ঘটনার ব্যাপারটা ব্যাঙ বোধ হয় এতদিনে ভুলে গেছে। মাফটাফ করে দিয়েছে তাকে। ব্যাঙ ফিরতি দাওয়াত দেয় টিকটিকিকে, বন্ধু, আগামীকাল আমার বাড়িতে দাওয়াত দিচ্ছি তোমাকে। এসে নিজ চোখে দেখবে কেমন পরিবেশে থাকি। কিসব খাই-দাই। কাল সক্কালবেলা এখানটায় হাজির থেকো। আমি তোমাকে নিয়ে যাবো।
টিকটিকি দাওয়াত পেয়ে খুশি। বলে, বন্ধু, ছোট্ট একটা সমস্যা আছে যে। পানিতে কিভাবে সাঁতার কাটতে হয়, তা জানি না আমি। তোমার বাড়ি তো পুকুরের মাঝখানে। সাঁতার না জেনে কেমন করে যাবো সেখানে?
ব্যাঙ তাকে আশ্বস্ত করে। সান্ত¡না দেয়ার ভঙ্গিতে বলে, ও নিয়ে কিচ্ছু ভেবো না। ব্যবস্থা একটা না একটা করে ফেলবো। অনেক ভাবনা চিন্তা করেছি এ বিষয়ে। উপায় পদ্ধতিও জানা আছে আমার। তুমি শুধু চলে এলেই হবে। বাকি দায়দায়িত্ব আমার। সমস্যার সমাধান ঠিক ঠিক করে ফেলবো। তুমি অযথা ভেবো না। তাহলে এই কথাই রইলো। মনে রেখো। কাল সক্কালবেলা ঠিক এখানেই দেখা হচ্ছে আমাদের।
আচ্ছা বেশ। তাই হবে। আমি ঠিক সময়ে এখানে চলে আসবো।
টিকটিকি উত্তর দেয়।
পরের দিন সক্কাল বেলা। সুন্দর একটা দিন আজ। রোদ ঝলমলে সকাল। হালকা ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে।
না শীত, না গরম- এমন চমৎকার আবহাওয়া। প্রায় একই সময়ে ঘটনাস্থলে এসে পড়ে ব্যাঙ ও টিকটিকি। দুই বন্ধু। একজন থাকে জলাশয়ের মধ্যিখানে। অপরজনের বাস শ্যাওড়া গাছের মগডালে। দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা।
দেখা হয়ে গেল দু’জনার। ব্যাঙের মন মেজাজ ভীষণ ফুরফুরে। টিকটিকিও আনন্দে টগবগ করছে। জলাশয়ের মাঝখানে কোনোদিনই যাওয়া হয়নি তার। অনেকটা দূর থেকে দেখেই আসছে শুধু। অনেক রহস্যময় ওই জায়গা। ওখানকার ইতিহাস-ভ‚গোল, বৈশিষ্ট্য, পরিবেশ সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই তার। আজ সেই সুযোগ এসেছে। কাজে লাগানো দরকার সেই সুযোগ।
উৎসাহ ভরে সে ব্যাঙকে শুধায়, ভাই রে, তোমার বাড়ি তো অগাধ জলের মধ্যিখানে। কেমন করে সেখানে পৌঁছাই? সাঁতার-টাতার তো জানা নেই আমার। তুমি তো সে কথা ভালোই জানো।
ব্যাঙ তাকে আশ্বস্ত করে, এ আর এমন কী ব্যাপার। তোমাকে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আমার ওপর। ওই যে, পুকুরের মধ্যিখানে তাকাও। দেখতে পাচ্ছো একটা পানার ঝোপ? ওটাই আমার আস্তানা। তোমার ঘাড়ে একটা দড়ি বেঁধে দিচ্ছি। মজবুত এক লতা দিয়ে এটা তৈরি করা হয়েছে। আমি তোমাকে টেনে নিয়ে যাবো।
তা-ই হলো। ব্যাঙ টানতে শুরু করলো। গায়ের সবটুকুন শক্তি দিয়ে। আশপাশে জড়ো হয়েছে অনেক ব্যাঙ। ধাড়ি, পুঁচকে, গেছো, সোনা, কুনো- নানা রকমের ব্যাঙ। তারা মহা খুশিতে হাততালি দিচ্ছে। চেঁচিয়ে বলছে, জোরসে টানো হেঁইয়ো। এই তো ভালো, হেঁইয়ো। আর বাকি নাই, হেঁইয়ো। পৌঁছে গেছে, হেঁইয়ো।
ব্যাঙের দল জোরে টান দেয়। জোরে, আরো জোরে। ব্যাটাকে উচিত শিক্ষা দেওয়া চাই। এই তো হয়ে এল বলে। হ্যাঁচকা টান দেয় ব্যাঙসকল। আচমকা পট করে ছিঁড়ে যায় সেই দড়ি। টিকটিকির অবস্থা এখন শোচনীয়। এই ডোবে তো ওই ডোবে- এমনই হাল। সে দেখে, ব্যাঙ কেমন ঘ্যাঙ ঘ্যাঙ করে হাসছে। যেন খুব মজার একটা কাণ্ড ঘটেছে।
দড়ির চাপে টিকটিকির গাল ঘাড়ের সঙ্গে মিশে গেছে। থেঁতলে গেছে। রক্ত জমাট হয়ে আছে ওখানটায়। ব্যাঙরা টেনে হিঁচড়ে টিকটিকিকে পৌঁছে দেয় ডাঙায়। উহ বাবা, বড্ড বাঁচা বেঁচে গেছে এ যাত্রায়।
এই দু’টি ঘটনা দুই বন্ধুর জীবনধারা বদলে দিয়েছে। সেই সঙ্গে পালটে দিয়েছে তাদের চেহারা-সুরতও। আগেকার আদল আকৃতি কারো নেই। হয়ে গেছে অন্যরকম। একজনের লেজ নেই। বিসর্জন দিতে হয়েছে। অন্যজনের গাল গেছে ঘাড়ের সঙ্গে লেপটে। দু’জনের বন্ধুত্বেরও ইতি ঘটে গেছে এর পর। বোধ করি তা-ই ছিল স্বাভাবিক। দুই জনা থাকে দুই জগতে। মেলামেশার কোনো সুযোগ আর অবশিষ্ট নেই।ডাঙার টিকটিকি
জলাশয়ের ব্যাঙ

হাসান হাফিজ

আমরা জানি, ব্যাঙের কোনো লেজ নেই। যদি টিকটিকির মুখের দিকে তাকাই, কী দেখা যায়? আমরা দেখি, টিকটিকির গাল নেই। গাল বলতে যা আছে, তা অতিমাত্রায় চ্যাপ্টা। ঘাড়ের সঙ্গে লাগানো। অদ্ভুত একটা আকার। সব সময় কিন্তু এমনটা ছিল না। আদ্যিকালের উগান্ডায় ব্যাঙের বড়োসড়ো লেজ ছিল। টিকটিকিরও সুন্দর গাল ছিল। সেসব কেন, কিভাবে উধাও হয়ে গেল? এই গল্পে আছে এই দু’টি প্রশ্নের উত্তর।
সে বহু বহু কাল আগেকার কথা। এক ছিল টিকটিকি। এক ছিল ব্যাঙ। টিকটিকির বসতি ঘন ঝোপালো শ্যাওড়া গাছে। ডালে ডালে দিনভর মহানন্দে হুটোপাটি করে বেড়ায় সে। পোকা-মাকড় শিকার করে খায়। বেশ চলে যায় দিনকাল। শ্যাওড়া গাছের অদূরেই বিরাট একটা পুকুর। তার মধ্যিখানে ব্যাঙের আস্তানা। ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ ডাকাডাকি করে, রকমারি খানা-খাদ্য খেয়ে বেশ আছে সে। সুখ-শান্তির কোনো অভাব নেই।
দু’জনার মধ্যে বন্ধুত্ব হলো। ব্যাঙ আর টিকটিকির মধ্যে। একজন থাকে স্থলভাগে। অন্যজন জলাশয়ের বাসিন্দা। তাতে কী! বন্ধুত্ব ওদের গাঢ় হলো দিনকে দিন। রোজই আড্ডা, ঘোরাফেরা, গল্পগুজব হয় চুটিয়ে। কখনো সখনো দুই বন্ধু বেড়াতেও বেরোয় এক সঙ্গে। ভালোই কাটছে সময়।
বন্ধুতা আরো গাঢ় এবং স্থায়ী করা দরকার। দু’জনেই এ ব্যাপারে একমত। সেটা করতে হলে পরস্পরের বাড়িঘর কেমন চেনাজানা দরকার। বন্ধু কোথায় কিভাবে কোন্ পরিবেশে থাকে, কিসব খায় দায়, সেটা জানা থাকলে ভালো। এই ধরনের চিন্তা প্রথমে এলো টিকটিকির মাথায়। একবার টিকটিকির জন্মদিন উপলক্ষে ভোজের আয়োজন করা হলো তার বাড়িতে। ঠিক হলো, এই খানাদানার অনুষ্ঠানে দাওয়াত করা হবে তার ব্যাঙ বন্ধুকে। ব্যাঙ এই দাওয়াত পেয়ে মহাখুশি। পরানের বন্ধুর বাড়িতে যাওয়ার চমৎকার সুযোগ পাওয়া গেল একটা। যেতেই হবে। নতুন, রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হবে এই দাওয়াতে গেলে। উহ, দারুণ হবে। টিকটিকি বন্ধুকে প্রাণ খুলে অজস্র ধন্যবাদ জানায় ব্যাঙ।
যেদিন ভোজ, ঠিক সময়ে ব্যাঙ এসে হাজির। থপথপিয়ে লাফাতে লাফাতে চলে এলো ব্যাঙ। শ্যাওড়া গাছের নিচে এসে থমকে দাঁড়াতে হলো তাকে। আর এগোনো যাচ্ছে না। কী কারণ? ব্যাঙ তো গাছে উঠতে জানে না। জন্মেও কোনোদিন কোনো গাছে ওঠেনি সে। তার দরকারই হয়নি আসলে। সে জলচর প্রাণী। পানিতে জন্ম। সেই পানিতেই বেড়ে ওঠা। বসবাস মরণ অবধি। গাছে উঠবে কেমন করে? হতবুদ্ধি হয়ে বসে পড়েছে ব্যাঙ। মনটা দারুণ খারাপ। কিভাবে বন্ধুর নেমন্তন্ন রক্ষা করবে, গালে হাত দিয়ে সেটাই ভাবছে বসে বসে। তার যে লম্বাটে পা, সেগুলো সাঁতার কাটবার উপযোগী। গাছে ওঠার জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়। কী আর করা! হতবুদ্ধি হয়ে ভ্যাবলার মতো বসে থাকতে হচ্ছে।
একটু পর হইহই শোনা গেল। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন নিয়ে হইচই করতে করতে টিকটিকি এসে হাজির ঘটনাস্থলে। ওই তো প্রাণের বন্ধু চলে এসেছে তার। ব্যাঙকে দেখে উচ্ছ¡সিত কণ্ঠে বলে, আরে তুমি এসে গেছো তাহলে? এসো এসো বন্ধু। আমার বাড়িতে স্বাগত জানাই তোমাকে। এতক্ষণ ধরে তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম আমি।
ব্যাঙ প্রত্যুত্তরে বলে, বেশ বেশ। ধন্যবাদ তোমাকে। তা একটা যে সমস্যা হয়েছে বন্ধু। তোমার বাসা তো গাছের ওই মগডালে। আমার পক্ষে কিন্তু এতটা উঁচুতে ওঠা সম্ভব না। গাছ বেয়ে ওঠার কায়দা-কৌশল ভাই আমার একটুও জানা নেই। বুঝতে পারছি না, এই জটিল সমস্যার সমাধান এখন কিভাবে হবে।
টিকটিকি হাসতে হাসতে বলে, ও নিয়ে একটুও চিন্তা কোরো না তুমি। এরকমটা যে হতে পারে, সে আমি জানতাম। আমি সে কথা আগেই ভেবে রেখেছি। তুমি যাতে গাছে উঠতে পারো, সে ব্যবস্থা করছি। এখনই।
ব্যাঙ বিশেষ ভরসা পায় না এ কথায়। চিন্তিত হয়ে বলে, তোমার এই শ্যাওড়া গাছটা তো দেখছি ভীষণ উঁচু। উরে বাপরে! দেখলেই কেমন ভয় ভয় লাগে। না রে বাপু। আমি অত উপরে উঠতে পারবো না। আমি বরং পুকুরেই ফিরে যাই।
টিকটিকি বড্ড বেজার হয়ে যায় এ কথা শুনে। মন খারাপ করে বলে, সেটা কী হয় নাকি বন্ধু? তোমার জন্যই কিনা এত উদ্যোগ আয়োজন করলাম। কতই না কষ্ট হলো তাতে। আর তুমিই যদি না থাকতে পারো, সমস্ত বিফল। আমি সেই দুঃখ সইতে পারবো না। সেটা হয় না। আমি তোমাকে গাছে উঠতে সহায়তা করবো। সে দায় দায়িত্ব আমার। তুমি কোনো দুশ্চিন্তা কোরো না। এখুনি ব্যবস্থা করছি।
ব্যাঙের দুশ্চিন্তা দূর হয় না। সে ভেবেই পাচ্ছে না কিভাবে, কোন্ উপায়ে এতটা উঁচুতে উঠতে পারা যাবে। বিচলিত হয়ে বন্ধুকে শুধায় সে, কিভাবে তুমি কী করবে, আমি সেটা বুঝতে পাচ্ছি না। ঝামেলা হলে বাদ দিয়ে দাও না হলে। আমি আমার মতো করে নিজের আস্তানায় ফিরে যাই।
টিকটিকি হাল ছাড়বার পাত্র নয়। বন্ধু ব্যাঙকে সে বলে, তোমার লেজের সঙ্গে শক্তপোক্ত একটা দড়ি বেঁধে নেবো। দড়িটার একটা প্রান্ত থাকবে আমার হাতে। টেনে টেনে ওপরে তুলে ফেলবো তোমাকে। কী, এবার বুঝতে পারলে? খুবই সহজ সরল ব্যাপার।
ব্যাঙের উদ্বেগ দূর হয় না এ কথা শুনে। টিকটিকিকে বলে, তাই নাকি? সেই দড়ি যদি ধড়াম করে ছিঁড়ে যায়, কী হবে তখন? আম-ছালা দুটোই যে যাবে। হাড়গোড় ভেঙে পড়ে থাকতে হবে আমাকে।
আরে না, না। সেটা হবেই না। বড় মজবুত এই দড়ি। জঙ্গলের সবচেয়ে পোক্ত লতা দিয়ে তৈরি। আগে আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি।
হুঁ, তা তো বুঝলাম। দেখো ভাই, দায়িত্ব কিন্তু তোমার। আমার কেমন ভয় ভয় লাগছে। এখনো সময় আছে। সিদ্ধান্ত পাল্টাও। আমি চলে যাই আমার মতো।
কোনো ভয় নেই। তুমি চোখ বুজে থেকো। আমার বাসায় পৌঁছে যেতে বেশি সময় লাগবে না। এই কয়েক মিনিটের মামলা। ঐ তো আমার বাসা দেখা যাচ্ছে।
ব্যাঙ এ কথার উত্তর দেয় না। তার চোখেমুখে দুশ্চিন্তার ছাপ।
টিকটিকি দড়ি দিয়ে ব্যাঙের লেজ বেঁধে ফেলে। তারপর তরতর করে উঠতে থাকে উপরের দিকে। টিকটিকি জোরে টান দেয়। তার সঙ্গে অন্য টিকটিকিরাও হাত লাগায়। অন্য যারা দর্শক, সেই টিকটিকিরা খুব আনন্দ পায় মজার এই দৃশ্য দেখে। তারা চেঁচিয়ে বলে, জোরসে টানো, হেঁইয়ো। উঠে যাচ্ছে, হেঁইয়ো। টান মারো রে, হেঁইয়ো।
টিকটিকির দল দড়িতে হ্যাঁচকা টান দেয়। প্রবল টানের চোটে দড়ি যায় ছিঁড়ে। ধপাস করে মাটিতে পড়ে যায় ব্যাঙ। আহা রে বেচারা! তার লেজ ছিঁড়ে গেছে। গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছে। যা আশঙ্কা করা হয়েছিল, তাই ঘটল। রাগে দুঃখে অপমানে টিকটিকির সঙ্গে একটা কথাও কইলো না সে। রক্ত ঝরানো লেজে খুব যন্ত্রণা হচ্ছে। কোনোমতে নিজেকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে কোঁকাতে কোঁকাতে ফিরে গেল জলাশয়ে।
লেজ আর নেই। ছিঁড়ে গেছে। মুরুব্বি গোছের বুড়ো ব্যাঙ একটা ছিল মহল্লায়। ঝানু কবিরাজ সে। তার কাছে ধরনা দিতে হয়। কবিরাজ-ব্যাঙ শ্যাওলা-বাটা মেখে দেয় ছিঁড়ে যাওয়া লেজে। বেশ কাজ হয় এতে। যেন ম্যাজিক! কয়েকদিনের মধ্যেই সুস্থ স্বাভাবিক হয়ে ওঠে ব্যাঙ। টিকটিকির সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে গিয়ে এই উটকো বিপদে পড়তে হলো। ভালো মাশুলই দিতে হয়েছে তাকে। সময়মতো এর বদলা নিতে হবে। মনে মনে এই প্রতিজ্ঞা করে ব্যাঙ। উপযুক্ত সময়ের জন্য অপেক্ষায় থাকে। ঠিক সময়ে ঠিক কাজটি করতে হবে। যেভাবেই হোক বদলা নিতে হবে ওই অপমানের।

২.

ওই ঘটনার কয়েক মাস পেরিয়ে গেছে। ব্যাঙ ভুলতে পারেনি তার লেজ-হারানোর দুঃখজনক সেই ঘটনা। ভোলা কি সম্ভব? তক্কে তক্কে আছে সে। কখন আসবে সেই মোক্ষম সুযোগ। টিকটিকিকে জন্মের মতো উচিত শিক্ষা দিতে হবে। জীবনেও যেন না ভোলে, তেমন কঠিন একটা শিক্ষা। তারপরে ঝামেলা চুকবে। হালকা হবে মনটা। তার আগে শান্তি নেই কোনো। স্বস্তি নেই।
একদিন ডাঙায় ব্যাঙের সঙ্গে দেখা টিকটিকির। খুবই মোলায়েম উষ্ণ ব্যবহার করলো ব্যাঙ। টিকটিকি মুগ্ধ। অভিভ‚ত। যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে সে। যাক, সেই বিচ্ছিরি দুর্ঘটনার ব্যাপারটা ব্যাঙ বোধ হয় এতদিনে ভুলে গেছে। মাফটাফ করে দিয়েছে তাকে। ব্যাঙ ফিরতি দাওয়াত দেয় টিকটিকিকে, বন্ধু, আগামীকাল আমার বাড়িতে দাওয়াত দিচ্ছি তোমাকে। এসে নিজ চোখে দেখবে কেমন পরিবেশে থাকি। কিসব খাই-দাই। কাল সক্কালবেলা এখানটায় হাজির থেকো। আমি তোমাকে নিয়ে যাবো।
টিকটিকি দাওয়াত পেয়ে খুশি। বলে, বন্ধু, ছোট্ট একটা সমস্যা আছে যে। পানিতে কিভাবে সাঁতার কাটতে হয়, তা জানি না আমি। তোমার বাড়ি তো পুকুরের মাঝখানে। সাঁতার না জেনে কেমন করে যাবো সেখানে?
ব্যাঙ তাকে আশ্বস্ত করে। সান্ত¡না দেয়ার ভঙ্গিতে বলে, ও নিয়ে কিচ্ছু ভেবো না। ব্যবস্থা একটা না একটা করে ফেলবো। অনেক ভাবনা চিন্তা করেছি এ বিষয়ে। উপায় পদ্ধতিও জানা আছে আমার। তুমি শুধু চলে এলেই হবে। বাকি দায়দায়িত্ব আমার। সমস্যার সমাধান ঠিক ঠিক করে ফেলবো। তুমি অযথা ভেবো না। তাহলে এই কথাই রইলো। মনে রেখো। কাল সক্কালবেলা ঠিক এখানেই দেখা হচ্ছে আমাদের।
আচ্ছা বেশ। তাই হবে। আমি ঠিক সময়ে এখানে চলে আসবো।
টিকটিকি উত্তর দেয়।
পরের দিন সক্কাল বেলা। সুন্দর একটা দিন আজ। রোদ ঝলমলে সকাল। হালকা ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে।
না শীত, না গরম- এমন চমৎকার আবহাওয়া। প্রায় একই সময়ে ঘটনাস্থলে এসে পড়ে ব্যাঙ ও টিকটিকি। দুই বন্ধু। একজন থাকে জলাশয়ের মধ্যিখানে। অপরজনের বাস শ্যাওড়া গাছের মগডালে। দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা।
দেখা হয়ে গেল দু’জনার। ব্যাঙের মন মেজাজ ভীষণ ফুরফুরে। টিকটিকিও আনন্দে টগবগ করছে। জলাশয়ের মাঝখানে কোনোদিনই যাওয়া হয়নি তার। অনেকটা দূর থেকে দেখেই আসছে শুধু। অনেক রহস্যময় ওই জায়গা। ওখানকার ইতিহাস-ভ‚গোল, বৈশিষ্ট্য, পরিবেশ সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই তার। আজ সেই সুযোগ এসেছে। কাজে লাগানো দরকার সেই সুযোগ।
উৎসাহ ভরে সে ব্যাঙকে শুধায়, ভাই রে, তোমার বাড়ি তো অগাধ জলের মধ্যিখানে। কেমন করে সেখানে পৌঁছাই? সাঁতার-টাতার তো জানা নেই আমার। তুমি তো সে কথা ভালোই জানো।
ব্যাঙ তাকে আশ্বস্ত করে, এ আর এমন কী ব্যাপার। তোমাকে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আমার ওপর। ওই যে, পুকুরের মধ্যিখানে তাকাও। দেখতে পাচ্ছো একটা পানার ঝোপ? ওটাই আমার আস্তানা। তোমার ঘাড়ে একটা দড়ি বেঁধে দিচ্ছি। মজবুত এক লতা দিয়ে এটা তৈরি করা হয়েছে। আমি তোমাকে টেনে নিয়ে যাবো।
তা-ই হলো। ব্যাঙ টানতে শুরু করলো। গায়ের সবটুকুন শক্তি দিয়ে। আশপাশে জড়ো হয়েছে অনেক ব্যাঙ। ধাড়ি, পুঁচকে, গেছো, সোনা, কুনো- নানা রকমের ব্যাঙ। তারা মহা খুশিতে হাততালি দিচ্ছে। চেঁচিয়ে বলছে, জোরসে টানো হেঁইয়ো। এই তো ভালো, হেঁইয়ো। আর বাকি নাই, হেঁইয়ো। পৌঁছে গেছে, হেঁইয়ো।
ব্যাঙের দল জোরে টান দেয়। জোরে, আরো জোরে। ব্যাটাকে উচিত শিক্ষা দেওয়া চাই। এই তো হয়ে এল বলে। হ্যাঁচকা টান দেয় ব্যাঙসকল। আচমকা পট করে ছিঁড়ে যায় সেই দড়ি। টিকটিকির অবস্থা এখন শোচনীয়। এই ডোবে তো ওই ডোবে- এমনই হাল। সে দেখে, ব্যাঙ কেমন ঘ্যাঙ ঘ্যাঙ করে হাসছে। যেন খুব মজার একটা কাণ্ড ঘটেছে।
দড়ির চাপে টিকটিকির গাল ঘাড়ের সঙ্গে মিশে গেছে। থেঁতলে গেছে। রক্ত জমাট হয়ে আছে ওখানটায়। ব্যাঙরা টেনে হিঁচড়ে টিকটিকিকে পৌঁছে দেয় ডাঙায়। উহ বাবা, বড্ড বাঁচা বেঁচে গেছে এ যাত্রায়।
এই দু’টি ঘটনা দুই বন্ধুর জীবনধারা বদলে দিয়েছে। সেই সঙ্গে পালটে দিয়েছে তাদের চেহারা-সুরতও। আগেকার আদল আকৃতি কারো নেই। হয়ে গেছে অন্যরকম। একজনের লেজ নেই। বিসর্জন দিতে হয়েছে। অন্যজনের গাল গেছে ঘাড়ের সঙ্গে লেপটে। দু’জনের বন্ধুত্বেরও ইতি ঘটে গেছে এর পর। বোধ করি তা-ই ছিল স্বাভাবিক। দুই জনা থাকে দুই জগতে। মেলামেশার কোনো সুযোগ আর অবশিষ্ট নেই।

Share.

মন্তব্য করুন