টুপটাপ অঝোর বৃষ্টি মানেই তো বর্ষাকাল। আষাঢ় শ্রাবণ এই দুই মাস মিলে হয় বর্ষাকাল। শনশন উড়ানি বাতাস, কাজল কালো মেঘের ঘনঘটা, তারপর বৃষ্টির রিমিঝিম ছন্দ নিশ্চয়ই তোমাদের মনে দোলা দেয়। রিমঝিমি শব্দে কানায় কানায় ভরে ওঠে দুরন্ত মন। বৃষ্টিতে ভেজার জন্য তখন ছটফট করতে থাকো, তাই না? আসলে বর্ষার দিনে ঝুম বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দটা সত্যি দারুণ। দল বেঁধে বন্ধুদের সাথে বৃষ্টির জলে দাপাদাপি করা, ভিজে ভিজে ফুটবল খেলা, কাদা ছোড়াছুড়ি করা, আবার কাগজের নৌকা বানিয়ে বৃষ্টির জলে ভাসিয়ে দেয়া ভীষণ মজার। বৃষ্টির দিনে স্কুল ছুটির পরে কাকভেজা হয়ে বাড়ি ফিরে আসো কেউ কেউ। তারপর সর্দিজ্বরে বিছানায় শুয়ে থাকো, তাই না? হ্যাঁ বন্ধুরা তোমাদের মনে রাখতে হবে বর্ষার সময় নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কিওলাইটিস, ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিস এবং আরো কিছু চর্মরোগ হয়ে থাকে। তাই এই সময় স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হতে হবে, নিয়মিত পরিচর্যা করতে হবে। কারণ সুস্থ দেহেই কেবল সুস্থ সুন্দর মন থাকে। এবার চলো জেনে নেই কিভাবে এ সময় নিজের স্বাস্থ্যের পরিচর্যা করবে।
১. বর্ষায় এই বৃষ্টি তো কিছুক্ষণ পরেই ভ্যাপসা গরম দেখা দেয়। আবহাওয়ায় খুব স্যাঁতস্যাঁতে ভাব থাকে ফলে একটু এদিক সেদিক হলেই অসুখ বেঁধে যায় তাই ঠাণ্ডা গরম বুঝে শরীরের প্রতি যত্নশীল হবে।
২. এ সময় অবশ্যই সুতির কাপড় পরবে। ঘেমে গেলে সঙ্গে সঙ্গে পোশাক বদলে নিবে।
৩. বৃষ্টিতে ভিজে গেলে বাসায় ফিরে সঙ্গে সঙ্গে গোসল করে শুকনো পোশাক পরবে। তোয়ালে দিয়ে ভালো ভাবে চুল মুছে নিবে যেন চুলের পানিতে পিঠ ভিজে না থাকে। ভেজা শরীরে পোশাক পরবে না, ভেজা শরীরে পোশাক পরলে বোগলের নিচে ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া জমে এবং চর্মরোগ হয়। শরীর শুষ্ক রাখবে এবং চুল ছোট করে ছাঁটবে।
৪. সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকবে কারণ জলীয় বাষ্পজনিত আবহাওয়ায় ত্বকে ময়লা জমে খোসপাঁচড়াসহ সহজেই নানা ধরনের ইনফেকশন হতে পারে।
৫. এই সময় কানের যতেœর প্রয়োজন হয়। গোসল শেষে কানের ভেতরে পরিষ্কার নরম কাপড় বা গামছা অথবা কটন বার দিয়ে কান মুছে নিবে। অনেকের কানে এ সময়ে ছোট ছোট ফুসকুড়ি দেখা দেয় তাই কান পরিষ্কার করে রাখবে।
৬. বর্ষাকালে অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি পান করবে। বাইরের খোলা খাবার খাবে না। এ সময় পানিবাহিত রোগ যেমন ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিস অনেক বেশি বেড়ে যায়, তাই এ ব্যাপারে তোমরা সতর্ক থাকবে। তেল মসলাযুক্ত খাবার কম খাবে এবং বাশি বা পচা খাবার খাবে না। চেষ্টা করবে ঘরের তৈরি খাবার খেতে এবং তরল জাতীয় খাবার বেশি খাবে।
৭. ঠাণ্ডা লাগলে বা জ্বর হলে লেবু চা, লেবু-শরবত, নানা রকম ফলের শরবত বেশি বেশি খাবে।
৮. বর্ষাকালে সুস্থ থাকার জন্য ভিটামিন-সি জাতীয় খাবার বেশি বেশি খাবে। এ সময় প্রচুর মৌসুমি ফল পাওয়া যায় সে সব ফল খাবে। ফল খাবার আগে আধাঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখবে তাতে ফরমালিন চলে যাবে। যেকোনো ফল ভালো করে ধুয়ে তবে খাবে, খেয়াল রাখবে পানি যেন বিশুদ্ধ হয়। নোংরা পানিতে ফল ধুয়ে খাবে না।
৯. স্কুলে যাবার সময় বাসার তৈরি খাবার টিফিনবাক্সে করে নিয়ে যাবে এবং একটা পরিষ্কার বোতলে বাসা থেকে বিশুদ্ধ পানি নিয়ে যাবে। স্কুলের ক্যান্টিনের খাবার, এবং বোতলজাত পানীয় এড়িয়ে চলবে।
১০. বর্ষাকালে ভ্যাপসা গরম পড়ে। প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে আইসক্রিম খাবে না। অথবা গরম থেকে এসে এসি ছাড়বে না। বাইরে থেকে খেলাধুলা করে এসে কিছু সময় ফ্যানের বাতাসে শরীর ঠাণ্ডা করে তবে এসি ছাড়বে। তাহলে আর ঠাণ্ডা গরম লেগে সর্দি কাশি বা গলা ব্যথা হবে না।
১১. বর্ষাকালে অবশ্যই ত্বকের যত্ন নিবে এবং প্রতি সপ্তাহে হাত-পায়ের নখ কাটবে। খেয়াল রাখবে পায়ের আঙুলের ফাঁকে যেন পানি জমে গিয়ে সেখানে কোনো ছত্রাকের জন্ম না হয়। হাত-পায়ে অলিভওয়েল ব্যবহার করতে পারো।
১২. বর্ষাকালে পোকামাকড়, সাপ, ব্যাঙ, মশার উৎপাত বেড়ে যায়। তাই দল বেঁধে মাঠে খেলার সময় সাবধান থাকবে। মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য ফুল প্যান্ট পরতে পারো, খালি পায়ে দৌড়ঝাঁপ করবে না। বড় বড় ঘাসের ভেতরে কীটপতঙ্গ বা সাপ থাকতে পারে তাই ঘাসের ভেতরে বৃষ্টিতে ভিজবে না। বাড়ির চারপাশের ঝোপঝাড় কেটে ফেলবে।
১৩. বাড়িতে যদি ফুলের টব থাকে তাহলে টবে পানি জমতে দিবে না, এবং এসির পানিতে যেন মশা ডিম না পাড়ে সেদিকে খেয়াল রাখবে। বাড়ির ছাদে পানি জমতে দেবে না এই সব স্থানের জমা পানিতে এডিস মশা ডিম পেড়ে ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়ায়।
১৪. ঘুমাতে যাবার আগে অবশ্যই মশারি টাঙাবে। দিনে রাতে সব সময় ঘুমানোর সময় মশারি টাঙাবে। এ সময় মশার কামড় থেকে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, বেশি হয়। যাদের শ্বাসজনিত সমস্যা আছে তারা মশার কয়েল জ্বালাবে না।
১৫. ঘরবাড়ি পরিষ্কার করে রাখবে। ঘরে যেন ইঁদুর বা তেলাপোকা না থাকে। কিছু ডাটা অ্যানালাইসিসে দেখা গেছে ঘরের কোনায় যদি ইঁদুর বা তেলাপোকা থাকে আর যদি তোমাদের অ্যালার্জি থাকে তখন এগুলো মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে।
১৬. বৃষ্টির দিনে ঘরের ভেতরে ভেজা কাপড় শুকাতে দেবে না। ঘরে যেন স্যাঁতস্যাঁতে ভাব না থাকে। মোট কথা শুষ্ক পরিবেশ সৃষ্টি করে রাখবে। তাহলে অনেক রোগ থেকে মুক্ত থাকবে।

আসলে বৃষ্টি দারুণ ব্যাপার হলেও বর্ষাকালের বৃষ্টি অনেক রোগের সৃষ্টি করে তাই তো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন-
নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে
তিল ঠাঁই আর নাহি রে
ওগো আজ তোরা যাসনে
ঘরের বাহিরে।

হ্যাঁ বন্ধুরা, বর্ষার দিনে বৃষ্টিতে ভিজে অসুস্থ হওয়ার দরকার নেই। বরং আমরা ঘরে থেকে বর্ষাকে উপভোগ করি আর স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হই। কথায় আছে-স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। Health is wealth.

Share.

মন্তব্য করুন