নাইটিঙ্গেল
মূল : হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসন
অনুবাদ : সায়ীদ আবুবকর

তোমরা জানো, চীনদেশের সম্রাট হতেন চীনারাই এবং তাঁর চারপাশের লোকজনও ছিলেন চীনের মানুষ। আমি আজ যে চীনাসম্রাটের গল্প তোমাদের বলতে যাচ্ছি তা হলো অনেক আগেকার ঘটনা এবং এটা বলার উদ্দেশ্য হলো, গল্পটা যাতে হারিয়ে না যায়।
সম্রাটের রাজপ্রাসাদ ছিলো বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর। গোটা প্রাসাদই নির্মাণ করা হয়েছিল সবচেয়ে সুন্দর সিরামিক দিয়ে এবং এটা ছিলো খুবই দামি। একইসাথে এটা ছিলো এতই মসৃণ যে, খুব যতেœর সাথে এটাকে স্পর্শ করতে হতো। সম্রাটের ফুলের বাগানে ছিলো দুর্লভ যত সুন্দর সুন্দর ফুল এবং সবচেয়ে সুন্দর ফুলগুলোতে ছোট ছোট রূপার ঘণ্টা ঝুলিয়ে দেওয়া হতো যা সবসময় টুংটাং করে বাজতো, ফলে যে-ই বাগানের পাশ দিয়ে যেতো সে-ই ফুলগুলোর দিকে তাকাতে বাধ্য হতো। এই বাগানটা এতই বড় ছিলো যে, স্বয়ং মালিকই জানতো না যে, এটা কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে। তুমি যদি এর মধ্য দিয়ে কখনো হাঁটতে, নিশ্চয় দেখতে পেতে বড় বড় কত গাছ ও গভীর গভীর কত হ্রদ। বড় বড় গাছের এই অরণ্য ছুটে গিয়েছে সোজা সমুদ্রে, সেই সমুদ্রটা এতই গভীর যে, বড় বড় জাহাজ সেখানে চলাচল করতো এবং জাহাজগুলো গাছগুলোর ডালপালার নিচ দিয়ে অনায়াসে যেতে পারতো। এসব গাছের মধ্যে বাস করতো একটা নাইটিঙ্গেল। সে এত সুন্দর গান গাইতো যে, গভীর রাতে যে গরিব জেলে জাল নিয়ে মাছ ধরতে বের হতো এবং তার জালে প্রচুর মাছ ধরা পড়লেও সে হাঁ-করে নাইটিঙ্গেলের গান শুনতে থাকতো। সে বলে উঠতো, “হায় খোদা! কি সুন্দর পাখি!” তারপর সে তার কাজে মগ্ন হয়ে পড়তো এবং নাটিঙ্গেলের কথা ভুলে যেতো। পরের রাতে সে আবার যখন এখানে মাছ ধরতে আসতো, নাইটিঙ্গেলের গান শুনে সে আবার বলে উঠতো, “হায় খোদা! কি সুন্দর পাখি!”

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সওদাগরেরা ব্যবসার উদ্দেশে সম্রাটের রাজধানীতে আসতো। তারা সবকিছুরই প্রশংসা করতো, বিশেষ করে রাজপ্রাসাদ ও ফুলবাগানের। কিন্তু যখনই তারা নাইটিঙ্গেলের গান শুনতো, তারা বলে উঠতো, “এটাই হলো সবকিছুর থেকে বেশি সুন্দর।” তারা যখন বাড়িতে ফিরে যেতো, সবাইকে এই নাইটিঙ্গেলের গল্প বলতো। লেখকরা এই শহর, রাজপ্রাসাদ ও ফুলবাগান নিয়ে বই লিখতো কিন্তু কেউ-ই নাইটিঙ্গেলের কথা লিখতে ভুলে যেতো না। সবাই বলাবলি করতো যে, এটাই হলো এই সাম্রাজ্যের সব থেকে দামি জিনিস। কবিরা গভীর নীল সমুদ্রের পাশে অবস্থিত এই অরণ্যের নাইটিঙ্গেলের গণকীর্তন করে সুন্দর সুন্দর কবিতা রচনা করতো। লেখকদের সেসব বই আর কবিদের সেসব কবিতা পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তো। চীনা সম্রাটের কাছেও একদিন এসব বইপত্র এসে পৌঁছোলো। তিনি বাগানের মধ্যে সোনার চেয়ারে বসে বইগুলো পড়তে লাগলেন আর মাথা দোলাতে লাগলেন। তাঁর শহর, রাজপ্রাসাদ ও ফুলবাগানের সুন্দর সুন্দর বর্ণনা যতই তিনি পড়েন ততই তাঁর ভালো লাগে। কিন্তু এক জায়গায় গিয়ে তিনি পড়লেন, “কিন্তু এসব কিছুর চেয়ে বেশি সুন্দর হলো নাইটিঙ্গেল।”

“এটা কী?” সম্রাট বললেন। “নাইটিঙ্গেল? কই, এ সম্পর্কে তো আমি কিছুই জানি না। আমার রাজ্যে এরকম একটা পাখি আছে? তাও আমারই বাগানে, যার কথা আমি কখনোই শুনিনি? একবার ভাবো, বই পড়ে এটা আমাকে আবিষ্কার করতে হলো!”
তারপর তিনি তাঁর খানসামাকে ডাকলেন। বললেন, ‘এই বইতে লিখেছে, এখানে নাইটিঙ্গেল নামে চমৎকার একটা পাখি আছে। তারা বলে, এটাই নাকি আমার বিশাল সা¤্রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর। কেন আমাকে এর সম্বন্ধে আগে কখনো বলা হয়নি?”
খানসামা বললো, “আমি এর কথা কখনো শুনিনি। রাজপ্রাসাদে একে কখনো পরিচয় করিয়েও দেওয়া হয়নি।”

সম্রাট বললেন, “আমি চাই আজ সন্ধ্যায়ই একে আমার সামনে হাজির করা হোক এর গান শোনানোর জন্য। সারা পৃথিবী জানে আমার কী আছে অথচ আমিই জানি না!”
খানসামা বললো, “আমি আগে আর কখনো এর কথা শুনিনি। তবে আমি এর সন্ধানে বের হবো এবং একে খুঁজে বের করবো।” কিন্তু কোথায় একে পাওয়া যাবে? খানসামা রাজপ্রাসাদের উপর নিচ সব জায়গায় তন্ব তন্ব করে বেড়ালো, প্রতিটি কক্ষ ও করিডোরের ভিতর বাহির খুঁজে খুঁজে দেখলো কিন্তু একে পাওয়া গেল না, কেউ এর সন্ধানও দিতে পারলো না। বাধ্য হয়ে সে সম্রাটের কাছে ফিরে গেল এবং বললো যে, এটা কোনো সত্য কাহিনী নয়, এটা বইয়ের লেখকদের তৈরি করা কল্পকাহিনী। “হুজুর, বইয়ের সব কথা বিশ্বাস করবেন না। বইয়ের কথা প্রায়সময়ই মিথ্যে হয়ে থাকে।”
“কিন্তু আমি যে-বই থেকে এটা জেনেছি সেটা যে-সে বই নয়, জাপানের সম্রাট এটা আমাকে পাঠিয়েছেন। এর কথা অবশ্যই সত্য হবে। আমি এই নাইটিঙ্গেলের গান অবশ্যই শুনবো এবং তা আজ রাতেই। আমি নিশ্চিত হতে চাই যে, এর সঠিক পরিচর্যা করা হচ্ছে কিনা। যদি এটাকে আমার সামনে আজ হাজির করা না হয়, তাহলে নৈশভোজের সব সবাইকে উপযুক্ত শাস্তি দেবো, মনে থাকে যেন।”

খানসামা বললো, “আপনার যা মর্জি!” বলে সে আবার রাজপ্রাসাদের উপর-নিচ, প্রতিটি কক্ষ, করিডোর তছনছ করে খুঁজলো। তার পাছ পাছ দৌড়াতে লাগলো প্রাসাদের সমস্ত সেবক-সেবিকা কারণ কেউই সম্রাটের কাছ থেকে এরকম শাস্তি পেতে চায় না। নাইটিঙ্গেলের কথা প্রাসাদের বাইরের লোকজন জানলেও প্রাসাদের ভিতরের কেউই এর কথা জানতো না। শেষ পর্যন্ত তারা রান্নাঘরে গিয়ে খুঁজে পেল একটা ছোট গরিব কাজের মেয়েকে। সেসব কথা শুনে বললো, “হায় খোদা! আপনারা নাইটিঙ্গেল খুঁজছেন? আমি এটাকে ভালোমতো চিনি। এটা খুব চমৎকার গান গায়। আমার অসুস্থ মা সমুদ্রের পাড়ে বাস করে। প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলায় আমি তার জন্য রাজবাড়ির ফেলে দেওয়া মাংস ও খাবার নিয়ে যাই। তাকে খাবার দিয়ে আমি যখন ফিরে আসি, পথে আমি ক্লান্ত হয়ে বনের মধ্যে বসে পড়ি। তখন আমি এই নাইটিঙ্গেলের গান শুনতে পাই। তার গান শুনে আমার চোখে পানি এসে যায়। মনে হয় আমার মা যেন আমার সারা মুখে আদর দিচ্ছে।”
“হে ছোট্ট অভাগা মেয়ে, তুমি যদি আমাদেরকে নাইটিঙ্গেলের কাছে নিয়ে যাও, আমি কথা নিচ্ছি, রন্ধনশালায় তোমাকে একটি ভালো চাকরি পাইয়ে দেবো। আমাদেরকে আজকের রাতেই নাইটিঙ্গেলটাকে সম্রাটের সামনে হাজির করতে হবে।”

তারপর তারা সবাই মিলে অরণ্যের মধ্যে গেল যেখানে নাইটিঙ্গেলটি বসে গান গাইতো। রাজপ্রাসাদের অর্ধেক লোক ছিলো তাদের সঙ্গে। যখন তারা সাবধানে পা টিপে টিপে চলছিল, তখন একটা গরু হাম্বা বলে ডেকে উঠলো।
একজন তরুণ সহকারী সেই ডাক শুনে বলে উঠলো, “আমরা এটা পেয়ে গেছি! ছোট্ট প্রাণীটির কী চমৎকার ক্ষমতা! নিশ্চয় এটা আমি আগেও শুনেছি।”
গরিব মেয়েটি বললো, “না, এটা গরুর ডাক। আসল জায়গায় পৌঁছোতে আমাদের আরো পথ পাড়ি দিতে হবে।” এরপর স্যাঁতসেঁতে জলাভূমিতে ঘ্যাঙ ঘ্যাঙ করে ব্যাঙ ডাকতে শুরু করলো।
চীনা পাদ্রী বললো, “চমৎকার! এটা ঠিক গির্জার ঘণ্টাধ্বনির মতো।”
“না,” ছোট্ট মেয়েটি বললো, “এটা ব্যাঙের ডাক। আমরা খুব শিগগির নাইটিঙ্গেলের গান শুনতে পাবো।”
তার পরপরই নাইটিঙ্গেল গান গাইতে শুরু করলো।
ছোট্ট মেয়েটি বললো, “এই যে সেই পাখি! শুনুন, আপনারা শুনুন, ওই যে সে ওখানে বসে আছে।” এই বলে সে ডালপালার মধ্যে বসে থাকা একটি ছোট ধূসর রঙের পাখির দিকে হাত উঁচু করে দেখালো।
খানসামা বলে উঠলো, “এটা কী করে হয়? আমার কখনো এরকম চিন্তা করা উচিত হয়নি। এটা দেখতে কী সাধারণ! এটা দেখে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা তো ভয় পেয়ে যাবে।”
কাজের মেয়েটি পাখিটার উদ্দেশে বলে উঠলো, “ওহে ছোট্ট নাইটিঙ্গেল! আমাদের সম্রাট চান তুমি তাকে গান গেয়ে শোনাও।”
“অবশ্যই!” বলে কণ্ঠে আনন্দের সুরধারা ঢেলে দিয়ে গান গাইতে শুরু করলো নাইটিঙ্গেল।
“একেবারে স্ফটিকের ঘণ্টার মতো!” খানসামা বলতে লাগলো, “তার ছোট্ট গলাটার দিকে তাকাও, কী চমৎকার বাজছে এটা। একেবারে অসাধারণ, এর আগে এরকমটি আমরা আর শুনিনি কখনো। আমি নিশ্চিত, রাজপ্রাসাদে এটা আমাদের জন্য বড় একটা সাফল্য বলে বিবেচিত হবে।”
নাইটিঙ্গেল, যে এতক্ষণ খানসামাকে সম্রাট বলে ভাবছিল, বলে উঠলো, “আমি কি সম্রাটের জন্য আবার গাইবো?”
খানসামা বললো, “হে আমার অমূল্য ছোট্ট নাইটিঙ্গেল! আমি তোমাকে বিনয়ের সাথে অনুরোধ করছি আজ রাতে রাজদরবারে গান পরিবেশন করার জন্য, যেখানে তুমি চমৎকার গায়কী নিয়ে আমাদের মহান সম্রাটকে মুগ্ধ করার সুযোগ পাবে।”
নাইটিঙ্গেল বললো, “গান সবসময় বৃক্ষরাজির মধ্যেই চমৎকার শোনায়।” কিন্তু সে স্বেচ্ছায় তাদের সঙ্গে রাজপ্রাসাদে চললো যেহেতু সে জানতে পারলো যে, সম্রাট এরকমই চাচ্ছেন।
এ উপলক্ষে রাজপ্রাসাদকে সুসজ্জিত করা হলো। প্রাসাদের দেয়াল ও মেঝে, যেগুলো ছিলো সিরামিকের, হাজার হাজার স্বর্ণবাতির আলোয় ঝলমল করতে লাগলো। করিডোরগুলো সাজানো হয়েছিল সবচেয়ে সুন্দর ফুলগুলো দিয়ে। বিশাল অভ্যর্থনা-কক্ষের মাঝখানে, যেখানে সম্রাট বসেছিলেন সোনার আসনে, একটি সোনার রড সেট করা হয়েছিল যাতে এর উপর বসতে পারে নাইটিঙ্গেলটি। রাজদরবারের সবাই এসে জড়ো হলো এবং ছোট্ট কাজের মেয়েটিও দরজার পিছনে এসে দাঁড়ালো যেহেতু তখন তাকে রাঁধুনি বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তারা সবাই সুন্দর পোশাক পরেছিল এবং সকলের চোখ নিবদ্ধ ছিলো ধূসর রঙের পাখিটার দিকে, যার দিকে সম্রাট তাকিয়ে বারবার মাথা দোলাচ্ছিলেন। নাইটিঙ্গেল আনন্দের সাথে গান গাইতে শুরু করলো এবং তার গান শুনে সম্রাটের দুচোখে পানি এসে গেল, সেই অশ্রু তাঁর চিবুকে গড়িয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগলো। নাইটিঙ্গেলটি ততই আরো মধুর সুরে গান গাইতে লাগলো, যা সবার হৃদয়কে স্পর্শ করলো। সম্রাট বিমোহিত হয়ে গেলেন এবং বললেন যে, নাইটিঙ্গেলের গলায় স্বর্ণের মালা থাকা উচিত। কিন্তু নাইটিঙ্গেল ধন্যবাদের সাথে তা প্রত্যাখ্যান করলো এই কথা বলে যে, এতেই সে যথেষ্ট খুশি। “আমি সম্রাটের চোখে অশ্রু দেখেছি, এটাই আমার জন্য সবচেয়ে বড় পুরস্কার। সম্রাটের চোখের অশ্রুর আছে এক বিশাল ক্ষমতা!” এই বলে সে আবার তার কণ্ঠ দিয়ে স্বর্গীয় সঙ্গীতের সুরা ঢালতে লাগলো।

ভদ্রমহিলারা বললো, “এরচেয়ে সুন্দর কিছু এর আগে আমরা কখনো দেখিনি।” তারা তাদের গলার ভিতরে পানি নিয়ে পাখিটার অনুকরণে শব্দ করতে থাকলো এবং পরস্পরের সাথে কথা বলার সময় তারা তাদের কণ্ঠ সুরেলা করে তুলতে লাগলো। এমনকি কাজের লোক ও কাজের মেয়েরা পর্যন্ত, যাদেরকে খুশি করা খুবই কঠিন, নাইটিঙ্গেলের গান শুনে খুশি হলো। সত্যিসত্যিই, নাইটিঙ্গেল সবার মধ্যে এক ধরনের ভাবাবেগ সৃষ্টি করেছিল। এরপর থেকে নাইটিঙ্গেলকে রাজদরবারে অবস্থান করতে হলো তার নিজের খাঁচার মধ্যে। সে দিনে দুইবার ও রাতে একবার স্বাধীনভাবে হাঁটতে পারতো। তার সাথে সবসময় বারোজন পাহারাদার থাকতো, যাদের প্রত্যেকের হাতে থাকতো একটি করে ফিতে, যে-ফিতেটি বাঁধা থাকতো তার পায়ের সাথে। এটা নাইটিঙ্গেলের জন্য মোটেও তামাশার ব্যাপার ছিলো না।

গোটা শহর এই চমৎকার পাখিটি নিয়ে সর্বক্ষণ কথাবার্তা বলতে লাগলো। এমনকি, শহরের দুইজন লোক যদি কোথাও মিলিত হতো, একজন বলতো ‘নাইট’, আরেকজন বলতো ‘গেল’, তারপর তারা দীর্ঘশ^াস ছাড়তো এবং মনে হতো পরস্পরকে তারা পুরোপুরি বুঝতে পেরেছে। এমনকি, পনির-নির্মাতাদের ছেলেমেয়েদের নাম রাখা হতে লাগলো এর নামে যদিও তারা কোনো গান গাইতে পারতো না।

একদিন সম্রাটের জন্য বিশাল একটা পার্সেল এলো। তার গায়ে লেখা ছিলো ‘নাইটিঙ্গেল’।
সম্রাট বললো, “আমরা বিখ্যাত এই পাখিটা সম্পর্কে নিশ্চয় কোনো নতুন বই পেয়েছি।” কিন্তু এটা কোনো বই ছিলো না। আসলে এটা ছিলো একটা বাক্সের মধ্যে রাখা একটি শিল্পকর্ম, ঘড়ির কাঁটাযুক্ত খেলনা নাইটিঙ্গেল। এটা দেখতে ছিলো জীবন্ত নাইটিঙ্গেলের মতো কিন্তু এর সারা শরীর ছিলো হীরা, চুনি ও নীলকান্তমণি দ্বারা খচিত।

নাইটিঙ্গেলটাকে যখন একটু চেপে ধরা হতো, এটি গান গেয়ে উঠতো যেটি ছিলো অরিজিনাল নাইটিঙ্গেলের গানের মতো, তখন সে তার লেজ নাড়াতো, যেটা রূপা ও সোনার মতো জ্বলজ্বল করতো। এই নাইটিঙ্গেলটার গলায় একটা ফিতে বাঁধা ছিলো যেখানে লেখা ছিলো “জাপানের নাইটিঙ্গেলের সম্রাট চীনের নাইটিঙ্গেলের সম্রাট থেকে কতই না ক্ষুদ্র।”
সবাই এটা দেখে বলে উঠলো, “আহা, কি সুন্দর! এখন তারা একসাথে গান গাইবে। কি চমৎকার যুগল হবে এরা!”
এরপর থেকে দুই নাইটিঙ্গেল একসাথে গান গাইতে থাকলো কিন্তু বারবার তাল কেটে যেতে লাগলো কারণ আসল নাইটিঙ্গেল গান গাইতো তার নিজের মতো করে, আর ঘড়ির চাবি দেওয়া নাইটিঙ্গেল তার মধ্যে সেট করা ওয়াল্টজ সঙ্গীতটিই শুধু গাইতে পারতো, যা কেবল নেচে নেচে গাইতে হতো।

কিন্তু সঙ্গীত-বিশেষজ্ঞ বললো, “এতে কিছু যায় আসে না। এক সময় এটা ঠিক হয়ে যাবে।”
এরপর থেকে কৃত্রিম নাইটিঙ্গেলটি একাকী গান গাইতো। এটা আসল গানের মতো ছিলো একটা বিশাল সফলতা। এটা দেখতে ছিলো অনেক সুন্দর। এটা যখন গান গাইতো, মণিমুক্তার মতো জ্বলজ্বল করতো। দিনে সে কমচে কম ত্রিশবার একই গান গাইতো, তবু সে ক্লান্ত হতো না। লোকেরা স্বেচ্ছায় প্রথম থেকে আবার একই গান শুনতো। কিন্তু সম্রাট বললেন, “এবার আসল নাইটিঙ্গেলের গান গাওয়ার পালা।” কিন্তু কোথায় সে নাইটিঙ্গেল? কেউ লক্ষ্য করেনি যে, এটা খোলা জানালা দিয়ে কখন উড়ে পালিয়ে গেছে তার নিজের সবুজ অরণ্যে।
সম্রাট বললেন, “কিন্তু এর মানেটা কী?”
রাজার লোকজন পাখিটার উপর ক্ষেপে উঠলো এবং বলতে লাগলো, এটা ছিলো একটা অকৃতজ্ঞ পাখি।

তারা বললো, “কিন্তু আমরা তো সেরা পাখিটা পেয়ে গেছি।” তারপর তারা খেলনা-পাখির গান শুনতে লাগলো। দিনে তারা চৌত্রিশ বার একই গান শুনতো যদিও তারা এর মর্ম উদ্ধার করতে পারতো না কারণ এটা ছিলো খুবই জটিল গান।
সঙ্গীতবিশারদ পাখিটির প্রচুর প্রশংসা করলো এবং সে জোর দিয়ে বললো যে, এটা প্রকৃত নাাইটিঙ্গেলের থেকে উত্তম কেবল এর মণি-মানিক্যের জন্যই দনয়, এর ভিতরকার গুণাবলির জন্যও। সে বললো, “কারণ আপনারা দেখতে পাচ্ছেন হে ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ এবং সবার সামনে উপবিষ্ট মহান সম্রাট, প্রকৃত নাইটিঙ্গেলের ক্ষেত্রে আপনারা কখনো আগে বুঝতে পারেনটি, এটা কী গান গাইবে; কিন্তু কৃত্রিম নাইটিঙ্গেলের ব্যাপারটা আলাদা, আপনারা এখন আগেই জেনে যাচ্ছেন এটা কী গান গাইবে। আপনারা এটা খুলে ফেলতে পারেন এবং খুলে খুলে দেখতে পারেন এটা কিভাবে তৈরি হয়েছে কিংবা কিভাবে এর ওয়াল্টজ সঙ্গীতটা সাজানো হয়েছে এবং কোন্ সুরের পর কোন্ সুর আসবে, তাও আপনারা আগে থেকে জানতে পারছেন।”
সবাই বললো, “আপনি যথার্থ বলেছেন।” সম্রাটও তার কথার সাথে একমত হলেন এবং তিনি নির্দেশ দিলেন কৃত্রিম পাখিটাকে দিয়ে যেন পরবর্তী শনিবার খোলা ময়দানে দেশের মানুষকে গান গেয়ে শোনানো হয়।

লোকজন তার গান শুনলো এবং শুনে খুবই খুশি হলো। কিন্তু জনৈক জেলে, যে কিনা আগে প্রকৃত নাইটিঙ্গেলের গান শুনেছিল, বলে উঠলো, “এর গান সুন্দর, সন্দেহ নেই, একেবারে অরিজিনাল গানের মতো, কিন্তু তারপরও এর গানের মধ্যে কী যেন নেই, কিন্তু তা কি আমরা বলতে পারবো না।” প্রকৃত নাইটিঙ্গেলকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হলো।
কৃত্রিম পাখিটাকে একটি রেশমি কুশনের উপর রাখা হলো, যেটি রাখা ছিলো সম্রাটের শয্যার পাশে। পাখিটি যেসব সোনাদানা ও মণিমুক্তার উপহার পেয়েছিল, তা এর চারপাশে পড়ে থাকতো। একে যে উপাধি দেওয়া হয়েছিল, তা হলো ‘বেডরুমের প্রধান রাজকীয় শিল্পী’। এটাকে রাখা হতো সম্রাটের বেডের বাম পাশে কারণ সম্রাট মনে করতেন এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাশ, এ পাশে সম্রাটের হার্ট রয়েছে। সঙ্গীত-বিশারদ কৃত্রিম পাখিটাকে নিয়ে পঁচিশটা বই লিখেছিল। প্রতিটা বই-ই ছিলো খুব মোটা এবং জটিল চীনা ভাষায় লেখা। সবাই বলতো তারা বইগুলো পড়ে ফেলেছে এবং বুঝতে পেরেছে, তা না হলে তাদেরকে গর্দভ ভাবা হতো এবং তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হতো।
এক বছর ধরে সবকিছু এভাবে ঠিকঠাক চলছিল। সম্রাট, রাজদরবারের লোকজন এবং চীনের অন্যান্য মানুষ কৃত্রিম পাখিটার গানের কোনো অংশই মুখস্থ রাখতে পারতো না কিন্তু এর গান পছন্দ করতো এবং এটা যখন গাইতো, কান পেতে শুনতো, রাস্তার টোকাই থেকে শুরু করে সম্রাট পর্যন্ত এই গান গাইতো।

কিন্তু একদিন সন্ধ্যাবেলা পাখিটা যখন এর গান পরিবেশন করছিল এবং সম্রাট তাঁর বেডে শুয়ে শুয়ে তা শুনছিলেন, হঠাৎ পাখিটার ভিতরে শোঁ শোঁ আওয়াজ হলো। এর একটা স্প্রিং বার্স্ট হয়ে গেল, এর চাকার ভিতরে বাতাস ঢুকে গেল এবং এর গান বন্ধ হয়ে গেল। সম্রাট বেড থেকে লাফ দিয়ে উঠলেন এবং তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের ডেকে পাঠালেন। কিন্তু তারা এর কী ইবা করতে পারবে? ফলে তারা শেষ পর্যন্ত ঘড়ির মেকারকে ডেকে পাঠালো। ঘড়ির মেকার এসে পাখিটা পর্যবেক্ষণ করলো এবং এটাকে কোনো রকমে ঠিক করে ফেললো কিন্তু সে বলে দিলো, এটাকে খুব সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে হবে এবং যথাসম্ভব কম ব্যবহার করতে হবে কারণ এটার ভিতরকার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছে। মেকার এটাকে নতুন করে ব্যবহার করার কড়া নির্দেশনা দিয়ে বিদায় হলো । এটা ছিলো সম্রাটের জন্য বড় ধরনের একটা আঘাত।
যাহোক, এরপর পাঁচ বছর কেটে গেল। হঠাৎ করে জাতির উপর বড় এক দুঃখ নেমে এলো। তাদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় ছিলো যে-সম্রাট, সেই সম্রাট হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। লোকেরা বলাবলি করতে লাগলো যে, সম্রাট প্রায় মৃত্যুপথযাত্রী। এমনকি তারা নতুন সম্রাট পছন্দ করে ফেললো। রাস্তায় দাঁড়িয়ে লোকেরা খানসামাকে জিজ্ঞাসা করলো, “সম্রাটের অবস্থা কী রকম?”
খানসামা মাথা দুলিয়ে বললো, “মোটেই ভালো না।”

সম্রাট তাঁর বিশাল বেডে ফ্যাকাশে ও ঠাণ্ডা হয়ে পড়ে রইলেন। তাঁর সেবকেরা মনে করলো যে, তিনি মৃত। ফলে তারা নতুন সম্রাটকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ছুটে গেল। কাজের লোকেরা তাদের নতুন দায়িত্ব নিয়ে কথাবার্তা বলতে লাগলো এবং কাজের মেয়েরা টি-পার্টির অয়োজন করতে লাগলো। মোঝেতে ও করিডোরে লাল গালিচা বিছানো হলো। সর্বত্র সুনসান নীরবতা বিরাজ করতে লাগলো। কিন্তু আসলে সম্রাট তখনও মারা যাননি। তিনি তাঁর সুন্দর স্বর্ণের বেডে স্থির ফ্যাকাশে হয়ে পড়ে আছেন। তাঁর বেডের উপরে ছিলো একটা খোলা জানালা। সেই জানালা দিয়ে চাঁদের আলো ঢুকে সম্রাটের উপর পড়ছিল আর তাঁর পাশে ছিলো কৃত্রিম নাইটিঙ্গেলটি।
সম্রাট খুব কষ্টে নিঃশ্বাস নিতে পারছিলেন। তাঁর মনে হচ্ছিল তাঁর বুকের উপর বিশাল একটা বোঝা চেপে আছে। তিনি চোখ খুললেন এবং দেখলেন স্বয়ং মৃত্যু তাঁর স্বর্ণের মুকুট পরে তাঁর বুকের উপর বসে আছে। সে তার হাতে ধরে আছে সম্রাটের স্বর্ণের তলোয়ার। রুমের চারদিকে অদ্ভুত অদ্ভুত সব মুখ দেখা যেতে লাগলো। কিছু কিছু মুখ দেখতে কুৎসিত ও ভয়াবহ, আর কিছু কিছু মুখ খুবই সুন্দর। আসলে এগুলো ছিলো সম্রাটের ভালো কাজ ও মন্দ কাজসমূহ, যারা সম্রাটকে চেয়ে চেয়ে দেখছিল যখন মৃত্যু বসে আছে তাঁর বুকের উপর।

তারা ফিসফিস করে একে অপরকে বলতে লাগলো, “তোমার কি সেইকথা মনে আছে?” “তুমি কি এটা মনে করতে পারো?” এবং তারা সম্রাটকে এমন সব কথা বলতে লাগলো, যা শুনে সম্রাটের গায়ের ঘাম ঝরতে লাগলো।
সম্রাট বললেন, “এটা আমি কখনোই জানতাম না।” তারপর তিনি চিৎকার করে বলে উঠলেন, “মিউজিক! মিউজিক! জোরে জোরে সব চীনা ড্রাম বাজাও যাতে তাদের কথা আমি মোটেই শুনতে না পাই।” কিন্তু অপরিচিত মুখগুলো কথা বলেই চললো আর মৃত্যু তাঁর বুকের উপর বসে মাথা দুলাতে লাগলো।

সম্রাট আর্তনাদ করে উঠলেন, “মিউজিক! মিউজিক! হে মূল্যবান ছোট সোনার পাখি, গান গেয়ে ওঠো। গাও, তোমার মিষ্টি মধুর গান গাও তুমি। তোমাকে কত সোনাদানা দিয়ে ভরে দিয়েছি আমি। এমনকি আমার নিজের গলার চেইন তোমাকে পরিয়ে দিয়েছি। গাও, গান গাও তুমি।”
কিন্তু পাখিটা নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো কারণ তাকে বাজানোর মতো পাশে কেউ ছিলো না। মৃত্যু সম্রাটের বুকের উপর বসে তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। চারদিক কেমন স্তব্ধ, নীরব, ভয়াবহ নীরব।
হঠাৎ জানালার খুব নিকটে, বাইরে থেকে মিষ্টি একটি গান ভেসে এলো, এটা ছিলো সেই বহিষ্কৃত নাইটিঙ্গেলের গান। নাইটিঙ্গেল সম্রাটের দুর্দশার কথা জানতে পেরেছিল। সে ছুটে এসেছিল সম্রাটকে দুদণ্ড স্বস্তি ও আরাম দেওয়ার জন্য। তার গান শুনে অপরিচিত মুখগুলো ফ্যাকাশে হতে শুরু করলো এবং সম্রাটের সমস্ত শরীরে আবার রক্ত চলাচল করতে লাগলো। এমনকি মৃত্যু নিজে এই গান শুনলো এবং বলে উঠলো, “হে ছোট্ট নাইটিঙ্গেল, গেয়ে যাও, গেয়ে যাও।”
“হ্যাঁ, অবশ্যই আমি গাইবো যদি তুমি আমাকে সম্রাটের সোনার তরবারি ও সোনার মুকুট ফেরত দাও।”

মৃত্যু তার একটি গানের জন্য সম্রাটের সবকিছু ফেরত দিলো এবং নাইটিঙ্গেল তার গান গেয়েই চললো। নাইটিঙ্গেল নিস্তব্ধ গোরস্থানের গানও গাইলো যেখানে গোলাপফুল ফুটে ফুটে সুন্দর ঘ্রাণ ছড়াচ্ছিল। এতে মৃত্যুর মনে পড়ে গেল তার নিজের ফুলবাগানের কথা, সাথে সাথেই সে একটা ঠাণ্ডা কুয়াশার মতো জানালা গলিয়ে বের হয়ে চলে গেল।
“ধন্যবাদ, ধন্যবাদ, হে ছোট্ট স্বর্গীয় পাখি!” সম্রাট চিৎকার করে বলে উঠলেন, “আমি তোমাকে আমার দেশ থেকে বহিষ্কার করেছিলাম। তা সত্ত্বেও তুমি ফিরে এসে তোমার গানের জাদু দিয়ে আমার বেড থেকে খারাপ প্রেতাত্মাগুলোকে বিতাড়িত করেছো, এমনকি মৃত্যুকে আমার আত্মা থেকে সরিয়ে দিয়েছো। কিভাবে আমি তোমার ঋণ পরিশোধ করবো?”
নাইটিঙ্গেল বললো, “আপনি আমাকে যথেষ্ট পুরস্কৃত করেছেন। আমার প্রথম গান আপনার চোখে পানি এনে দিয়েছিল, প্রথমবার আমি আপনার জন্য গেয়েছিলাম, একথা আমি কখনোই ভুলবো না। এটা আমাকে সুখী করেছিল। কিন্তু এখন আপনি ঘুমান এবং তরতাজা ও শক্তিশালী হয়ে ঘুম থেকে উঠুন। আমি আপনার জন্য গান গাইতে থাকবো।”

এরপর সে গান গাইতে লাগলো এবং সম্রাট গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়লেন। পরের দিন সকালে জানালা নিয়ে সূর্য উঁকি দিলো এবং সম্রাট সতেজ-শক্তিশালী হয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠলেন। সেবক-সেবিকারা তখনও তাঁর কাছে এসে পারেনি কারণ তারা ধরেই নিয়েছিল সম্রাট মারা গেছেন। কিন্তু নাইটিঙ্গেল তখনও সেখানে বসে গান গাচ্ছিল।
সম্রাট বললেন, “তুমি অবশ্যই সবসময় আমার সাথে সাথে থাকবে। কেবল তুমিই গান গাইবে এখানে যখন তোমার ইচ্ছা, আর কৃত্রিম পাখিটাকে আমি ভেঙে হাজার হাজার টুকরা করে ফেলবো।”
নাইটিঙ্গেল বলে উঠলো, “খবরদার, এরকমটি করবেন না। ওর যতটুকু সামর্থ্য ছিলো, ও করেছে। ও যেমনটি ছিলো, সেইরকমই আপনার কাছে রেখে দিন। আমি আপনার প্রাসাদে আমার বাসা বানাতে পারিনি এবং থাকতে পারিনি। কিন্তু আমাকে অনুমতি দিন আমার যখন খুশি আমি উড়ে আসবো এবং সন্ধ্যাবেলায় জানালার পাশে গাছের ডালে বসে আপনাকে গান শুনিয়ে যাবো। আমি আপনাকে গান শুনিয়ে আনন্দ দেবো এবং আমার গান শুনিয়ে আপনাকে চিন্তাশীল করে তুলবো। আমি আপনাকে আনন্দের গান শোনাবো, দুঃখের গানও শোনাবো। আমি আপনাকে শুভ ও অশুভর বাপারেও গান গেয়ে শোনাবো যা আপনার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে।

আপনার এই ছোট্ট গানের পাখি যত দূর খুশি উড়ে যাবে, গরিব জেলে ও কৃষককে গান শুনিয়ে আসবে এবং সেইসব মানুষকে গান শুনিয়ে আসবে যারা আপনার রাজদরবার থেকে দূরে বাস করে। তারপর আবার আমি আপনার কাছে ফিরে আসবো এবং আপনাকে গান শোনাতে থাকবো। কিন্তু আমাকে একটা কথা দিতে হবে।”
“তোমার সব কথাই রাখা হবে!” সম্রাট বললেন। তিনি আবার তাঁর রাজকীয় পোশাক পরিধান করে উঠে দাঁড়িয়েছেন, হাতে তাঁর শোভা পাচ্ছে সেই স্বর্ণের তলোয়ার ও মাথায় স্বর্ণের মুকুট।
“কেবল একটা কথাই আপনাকে রাখতে হবে। আর তা হলো, আপনি কখনো কাউকে বলতে পারবেন না যে, আপনার একটা ছোট্ট পাখি আছে, যে আপনাকে সব কথা বলে দেয়। এটা আপনার জন্য ভালো হবে।”
এই কথা বলে নাইটিঙ্গেলটা উড়ে চলে গেল। সেবক-সেবিকারা ছুটে এলো তাদের মৃত সম্রাটকে দেখতে। তারা এসে অবাক হয়ে দেখলো, তাদের সম্রাট দাঁড়িয়ে আছেন এবং তাদেরকে বলছেন, “শুভ সকাল!”।
এরপর বহু বছর সম্রাট প্রজ্ঞা, দয়া ও সুখের সাথে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। কেউ কখনো দেখতে পায়নি যে, নাইটিঙ্গেল তাঁকে গান গেয়ে শোনাচ্ছে এবং তাঁকে চারদিকে যা ঘটছে তা বলে দিয়ে যাচ্ছে।

Share.

মন্তব্য করুন