গ্রাম এবং গ্রামীণ জীবন শহরের ইট পাথর আর ধুলোময় জীবন থেকে যে সম্পূর্ণ আলাদা ও বৈচিত্র্যে ভরপুর সে কথা আমাদের কারও অজানা নয়। দুটো জীবন দু’রকমের। একটার বিপরীত অপরটা।
খুব শৈশবেই মাদরাসায় পড়ার দরুন আমাকে গ্রাম ছাড়তে হয়েছে। বিধায় বড় হওয়ার পর দীর্ঘ সময় কখনও বাড়িতে থাকা হয়নি। সেবার করোনার ‘করুণায়’ থাকা হয়েছিল দীর্ঘদিন নাগাদ। সে সময়টায় গভীরভাবে অনুভব করেছিলাম গ্রামের জীবনাচার। নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরা গ্রামের রূপ, প্রাণ শীতল করা পূবাল হাওয়া, সবুজ ঘাসের জমিন, পাশ ঘেঁষে বয়ে চলা নদীটির স্বচ্ছ জল, সোনালি ধানক্ষেত, পরিশ্রান্ত কৃষকের মুখের তৃপ্তির হাসিটি; ইত্যাকার নানান রকমের মুগ্ধকর সৌন্দর্য আমাকে ভীষণভাবে টেনেছে।
গ্রামের পথঘাটে বাস কিংবা ট্রাকের অনিয়ন্ত্রিত সাইরেন বা হর্নের শব্দে বিরক্ত হয় না কেউ। গ্যাস আর ধুলো থেকে বাঁচতে মুখ বাঁধতে হয় না মাস্ক দিয়ে। সেখানে আকাশের বুকে নিশ্চিন্তে ছাড়া যায় প্রাণখোলা শ্বাস। মুক্ত হাওয়ার পরশে জুড়িয়ে যায় অন্তর। ভালো না লাগার সেখানে কিছু নেই। সবকিছুতেই অদ্ভুত মায়া জমে যায় নিজের অজান্তেই।
এককথায় গ্রামীণ জীবন নিয়ে আমি অনেক বেশিই সুখী। এই সুখ ভাষাতীত।
এইসব সৌন্দর্যের পাশাপাশি গ্রামের মানুষগুলোও সহজ সরল। নরোম কোমল তাদের হৃদয়। দয়া-মায়ায় ভরা। শহুরে মানুষের মতো রুঢ় রুক্ষ হৃদয়ের না। তারা একে অপরের কষ্টে এগিয়ে আসে। মানুষের উপকারগুলোকে মনে রাখে খুব। অকৃতজ্ঞ কিংবা কৃতঘœ না। আবার বেশ অতিথিপরায়ণও। মেহমানদের কদর করে খুব। খাবারের চেয়ে তাদের আন্তরিকতাটাই বেশি থাকে।
আরও অনেক সুন্দর এবং প্রশংসনীয় গুণ-বৈশিষ্ট্য গ্রাম্য মানুষদের মাঝে বিদ্যমান, যে গুণ- বৈশিষ্ট্যগুলো শহুরে মানুষদের মাঝে নেই। অথচ মানুষ হিসেবে সকলের মাঝেই ভালো গুণগুলো থাকা বাঞ্ছনীয়।
তাই আমি চাইবো, শহুরে জীবনের যে অপূর্ণতা আর ঘাটতিগুলো আছে; যেগুলো গ্রামীণ জীবনে বিদ্যমান সেসব যেন শহুরে জীবনেও চলে আসে। তদ্রƒপ যেসব গুণাবলি গ্রাম্য জীবনে নেই কিন্তু শহুরে জীবনে আছে সেই ভালো গুণগুলো যেন গ্রামীণ জীবনেও চলে আসে।

Share.

মন্তব্য করুন