রাতের আকাশ মানেই রহস্যের আধার। আর সেখানে যদি কখনো আকাশে দেখা যায় ঝাড়–র মতো লম্বা উজ্জ্বল কিছু একটা, কেমন লাগবে? হ্যাঁ, ঝাড়–র মতো এমন জ্যোতিষ্কগুলোই হলো ধূমকেতু। ধূমকেতু হলো ধুলো, বরফ ও গ্যাসের তৈরি এক ধরনের মহাজাগতিক বস্তু। ধূমকেতু একটি ক্ষুদ্র বরফাবৃত সৌরজাগতিক বস্তু যা সূর্যের খুব নিকট দিয়ে পরিভ্রমণ করার সময় দর্শনীয় কমা (একটি পাতলা, ক্ষণস্থায়ী বায়ুুমণ্ডল) এবং কখনও লেজও প্রদর্শন করে। ধূমকেতুর নিউক্লিয়াসের ওপর সূর্যের বিকিরণ ও সৌরবায়ুর প্রভাবের কারণে এমনটি ঘটে। উল্লেখ্য, মহাকাশে বৃহত্তম ধূমকেতুর হদিস মিলেছিল বেশ কয়েক বছর আগেই। তবে এবার ধরা পড়লো তার চেহারার আকৃতি। বন্ধুরা, জানো কত বড় এর আকার? একটা সহজ উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যাক। টালা থেকে টালিগঞ্জের দূরত্ব ১৩ কিলোমিটার। কলকাতাকে একটি বৃত্ত হিসাবে ধরা হলে এই দৈর্ঘ্যকে শহরের আড়াআড়ি দূরত্ব বা ‘ব্যাস’ বলা যেতে পারে। আর মহাকাশের সবচেয়ে বড় ধূমকেতুর ব্যাস ১৩০ কিলোমিটার। অর্থাৎ এর মধ্যে পাশাপাশি বসানো যাবে ১০টি কলকাতাকে। বৃহত্তম এই ধূমকেতুর নাম বেহেমথ। ২০১০ সালে প্রথম এই ধূমকেতুটির খোঁজ পান নাসার মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। তবে এর আকার বুঝতে লেগে গেল আরও ১২ বছর। বিজ্ঞানীদের দাবি, এ যাবৎ মহাকাশে যত ধূমকেতু দেখা গিয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় ধূমকেতু হলো বেহেমথ। সাধারণত ধূমকেতুর আকার লম্বাটে হয়। মূল অংশের পিছন দিয়ে গ্যাসের লম্বা আস্তরণ থাকে। সূর্যের যত কাছাকাছি আসে, সূর্যের তাপে তত বাড়তে থাকে এই গ্যাসের আস্তরণ। বেহেমথের পিছনের দিকে থাকা গ্যাসের আস্তরণের ভিতর থেকে ধূমকেতুর মূল অংশ বা নিউক্লিয়াসের মাপজোখ চালাচ্ছে নাসার হাবল টেলিস্কোপ। নাসা জানিয়েছে, এতদিন যে সকল ধূমকেতুর হদিস মিলেছে, তার মধ্যে বেহমথের নিউক্লিয়াস সবচেয়ে বড়। প্রায় ৫০ গুণ ভর ও প্রায় ৫০০ লক্ষ কোটি টন। এর আগে আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় ধূমকেতুর ভরের চেয়ে বেহেমথের ভর কয়েকশো হাজার গুণ বেশি। বেহেমথের আরও একটি নাম রয়েছে। সেটি হলো-সি/২০১৪ ইউএন২৭১। তবে এটি বেহেমথ নামেই অধিক পরিচিত। যার অর্থ হলো, অতিকায় দৈত্যাকার জন্তু। উল্লেখ্য, ধূমকেতুর নামকরণ করা হয় সাধারণত তার আবিষ্কারকের নামানুসারে? যেমন: এডমন্ড হ্যালি কর্তৃক আবিষ্কৃত ধূমকেতুর নাম রাখা হয় Hallys Comet, ক্যারোলিন শোমেকার এবং ডেভিড লেভি কর্তৃক আবিষ্কৃত ধূমকেতুর নামকরণ করা হয় Shoemaker-Lavy-9। তবে আবার বিভিন্ন মিশন চালনার মাধ্যমেও ধূমকেতু শনাক্ত করা হয়।

তখন তাদের নামকরণ করা হয় সেসব মিশনের নামানুযায়ী। যদি কোনো ধূমকেতু কোনোভাবে দু’জন কর্তৃক আবিষ্কৃত হয় তবে প্রথম আবিষ্কর্তার নামেই ধূমকেতুর নামকরণ করা হয়। কোনো ধূমকেতুর নামের পূর্বে যদি “C” উল্লেখ থাকে তবে এ দ্বারা বোঝায় ধূমকেতুটি Long Period Comet, যার আবর্তনকাল ২০০ বছরের বেশি। যদি নামের আগে “P” থাকে তবে এর মানে ধূমকেতুটি Short period comet এবং periodic, যার দ্বারা বোঝায় ধূমকেতুটির আবর্তনকাল ২০০ বছরের কম এবং তা নির্দিষ্ট সময় পর পর পুনরায় সূর্যের নিকট আসে। যেমন: হ্যালির ধূমকেতু। যদি নামের আগে “D” থাকে তা দ্বারা বোঝায় Destroyed, এর মানে ধূমকেতুটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। যেমন : D/Shoemaker-Levy 9, এটি ধ্বংস হয়ে যাওয়া ধূমকেতু। এ রকমভাবে ধূমকেতুর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বিভিন্ন কিছু অক্ষরযুক্ত করে এদের নামকরণ করা হয়। পৃথিবীতে পানির প্রাথমিক উৎস হিসাবে ধূমকেতুকেই দায়ী করা হয়। সুদূর অতীতে সৌরজগতের গ্রহগুলো সৃষ্টির সময় পৃথিবীতে অনেক ধূমকেতু আছড়ে পড়তো এবং এতে ধূমকেতুতে থাকা পানি জমা হতে থাকে পৃষ্ঠে। এতে করেই পৃথিবীতে পানির সঞ্চারণ ঘটে। তবে পৃথিবী এর সমস্ত পানির উৎস না হলেও ন্যূনতম সাগর মহাসাগরের পানির প্রধান অংশই ধূমকেতু থেকেই এসেছে বলে গবেষণায় পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানারী জানাচ্ছেন, পৃথিবীর দিকে ঘণ্টায় প্রায় ৩৫ হাজার কিলোমিটার গতিবেগে ছুটে আসছে বেহেমথ। নাসার হিসেব বলছে, ২০৩১ সালে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছাকাছি চলে আসবে এই দানবাকার ধূমকেতু। তবে এই ধূমকেতুর কারণে পৃথিবীর কোনো ক্ষতি হবে না বলেই জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। নাসা আশ্বস্ত করে জানিয়েছে, পৃথিবী থেকে শনি যতখানি দূরত্বে রয়েছে, বেহমথও ততটাই দূরত্বে থাকবে। নাসার গবেষণা বলছে, সাধারণ ভাবে এতদিন যে সব ধূমকেতু দেখা গিয়েছে, বেহেমথের নিউক্লিয়াস তার থেকে আকারে অন্তত ৫০ গুণ বেশি বড়। এর ভর প্রায় ৫০০ লক্ষ কোটি টন। যা এর আগে আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় ধূমকেতুর ভরের কয়েকশো হাজার গুণ বেশি। তাই, সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় ধূমকেতু বেহেমথ নিয়ে মহাকাশ বিজ্ঞানীসহ সারা দুনিয়ার সাধারণ মানুষের জল্পনা কল্পনার শেষ নেই।

Share.

মন্তব্য করুন