কদর ফোকলা দাঁত বের করে হাসছে- আফা আইছেন আবার? আমার যে কী ভালো লাগছে! আজ আমার ছোট ছাওয়ালের একখান চারকি হয়েছে। মিলাদ দিতাছি। আপনি কইলাম থাইকবেন।
কদরের কথা শুনে এতো ভালো লাগলো যে! আজ থেকে দশ বছর আগে কদরের সাথে প্রথম দেখা হয়েছিলো। এই অফিসের সে অফিস সহায়ক। অফিসার থেকে প্রতিষ্ঠানের যে কোন কাজ সে হাসিমুখে করে। সবাই তাকে ভীষণ পছন্দ করে। হালকা গড়নের কদর বাতাসের বেগে চলে। সেবারও এসেছিলাম একটা ট্রেনিং প্রোগ্রামে। কদরের যত্ন আত্তিতে আমি মুগ্ধ। একদিন দেখি তার মন খারাপ। চোখ থেকে জল ঝরছে। তাকে এ রকম বিষণ্ন দেখে জানতে চাইলাম কী হয়েছে। পুরো এক ঘণ্টা জুড়ে শুনলাম তার কষ্টের কারণ। ছেলে-মেয়ে পাঁচজন। কেউ তার কথা শোনে না। সেদিন তাকে বলেছিলাম বাড়িতে যাও। বাচ্চাদের নিয়ে এসো। দেখি তোমার জন্য কী করতে পারি!
বড় মেয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ে। তারপরের জন অষ্টম, তারপর সপ্তম, ষষ্ঠ- এভাবে তারা পিঠাপিঠি ভাইবোন একসাথে বেড়ে উঠছে। সারাদিন তারা কী করে জানো? তারা সারা গ্রাম ঘুরে কার বাড়িতে নারকেল, পেয়ারা, আমড়া যে গাছই থাকুক সেখানেই হানা দেয়। পাশেই তিতাস নদী। সেই নদীতে সাঁতার কাটে, গাঁয়ের সমবয়সীদের নিয়ে দলবেঁধে এপাড়া ওপাড়ায় মারামারি করে। বড় মেয়ে মারামারিতে যেতে পারে না। সে প্ল্যান করে। পেছন থেকে তাদেরকে শক্তি জোগায়। তারা সকালে ঘর থেকে বের হয় ঘরে ফিরে রাতে। পছন্দের খাবার না পেলে হইচই করে। কদর প্রতিদিন তার সন্তানদের নালিশ শুনতে শুনতে ক্লান্ত। আর নিতে পারছে না। হাল ছেড়ে মাথায় হাত দিয়ে কাঁদছে।
আমার আসলে কী বলা উচিত ভাবতে শুরু করলাম। এ বাচ্চারা সবাই স্বাস্থ্যবান। রোগ-ব্যাধি নেই। এটা একটা ভালো খবর। বড় মেয়ে সুমি। তার সাথে খাতির করতে শুরু করলাম। আমি আমার অফিসের ফাইলপত্র রেডি করছি আর তার সাথে কথা বলছি। সে দারুণ উৎসাহে আমার কাজ দেখছে। সে বলে খালামণি একটা কথা বলি? আপনার কী কী করতে ভালো লাগে? আমি বুঝলাম কী বলতে চাচ্ছে। বললাম, এখন মন দিয়ে চাকরি করতে ইচ্ছা হয়। চাকরিটাই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। এখানে শতভাগ কাজ নিশ্চিত করতে চাই। তোমার কী করতে ইচ্ছা হয়? সুমি যেন হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে। আমার মন চায় এ দেশটাকে কান ধরে সোজা করে ফেলি! কিন্তু মা ঘর থেকে বের হতে দেয় না। বললাম, মা তোমার ভালো চায়। আমাদের দেশের মানুষেরা অন্যের মতের গুরুত্ব দেয় না। রাস্তাঘাটে যারা ঘুরে বেড়ায়। এদের ভেতর অনেকেই তোমাকে নানান কথা বলে উত্ত্যক্ত করবে। বিপদ হতে পারে তাই তারা কনসাস থাকে। কিন্তু খালামণি বের না হলে কাজ করবো কিভাবে! তোমার কাজ এখন মন দিয়ে পড়া, ভাইবোনদের দেখাশোনা করা, মাকে সাহায্য করা। শুধু বই পড়বে না খবরের কাগজ পড়বে, গল্প উপন্যাস পড়বে। স্যারদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবে। তুমি কী করতে চাও বাবা-মাকে বুঝিয়ে বলবে। তাহলে তোমার হচ্ছা পূরণে কোনো সমস্যা হবে না। সুমিকে ভাবনায় ডুবে যেতে দেখলাম। তারপরই তার চোখ জ¦লে উঠলো। সে গাইতে শুরু করলো-‘একটি স্বাধীনতা তুমি আসোনি সহজ পথে/তোমাকে পেতে রক্ত-অশ্রু মিশেছে একই স্রােতে’ বিস্ময় নিয়ে তার দিকে তাকালাম। কী চমৎকার গান করে! বললো, খালামণি, আমরা একটা দল গঠন করেছি। প্রতিদিন কিছু কিছু দোকানে যাবো তাদের ওজন পরিমাপ পর্যবেক্ষণ করবো। আমাদের দেশটা যদি শ্রীলঙ্কার মতো হয়ে যায় তাহলে তা কেমন হবে? চালের কেজি হবে পাঁচশ টাকা, চিনি, নুনের দাম হবে চারশ টাকা। আমরা বাঁচবো কী করে! কিন্তু বাবা মা বের হতে দেয় না। আরো বিস্ময় নিয়ে সুমিকে দেখলাম। কদর এ মেয়ের কদর বুঝলো না! তাকে অভয় দিলাম। এগিয়ে যাও। তোমরা আমাদের আঠারো/ উনিশের দুর্দান্ত আহ্বান। তোমরা না জাগলে দেশ বাঁচবে কী করে। তোমার বাবার সাথে আমি কথা বলবো। সেবার সেখানে আমি প্রায় একমাস ছিলাম। প্রতিদিন তারা আমার কাছে দলবেঁধে এসেছে। প্রতিদিন তাদের জয়ের খবর। একজন বৃদ্ধ অসহায় বাড়িতে একা পড়ে আছে। এদিকে রোজা শুরু হয়েছে। তারা দলবেঁধে সে বৃদ্ধের বাড়িতে গিয়েছে। সবাই মিলে ধরাধরি করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে। ডাক্তার নার্স তাদের ঢুকতে দেবে না। তারা দলবেঁধে হাসপাতালের সামনে গাইতে শুরু করেছে- একটি স্বাধীনতা তুমি আসোনি সহজ পথে। তাদের হাঙ্গামায় পুরো এলাকার লোকজন সাংবাদিক, পুলিশ সবাই জড়ো হয়েছে। রক্ত গরম করা প্রতিবাদের ভাষা ঝরছে হাসিবের কণ্ঠ হতে। এ হাসপাতালে কেন চিকিৎসা হবে না? জনগণের ট্যাক্সের টাকায় সরকার ডাক্তার-নার্স রেখেছে। হাসপাতালে ডাক্তার থাকবে না কেন? কেন ঔষধ থাকবে না? অবশেষে বৃদ্ধকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় এবং চিকিৎসা শুরু হয়। তারা দলবেঁধেই বৃদ্ধকে দেখতে যায়। তাদের প্রথম জয়। এ প্রথম কদর দৌড়ে এলো আমার কাছে, ‘আফা, সুমি মায়ে তো বিরাট কাম করি ফেলছে।’ আমি হাসলাম, ওরা যা পারে তুমি আমি তা পারি না।

পরের দিন কদর আবারো এলো, আফা আপনেরে কী কমু! কিছুই বলা লাগবে না। কৈশোরের মানুষদের পাশে দাঁড়াতে হয়। পথ দেখাতে হয়। ন্যায় অন্যায় বুঝিয়ে বলতে হয়। তাদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে দিতে হবে। নইলে তাদের শক্তির, মেধার পরিপূর্ণ বিকাশ হবে না। ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠবে না। তারা ভুল করবে না। অপেক্ষা করো। সুমিকে সেদিন কথায় কথায় বলে ছিলাম, বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে দুটো বিষয় লাগবে। এক. ভোক্তা অধিকার আইন সম্পর্কে জানা, দুই. আইন প্রয়োগ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ। প্রথমটি তোমরা পারবে দ্বিতীয়টির জন্য ম্যাজিস্ট্রেট লাগবে। সুমি দেরি না করেই ভোক্তা অধিকার আইন এবং তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে পড়াশোনা শুরু করে দিয়েছে। তার দল ভারী হচ্ছে। স্কুলগামী এবং স্কুলবিমুখ সকল শিশু-কিশোর এক হয়েছে। বক্তা হাসিব এবং সুমি। তাদের চোখে মুখে স্বপ্ন। নিজের বাড়ি-গাড়ি হবে তা নয়। কিভাবে মানুষের ভেতর আইন সচেতনতা তৈরি করা যায়, কিভাবে অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো যায়! কিভাবে মানুষের জন্য মঙ্গল করা যায়- এসব নিয়ে তারা প্ল্যান করতে শুরু করেছে এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাচী জেঠি সবার সাথে কথা বলতে শুরু করেছে। এখন তারা অন্যের ফলফলাদি নষ্ট করে না। স্কুলে যায় নিয়মিত। পড়াশোনা করে ঠিকমতো। বাকি সময় মিছিল মিটিং করে কাটায়। তাদের দলে যোগ দিয়েছে কলেজ পড়–য়া রূপম। কিন্তু নেতা সুমি-হাসিব। তারা একই শ্রেণিতে পড়ে। বাড়ির পাশেই মেইন রাস্তা। তারা নেমেছে ড্রাইভারের লাইসেন্স চেক করছে। সব ড্রাইভার এক হয়ে তাদেরকে ধাওয়া করছে। মারবে। তারা দমবার পাত্র নয়। তারাও যাদের লাইসেন্স নেই তাদেরকে গাড়িতে উঠতেই দেবে না। স্কুলের এক হাজার ছাত্র সে দিন এক হয়েছে। পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেট সব এসেছে। সাংবাদিকেরা ফলাও করে প্রচার করছে উলচা পাড়ার মেয়ে সুমি সাংঘাতিক কাজ করছে। তারা একটি দল গঠন করছে। দলের নাম ‘ন্যায় বিচার’। সবাই চমকে যাচ্ছেন? এটা আবার নাম হলো? জি-হ্যাঁ দলের নাম ‘ন্যায় বিচার’। যেখানে আমাদের বিচারব্যবস্থা প্রশ্নের সম্মুখীন সেখানে তারা কিভাবে ন্যায়বিচার করবে! চল দেখে আসি- গাড়ির সামনে শত শত ছাত্র। গাড়ি ছাড়তে দেবে না। তারা যাত্রীদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছে চালক অষ্টম শ্রেণি পাস হতে হবে এবং লাইসেন্স থাকতে হবে। তারা তথ্য অধিকার এবং ভোক্তা অধিকার সম্পর্কে সেখানে দাঁড়িইে বক্তৃতা করছে। এমন সময় থুত্থুড়ে এক বুড়ি লাঠিতে ভর করে এসে বলে, তোরা সর আমি দেখছি। ড্রাইভারের কাছে গিয়ে লাঠি দিয়ে মারতে শুরু করেছে তুই এত্তোগুলান মাইনষের জীবন লইয়া খেলা করতিশ ক্যানে, হারু? হারু বুড়ির নাতি। বুড়ি বলে যা, নাম, ভাগ! মানুষ মারার যন্ত্র বসাইলি? অন্দুরের মতো? বুড়ির কথায় সবাই হাসলেও বুড়ি হাসেনি। ছাত্রদের উদ্দেশে বললো, আল্লায় তোমাগো ভালা কইরবো। কাজ চালাও আমি তোমাগো লগে আছি। হাসিবের চোখ থেকে জল ঝরছে। আমরা না পারলে, আমরা না ভাবলে কে ভাববে এ দেশ নিয়ে? এ বয়সী মানুষ আবেগপ্রবণ বেশি থাকে। ছাত্ররা সবাই কাঁদছে। আমরা শ্রীলঙ্কার মতো দেউলিয়া হতে চাই না।

সেদিন চারদিকে হইচই পড়ে গিয়েছে। মানুষ এখন পাগলের মতো সুমি-হাসিবকে খোঁজে। গ্রামের মানুষের সুখ-দুঃখে তারা প্রহরী। যেখানে অন্যায় সেখানেই তারা। কে মোড়ল কে মাতবর তারা ধার ধারে না। এ নিয়ে স্থানীয় রাজনীতিবিদেরাও চিন্তায় পড়ে গেলো। কারণ রিলিফের চাল ডাল বিলি বণ্টন ঠিকমতো হচ্ছে কি না তারা তদারকি করছে। রাস্তা তৈরির কাজ সময় মতো হচ্ছে কিনা তারা তা তদারকি করছে। বাজারের দর তারা নিয়ন্ত্রণ করছে। এখন সাধারণ মানুষ ঘরে ঘরে সচেতন হয়েছে। সত্য কথা বলতে কেউ ভয় পায় না। দেখতে দেখতে গ্রামের অবস্থা ঘুরে দাঁড়ালো। তারা কৃষকেদর বুদ্ধি পরামর্শ দেয়া থেকে ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত তদারকি করতে শুরু করলো।
প্রতি শুক্রবার তারা কদরের বাড়ির আঙিনায় বৈঠক বসায়। সেখানে আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সবই থাকে। এবার তারা সিনিয়রদের হায়ার করে নিয়ে আসে। সংসারে কার দায়িত্ব কী এ বিষয়ে জমকালো বিতর্ক করে। একদিকে থাকে সিনিয়র সিটিজেন অন্য দিকে থাকে জুনিয়র। এক দিকে থাকে স্বামীরা অন্য দিকে স্ত্রীরা। সবাই সবার মনের কথা শুনে অবাক হয়ে গিয়েছে। এতো দিন তারা জানতোই না সংসারের আসল রহস্য। সুমি এখন মাসটার্সে পড়ে। হাসিবও তাই পড়ে। সবাই বলাবলি করছে দুজনের বিবাহ হলে কেমন হবে। কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করে। বলে না। তাহলে আমাদের কাজ শেষ হবে না। আমরা হারিয়ে যাবো স্রােতে।

তিতাস নদীর পাড়ের গ্রামটি এখন শান্তি আর ভালোবাসায় পূর্ণ। এখানে রাজনীতিবিদেরা কোন খেলা খেলতে পারে না। প্রতিটি মানুষের ভেতর বাংলাদেশ শব্দটি ঝংকার তোলে। প্রতিদিন সে স্কুলে এ গানটি বাজে ‘একটি স্বাধীনতা তুমি আসোনি সহজ পথে–’ এ গ্রামে কোন রাজনীতি চলে না। এ এক কঠিন সংগ্রাম। এ গ্রামের স্কুলের প্রতিটি ছাত্র/ছাত্রী বাধ্যতামূলক সামাজিক কাজ করে। উন্নয়নমূলক কাজ করে। গ্রামের নারীদের ভেতর অর্থনৈতিক চিন্তাভাবনা ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা অবসরে নকশিকাঁথা সেলাই করে, কুটির শিল্পের বিভিন্ন আইটেম তৈরি করে। আড়ং এর লোকজন এসে তাদের থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। প্রথম প্রথম তারা আড়ং এর লোকের কাছে বিক্রি করলেও এখন তারা নিজেরাই সরাসরি ক্রেতার কাছে বিক্রি করে ই-কমার্সের মাধ্যমে। তাদের পুঁজি দুটো-
সততা আর শ্রম। তারা মিথ্যা বলে না। তারা যা তৈরি করে নিখুঁত করে। মানুষ তাদের পণ্য এখন অনলাইনেই অর্ডার দিয়ে নিয়ে যায়।

মানুষের বেড়ে ওঠা এক ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ রাস্তা। এখানে যদি শিশু-কিশোরেরা পথ হারায় তাহলে আর ফিরে পাওয়া যায় না। সুমি যে কোন সময় আমাকে ফোন করতে পারতো। আমার কথা সহজ ভাবে গ্রহণ করতো। ফলে তার মাধ্যমে তাদের সবার ভেতর জেগে উঠেছে মনুষ্যত্ব। মানুষের জন্য কাজ না করলে মানব জীবন বৃথা।

কদর তার যে সন্তানের জন্য এতো হতাশ ছিলো সে সন্তানেরাই রীতিমতো বিপ্লব ঘটাচ্ছে। সুমি, সোহাগ, সজল, সৌরভ, সুস্মিতা সবাই তাক লাগানো কাজ করছে। স্কুলে তাদের অনেক সুনাম, কলেজে সুনাম। এ পাঁচটি ছেলে মেয়ে যেন এক একটি জ্যোতি, হীরের টুকরো। এ গ্রামে একদিকে যেমন কৃষির বিপ্লব ঘটছে অন্য দিকে শিল্পের। সোহাগ কৃষি বিশ^বিদ্যালয় থেকে পড়া শেষ করে কৃষির উন্নয়নে নিবেদিতপ্রাণ কর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। সুমি তার দলের হাল ধরে দলের বিস্তৃতি ঘটাচ্ছে। এখন গ্রাম থেকে জেলায় তার দল কাজ করছে। রাস্তা-ঘাট পরিষ্কার, নালা ডোবা জলাশয় সংস্কার, পতিত ভূমিকে আবাদযোগ্য করে তোলা, পাঠাগার প্রতিষ্ঠা, পাঠক তৈরি-কিনা করছে। সৌরভ অনার্স শেষ করে বিসিএস দিয়েছে। তারা দেখেছে সদিচ্ছা থাকলে হয় না ক্ষমতাও লাগে। তাই প্রশাসন ক্যাডারে সে প্রবেশ করেছে। কদরের কাছে প্রশাসন ক্যাডার যা আমার মতো মাস্টারও তা! সে জানে চাকরি, অন্য কিছু নয়।

আজ তার ছেলে প্রথম বেতন পেয়েছে। তার আনন্দের শেষ নেই। ছেলে-মেয়েরা মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বললেও টাকা তো আয় করেনি। তারা টিউশনি করছে এটা ঠিক কিন্তু জীবনের জন্য যতটুকু লাগে ততোটুকুই করেছে। কদরের চোখে জল। কদর এখন তার মেয়ের উপযুক্ত সঙ্গী। যেখানেই যায় বাবাকে সাথে নিয়ে যায়।
এ গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘নির্ভর পল্লী’। এ পল্লীতে কেবল তারাই সদস্য হবে যাদের দেখা শোনার কেউ নেই। যে সন্তান বাবা-মাকে কষ্ট দেয় তারা গিয়ে সেখানে দাঁড়ায়। সে সন্তানকেই তারা ক্যাপচার করে। যে সংসারে কলহ সেখানেই তারা সমঝোতার হাত বাড়ায়।

উলচা পাড়ার নাম বদলে এখন ‘ন্যায় বিচার’ পাড়া হয়েছে।
কদরের হেঁচকি তোলা কান্নায় ফিরে এলাম বাস্তবতায়। তার সন্তানদের খবর দিয়েছে আমি এসেছি। সুমি আগেই জানতো। কারণ যোগাযোগ তো আছেই। আজকের দিনে সোস্যাল মিডিয়ার কল্যাণে সব খবর সবাই পায়। আর মিডিয়ার সঠিক ব্যহারের জন্য তাদের কাজের খবর দেশ থেকে দেশে পৌঁঁছে গিয়েছে।
পরিবার শিশু-কিশোরদের নিরাপদ আশ্রয়। কদর তা বুঝতে পেরে সন্তানদের ভালো কাজ এপ্রিশিয়েট করেছে। মন্দটির মন্দ সাইড তুলে ধরেছে। তারাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি কেবল দূর থেকে পরামর্শ কেন্দ্র হিসেবে ছিলাম।
শিক্ষার্থীদের রাজনীতি-সচেতন হতেই হবে। সজল রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়েছে। তার কারণে এখান থেকে কেউ চুরি করার মিথ্যা বলার সুযোগ পায়নি। সজল তা হতে দেয়নি।
এতো সফলতার পেছনে দুটো বিষয় কাজ করেছে। তাদের সাহস আন্তরিকতা।
মানুষের মঙ্গল চিন্তার চেয়ে ভালো আর কোনো কাজই নেই।

Share.

মন্তব্য করুন