বসন্তের রাত। ঝলমলে জোছনার আলো। চারপাশটা কেমন দিনের মতো। চাঁদের আলো গলে গলে পড়ছে পাতায় পাতায়। গাছে গাছে পাতা। নতুন পাতা। ফুলে ফুলে সেজেছে প্রকৃতি। সবুজ একটি সুন্দর গ্রামের অনেক দূরে একটি বন। অনেক বড় আর সারি সারি গাছ। ছোট দুটো পুকুর, আছে একটি অনেক বছরের পুরনো বটগাছ। সেই বনের মাঝারি বড় একটি তেঁতুলগাছে থাকত দুইটা ভূত। তেঁতুলগাছের পুবদিকে দুটো আমগাছ। ভূত দুইটা দুই আমগাছের মালিক। একটা গাছ টিটি ভূতের আরেকটি গাছ পিঁপিঁ ভূতের। এই ভূতেরা অনেক ডানপিটে তবে দুষ্টু না। অন্যসব ভূতের মতো টিটি আর পিঁপিঁ কখনো কাউকেই ভয়টয় দেখায় না। সারারাত দু’জন গল্প করে। নাচে। গান গায় আর আম খায়। তেঁতুল অনেক টক। অনেক আগে একবার তারা খেয়েছিল। আর কোনোদিন তারা খায়নি। বনের দুটো গাছে সারা বছরই আম থাকে। শাখে শাখে দোলে থোকা থোকা আম। অনেক অনেক টুকটুকে লাল আম। টিটি আর পিঁপিঁ দু’জন বন্ধু। পরম বন্ধু। সেইদিন রাতে আমগাছের ডালে ঝুলে মাথা নিচে রেখে টিটি ভূত পিঁপিঁকে বলে, আয়, আয়, বস এখানে। আমার গাছের আম খাবি আয়। নে খা। খুব মজার আম। এই দুটোও নে। পুরোটাই খেয়ে নে।
– কী মজা তো?
– হুম, অনেক মজা।
– আরও দুটো খাবি?
– দুটো না, আরও তিনটে খাব।
বেশি খাসনে আবার। দাঁতে পোকা হবে। খুব বেশি মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে দাঁতে পোকা হয় জানিস নে বোকা?
– হুম, জানি তো। সেইদিন বিকেলবেলায় সুন্দরপুরে ঘুরতে গেছি, ফেরার সময় মাঠে একটি পুচকে ছেলের সাথে দেখা। ছেলেটার নাম?
– দীপু। মাঠে কানামাছি খেলছিল। মুখে বলছিল কানামাছি ভোঁ ভোঁ, যাকি পাবি তাকে ছুঁ… বলছিল আর হাসছিল। হিহিহি করে। এমন সময় আমি দেখলাম ছেলেটার সামনের একটি দাঁতও নেই। আমি ছেলেটার পকেটে হাত দিয়ে দেখি পকেট ভরা চকোলেট। রঙিন কাগজে মোড়া কত্ত মজার চকোলেট। সেখান থেকে দুটো চকোলেট খেয়ে ফেললাম। এই দেখ, আমারও এখন দুটো দাঁত নেই!
– টিটি তুইও কি চকোলেট খাবি?
– না, না। আমি চকোলেট খাব না। খুব বেশি চকোলেট খেলে দাঁতে পোকা হয়। দেখ না ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের দাঁত নেই। হি হি হি… পিঁপিঁ আর টিটি একসাথে হেসে ফেলল।
দীর্ঘ দিন হাড়কাঁপা শীতের পর আজ বনে বসন্ত উৎসব। পুরনো বটগাছে কোকিল পাখিরা গান গাইবে, ফুলগাছেরা রঙবেরঙের ফুল ফুটিয়ে ফুলে ফুলে সেজেছে। শুকনো পাতাহীন গাছের শূন্য ডালে নতুন নতুন পাতা। সবুজ সবুজ নতুন পাতায় সেজেছে গাছেরা। পুরো বন সবুজে সবুজে বসন্তের রঙিন রঙে সেজেছে। ভূত দুইটা সেই উৎসবে সারারাত কাটিয়েছে। সেই উৎসবে জোনাকি পোকার সাথে জোছনার আলো ঢেলেছে চাঁদটা, আকাশে ঝাড়বাতির মত ঝিকিমিকি মিটমিট করে জ্বলছিল দূরের তারারা। ভূত দুইটা উৎসব শেষে গান গাইতে গাইতে তেঁতুলগাছে তাদের বাসায় ফিরছিল। টিটি আর পিঁপিঁ গাইছিল,
বন সেজেছে সবুজ রঙে
গাছরা নতুন পাতায়!
ছন্দ দিয়ে পদ্য কত
রাখছি তুলে খাতায়…

টিটি গান থামিয়ে চোখ দুটো গোল গোল করে বলল, পিঁপিঁ, দেখ… দেখ… আমাদের আমগাছটায় ওরা কারা?
টিটি আর পিঁপিঁ এক দৌড়ে, না এক লাফে। ধুত্তুরি! এক উড়ালে আমগাছ দুটো কাছে আসল। কড়াগলায় একসুরে দুজনে বলল, তোমরা কে? আমাদের গাছে কেন বসেছ?
– আমরা এলিয়েন। আমি এলি। আমি বেলি। আমরা অনেক দূরের একটি গ্রহে থাকি। আমরা দুই বোন। পথ ভুলে গেছি। চাঁদ থেকে আমাদের গ্রহে ফেরার সময় পৃথিবীতে নেমেছি। তোমরা কে গো? মানুষ?
– না, আমরা ভূত। আমি টিটি। হাই, আমি পিঁপিঁ। আমরা দুই বন্ধু।
এলি আর বেলি আমগাছটায় থাকতে চাইল। ঠিক তখন শুরু হল ঝগড়াঝাঁটি। টিটি আর পিঁপিঁ চায় না এলিয়েনরা তাদের আমগাছটায় থাকুক। মিষ্টি করে বেলি বলল, ঝগড়াঝাঁটি করা ভালো নয়। আমরা বিপদে পড়ে তোমাদের গ্রহে এসেছি। আমরা তো তোমাদের অতিথি। তোমাদের উচিত আমাদের সাহায্য করা। চাইলে আমরা বন্ধুও হতে পারি। টিটি আর পিঁপিঁ দু’জন দুজনের দিকে চাইল, মনে মনে বলল, তাইতো কেউ বিপদে পড়লে তাদের সাহায্য করা উচিত। মানুষেরাও কেউ বিপদে পড়লে তাদের সাহায্য করে। দুই দিন আগে রানীগঞ্জের বড় রাস্তার মোড়ে একটা ছেলে একজন অন্ধ বুড়ো লোককে হাতধরে রাস্তা পেরুতে সাহায্য করেছিল। কী বলিস পিঁপিঁ আমাদের উচিত এলি আর বেলিকে সাহায্য করা?
– ঠিক বলেছিস টিটি। ওরা আমাদের অতিথি। এলি আমার গাছে আর বেলি থাকুক তোর আমগাছটায়।
টিটি বলল, তোমরা আম খাবে? এই নাও, খাও। অনেক মিষ্টি আম।
– আহ! কী টক। না, আম খাব না। আমরা তেঁতুল খাব।
পিঁপিঁ এলি আর বেলিকে এক ছড়া তেঁতুল দিল।
– বাহ! কী মিষ্টি তেঁতুল।
এলিয়েন দুটোর কথায় হিহিহি করে হাসল পিঁপিঁ। বেলি এলিয়েন মেয়েটি বলল, হিহিহি তোমার দেখি দাঁত নেই… হিহিহি… সবাই একসাথে খিলখিল করে হাসল, হি-হি-হি…।

Share.

মন্তব্য করুন