তারুণ্যই সকল সম্ভাবনার আধার; বাঁধভাঙা স্রোতের মতো উদ্দাম, গতিশীল, সৃষ্টিতে উচ্ছ্বল। কালে কালে যুগে যুগে প্রতিটি শতাব্দিতে দাঁড়িয়ে তারুণ্যই গেয়েছে জীবনের জয়গান। যদি তারুণ্য বলি, তাহলে নজরুলের ভাষায় এ কথাও উল্লেখ করতে হয়- তারুণ্যকে কখনও বয়সের ফ্রেমে বেঁধে রাখা যায় না। তারুণ্য হলো সেই জিনিশ যা বয়স নির্বিশেষে ব্যক্তিকে সাহসী, কর্মঠ আর স্বপ্নচারী করে তোলে। যা ব্যক্তিকে সংগীতের সুরে মূর্ছিত করে, পাখির কোলাহলে মুগ্ধ করে এবং নদীর ছন্দে মুখর করে। এই তারুণ্য যিনি ধারণ করেন তিনিই মূলত তরুণ। তবে তরুণ বলতে আমরা কম বয়েসিদেরও বুঝি এবং সাধারণভাবে এই অর্থটিই আমাদের মাঝে চাউর হয়ে আছে।
হুটহাট আনন্দে মেতে ওঠার, দুঃখকে জয় করার কিংবা সময়ের পিঠে ঝাঁপিয়ে পড়ে নবতর কিছু আবিষ্কার করে পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দেবার বয়স হলো তারুণ্য। পৃথিবীজুড়ে সর্বকালে তারুণ্যেরই জয়জয়কার ছিল এবং আছে। যুদ্ধজয়ে, পরিভ্রমণে, আবিষ্কারে, চাঁদের পিঠে, এভারেস্টে- কোথায় নেই তারুণ্য! শিল্পী মিকেলাঞ্জেলো, কবি জন কিটস, সিন্ধুজয়ী মুসলিম সেনাপতি মুহম্মদ বিন কাসিম কিংবা আমাদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় যে ফেসবুক- এর আবিষ্কারক মার্ক জাকারবার্গ- এরা সবাই তাদের তরুণ বয়সের কাজ দিয়েই পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন; পৃথিবীর মানুষ তাদের মনে রাখবে।

আমাদের দেশও অপার সম্ভাবনার দেশ। প্রাকৃতিক সম্পদের পাশাপাশি আমাদের রয়েছে প্রায় আঠারো কোটি জনশক্তি। এই জনসংখ্যাটা কিন্তু ধীরে ধীরে বেড়ে এই জায়গায় এসেছে। অতীতের বছরগুলোর পরিসংখ্যান দেখলে তোমরা তা সহজেই বুঝতে পারবে। তো এই বিপুল জনশক্তি যদি ধীরে ধীরে জনসম্পদে পরিণত হয়ে উঠতে পারে তাহলে আমাদের দেশও হতে পারবে পৃথিবীর অন্যতম সমৃদ্ধ দেশ। একটা গান তোমরা হয়তো অনেকেই শুনেছো- ‘পনেরো কোটি মানুষের ত্রিশ কোটি হাত/এনে দেবে সম্ভাবনার স্বর্ণালী প্রভাত’। একসময় যখন বাংলাদেশের জনসংখ্যা পনেরো কোটি ছিলো। ‘পনেরো কোটি’ কথাটা কিন্তু প্রতীকি। এখন তো আমাদের আঠারো কোটি মানুষের ছত্রিশ কোটি হাত! মূলত বর্তমান এবং ভবিষ্যতেও গানটি সমানভাবে প্রযোজ্য হবে, সমান অর্থ বহন করবে আমাদের জন্য।
আঠারো কোটি মানুষের বিরাট অংশটাই কিন্তু তরুণ এবং শিশুকিশোর। বিরাট সম্ভাবনার কথা! তরুণরা তাদের মেধায়-প্রতিভায় দেশকে এগিয়ে নেবার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। এই মেধাবী ও প্রতিভাবান তরুণরাই হয়ে ওঠে অন্য অনেক তরুণের কাছে, শিশুকিশোরের কাছে কাছে অনুসরণীয়। এরাই সবার মাঝে তারকার মতো ভাস্বর হয়ে থাকেন। তেমনি ক’জন তারকা তরুণ-কিশোরকে নিয়েই আলাপ করবো আজ।

শাহ জালাল জোনাক

রাশিয়ার মস্কোতে রকেট সায়েন্সে অধ্যয়নরত বাংলাদেশী মহাকাশ অভিযাত্রী শাহ জালাল জোনাক। জোনাকই প্রথম কোনো বাংলাদেশী তরুণ- যিনি রাশিয়ার মস্কোতে এই বিষয় নিয়ে অধ্যয়ন করছেন। সাহসী, স্বপ্নচারী ও পরিশ্রমী এই তরুণ জানিয়েছেন তার ইচ্ছের কথা। তিনি মহাকাশে গিয়ে গান রেকর্ড করতে চান! তোমরা একটু নড়েচড়ে বসলে বোধহয়। শোনো তাহলে, জোনাক লিখেছেন- ‘International Space Station বা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন’-এ গিয়ে আমার গান রেকর্ড করার ইচ্ছে আছে। এর আগে যে এমনটি কেউ করেনি, তা নয়। অনেক মহাকাশচারীই সেখানে গিয়ে গান রেকর্ড করেছে, একজন তো লাইভ কনসার্টই করেছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে! আমি যে গানটি গাইতে চাই, সেটার লিরিক লেখা বেশ আগেই শেষ হয়েছে। মৌলিক লিরিকটি লিখেছিল আমার বড় বোন বুখানা সিদ্দিক। সেটার সুর করেছে আমার রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের প্রিয় অনুজ এবং ভবিষ্যৎ চিকিৎসক ফাহিম রাশীদ আরাফ। সুর করার সুবিধার্থে ভাবের সাথে মিল রেখে সে নিজেও কিছু শব্দের পরিবর্তন এনেছে। তবে শেষমেশ আমি যেটা করেছি সেটি হল গানটির লিরিকে মহাকাশ সম্পর্কিত বিষয়গুলো যুক্ত করে এক মহাকাশীয় গানে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করেছি…।’
মহাকাশ নিয়ে আমরা অনেকেই ভাবি। ভাবি এর অন্তহীন রহস্য নিয়ে। বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার আর তৎসম্বলিত লেখাজোখা পড়ে আমাদের কৌতূহলের অন্ত থাকে না। কল্পনার দিগন্ত বিস্তৃত হয় সায়েন্স ফিকশন পড়েও। তো, সেই মহাকাশে পা রাখার স্বপ্ন নিশ্চয় একটু আলাদা! আর আমাদের অনেকের মতোই ছোট্ট একটি গ্রামে থেকে সেই আলাদা স্বপ্নটিই দেখেছেন জোনাক। তিনি বলেছেন- ‘আমি বাংলাদেশের একটি ছোট গ্রামে বড় হয়েছি, যেখানে প্রতি রাতে বিদ্যুতের অভাবে তারা ভরা আকাশ দেখতাম। কিন্তু এই বিদ্যুতের অভাবই আমাকে আমাদের সুন্দর মহাবিশ্বের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। এবং এখন আমি নিজেকে একজন মানুষ হওয়ার জন্য প্রস্তুত করছি। মহাকাশচারী।’
বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নে শাহ জালাল জোনাকের বাড়ি, পিতা জনাব আবু বক্কর সিদ্দিক। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে ইউটিবের জন্য কন্টেন্ট তৈরি, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আয়োজনে অতিথি হয়ে বক্তৃতা করাসহ নানান সৃজনশীল ও সামাজিক কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে ভালোবাসেন তিনি। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বইও লিখেছেন। এছাড়া জাতীয় সব পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হয় তার লেখাজোখা।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে তিনি একজন মহাকাশ অভিযাত্রী। একজন সাহসী তরুণ। সাহসীরাই এগিয়ে নেয় পৃথিবীকে, আবিষ্কার করে নতুন সব জিনিশ। ১৯৬১ সালের কথা। সেই বছরেরই ১২ এপ্রিল পৃথিবীর প্রথম কোনো মানুষ মহাকাশে গমন করার সৌভাগ্য লাভ করেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন রাশিয়ান, নাম ইউরি গ্যাগারিন। তিনি যে মহাকাশযানটিতে করে মহাকাশে গমন করেছিলেন সেটির ডিজাইন এবং সেই মিশন পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন জোনাকেরই ভার্সিটির একজন সাবেক শিক্ষার্থী, নাম সার্গেই করোলেভ। আমাদের প্রত্যাশা, জোনাক স্বপ্ন ও সাফল্যের শীর্ষে আরোহণ করুক। একটি কথা আছে- Be a voice, not an echo. বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশী তরুণ জোনাকও একটি আলাদা ভয়েস হয়ে উঠুক।

মাহতিম শাকিব

নাম শুনে অনেকেই হয়তো চিনে ফেলেছ তাকে। শাকিব এসময়ে জনপ্রিয় তরুণ কণ্ঠশিল্পীদের একজন। অমায়িক ও বিনয়ী এক তরুণ। ধানমন্ডি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন। বাসা রাজধানীর ইন্দিরা রোডে। বাবা আনিসুর রহমান ব্যবসায়ী, মা বাবার ব্যবসায় সহযোগিতা করছেন। শাকিব জানান, স্কুলে ভর্তির আগে থেকেই তার গান শেখার শুরু। প্রায় ১১ বছর ধরে শুদ্ধ সংগীতের ওপর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। আগামী দিনে গান নিয়ে পড়াশোনা করবেন। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটন মিউজিক একাডেমি থেকে বৃত্তি পেয়েছেন। আগামী বছর সেখানে যাচ্ছেন শাকিব। সংগীতের মর্যাদাপূর্ণ ‘গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড’ জয়ের স্বপ্ন তার।
প্রথমে বিভিন্ন শিল্পীর গান গেয়ে ভাইরাল হলেও পরে তার কণ্ঠে মৌলিক গানও শ্রোতাপ্রিয় হয়েছে। স্কুলে পা ফেলার আগেই কণ্ঠে গান তুলে নিয়েছিলেন এবং প্রায় ১২ বছর ধরে শুদ্ধ সংগীতের ওপর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তিনি। পুরোনো বাংলা গান শোনার ব্যাপারে আগ্রহ হলো কেন- এমন প্রশ্নে জবাবে শাকিব বলেন, ‘আমি এনটিভির মার্কস অল রাউন্ডার প্রতিযোগিতায় প্রথম রানার আপ হয়েছিলাম। সেটা ২০১০ সালের কথা। ওই সময় আমাকে অনেক গান শুনতে হয়েছে। একই দিনে একাধিক রাউন্ডের প্রতিযোগিতা হতো। হাতে সময় থাকত খুবই কম। এই অল্প সময়ে প্রতিটি গান যথাযথভাবে রপ্ত করেছি। গান শোনার আগ্রহটা আমার তখন থেকেই।’
আর মাহতিম শাকিব তার গান গাওয়ার আগ্রহ তৈরির পেছনের কথা বললেন এভাবে, ‘গানের প্রতি টান অনুভব করছি ২০১৩ সাল থেকে। এরপর ধীরে ধীরে এর ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেছি। একটা গান চাইলেই আপনার মুড বদলে দিতে পারে। কীভাবে, কী ক্ষমতা রাখে, কী কারণ থাকে- এসব ভাবতে ভাবতে গানটার প্রতি অনেক ভালোবাসা তৈরি হয়ে যায়। আমি আসলে গানের সুরকে ধারণ করার চেষ্টা করি। যে গান যখন সামনে পেয়েছি, ভালো লেগেছে, সেটাই শুনেছি, গেয়েছি।’

মাহতিম শাকিব বলেন, ‘আমি কিন্তু নানা ধরনের গান শুনি। এই যেমন পুরোনো দিনের গান, শাস্ত্রীয় সংগীত, ধ্রুপদি সংগীত, ইসলামি সংগীত, টপ্পা, চুমরি। ইংরেজি গানও শুনি। ইউটিউবে আমাদের পুরোনো ছবির গান শুনতে গিয়ে প্রায়ই কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। এই যেমন অডিওর কোয়ালিটি খুবই খারাপ। সেদিক থেকে এই গানগুলো নতুন করে গাওয়ার আগ্রহ তৈরি হয়, যেভাবে আমাদের সময়ের ছেলেমেয়েরা পছন্দ করে, ঠিক সেভাবে।’
কিন্তু মাহতিম শাকিবের গান শোনেন সব বয়েসি শ্রোতারাই। সম্প্রতি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘তাওহিদেরই মুর্শিদ আমার’ গানটিও কাভার করেছেন শাকিব। ইতোমধ্যে সেটিও প্রায় দেড় মিলিয়ন ভিউ হয়েছে ইউটিউবে। কিশোর শাকিবের কণ্ঠ দরাজভাবের নয়; মোলায়েম, সুললিত এবং একই সাথে প্রচণ্ড বলিষ্ঠ।
ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর শিষ্য রবি শঙ্কর দীর্ঘদিন পাশ্চাত্যে থেকে ভারতীয় সঙ্গীতকেই শুনিয়েছিলেন, চিনিয়েছিলেন। উত্তরসূরি হয়ে মাহতিম শাকিবও হয়তো ওভাবেই বাঙালির সংস্কৃৃতি তথা সংগীতকেই তুলে ধরবেন বিশ্ব দরবারে। আর বিশ্ববাসী তন্ময় হয়ে শুনবে বাংলার সুরেলা গানের ঝংকার।
সালাউদ্দিন সাকিব

তরুণ উদ্ভাবক। ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে তড়িৎ ও বৈদ্যুতিক প্রকৌশল বিভাগে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত। তার কাজের শুরু, সাফল্য এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে সে কথা বলেছে কিশোর পাতার সঙ্গে। চলো, সরাসরি তার কথাই শোনা যাক। সাকিব বলেন-
‘সালটা ছিলো ২০১৯। এইচএসসি পরীক্ষা শেষ। রেজাল্ট প্রকাশিত হওয়ার পর খুবই হতাশায় ভুগছিলাম। আমি রীতিমত বুঝতে পারছিলাম যে ভর্তিযুদ্ধে আমি টিকতে পারবো না। একদমই ভেঙে পড়েছিলাম ওই সময়টাতে। আমাদের একটা টিম ছিল ণড়ঁহম ঊহঃৎবঢ়ৎবহবঁৎ ঝড়পরবঃু নামে। এইটা আমরা গঠন করেছিলাম ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে। এই টিমে আমরা বিভিন্ন উদ্ভাবনী আইডিয়া নিয়ে কাজ করতাম এবং সেই মতো বাস্তবায়ন করে বিভিন্ন জাতীয় অথবা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতাম। মূলত দলগত এবং ব্যক্তিগত স্কিল ডেভলপমেন্ট করা ছিল আমাদের মূল উদ্দেশ্য। একই বছর আমরা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করছিলাম, সেটি ছিল একটি অ্যাপ যার মাধ্যমে প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময় ব্যবহারকারী নিকটস্থ নিরাপদ স্থানের লোকেশনসহ এমারজেন্সি বার্তা এবং অন্যান্য জরুরিভিত্তিক সুযোগ-সুবিধা নিতে পারবে। তো, এটিকে ভিত্তি করে আমরা Space Apps Challenge ২০১৭ নামে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি।
প্রতিযোগিতায় আমরা ডিভিশনাল রাউন্ড কোয়ালিফাই করতে পারলেও ন্যাশনাল রাউন্ড কোয়ালিফাই করতে পারিনি। ব্যর্থতার কষ্ট যেমন ছিল তেমন অভিজ্ঞতার ঝুড়ি ছিল পরিপূর্ণ। এরপর কেটে গেল অনেক মাস। একদিন একটা নিউজ দেখে চোখ আটকে গেল। দেখলাম বায়ু দূষণে পৃথিবীতে প্রথম সারির শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা অন্যতম। তো তার কিছু দিনপর আমি আমাদের টিমের মিটিংয়ে বায় দূষণ নিয়ে কাজ করার কথা বললাম। সবাই খুব উৎসাহ দিল কাজ শুরু করার জন্য। কিন্তু তখন আর কাজ শুরু করা হয়নি। কারণ, সামনে আমার এইচএসসি পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শেষ হল, রেজাল্ট বেরোলো। অনাকাক্সিক্ষত রেজাল্ট দেখে একদমই থমকে গিয়েছিলাম। তারপর আমি নিজেকে একটি রুমে আবদ্ধ করে নিয়েছিলাম প্রায় তিন মাসের মত। বাইরে কোথাও কোন সময় আমি ব্যয় করিনি।

আমার সাথে অন্য যেকোনো মানুষের দেখা হতো শুধুমাত্র খাওয়ার সময় অথবা খুব প্রয়োজনীয় কোনো কাজে। প্রায় তিনমাস আমি নিজেকে সময় দিয়েছি। এই তিনমাস আমাকে আমার জীবনের অনেক বড় বড় শিক্ষাগুলো দিয়েছে। তখন আমি সিদ্ধান্ত নেই বায়ুদূষণ নিয়ে কাজ শুরু করার। ২০১৯ সালের শেষের দিকে O-Zone এর প্রথম থিওরিটিক্যাল প্রোটোটাইপ বানাতে সক্ষম হই। সেই মুহূর্তটা ছিল এমন যেন মনে হচ্ছিল বহুদিন আটকে থাকা একটা চড়–ই পাখি যেন হঠাৎ ছাড়া পেল। তারপর ধীরে ধীরে ডিভাইসটির কার্যকারিতা কিভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়ে কাজ করি। এরপর বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ থেকে Soil and Environment Section এর সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার O-Zone কে যানবাহনে লাগিয়ে পরীক্ষা করেন এবং ডেটা গ্রহণ করেন। তখন (২০১৯ সালে) পরীক্ষায় নির্বাচিত যানবাহনটি থেকে নির্গত মোট বিষাক্ত ধোঁয়ার ৪৭% ধোয়াকে পরিশোধন করতে পেরেছিল। তারপর কেটে গিয়েছে কয়েকটি বছর, এখন ২০২২। এতোদিনে O-Zone এ অসংখ্য পরিবর্তন করা হয়েছে এর দক্ষতা বৃদ্ধিকরনে।

O-Zone শুধুমাত্র একটি যানবাহন থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া পরিশোধন করার যন্ত্র নয়, এটি আমার অগণিত নির্ঘুম রাত। এটি পাটুয়াটুলি, নবাবপুর, স্টেডিয়াম মার্কেট, সায়েন্সল্যাব, বুয়েট মোড়ের বিভিন্ন ইলেকট্রনিকসের দোকানে বারবার বিভিন্ন কম্পোনেন্টের জন্য দৌড়াদৌড়ি এবং পরিবারের বিপক্ষে গিয়ে নিয়মিত গণ্ডির বাইরে কিছু করে দেখানোর দুঃসাহস। দিন-রাত নিজেকে চার দেয়ালে বন্দী রাখার ফসল। কারণে-অকারণে অপমানিত, প্রত্যাখ্যাত, লাঞ্ছিত হয়ে মুখ বুজে সহ্য করা। তবে সবই ভুলে গেছি যে দিন ঙ-তড়হব-কে তৈরী করতে পেরেছিলাম।

O-Zone মূলত এমন একটি যন্ত্র যাযানবাহনের এক্সহস্ট পাইপের সাথে সংযুক্ত করলে এক্সহস্ট পাইপ থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়াকে পরিশোধ করে এবং ধোঁয়ার মধ্যে থাকা সকল অণুপর্যায়ের ক্ষতিকর পদার্থগুলি ডিভাইসে থাকা Waste Chamber এ জমা করে। চেম্বারটি পূর্ণ হয়ে গেলে তা ক্লিন করে পুনরায় ব্যবহার করা যাবে। বাংলাদেশের বায়ু দূষণ কমাতে O-Zone গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস এবং আমি সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।
ঙ-তড়হব সাফল্য এনে দিয়েছে Student to Startup Chapter ২ এ, পর পর দুইবার NASA Space App Challenge ২০১৯ এবং ২০২০ তে। আর এবার এই প্রথম কোন জাতীয় পুরস্কার ঘরে ঢুকছে। BASIS National ICT Award জিতলো O-Zone।

এরপর হঠাৎ করোনা মহামারী পৃথিবীতে যেন অভিশাপ নিয়ে এলো। শুরু হলো লকডাউন, চারদিক স্তব্ধ। এই লকডাউনের মধ্যে সবাই বাসায় আটকা পড়লো। তখন একদিন জানতে পারলাম মেয়েদের পিরিয়ড বা মেন্সট্রাল পেইন সম্পর্কে।
এটি এমন একটি দুঃস্বপ্ন যা প্রতিটি মেয়ের জীবনের প্রতি মাসে ঘুরে ঘুরে আসে। এবং মানুষভেদে এটি ৭ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত অবস্থান করেতে পারে। এই ব্যথা এতটাই তীব্র এবং অসহনীয় যে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ পিরিয়ডের ব্যথার তীব্রতাকে হার্ট অ্যাটাকের ব্যথার সাথে তুলনা করেছেন। পৃথিবীব্যাপী বিজয়লক্ষ্মীরা ৭ থেকে ১০ দিন যাবত এমন অসহনীয় যন্ত্রণা নিয়ে সব দিক সামলান বিনা অভিযোগে। আসলে আল্লাহ তাদেরকে এতটা অকল্পনীয় ক্ষমতা দিয়েছেন বলেই তারা ‘মা’।
তো এ সম্পর্কে জানতে পারার পর মনে হল যে কিছু করা দরকার। বাজারে হাজার হাজার ধরনের ঔষধ পাওয়া যায় যা পিরিয়ডের ব্যথাকে কমায়। কিন্তু এই ধরনের ওষুধ ব্যবহারের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ভয়াবহ বন্ধ্যত্ব থেকে শুরু করে আরও বিভিন্ন প্রকারের বড় বড় শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে এগুলো ব্যবহারে। আমার উদ্দেশ্য ছিল এমন একটা পদক্ষেপ নেয়া যেটি ব্যবহারে থাকবে না কোন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং পাওয়া যাবে এই অসহ্য ব্যথা থেকে মুক্তি। আমি সেই অনুযায়ী কাজ শুরু করি এবং আল্লাহর অসীম রহমতে আমি প্রায় আট মাসের চেষ্টায় সফল হই। সে অনুযায়ী আমি একটি ডিভাইস বানাই যেটি ব্যবহারে পিরিয়ডের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

ডিভাইসটির নাম দিয়েছিলাম Peora. Peora নিয়ে এখন পর্যন্ত শতাধিক টেস্টিং সম্পন্ন করেছি এবং এটি ব্যবহার করে প্রায় ১৪০ জনের অধিক স্বেচ্ছাসেবী ব্যথা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তাদের ব্যবহারে এখন পর্যন্ত কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শনাক্ত হয়নি এবং এটি নিয়ে নানাবিধ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলমান।
বর্তমানে আমি পুনর্ব্যবহারযোগ্য এনার্জি এবং ঢাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করছি। এই শহরের প্রায় অফুরন্ত বর্জ্যকে শক্তি এবং অর্থে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করছি। এরই ধারাবাহিকতায় আমি ২ ফিট ঢ ৩.৫ ফিটের একটি ছোট্ট মডেল আমার বাসায় স্থাপন করেছি প্রাক্টিক্যালি পর্যবেক্ষণের জন্য। সেখানে গতমাসে আমি প্রায় ৬৮১ কেজি পচনশীল বর্জ্যকে প্রসেস করেছি। আমার গবেষণালব্ধ তথ্যমতে সিটি কর্পোরেশনের পর্যাপ্ত সহায়তা পেলে ঢাকাকে বর্জ্যমুক্ত করতে আমার চার থেকে ছয় বছরের বেশি সময় লাগবে না, ইনশাআল্লাহ’।
এবারের ঈদ কিভাবে, কোথায় কাটবে- এমন প্রশ্নের জবাবে সাকিব বলেন, ‘প্রতি বছর ঈদ যেভাবে কাটতো, এ বছরের ঈদ কিছুটা ভিন্ন। তাই জানি না এবছরের ঈদ কিভাবে কাটবে। কারণ প্রতি বছর আমার ঈদের সকাল শুরু হতো আমার দাদুভাইকে ঈদ মোবারক জানিয়ে। ঘুম থেকে উঠে সবার আগে তাঁর কাছে যেতাম এবং প্রতিবারের মত দেখতাম তিনি চায়ের কাপ হাতে নিয়ে আমাকে দেখামাত্রই বলতেন ঈদ মোবারক দাদা ভাই। কিন্তু এ বছর তিনি আর নেই। গত বছরই ছিল তার সাথে আমার কাটানো শেষ ঈদ। গত বছর এবং এ বছর দুই ঈদের মাঝখানে হারিয়েছি আমার বড় মামাকেও। এই দুই ঈদের মাঝখানে পরপর দুইজন আপন মানুষকে হারিয়ে এবার ঈদটা সত্যিই কিভাবে কাটবে জানি না। তবে উপরওয়ালার কাছে প্রার্থনা থাকবে দেশের প্রতিটি মানুষ তাদের আপনজনের সাথে এই ঈদে থাকবেন নিরাপদে এবং অকৃত্রিম স্নেহের ছায়ায়। ঈদের প্রকৃত মহিমায় মহিমান্বিত হোক প্রতিটি মানুষের প্রাণ।’

আদিব আহমেদ শান

বাংলাদেশের অত্যন্ত পরিচিত মডেল এবং শিশুশিল্পী আদিব আহমেদ শান। করোনা ভাইরাসের এই সময়ে সবাইকে- বিশেষ করে শিশুকিশোরদের সচেতন করতে ভিডিও বার্তা দিয়েছে সে। এছাড়া বিভিন্ন বিজ্ঞাপন চিত্র ও কাজের মাধ্যমে শিশুকিশোরদের স্বাস্থ্যসচেতনতায়ও কাজ করছে শান। একের পর এক বিজ্ঞাপনচিত্রের শুটিং নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করা শিশুশিল্পী আদিব আহমেদ শানের অভিনীত টেলিভিশন বিজ্ঞাপনগুলোর মধ্যে রয়েছে সুপারস্টার লাইট, টয় ময় ওয়েফার, চপস্টিক নুডলস, ম্যাগী স্বাদে ম্যাজিক, স্যাভলন সোপ, রেড কাউ মাস্টার, জিহান মিল্ক, প্রাণ আইস ললি, প্রাণ জেলি, ভিশন কমফোর্টার, এলজি ফ্রিজ, ওয়ালটন ফ্রিজ, ইয়ামাহা হোন্ডা, প্রাণ রোবো ড্রিঙ্কস, আরএফএল বোল, প্রাণ পটেটো চিপস ইত্যাদি। এছাড়া তার করা ফটোশুটগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় ও উল্লেখযোগ্য ব্র্যান্ডগুলো হলো লা রিভ, আড়ং, সেইলর, ইনফিনিটি ইত্যাদি। নতুন নতুন বিজ্ঞাপনচিত্রের পাশাপাশি নাটকেও অভিনয় করছে শান। বতর্মান সময়ে যখন অন্য শিশুরা স্কুলের পাশাপাশি কোচিং হোমওয়ার্ক নিয়ে ব্যস্ত, পরীক্ষায় এ প্লাসের নেশায় ছুটছে, তখন শান ছুটছে তার সৃজনশীল কর্মক্ষেত্রে- বিজ্ঞাপনে, শর্টফিল্মে। মা মোনালিসা বলেন, আমার ছেলের এ প্লাস পাওয়ার থেকে বেশি দরকার ওর ভালো থাকা, আনন্দে থাকা। ও যেন শৈশবটা উপভোগ করতে পারে। পরীক্ষায় ভালো ফল করার চেয়ে ভালো মানুষ হয়ে ওঠার চচার্টা বেশি জরুরি, আমরা সেই চেষ্টাই করছি।
শুটিং-এর ব্যস্ততা না থাকলে শান রোজ সকালে স্কুলে যায়, স্কুল থেকে ফিরে দুপুরে খেয়ে ছোট একটু ঘুম, তারপর বিকেলে পাড়ার বন্ধুদের সাথে ক্রিকেট খেলা, হইহুল্লোড়, ছোটাছুটি করে সন্ধ্যায় পড়তে বসে। মাঝে মাঝে মা-বাবার বকুনি উপেক্ষা করে সুযোগ পেলেই মোবাইল ফোনে গেমস খেলে। সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে মা-বাবার সঙ্গে বেড়াতে যায়। প্রায় দেড় শতাধিক টেলিভিশন বিজ্ঞাপন, অসংখ্য নাটক, শর্টফিল্ম, সিনেমা ও ফটোশুটের কাজ করা শিশুশিল্পী আদিব আহমেদ শান সম্প্রতি শিকদার প্রিন্টিং সম্মাননা অর্জন করেছে।

জাইমা নুর

বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় শিশুশিল্পী জাইমা নূর। গত বছর বাংলা ভিশনের কুরআনের আলো অনুষ্ঠানে গাওয়া তার ‘বাবা’ গানটি কোটি দর্শক-শ্রোতার মন জয় করেছে। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালকসহ সকলকেই গানটি চলাকালে বারবার চোখ মুছতে দেখা গেছে। কুরআনের আলোর ইউটিউব চ্যানেলে ৫ কোটির উপরে এবং চ্যানেল বাংলাভিশনের ইউটিউবে আট দশমিক এক মিলিয়ন দর্শক গানটি শুনেছে। এছাড়া অনেক ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজে গানটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হয়েছে। দর্শকদের অজস্র মন্তব্যও এসেছে গানটিতে। এরই ধারাবাহিকতায় ‘আমার একটা মন ছিলো’, ‘আল্লাহর দান’, ‘ভাইবোন’, ‘কার চোখে এত মায়া বলো’, ‘মাছরাঙা, ‘ফিলিস্তিনের শিশু’, ‘আল্লাহু আল্লাহু কি যে মধুর নাম’, ‘পরিবার’, ‘পাখি ডেকে যায়’সহ বেশকিছু জনপ্রিয় গান সে মৌলিক ও কাভার গেয়েছে।
বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিশুশিল্পী জাইমা নূর ইসলামি ও দেশাত্মবোধক সংগীতের মাধ্যমে শিশুকিশোরদের মাঝে নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছে। হ

Share.

মন্তব্য করুন