সারা বিশ্বকে থামিয়ে দিয়েছে। একটা অজানা অণুজীব। করোনা। পুরো নাম নোভেল করোনাভাইরাস, সংক্ষেপে কোভিড-১৯। ২০১৯-এ ডিসেম্বর মাসে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে এর দেখা মেলে। এরপর ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বে। চিনতে না পারা এ রোগটিতে চিকিৎসার অভাবে মারা পড়তে থাকে মানুষ। হাজার হাজার। লক্ষ লক্ষ আক্রান্ত হতে থাকে। এ ভাইরাস যাতে আরও প্রাণঘাতী হতে না পারে, সে জন্য ঘোষণা করা হয় লকডাউন। এক দেশ থেকে অন্য দেশে বিমান উড়বে না। যেখানে অনেক মানুষ একত্রে কাজ করে বন্ধ করা হলো। কল-কারখানা, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি সব একে একে বন্ধ হল। আমাদের দেশেও তাই করা হলো।
স্কুল বন্ধ হলে মেঘা-দিব্যরা বেড়াতে যায়। ছুটির আগেই প্ল্যান করা হয়। কোথায় যাবে। কতদিন বেড়াবে। বেড়ানোর ব্যাপারে একটু আগেভাগে প্ল্যানটা করতে হয় তাদের। আব্বু আম্মু দুজনই চাকরি করেন। তাই, দু’জনের ছুটি নিতে হয়।

করোনার কবলে পড়ে মেঘা-দিব্যদের স্কুল যাওয়া বন্ধত হয়েছেই, কোথাও বেড়াতে যাবে তা-ও সম্ভব নয়। ঘরে বসে বসে শিকড় গজিয়ে যাবে নাকি! না, শিকড় গজাতে তারা দেবে না। তাদের প্রিয় স্থান রয়েছে ছাদ। ছাদটা আগেও প্রিয় ছিল ওদের। কারণ ওদের ছাদটা শুধুই ছাদ না। একটা মিনি বাগানও। বাগানটা প্রথম প্রথম আম্মু আদিনা ম্যাডামের শখে গড়ে উঠে। পরে আব্বুও হাত লাগায়। আম্মু গাছ বলতে ফুল ও ফল বোঝেন। আব্বু বোঝেন ওষধি। যা সাধারণত কবিরাজদের থাকে নজর। আব্বুর নজর শুধু ওষধি গাছই না, আকাশের দিকেও তার নজর। তাই ছাদটা আব্বু-আম্মুর প্রিয় স্থান। ওদেরও প্রিয় বটে। এখন করোনাকালে আরও প্রিয় হয়ে উঠেছে। সময় কাটাতে গাছের যত্ন করে ওরা। আর রাতে আব্বুর সঙ্গে গল্প। শুধুত গল্প নয়, টেলিস্কোপে চোখ রাখারাখি। তারকার সঙ্গে পরিচয়। ওদের কাহিনী। বিজ্ঞানীদের নতুন নতুন আবিষ্কার নিয়ে কথা। এসবে ওদের আগ্রহ আছে। তাই ছাদটা ওদের হয়ে উঠেছে প্রিয় স্থান।

মেঘা-দিব্যর আব্বু সালাম সাহেব পেশায় একজন আর্কিটেক্ট। নেশায় জ্যোতির্বিজ্ঞানী। আকাশ নিয়ে তার দারুণ কৌতূহল। এক সময় গাছ গাছড়া নিয়েও কম মাতামাতি করেননি। আর্লি লাইফে পাখির প্রতি তার ছিল ভীষণ ভালোবাসা। কিন্তু সেটা এক দুর্ঘটনার কারণে বাদ দেন। সালাম সাহেবের এই ক্ষ্যাপামো নিয়ে অনেকে অনেক কথাই বলে। আদিনাও কম টিপ্পুনী কাটে না। বলে ছেলে-মেয়ের আর দোষ কোথায়-পাবে না বাবার স্বভাব! ঠিকই বলেন আম্মু। ওদের মধ্যেও একটা কৌতূহলী মন আছে। আম্মুর বাগান নিয়ে যেমন তাদের আগ্রহ আছে, তেমনি আব্বুর আকাশ রাজ্য নিয়েও। ওদের আম্মু আদিনা চৌধুরী একজন ডাকসাইটে শিক্ষিকা। মানে একটি নামকরা স্কুলের ইংরেজির ম্যাডাম। তিনিও ক্ষ্যাপামোতে কম যান না। ছাদবাগান ছাড়াও অবহেলিত শিশুদের জন্য তিনি গড়ে তুলেছেন একটা বস্তিতে ফ্রি প্রাইমারি স্কুল। সেখানেও সপ্তাহে তিনদিন সময় দেন। পঁচাশি জন শিশুর ওই স্কুলের সিংহভাগ দায়িত্ব পালন করেন আদিনা। তার সঙ্গে কমবয়সী দুটো ছেলে-মেয়েও আছে। তাদের খরচ তিনিই দেন।
মোটামুটি এই হল সালাম সাহেব পরিবারের গঠন গাঠন। ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে একটু দূরে মিরপুর তাদের বসবাস। এক সময় মিরপুরকে ঢাকার বাইরের অঞ্চল হিসাবে ধরা হতো। মিরপুর পঁচিশ-ত্রিশ বছর বাস করা লোকেরা এমনটাই বলেন। যাতায়াতের জন্য রাস্তাও তেমন ছিল না। ছিল না ঘরবাড়ি। জনবসতি। পরিবেশটা ছিল শহর-পল্লীর।
সেই নিরিবিলি প্রকৃতির নিবিড় ¯েœহ পরিবেশে বসবাসের আশায় সালাম সাহেব মিরপুরে জমি কিনে বাড়ি করেন। তখন চারদিকে পতিত জমি ডোবা ঝোপ-ঝাড় ছিলো বেশি। ফাঁকা ফাঁকা দু-চারটে বাড়ির মধ্যে সালাম সাহেব তিনতলা বাড়িটা তোলেন। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব নন-কোঅপারেশন মুভমেন্ট করেও বাধা দিতে পারল না। এখন সেই মিরপুরের দিকে তাকিয়ে অনেকের ঈর্ষা ও লজ্জা হয়। সালাম হেসে নিজের দূরদর্শিতার বাহবা নেন। বাড়ির নাম-শান্তির নীড়।

মূলত গাছ-গাছড়া আর আকাশের নক্ষত্র নিয়ে যার কাজ-কারবার, তার জন্য এই নিরিবিলি আশ্রয় পছন্দ হবার কথা। আদিনাও গাছপ্রেমিক বটে! তা না হলে ওষধি ফুল, ফল মিলিয়ে বিশাল গাছের বাগান ছাদে বেড়ে উঠতে পারতো না। গাছ পরিচর্চা চায়। দীনা বান্ধবীদের পরচর্যায় কান না দিয়ে গাছের যতেœ শেষ বিকেলে ঘণ্টাখানেক ব্যয় করেন। সহযোগিতায় থাকেন ফমু চাচা।
ফমু চাচা সম্পর্কে একটু বলতেই হয়। ফমু চাচা সালাম সাহেবের বাবার বৈমাত্রেয় ভাই। অনেক শখ করে গিয়েছিলেন লন্ডন। যেভাবে সিলেটীরা লন্ডনমুখী হয়ে থাকেন। বিয়ে-থাও করেছিলেন এক ব্রিটিশ নারীকেই। কিন্তু তার ভাগ্য মন্দ। পরিবার জীবন সুখের হয়নি। অবশেষে দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে দেশে ফিরে আসেন। বাড়িতে ছিলেন একা। গ্রামীণজীবন তার ভালো লাগে না। তাই ভাতিজা সালামের কথায় চলে এলেন ঢাকা। আর এখানে মূলত ভাতিজার দুই ছেলেমেয়ে আর গাছ-গাছড়া নিয়ে ভালোই সময় কাটে তার। তবে ফমু চাচাকে পরগাছা গোছের লোক বলা যাবে না। গুণের বহর ম্যালা। যাক ফমু চাচা সম্পর্কে পরে আরও বলা যাবে।

মাগরিবের নামাজ শেষে নিয়ম মেনে আজও সালাম সাহেব মেয়ে মেঘা ও ছেলে দিব্যকে নিয়ে ছাদে উঠেছেন। কান টানলে মাথা আসে। সেভাবে দীনাও ছাদে আশ্রয় নিয়েছেন। সালাম সাহেব অভ্যাস মতো ছাদে উঠেই আকাশের দিকে দৃষ্টি ছুড়ে দেন, টেলিস্কোপ যন্ত্র দিয়ে। মাত্র গতকাল পঞ্জিকা থেকে মাঘ বিদায় নিয়েছে। গেল দু’বছর আগে লন্ডন থেকে নিয়ে এসেছেন যন্ত্রটা। দীনার ভাষায় যন্ত্রণাটা শীতকাল শেষে ফাল্গুনে প্রবেশ করেছে। নিয়মমাফিক প্রকৃতিতে এখন বসন্তকাল। তবু রাতের বেলা হিম জড়িয়ে ধরে। ভোররাতের দিকে গায়ে কাঁথা না জড়ালে কম্ম সারা! ঠাণ্ডা লেগে সর্দি জ¦রে কয়েকদিন ভুগো। তাই মাঘ গেলেও আকাশটা সেজে আছে মাঘের মতোই। ঝকঝকে নীল আকাশের দক্ষিণ-পূর্ব কোণ থেকে পশ্চিম কোণে ছায়াপথের অবস্থান আগের মতো। উত্তর-পূর্ব আকাশে দেখা দিয়েছে সপ্তর্ষিমণ্ডল। শনি রাশি পশ্চিম আকাশ থেকে চলে যাচ্ছে। সিংহ রাশিকে পুরোপুরি দেখা যায়।
ছাদে উঠার অভ্যাসটা তৈরি হয়েছিল যখন প্রায়শ বিদ্যুৎ চলে যেতো তখন থেকে। এখন বিদ্যুৎ যায় কম। তবে মাঝে মাঝে যায়। আর পুরনো অভ্যাস মত বিদ্যুৎ গেলে ছাদে ঠেলে উঠে ওরা।
ছাদে ওঠার জন্য বিদ্যুৎ চলে যাওয়া সময়কে বেছে নেন কেন? আকাশ দেখার জন্য অন্ধকার প্রয়োজন আছে কি? এমন প্রশ্ন করেছিল মেঘা।

হাসতে হাসতে বলেছিলেন- ‘ভৌতিক পরিবেশে আকাশ দেখতে। খুলে বলি, শহরে হাইরাইজড বিল্ডিংগুলো যেভাবে আলো ছড়িয়ে চারপাশ আলোকজ্জ্বল পরিবেশ তৈরি করে, তাতে আকাশের মিটি মিটি জ¦লা নক্ষত্র আর চাঁদের মায়াবী আলো লজ্জায় চুপসে যায়।’ মেঘা মুচকি হেসে বলল, বুঝেছি।
ছাদে ছোট ছোট মোড়া রাখা আছে। ওগুলো হয়েছে এখন মেঘা আর দিব্যর আসন। ছাদে এলে ওরা দুষ্টুমি করে না। কয়েক শত টবে গড়ে তোলা বাগানের সুন্দর পরিবেশ ওদের মুগ্ধ করে। এসব গাছের অনেকগুলোর পরিচয় ওদের জানা। ফুল গাছের পরিচয় তো ফুল ফোটার মাধ্যমে জানা যায় তেমনি ফলের পরিচয় ফল ধরার মাধ্যমে, কিন্তু ওষধি গাছের পরিচয় জানতে সাহায্য নিতে হয় আব্বুর। অবশ্য ওদের আব্বু গাছ পরিচর্যার সময় কিংবা ছাদে বেড়াতে এলে গাছ চিনিয়ে দেন।

কোন গাছের ওষধি গুণ কী তাও বলেন। এভাবে শুনতে শুনতে ওদের অনেক গাছই চেনা হয়ে গেছে। দিব্যি মুখস্থ বলতে পারে কোনটার ওষধি গুণ কী। বিশেষ করে বন্ধু-বান্ধব, মেহমান কেউ এলে ওরা গড়গড় করে গাছের পরিচয় বলে জ্ঞানের বহর মেলে ধরে। এতে সালাম সাহেব এবং দীনা মনে মনে খুশি হন। কারণ প্রকৃতির সঙ্গে ছেলেমেয়েদের পরিচয় ঘটুক ওটা ওরা চেয়েছিলেন। আজকাল শহরে যেসব ছেলেমেয়ে বাস করে তাদের প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক বা পরিচয় ঘটার সুযোগ হয় না। এটা সালাম সাহেব মোটেই পছন্দ করেন না। তিনি দীনাকে প্রায়ই বলেন-যেসব ছেলেমেয়ের নিজের আশপাশের প্রকৃতির সঙ্গে পরিচয় বা সম্পর্ক নেই, এদের দেশের প্রতিও গভীর মমতা নেই।

দীনাও তাই বিশ্বাস করেন। মাঝে মধ্যে দীনা তার স্কুলের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এখানে সেখানে বেড়াতে যান। প্রকৃতির সঙ্গে পরিচয় বা এমন একটা প্রোগ্রাম তাঁরা হাতে নিয়েছেন। সেভাবে সালাম সাহেবের ছাদ দেখাতে নিয়ে আসেন দীনা। তখন ক্লাস থ্রিতে পড়া মেঘা আর ফাইভের দিব্য হয়ে যায় জীববিদ্যার শিক্ষক। পটাপট বলে যায় এটা তুলসী, সর্দি হাঁপানি ডায়াবেটিসে কাজে লাগে। এটা ঘৃত কুমারী বাত-ব্যথায় কাজে লাগে। এটা বাসক, নিশিদা, এটা ঝুমকোলতা ইত্যাদি।
সালাম সাহেব এবং দীনা বাজার থেকে আস্ত মাছ কিনে ঘরে আনেন। মেঘা ও দিব্য যাতে মাছ চিনতে পারে। এতে প্রথম প্রথম দীনাকে বিপাকে পড়তে হতো মাছ কুটা নিয়ে। কিন্তু বাড়ি থেকে মনুর মাকে আনার পর সেই সমস্যা আর হয় না। তাছাড়া দীনা নিজেও মাছ কুটা শিখে নিয়েছেন। তবে শিং, কৈ, টেংরা এ জাতীয় ছোট মাছ কুটতে ভয় পান।

বাজার থেকে আস্ত মাছ, তাজা মুরগি ঘরে এনে নিজেরা কেটে কুটে রান্না করে খাওয়ার মধ্যে তৃপ্তি আলাদা। যা আজকাল শহরের ছেলেমেয়েরা পায় না। সালাম সাহেব বলেন, ঢাকা শহরের ছেলেমেয়েরা ফার্মের মুরগি, ওদের জগৎ বড়ই ছোট। এসব ফার্মের মুরগি দিয়ে জাতির তেমন উপকারে আসবে?
দীনা প্রতিবাদে বলেছেন, ‘তাহলে করবেটা কী? বাবা মার হাতেও সময় নেই ছেলে-মেয়েদের প্রকৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার।’
‘কেন আমরা পারছি না! ইচ্ছে থাকলে কিছু না কিছু করা যায়। অন্তত মাঝে-মধ্যে বেড়ানোর প্রোগ্রাম যদি উদ্দেশ্যমূলক রাখা যায়। যেমন ধরো বোটানিক্যাল গার্ডেন, চিড়িয়াখানা, নিজ গ্রামে নিয়ে যাওয়া-।’
‘সেরকম তো অনেকেই নেয়।’ দীনা কথার পিঠে কথা সাজান।
‘তোমাদের আকাশ-রাজ্যে বিচরণ শেষ হলো?’
অনতিদূর থেকে দীনা গলা চড়িয়ে বললেন।
‘না আম্মু! আমরা আকাশ রাজ্যে আরও কিছু সময় থাকবো।’ মেঘা বলল।
‘আচ্ছা আব্বু, চন্দ্র বিজয়ের পরও আজও মানুষ চাঁদকে নিয়ে কতো কিছু কল্পনা করে-চাঁদের বুড়িটা কী আব্বু?
মেঘা প্রশ্ন করে।
‘শোন, চাঁদটা মহাকাশে যে মায়াবী আলো বিতরণ করে তাতে চাঁদের প্রতি মানুষের ভালোবাসা গভীর। বাহ্যিকভাবে চাঁদকে যতোটা সুন্দর দেখায় বাস্তবে আহামরি কোন সৌন্দর্য নেই। নেই কোন আবহাওয়া, পানি বা বৃষ্টি, নেই বাতাস, নেই গাছপালা, জীবজন্তু বা কীটপতঙ্গ, আছে শুধু রাশি রাশি পাথর আর পাহাড়।’ সালাম সাহেব হাসেন।
‘বুড়িটা কী আব্বু?’ মেঘা ধৈর্য ধরে রাখতে পারে না।
‘পৃথিবী থেকে চাঁদের গায়ে আমরা যে কালো দাগ দেখি, তাকে চাঁদের কলঙ্ক বলা হয়। বাস্তবে তা হচ্ছে উঁচু নিচু খাদ। সমুদ্র পাহাড়। দূর থেকে মনে হয় যেন কোন বুড়ি বসে তার চড়কায় সুতো কাটছে। বুড়ি তো দূরে থাক। চাঁদে কোন প্রাণীর আস্তিত্বই নেই। সেখানে কোন প্রাণীর বাঁচাও সম্ভব নয়।
‘কেন আব্বু?’ দিব্যর প্রশ্ন।
‘কেন আগেই বললাম না পানি নেই বাতাস নেই।’
‘তাহলে মানুষ চাঁদে যাচ্ছে কেন? আবার বলছে পৃথিবী থেকে চাঁদ পর্যন্ত দ্রুত যাতায়াতের জন্য লিফট তৈরি করবে।’ দিব্য বলল।
‘ধনী ও উন্নত দেশগুলোর ইচ্ছের তো কোনো শেষ নেই। তাছাড়া শক্তির লড়াইয়ে চাঁদকে একটা মহাশূন্যের ঘাঁটি পেতেও চায়।’
‘আচ্ছা আব্বু, চাঁদকে তো পৃথিবীর উপগ্রহ বলা হয়-পৃথিবী যেভাবে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, চাঁদ কি পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে?’ দিব্য গালে হাত দিয়ে প্রশ্ন করে।
‘ভালো প্রশ্ন করছো, চাঁদকে আমরা পৃথিবীর বাচ্চা হিসেবে ভাবি তাই, পৃথিবীকে যেভাবে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে হয়, তেমনি চাঁদের সূর্যকে প্রদক্ষিণ না করে উপায় নেই। চাঁদ পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করতে সময় লাগে ২৮ দিন।’
‘আচ্ছা আব্বু, চাঁদে কি মাধ্যাকর্ষণ আছে? দিব্যর আবার প্রশ্ন। ভালো প্রশ্ন করেছো, মাধ্যাকর্ষণের কথা তোমরা নিশ্চয়ই জানো পৃথিবীতে এই শক্তির জন্য সকল কিছু মাটির সঙ্গে সম্পর্কিত আছে। চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ আছে কিন্তু যেহেতু চাঁদ পৃথিবীর তুলনায় খুব ছোট তাই এর আকর্ষণ ক্ষমতাও কম। পৃথিবীর ছয় ভাগের এক ভাগ মাত্র। তার মানে পৃথিবীর একটা লোকের ওজন ৯০ কেজি হলে চাঁদে হবে মাত্র ১৫ কেজি।’ হা: হা: হা:…। সালাম সাহেব প্রচুর হাসতে থাকেন।
আরেকটা মজার বিষয়, পৃথিবীতে হাইজাম্প দিতে তুমি যদি ৪ ফুট উঠতে পারো চাঁদে ঐ সমান লাফ দিয়ে ২৪ ফুট উপরে উঠতে পারবে।
‘বাহ বেশ মজার তো।’ মেঘা বলল।
সালাম বাহেব দূরবীক্ষণ যন্ত্রে মাঝে মাঝে চোখ রেখে আকাশ-রাজ্যে কী যেন খুঁজছেন।
‘কী খোঁজো আব্বু, তুমি আর্কিটেক্ট না হয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানী হলে ভালো করতে।’ মেঘা বলল।
‘খুঁজছি নুতন কোনো অতিথিকে। বলা তো যায় না হঠাৎ এমন কোনো নক্ষত্রের সন্ধান পেয়ে গেলাম ব্যস, কেল্লা ফতেহ।’ সালাম সাহেবের হাসি আবার।
‘কেল্লা ফতেহ কেন আব্বু?’ দিব্যর মাথা নেড়ে নেড়ে প্রশ্ন। নতুন একটা কিছু আবিষ্কার করলে হইচই পড়ে যাবে না-
‘তখন তোমাকে জ্যোতির্বিজ্ঞানী বলবে সবাই, তাই না?’ মেঘা বলল।
এমন সময় চারপাশ এক সঙ্গে আলোকিত হয়ে উঠলো। বিদ্যুৎ চলে এসেছে। বিদ্যুৎ চলে এলে আকাশটা কৃত্রিম আলোয় হারিয়ে যায়। অন্ধকারের আকাশে যে মায়া থাকে তা আর থাকে না।
দিব্য, মেঘা চলো, এবার ঘরে ফেরা যাক, তোমার আম্মু এর চেয়ে দেরি করলে, রেগে লাল মরিছ হবেন, খাবার নিশ্চয়ই টেবিলে হাজির।’
‘চলো, গুটিয়ে ফেলো সব’।
দিব্য একটু হাত-পা ছুঁড়লো আকাশের দিকে।
হা…হা…হা… হাউই। মেঘা হাই তুললো। মানে ঘুম নেমে এসেছে চোখে। উঠে পড়লো সবাই।
[চলবে]

Share.

মন্তব্য করুন