মন্দ কিছু শুনো না।
মন্দ কিছু দেখো না।
মন্দ কিছু বলো না কখনও।
এই হোক জীবনের গান।
হ্যাঁ বন্ধুরা, মন্দ পথে আমরা আর চলবো না। আমরা যে পথ ধরে চলবো বা চলা উচিত সে পথ কেমন আজ তাই আলোচনা করবো। আমরা নৈতিক পথে চলব। নৈতিকতা, যার অর্থ ভদ্রতা, ভালো হয়ে চলা, সুন্দর আচরণ করা, মন্দ কোনকিছু না করা ইত্যাদি।
আমরা সবাই সমাজে বাস করি। ভদ্র সমাজে বসবাস করতে হলে কিছু নিয়ম আমাদের মেনে চলতেই হয়। সেই নিয়মগুলো মেনে চললে সমাজের শান্তি বজায় থাকে। কিভাবে আমরা নিয়ম মেনে চলব, কী সে নিয়ম, সেসব বুঝতে হলে আমাদের নৈতিক জ্ঞান এবং শিক্ষা গ্রহণ করা দরকার।
বন্ধুরা আমরা সবাই জানি যে, আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত জীব। আমরা মানুষ। সেই আদিম যুগ থেকে সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়েছে অনেক কিছু। এভাবে একদিন মানুষ গড়ে তুলেছে সমাজ। সেদিন তৈরি হলো জাতি এবং দেশও। দিন যেতে যেতে এক মানুষের সাথে আর এক মানুষের সম্পর্ক মজবুত হয়েছে। যাকে আমরা সামাজিক বন্ধন বলে থাকি।
বন্ধুরা, আমরা একটু ভেবে দেখি কি জিনিস মানুষকে অন্য প্রাণী থেকে আলাদা করেছে। মানুষের আছে জ্ঞান-বুদ্ধি, মন-বিবেক। আছে মূল্যবোধ। এক কথায় বলা যায়, মানুষের মধ্যে মানবতা আছে। এই জন্যই মানুষ অন্য প্রাণীথেকে আলাদা।
বন্ধুরা, সমাজের মানুষ যেভাবে চললে,কাজ-কর্ম করলে কারো কোনো সমস্যা হয়না কখনো কখনো উপকার হয়। মানুষের জীবন চালানোর জন্য এমন কিছু নিয়মকেই আমরা নীতি বলব। এই নিয়মগুলো জানা বা সে সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করাকেই আমরা নৈতিক জ্ঞান বলে থাকি। সমাজের সঠিক নিয়মগুলো মেনে চলার ইচ্ছে বা আগ্রহকে আমরা নৈতিকতাবোধ বলতে পারি। সমাজে বহুদিন ধরে যে নীতি বা নৈতিক আদর্শ গড়ে উঠেছে সে নিয়ম বা আদর্শ পালন করতে গিয়ে মানুষ বুঝতে পেরেছে কোন কাজটি ঠিক আর কোনটা ভুল। এই বুঝতে পারাই হলো মূল্যবোধ। আমরা সঠিক নিয়ম মেনে চললে আমাদের মধ্যে এই মূল্যবোধ গড়ে ওঠে।
নৈতিক শিক্ষা ছাড়া মানুষের মনে মূল্যবোধ তৈরি হয়না। সমাজ উন্নত হয় মানুষের মূল্যবোধের কারণে। বন্ধুরা নৈতিক শিক্ষার অনুশীলনের মাধ্যমে সঠিক মানুষ আর দায়িত্বশীল নাগরিক হওয়া যায়। আমরাও নিশ্চয়ই এমনই হতে চাই।
এবার চল বন্ধুরা আমরা কিছু সামাজিক কাজ বা নৈতিক কর্মধারা নিয়ে আলোচনা করি।
আমরা সবাই মা বাবা ভাইবোন নিয়ে একসাথে ভালোবেসে মিলেমিশে থাকি, এর নাম পরিবার, এ কথা সবারই জানা। এই জায়গাটা কিন্তু আমাদের জীবনের সবচেয়ে আপন এবং গুরুত্বপূর্ণ জায়গা তাই সে কথা মনে রেখে আমরা সবসময় পরিবারকে সম্মানের চোখে দেখব এবং একে অন্যের সহযোগী হবো।
একে অন্যকে সম্মান করা একটি নৈতিক কাজ। শুধু বড়দের নয় আমরা বড়দের এবং সহপাঠী বা সমবয়সীদেরও সম্মান করব ভালোবাসব। ছোটদের স্নেহ আদর করব। আসল কথা হচ্ছে আমরা সবার সাথেই সুন্দর আচরণ করব।
যে কোন বিষয় বা পরিস্থিতিতে আমরা মানিয়ে চলা এবং মেনে চলার অভ্যাস গড়ার চেষ্টা করবো। বন্ধুরা এই কাজটিও একটি নৈতিক কাজ। যেমন- রাত ১২টার সময় যদি আমরা কেউ আম্মুর কাছে বিরিয়ানি খেতে চাই। তাহলে আম্মুর ওই সময়ে বিরিয়ানি তৈরি করা কঠিন হয়ে যাবে। রাত ১২টার সময় যদি খেতে ইচ্ছেও করে। তাহলে অপেক্ষা করতে হবে আগামী দিনের জন্য। তাতে তোমার ধৈর্যশীলতা এবং সময় জ্ঞান বাড়বে। আসলে জীবন চলার পথে আমরা সহজ এবং সঠিকভাবে যা করি তাই নৈতিক কাজ।
আমরা মানুষ এবং সামাজিক জীব। তাই আমরা সবসময় একজন অন্যজনকে সাহায্য সহযোগিতা করব আমাদের পক্ষে যেটুটু সম্ভব। এটা আমাদের সামাজিক এবং নৈতিক দায়িত্ব। বন্ধুরা আমরা নিশ্চয়ই এই গুণগুলো অর্জন করতে চাই এবং একজন পারফেক্ট মানুষ হতে চাই।
আমরা নিজেদের ধর্মের সম্মান করব এবং ধর্মের নিয়মগুলো যথারীতি পালন করার চেষ্টা করবো। আর অন্য ধর্মকে কখনো ছোট বা অবমাননা করব না।
বন্ধুরা, আমরা যেহেতু মানুষ তাই আমাদের বিচারবুদ্ধি থাকা দরকার। আমাদের মন মগজে ন্যায় বা সঠিক ব্যাপার কোনটি সে জ্ঞানটুকু থাকা দরকার। নিজেদের ন্যায় কাজ করতে হবে এবং কোনো অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
বন্ধুরা, আমরা নিশ্চয়ই নিজেকে কোনো খারাপ মানুষে পরিণত করতে চাই না। আমরা মানুষ হতে চাই। যে জিনিসটার জন্য আমরা অন্যান্য প্রাণীদের থেকে আলাদা। আগেই সে ব্যাপারটি আলোচনা করেছি। বিবেক, মানবতা। এসব পশুর মধ্যে থাকে না। আমাদের বিবেক মানে সঠিক বোঝার ক্ষমতা। মানবতা হলো মানুষের ধর্ম। এসব আমাদের চরিত্রে বিদ্যমান থাকবে।
কাউকে কখনোই আঘাত দিয়ে কথা বলা মোটেই ভালো কাজ নয়। আমরা কেউ এমন কাজ করব না। আমাকে কেউ কষ্ট দিয়ে কথা বললে খুব খারাপ লাগে, খুব কান্না আসে তখন তাই না? আমি যদি কাউকে ওভাবে বলি তারও খারাপ লাগবে। তাই আজ থেকে এমনটা আর করবো না।
চুরি করা আইন এবং নৈতিক দুদিক থেকেই খুব অন্যায় এবং ঘৃণিত একটি কাজ। যে চুরি করে, সে কোনদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। সমাজের সবাই তাকে ঘৃণা করে। বন্ধুরা আমরা অনেকেই পরীক্ষার সময় নকল করে থাকি। এই কাজটিও কিন্তু এক ধরনের চুরি। আমরা কখনো এসবের ধারে কাছেও যাব না।
মানুষ শ্রেষ্ঠ জীব। সব প্রাণীর চেয়ে বুদ্ধিমান এবং সভ্য জাতি। তাইতো তাকে সকল বিষয়ে শিক্ষা বা জ্ঞান অর্জন করতে হয়। জীবনের প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে যেনে নিতে হয়। এই জানার চেষ্টাই জ্ঞানের সাধনা। আমরা শিক্ষা গ্রহণের প্রতি গুরুত্ব দেব এবং জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তুলবো।
মানুষ নির্ভুল নয়। সে কোন না কোন সময় কোন না কোন কাজে ভুল করে থাকে। সেটা গুরুতর অন্যায় নয়। আমরা যদি কখনো ভুল করি, সে কথা মা-বাবাকে জানিয়ে ক্ষমা চেয়ে নেব। ভুল করে অস্বীকার করা অন্যায়।
কেউ ভুল করে ক্ষমা চাইলে আমরা ক্ষমা করে দেবো। ক্ষমা চরিত্রের একটি মহৎ গুণ।
আমরা নিজের কাজগুলো নিজেই করবো। তাতে আমরা ধীরে ধীরে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠবো।
ঘরে মা-বাবার কাজে সাহায্য করবো এবং ছোট ভাইবোনকে ওদের লেখাপড়ায় সহযোগিতা করবো। এভাবে আমরা একসময় দায়িত্বশীলতা অর্জন করবো। মহল্লার ছোটখাটো সমস্যাগুলো বন্ধুরা মিলে সমাধানও করতে পারবো। বন্ধুরা কি মজার ব্যাপার, আমরা এভাবে এক একজন স্বেচ্ছাসেবী হয়ে উঠবো।

আমরা নাটক সিনেমায় দেখতে পাই একজন নায়ক বা হিরো থাকে। সে সাধারণত সব দিক দিয়ে একজন খুব ভালো মানুষ থাকে। এসো বন্ধুরা আমরাও ঐ হিরোদের মত নিজেদের তৈরি করি আমরাও এক একজন হিরো হয়ে উঠি। একবার ভেবে দেখি ব্যাপারটি কেমন হয়।
আমরা অন্যের কোনো কথা বা কাজকে সহজ ভাবে গ্রহণ করব এবং তার ভালো দিক চিন্তা করবো। এটা হলো ইতিবাচক ভাবনা। এসো বন্ধুরা আমরা ইতিবাচক মানুষ হই। কখনো নেতিবাচক নয়।
বন্ধুরা আমরা সবসময় মোবাইলে সময় না দিয়ে এসো খোলা আকাশ দেখি। চল বন্ধুরা কুয়াশা ভেজা ঘাসে খালি পায়ে হাঁটি। কত যে ভালো লাগা কত যে মজার ব্যাপার তা তোমরা কেউ জানকি? চল আমরা ফুল-পাখিদের কাছে যাই। প্রকৃতির সাথে ভাব করি।
যার জীবনে ধন সম্পদ কম সেই কিন্তু বেশি সুখী। আমরা কখনো লোভ করবো না। এই অভ্যাস খুব ক্ষতিকর। আমরা সবাই জানি লোভে পাপ, আর পাপেই মৃত্যু। আমরা কথাটি কখনো ভুলব না।
যার মেজাজ নরম, অন্যের প্রতি যার দরদ আছে, যে প্রতিশোধপরায়ন না হয়ে ক্ষমা করে দেয় সে জীবনে অনেক বড় হয়। আমরাও যদি এমন হতে পারি তাহলে জীবনে অনেক বড় হতে পারবো।
যে অহঙ্কার করে, যার মেজাজ সবসময় খারাপ থাকে তাকে কেউ পছন্দও করে না, ভালোওবাসে না। যে নম্র-ভদ্র-বিনয়ী, হাসিমুখে কথা বলে, তাকে সবাই ভালোবাসে। বন্ধুরা, আমরা নিশ্চয়ই প্রথম জনের মত হবো না।
কিছু পেতে হলে আমাদের ধৈর্য ধারণ করতে হয়। মায়ের কাছে পছন্দের খাবারটি বায়না করে তাকে একটু সময় দিতে হয়। হয়তো তার কোনো অসুবিধার কারণে দুদিন দেরি হতে পারে। এমন অনেক কিছুই আছে একটু ধৈর্য বা অপেক্ষা করতে পারলে আকাক্সিক্ষত বস্তুটি খুব সুন্দরভাবে ধরা দেয়। ধৈর্য চরিত্রের এক মহৎ গুণ। বন্ধুরা, আমরা অনুশীলন করতে পারি।
বন্ধুরা, আশা করি আজকের এই নৈতিক চলনের আলোচনাটা সবাই বুঝতে পেরেছি। আমরা সঠিক পথে চলে সঠিক কাজ করে নিজেদের জীবন যেন সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারি সেই উদ্দেশ্যেই আজকের এই আলোচনা। এসো বন্ধুরা সবাই একসাথে বলি-
লেখাপড়া শিখে মোরা
অনেক বড় হবো
আঁধার কালো ঘুুছিয়ে দিয়ে
জোছনা হয়ে রব।
হবো মোরা মহাজ্ঞানী
সূর্য হয়ে উঠবো
রাঙিয়ে দেব বসুন্ধরা
পরাগ হয়ে ফুটবো।

Share.

মন্তব্য করুন