তুষার দেখতে সাদা হয়। সেই তুষার হাতে নিয়ে দেখলে স্বচ্ছ বরফ মনে হয়। স্বচ্ছ বরফের কোন রঙ নেই। আবার বরফ যখন ঘন হয়ে ওঠে, তখন আবার দেখতে লাগে দুধ সাদা।
তুষার যখন মাটিতে, গাছে, পাথরে, দেয়ালে, এমনকি গাড়ির উপর এসে পড়ে, বাড়ির ছাদ থেকে রাস্তা, সব তখন সাদা দেখায়। আবার তুষার যখন তুলোর মতো আকাশ থেকে পড়তে থাকে, মনে হয় তুলোর কণা আকাশ থেকে ঝুর ঝুর করে পড়ছে। দু’ চোখ যেদিকে যায়, আকাশ থেকে পাতাল, সব তখন মনে হয় সাদা রাজ্যে ভেসে বেড়ায়।
তুষার কেন দেখতে সাদা লাগে তাহলে।
এটি জানতে আমাদের কয়েকটি বিষয় জানতে হবে। তুষার কী দিয়ে তৈরি, আমরা কোন কিছু কেমন করে দেখি, আমরা কী করে রঙ চিনতে পারি।
তুষার হলো জলের কণা। পানি যখন খুব বেশি ঠাণ্ডায় জমে যায়, তখন তা প্রথমে বরফ হয়। এই বরফের কিছু কণা এবং বাতাস মিলে যা তৈরি করে, তাকে তুষার বলা হয়। তার মানে তুষারের মধ্যে থাকে বরফের কুচি এবং বাতাস। আর এই বরফ থাকে অতি ঠাণ্ডায় ঘন। প্রথমে আকাশের কোথাও ভেসে বেড়ান জল অতি ঠাণ্ডায় বরফ হয়ে ওঠে। এই বরফ বাতাসে ভেসে বেড়াতে থাকে। একসময় একটি আরেকটির সাথে লেগে বরফের কুচিগুলো ভারী হয়ে ওঠে। বাতাস তাদের ভার সইতে পারে না। মাটির দিকে পড়তে থাকে। মাটিতে পড়েই কিছু বরফ একটু গলতে থাকে, একটির সাথে আরেকটি লেগে থাকে, আর তাতে তুষারকে মনে হয় বরফের সাদা চাদর দিয়ে ঢাকা।
এবার আসি- কী করে আমরা কোন কিছু দেখি। আমরা কোন কিছু দেখি দুটো কারণে। চোখ এবং আলোর কারণে। আমরা চোখ দিয়ে দেখি। আর যা কিছু দেখি, আমরা কেবল আলোতে দেখি। অন্ধকারে আলো নেই বলে আমরা দেখি না।
সূর্যের আলো হোক আর মাথার উপর লাইট হোক, আলো হচ্ছে এক ধরনের তরঙ্গ। আর এই তরঙ্গ ফোটন নামের কণা দিয়ে তৈরি। এই আলো যখন তার উৎস থেকে কোন বস্তুর উপর এসে পড়ে, তখন বস্তু থেকে আলোর কণাগুলো প্রতিফলিত হয়ে উল্টো দিকে ছুটে। এই প্রতিফলিত আলো আমাদের চোখে এসে পড়ে। চোখের পিউপিল দিয়ে চোখের ভেতর প্রবেশ করে এই আলো রেটিনা নামক একটি পর্দায় এসে পড়ে। সেখানে আলোর প্রবাহটি ইলেকট্রকেমিক্যাল সিগন্যালে রূপান্তরিত হয়ে অপটিক নার্ভ নামের একটি স্নায়ু দিয়ে মাথায় গিয়ে পৌঁছায় এবং মাথা তখন আমাদের বুঝ দেয় যে আমরা কী দেখছি!
বাকি রইলো- কী করে আমাদের চোখ বা মস্তিষ্ক রঙ চিনে! কী করে আমরা বুঝি – কোনটি লাল, কোনটি নীল কিংবা কোনটি সাদা।
গোলাপ দেখতে লাল, পেয়ারা দেখতে সবুজ। কিন্তু কী করে এই রঙের পার্থক্য চোখ ধরতে পারে।
এটি ঘটে দুই ভাবে। একটি পরিবর্তন হয় আলোতে, আরেকটি পরিবর্তন হয় চোখে।
আমরা সবাই জানি- আলো সাতটি রঙের সমষ্টি। বেনীআসহকলা। বেগুনি, নীল, আসমানি, সবুজ, হলুদ, কমলা এবং লাল। এই সাতটি রং একসাথে থাকলে আমরা তাকে সাদা রংয়ে দেখি। তাই আলো দেখতে সাদা লাগে।
আলো এসে যখন বস্তুর উপর পড়ে, সেই আলোর কিছু অংশকে বস্তুটি শোষণ করে। বস্তুটি বাকি আলোকে প্রতিফলন করে। আলোর মধ্যে থাকা এই সাতটি রং তরঙ্গের আকারে থাকে। বস্তুটি যে রঙের তরঙ্গটিকে শুষে নিতে পারেনি, সেটাকে রিফ্লেক্ট বা প্রতিফলন করে। এই প্রতিফলিত আলোতে যে রঙের তরঙ্গটি বেশি থাকে, আমরা বস্তুটিকে সে রঙে দেখি। যেমন : পেয়ারার গায়ে আলো এসে পড়লে পেয়ারা সেই আলোর বেশির ভাগ রঙের তরঙ্গকে শোষণ করে ফেলে! কেবল সবুজ তরঙ্গটিকে শুষে নিতে পারে না। তখন যে আলোটি রিফ্লেক্ট হয়, তাতে সবুজ তরঙ্গ বেশি থাকে। সে আলো চোখে এসে পড়লে চোখের ভেতর কোনস নামক কিছু কোষ তরঙ্গটিকে চোখ থেকে মস্তিষ্কে পৌঁছায় এবং মস্তিষ্ক তখন মনে করে পেয়ারার রং সবুজ।
এবার আসি তুষার কেন সাদা দেখায়।
এটি ঘটে দুই কারণে। আলো এবং রঙের কারণে। আলোর কিছু বৈশিষ্ট্য আগেই বলেছি। আলো হচ্ছে তরঙ্গ। এই আলোর আরও দুটি বৈশিষ্ট্য আছে। রিফ্লেকশন এবং রিফ্রেকশন। প্রতিফলন এবং প্রতিসরণ। কোন বস্তুর উপর আলো এসে পড়ার পর সেটি যদি বস্তুটিতে বাধা পেয়ে উল্টো দিকে ঠিকরে পড়ে, তাকে বলে রিফ্লেকশন বা প্রতিফলন। আর যদি আলো এসে পড়ার পর আলোটি বস্তুকে ভেদ করে অন্য পাশে চলে যেতে পারে, তখন আলোর বৈশিষ্ট্য হলো আলোটি একটু বেঁকে যায়, তখন তাকে বলে রিফ্রেকশন বা প্রতিসরণ।
আমরা আগেই বলেছি তুষার হলো বরফের ঘন কুচি। বরফ স্বচ্ছ। আলো এসে তুষারের ভেতর থাকা এই জড়ো হওয়া বরফের কণাগুলোর উপর এসে পড়ে বরফের স্বচ্ছতার কারণে প্রতিফলিত না হয়ে রিফ্রেকশন বা প্রতিসরিত হয়। আলো বরফের ভেতর দিয়ে প্রতিসরিত হয় বলে আলোর ভেতরে থাকা সাতটি রঙের তরঙ্গই খানিক বেঁকে গিয়ে আবার বাতাসে এসে পড়ে। যেহেতু বরফ কোন রঙের তরঙ্গকেই শুষে নিতে পারে না, তখন সবগুলো রঙের তরঙ্গই প্রতিসরিত হয়ে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে আমাদের চোখের উপর এসে পড়ে। চোখ তখন আলাদা করে কোন রঙ না দেখে সবগুলো রঙের সমষ্টিকে একসাথে সাদা রঙে দেখে। আমরা এটাও জানি যে আলো দেখতে সাদা, যখন এই সাতটি রঙের তরঙ্গই একসাথে থাকে। আর এমন করেই তুষার দেখতে আমাদের কাছে সাদা লাগে।

Share.

মন্তব্য করুন