এখন এমন একটি সময় যখন বড়দের মতো ছোটরাও ফ্যাশন সচেতন। পছন্দের পোশাকটি পাওয়ার জন্য ছোটরাও ভীষণ মরিয়া হয়ে চেষ্টা করে। বড়দের দেখাদেখি ছোটরাও বেশ এগিয়ে থাকে পোশাকের বিষয়ে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান, আয়োজন, বিয়ে-শাদির সমাগম এসবে অনুষ্ঠানের ধরন অনুযায়ী পোশাক পছন্দ করে সবাই। ভ্রমণের পোশাক, খেলাধুলার পোশাক, নামাজের পোশাক, জুমার নামাজের পোশাক, ব্যায়ামের পোশাক, স্কুলের পোশাক এবং ঘরোয়া পোশাকের বিষয়ও রয়েছে।
কিন্তু ঈদের পোশাক এসব থেকে খানিকটা আলাদা ধরনের। কারণ ঈদ আসে বছরে মাত্র দুটি। দুটি ঈদের প্রথমটি রোজার ঈদ আসে পুরো একমাস রোজা রাখার পর। অর্থাৎ একমাস ধরে প্রস্তুতির পর আসে রোজার ঈদ। সুতরাং এই ঈদের গুরুত্বও অনেক বেশি। সবাই এই ঈদ ঘিরে অনেক স্বপ্ন দেখতে থাকে। বিশেষ করে যারা শিশু-কিশোর তাদের চোখে ঘুম থাকে না ঈদের উৎসব সামনে এলে। কী করবে আর কী না করবে এমন সব পরিকল্পনায় সাজাতে থাকে ঈদ উদযাপনের জন্য। খাওয়া দাওয়া তো আছেই। ঈদগাহে নামাজ পড়া, বন্ধুদের সাথে কোলাকুলি করা, বেড়ানোসহ নানারকম পরিকল্পনা থাকে ছোটদের। এসকল আয়োজনের মধ্যে পোশাক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখন আমরা জানবো কেমন পোশাকে নিজেদের সাজাবো ঈদের দিন।

পাজামা-পাঞ্জাবি
ঈদের দিনে সবচেয়ে আকর্ষণীয় পোশাক এবং প্রয়োজনীয় পোশাক হলো পায়জামা পাঞ্জাবি। ঈদের নামাজে উপস্থিত হওয়ার জন্য এর চেয়ে উত্তম পোশাক আর নেই। হয় না। ছোট বড়, ছেলে-বুড়ো-কিশোর-যুবা সকলেই পায়জামা পাঞ্জাবি পরে ঈদগাহে যায়। পায়জামা পাঞ্জাবিতে সবাইকে খুব ভালো লাগে। পায়জামা সকলেই প্রায় সাদা পরে। কিন্তু পাঞ্জাবি নিয়েই যত কাহিনি। কারণ পাঞ্জাবি তো শুধু সাদা নয়। বরং শতরঙের পাঞ্জাবি দেখা যায়। এখন কেমন রঙের পাঞ্জাবি পছন্দ করবে?
এক্ষেত্রে কথা হচ্ছে যে যার পছন্দের রঙে রাঙা পাঞ্জাবি পরতে পারবে। কারো সাদা, কারো লাল, কারো সবুজ, কারো নীল, কারো কালো। আবার কারো কারো অনেক রঙের মিশ্রণও পছন্দ! শুধু মনে রাখতে হবে যে রঙই হোকনা কেন সেটি যেনো কটকটে রঙ না হয়। দেখতে খারাপ লাগে এমনও নয়। সেলাই সুন্দর নয়, আবার এমন বিদঘুটে সেলাই যা দেখতে উদ্ভট লাগে এমনও নয়! চোখে আরামদায়ক রঙ। দেখতে ভালো। গায়ে দিলে মন খুশি হবে। সবাই দেখেই বলবে- বাহ্ পাঞ্জাবিটা তো খুব সুন্দর! এমন পাঞ্জাবিই পছন্দ করা উচিত।
অবশ্য কাপড়টিও দেখতে হবে ভালো কিনা। একধোয়া দিলেই যেনো রঙ উঠে না যায়! সেলাই এর ফিনিশিং যেনো সুন্দর হয়! এখন তো স্লিম-ফিট জামা কাপড় এবং পাঞ্জাবি পছন্দ করে অনেকেই। আবার সাধারণ একটু খোলামেলা পোশাকও পছন্দ করে কেউ কেউ। যার যেমন পছন্দ তেমন পোশাক কেনাই জরুরি। তবে সে পোশাক যেনো শালীন পোশাক হয়। মার্জিত পোশাক হয়! দেখে কেউ যেনো বিরূপ মন্তব্য না করে এমন পোশাক হওয়া জরুরি।

শার্ট-প্যান্ট
পায়জামা পাঞ্জাবি ছাড়াও ঈদে অনেকে আবার শার্ট প্যান্ট পরে ঈদগাহে যায়। তবে এ সংখ্যাটি খুব কমই দেখা যায়। যারা পায়জামা পাঞ্জাবি পরে না, সাধারণত তারাই শার্ট প্যান্ট পরে ঈদগাহে যাওয়ার কথা ভাবে। শার্ট প্যান্টও নানারকম আছে। এর মধ্যেও শালীনতা বজায় রাখতে হবে। শার্টের কালারও সুন্দর, মনোরম এবং চোখে আরামদায়ক হওয়া চাই। কেটকেটে রঙের পাঞ্জাবি যেমন পছন্দ করা যায় না। তেমনই কেটকেটে রঙের শার্টও পছন্দ করা যায় না।
শার্ট যেমন তেমন আছে। কিন্তু প্যান্ট নিয়ে সমস্যা খুব। কিছু প্যান্ট খুব চিপা। যেটিকে স্কিন টাইট প্যান্ট বলে। এ প্যান্ট এতোটাই ফিটিং যে ঠিকভাবে নামাজের সেজদা দেয়াও মুশকিল আছে। আবার বসাও সমস্যা। আবার এমনকিছু প্যান্ট আছে যেগুলোর কোথাও কোথাও ফুটো বা ছেঁড়া থাকে। হাঁটুতে এবং হাঁটুর ওপরে ছেঁড়া হয় এ প্যান্টগুলো। এধরনের প্যান্ট পরা মোটেই উচিত নয়। পোশাক হলো সৌন্দর্যের প্রকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। সে দিকটি যদি অসুন্দর হয় তো কিভাবে হবে।

টি-শার্ট
কেউ কেউ আছে যারা না পাঞ্জাবি পরে। না শার্ট পরে। এরা টি-শার্ট বা গেঞ্জি গায়ে জড়ায়। টি-শার্ট পছন্দ করে এমন শিশুকিশোর আছে আমাদের সমাজে। ঈদের দিনও এরা টি-শার্ট পরে ঈদগাহে নামাজ পড়তে যায়। টি-শার্টেরও নানারকম বিষয় থাকে। রঙের বিষয় তো থাকেই। সেই সাথে থাকে ফিটিংয়ের বিষয়টিও। বেশি টাইট গেঞ্জি বা অতিরিক্ত ঢিলা, কোনোটাই সুবিধাজনক নয়। বরং শরীরের গঠন ও মাপ অনুযায়ী পরতে হবে টি-শার্ট। দেখা গেলো একটি ছেলে তার শরীর হলো লিকলিকে। গায়ে তেমন মাংস নেই। অথচ তার গেঞ্জিটি বেশ ঢিলেঢালা। আবার আরেকজনের শরীর খুব মোটাসোটা। কিন্তু সে একেবারে টাইফিট গেঞ্জি পরে চলছে। এ দু’টোর কোনোটাই ঠিক নয়। সত্যি কথা হলো শরীরের গঠন অনুযায়ী গেঞ্জি এবং প্যান্ট পরতে হবে।

ফতুয়া
ফতুয়া একটি অন্যরকম পোশাক। এটি পাঞ্জাবি তো নয়ই। আবার শার্টও নয়। এর উপরে অর্থাৎ কলারের দিকটি দেখতে পাঞ্জাবির মতো মনে হয়। বডিও অনেকটা পাঞ্জাবির মতোই। কিন্তু নিচের অংশ কোনোভাবেই পাঞ্জাবির সাথে যায় না। আবার হাতা দেখে হঠাৎ মনে হবে বুঝি হাফ শার্ট। কিন্তু না হাফ শার্টও নয়। গেঞ্জির সাথেও মিলানো যায় না। কিন্তু এ পোশাকটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পাঞ্জাবির কাপড় দিয়ে বানানো হয়। শার্ট বা গেঞ্জির কাপড়ে নয়। এই পোশাকটি পরে খুব কম মানুষ। শিশুদের মধ্যে দেখাই যায় না। কিশোরদের কেউ কেউ পরে। বড়রা বিশেষ করে মধ্যবয়সী আর বৃদ্ধ বয়সী মানুষেরা বেশি পরে।

ফতুন্জি
এটি একটি আলাদা ধরনের পোশাক বা জামা। এ পোশাকটি উপরের দিকে দেখেই যে কেউ বলবে এটি পাঞ্জাবি। কিন্তু নিচের দিকে দেখলে বলবে- নাহ্ এটি ফতুয়া। আসলে এটি ফতুয়া ও পাঞ্জাবির সমন্বয়ে তৈরি বলে একে বলা হয় ফতুন্জি। অর্থাৎ এর মধ্যে ফতুয়ার বৈশিষ্ট্য যেমন আছে। তেমনি আছে পাঞ্জাবির বৈশিষ্ট্য। দুটোর সমন্বয় আছে বলেই এর নাম রাখা হয়েছে ফতুন্জি। অবশ্য এটি খুব পরে না শিশু কিশোরেরা। এটি একটি অন্যরকম ফ্যাশন্যাবল পোশাক। সবাই হয় তো জানেও না এরকম একটি পোশাক আছে। এটি ফতুয়ার চেয়ে লম্বা হয়। কিন্তু পাঞ্জাবির চেয়ে খাটো। আবার নিচে দু’পাশে কাটা থাকে। কিন্তু কোনো পকেট থাকে না।
ফুল হাতা হয়। কলার থাকে। কিন্তু সে কলার ফতুয়া ও পাঞ্জাবির কলারের চেয়ে একটু বড় হয়। ফতুন্জির সাথে সাধারণত প্যান্ট পরতে হয়। পায়জামা পরা যায় না। কারণ এটি পাঞ্জাবির মতো লং হয় না। বেঁটে জামার সাথে পায়জামা কোনোভাবেই ভালো লাগে না।

পোশাকের বিষয়টি কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। পোশাক মানুষের ব্যক্তিত্বকে প্রকাশ করে। কে কোন মাপের মানুষ সেটি কিন্তু পোশাক দেখে কিছুটা নয় শুধু অনেকটা অনুমান করা যায়। সুতরাং পোশাক নির্বাচনে একথা মাথায় রাখতে হবে যেপোশাক দেখেই কেউ বিরূপ মন্তব্য করতে না পারে। ঈদের পোশাকে সাবধান হতে হবে। আর প্রতিদিনের পোশাকে সাবধান হতে হবে আরও বেশি। পোশাকে সুন্দর এবং শৈল্পিক দিক দু’টোই যেনো থাকে। নইলে পোশাক সমালোচনার বিষয় হয়ে যায়। ফ্যাশনের নামে একজন আরেকজনের যে অনুকরণ করে এটি ঠিক নয় মোটেই। কারণ অনুকরণ কখনও ফ্যাশন হতে পারে না। ফ্যাশন তো একটি সুন্দর মানানসই বিষয়। অনুকরণে এসব থাকে না। ফলে কারো দেখাদেখি কাজ করা অর্থাৎ অমুকে এটি পরে আমিও পরবো। এটি সুন্দর নাকি অসুন্দর যে ভাবে না তাকে ফ্যাশন বলা চলে না। ফ্যাশন মানেই হলো সুন্দর, আনন্দময় এবং পরিশীলিত রূপ। এটাই গ্রহণ করতে হবে আমাদের।

Share.

মন্তব্য করুন