সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙে শ্রাবণের।
শ্রাবণ, ওঠ বাবা। স্কুলে যেতে হবে।
হন্তদন্ত হয়ে শ্রাবণ উঠে পড়ে। বাথরুম সেরে ব্রাশ করে হাত-মুখ ধুয়ে সে রেডি হয়। নাস্তা করে।
প্রতিদিনের মতো শোল্ডারওয়ালা ব্যাচ লাগানো শার্ট হাফপ্যান্টের সাথে ইন করে পরে শ্রাবণ। মাথা আঁচড়িয়ে দিয়ে মা তার মাথায় ক্যাপটা পরিয়ে দেন। স্কুল ইউনিফরমে তাকে দারুণ লাগে। ওকে দেখে মনে হয় সেনাবাহিনীর খুদে কোনো কর্নেল। মা বলেন-
দাঁড়াতো বাবা মোবাইলটা নিয়ে আসি, আজ তোর একটা ছবি তুলি।
শ্রাবণের হাস্যোজ্জ্বল ছবি তুলেন তিনি। মা ছেলেকে স্কুলের জন্য তৈরি করার দৃশ্যই সম্ভবত পৃথিবীর সেরা দৃশ্য। সে দৃশ্য উপভোগের তৃপ্তি শ্রাবণের চোখে মুখে।
শ্রাবণের সহপাঠী অপু বারান্দায় দাঁড়িয়ে। তারা এক সাথে স্কুলে যায়।
দুরন্তপনা থাকলেও শ্রাবণ বড় ভালো ছেলে। মা-বাবার বড্ড আদরের। মায়াবী চেহারার এই বালকটিকে দেখলেই কাছে টেনে আদর করতে ইচ্ছে করে। মা তাকে ছোটখাটো কাজ করে দিতে বললে সেটা ফুর্তির সাথে করে দেয়। বাবা সকালে দ্রুত নাস্তা সেরে দ্রুত অফিসের উদ্দেশে বেরিয়ে যান। শ্রাবণের বাবা সরকারি কর্মকর্তা। অফিস শেষ করে চলে যান নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করায় তিনি দারুণ ব্যস্ত। অলস চোখে তাকিয়ে দেখার একটু সময় তার নেই।
শ্রাবণ বাবাকে খুব লক্ষ করে। বাবার মতো সেও পরিশ্রম করে বড় হতে চায়। অলস বসে থাকার পাত্র সে নয়। রান্নাঘরে মাকে এটা সেটা এগিয়ে দিয়ে নিজে থেকেই সাহায্য করে। ছয়-সাত বছরের একটি ছেলের দায়িত্ববোধ দেখে সবাই অবাক হয়। আদর পায় প্রতিবেশীর কাছ থেকেও। নিয়মিত স্কুলে যায়। সন্ধ্যার পর পড়ার টেবিলে বসে পড়ে। টানা তিন ঘণ্টা পড়ে সব বিষয়ের পড়া হোমওয়ার্ক শেষ করে ফেলে সে। কদর বেড়ে যায় তার শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কাছে।
সেদিন শুক্রবার। শ্রাবণের স্কুল ছুটি। সকালে পাশের বাড়ির টুটুলের মা এসে শ্রাবণের মাকে বললেন, আপা দুটো বেগুন হবে? একটু ডিম দিয়ে রান্না করব। শ্রাবণের মা বলেন, না নেইতো। টুটুলের মা একটু হতাশ হয়ে চলে গেলেন।
একটু পর শ্রাবণ রান্নাঘরে ঢুকে দেখল তার মা তিনটে বেগুন সামনে নিয়ে কুটাকুটি করছেন।
শ্রাবণ মাকে বলল-
মা তুমি যে বললে বেগুন নেই।
এই তিনটেই ছিল, দেবার মতো ছিল না।
একদিন বেগুন না খেলে কিছু হবে না- বলেই শ্রাবণ বেগুন তিনটি নিয়ে দৌড়ে গিয়ে ওই আন্টিকে বলল,
মা ভুলে গেছে আপনি এটা রান্না করুন।
শ্রাবণ ফিরে এলে মা তাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, বাবা, আমার ভুল হয়ে গেছে, আর এমন হবে না। কপালে চুমু দিয়ে বললেন, এই দোয়া করে দিচ্ছি তুই অনেক বড় হবি। হ

Share.

মন্তব্য করুন