মানুষ আল্লাহর অনুপম ভালোবাসার নিদর্শন। আল্লাহর অপার ভালোবাসায় জড়ানো এই সুন্দর সৃষ্টিরাজি- আকাশ, বাতাস, চাঁদ, সূর্য, গ্রহ, তারা। হজরত আদমকে (আ.) সৃষ্টি করে বেহেশতে জায়গা দেওয়া তাঁর ভালোবাসারই প্রকাশ। আদমের একাকিত্ব দূর করতে তারই পাঁজর থেকে বানালেন হাওয়াকে। সুখেই কাটছিল তাদের জীবন। শয়তান তাদের বিপথে নিয়ে গেল। তাদেরকে পাঠানো হলো সুন্দর এই পৃথিবীতে। দু’জনই বাস করতে লাগলেন দূরে। বহুদূরে। দীর্ঘকাল পর তাদের দু’জনের দেখা মিলে। সে কী আনন্দের মুহূর্ত! ভালোলাগার অনুভূতি! আল্লাহর মহিমায় তারা আবার নতুন জীবন শুরু করলেন। সেই থেকে মানুষের এই চলমান ধারা। আমরা সবাই আদম ও হাওয়ার সন্তান। বর্তমানে সৃষ্টিজগতে প্রায় পনেরো লক্ষাধিক প্রজাতির খোঁজ পাওয়া যায়। তাদের সবার পানাহারের ব্যবস্থা করেন এক আল্লাহ। এতে কারো বিশেষ ভূমিকা নেই। কত সুন্দর আয়োজন! কেউ একবেলা না খেয়ে কাটায় না। খালি পেটে বের হয় আর ভর পেটে ফিরে সবাই আপন নীড়ে।

আমাদের জীবন আল্লাহরই দেয়া। আমরা চোখের সামনে দেখতে পাই অনেক মানুষ- যাদের হাত নেই, পা নেই, চোখ নেই। আমাদের এই সুস্থ শরীর মহান আল্লাহর অনেক বড় নেয়ামত। এই পৃথিবীর একজনই স্রষ্টা। আকাশ, বাতাস, সাগর, নদী, মেঘমালা সবই তাঁর হুকুমের অধীন। আমাদের পানাহার থেকে শুরু করে জীবনের সব চাহিদা তিনিই পূরণ করেন। যাঁর হাতে আমাদের জীবন-মরণ তাঁর মর্যাদা সবার উপরে। এবাদত-বন্দেগি সবকিছু তাঁরই জন্য নিবেদিত। আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক বা অংশীদার বানানোর কোনো অবকাশ নেই। এটি অনেক বড় গুনাহ। যে গুনাহ আল্লাহ কখনো মাফ করবেন না। সত্যিই তো, যিনি আমাদের স্রষ্টা, রিজিকদাতা, প্রতিপালক। এই দুনিয়ার জীবন শেষে যাঁর কাছে ফিরে যেতে হবে। বিচারদিনের যিনি মালিক। যাঁর ফয়সালার সামনে কারো টু-শব্দ করার ক্ষমতা নেই। সেই মহান আল্লাহর সামনে সবারই মাথা নত করা উচিত। তাঁর সাথে শিরক করার তো প্রশ্নই ওঠে না। বরং আল্লাহকে আমরা সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে যাবো। আল্লাহর প্রতি ভালোবাসায় আমাদের জীবন সুন্দর হবে। উন্নত হবে। পরকালেও আমাদের ঠিকানা মিলবে জান্নাতে। যেখানে থাকবে শুধু শান্তি আর শান্তি। সুখ আর সুখ। আনন্দ আর আনন্দ।

পৃথিবীতে আমরা নানা রকম মানুষ দেখতে পাই। কেউ ভালো স্বভাবের দরুন সবার প্রিয় হয়ে ওঠেন। আবার কেউ খারাপ ব্যবহারের কারণে মানুষের কাছে হয়ে যান অপ্রিয়। মানুষ সবচেয়ে বেশি মানুষের মন জয় করে মুখের কথা দিয়ে। একইভাবে মানুষের মন ভেঙে খান খান হয়ে যায় মানুষেরই কথার আঘাতে। বিনয় ও নম্রতা মানুষকে মহীয়ান করে তোলে। আবার গর্ব ও অহংকার মানুষের জীবনকে কলুষিত করে। অসুন্দরে ভরে দেয়। বড়দের স্নেহ-মমতায় ছোটদের মন আনন্দে নেচে ওঠে। আবার ছোটদের সম্মানে বড়রাও খুশি হন অনেক বেশি। আমাদের অমায়িক ব্যবহারে জীবন সুন্দর হয়। পৃথিবী ভরে যায় বেহেশতি সুবাসে।

আধুকিতার ছোঁয়ায় আমাদের জীবন বদলে গেছে। আজকাল মোবাইল সবারই প্রিয়। ছোট-বড় সবার হাতে শোভা পায় মোবাইল। অনলাইনে পড়াশোনার সুবাদে বাবা-মা মোবাইল তুলে দিয়েছিলেন আদরের সন্তানদের হাতে। তারাও মোবাইলের সুবাদে লেখাপড়ায় মনোযোগী হয়ে ওঠে। সময়ের তালে তালে মোবাইলে দেখতে পায় অনেক কিছু। নতুন নতুন গেমস, ভিডিওসহ নানা ধরনের প্রোগ্রাম তাদের মনে গেঁথে যায়। পাঠ্য বইয়ের ছবি আর পড়ার চেয়ে মোবাইল হয়ে যায় আকর্ষণীয়। মোবাইলের নেশা বাড়তে থাকে। বইয়ের প্রতি আকর্ষণ কমতে শুরু করে। দিন দিন তাদের আচরণ বদলে যায়। যে ছেলে বা মেয়ে ফাঁকি দেওয়া কী জানে না, সে-ই নানা অজুহাত খোঁজে। এমনকি মিথ্যা কথা বলতে থাকে অতি সহজেই। বর্তমান সময়ে মেধার জায়গা দখল করে নিয়েছে মোবাইল। মোবাইল গেমসের নেশায় সমাজে অনেক বড় দুর্ঘটনাও ঘটছে অহরহ। গবেষণায় দেখা যায়, আগামী বিশ বছরে জাতিকে মেধাহীন বানাতে অবাধ মোবাইল ব্যবহারই যথেষ্ট। আর কিছুর দরকার নেই। এমনকি মোবাইলের নেশা মাদকের চেয়েও ভয়াবহ। ভয়ানক।

সত্যের সুরভিতে জীবন আলোকিত হয়। আমাদের মহানবী সা. সবাইকে সত্যবাদী হতে উপদেশ দিয়েছেন। একজন সাহাবি মহানবী সা. এর কাছে এসে আরজ করলেন, আমাকে উপদেশ দিন। নবীজি তাকে বললেন, ‘তুমি সদা সত্য কথা বলবে।’ লোকটি উত্তরে বললেন, ‘এই একটি মাত্র কাজ! এ তো খুবই সহজ।’ এই বলে লোকটি নবীজির কাছ থেকে বিদায় নিলেন। লোকটি আগে থেকেই অনেক খারাপ কাজের সাথে জড়িত ছিলেন। যখনই লোকটি কোনো কাজ করতে যান তখনই নবীজির কথা মনে পড়ে যায়। মিথ্যা কথা বলা যাবে না। তাই একে একে সব মন্দ কাজ ছাড়তে শুরু করেন। কিছুদিন পর লোকটি নবীজির কাছে এলেন। নবীজি তাকে দেখে খুবই খুশি হন। কেননা সত্য বলার কারণে লোকটি সব খারাপ কাছ ছেড়ে দিয়েছেন। ভালো মানুষ হয়ে গেছেন। মহানবীর আনন্দেরও সীমা নেই। এই ঘটনা আমাদের কী শেখায়? সত্য মানুষের জীবনকে বদলে দেয়। সুন্দরের সৌরভে জীবন আলোকিত হয়। উন্নত হয়। সবার ভালোবাসা পাওয়া যায়।

সুন্দর মনের পরশে আমাদের জীবন আরো সুন্দর হয়ে ওঠে। যাদের মন সুন্দর তাদের জীবনে আনন্দের ঢেউ খেলে। শত বাধাও তাদের সুখের ঠিকানায় ভাগ বসাতে পারে না। তারা বোঝে, জীবন তো আর ফুলের বিছানা নয়। হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ মিলেই তো জীবন। যে কোনো সমস্যার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়। জীবনের পথে বাধা আসতেই পারে। ধৈর্যের সাথে তা মোকাবেলা করতে হয়। এগিয়ে যেতে হয় সামনের দিকে। থেমে থাকার অবকাশ কোথায়? কঠিনকে জয়ের মাঝেই তো জীবনের সফলতা। সুন্দর এই পৃথিবীতে শুধু নিজেদের নিয়ে ভাবলেই তো চলবে না। জীবনের বাঁকে বাঁকে মানুষকে দেখাতে হবে কল্যাণের পথ। ন্যায়ের পথ। সত্যের আলোয় মানুষ পুলকিত হবে। সুন্দরের ছোঁয়ায় তারা মুগ্ধ হবে। ভালোবাসার পরশে তাদের মনও আনন্দে ভরে উঠবে। জীবন তো সুন্দর! অনেক সুন্দর! এগিয়ে যেতে হবে অনাবিল সুন্দরের পথে। আলোর পথে।

Share.

মন্তব্য করুন