এক শহরে এক লোক আর তার স্ত্রী বাস করতো। তারা ভালোবেসে একটি বিড়াল পুষতো। বিড়ালটিকে তারা এতই ভালোবাসতো যে, বিড়ালটি তাদেরও ঘরবাড়ির পাহারা দিতো। একদিন তাদের একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হলো। পুত্র সন্তান থাকাকালীন স্বামী-স্ত্রী উভয়েই মারা গেল।
বিড়াল শিশুটিকে বড় করতে লাগল। কোথাও থেকে ময়ূরের পালক নিয়ে এলো। তাতে নরম বিছানা তৈরি করল। শিশুটিকে সেই নরম বিছানায় রাখল। নিয়মিত খাওয়াল। বিড়াল শিশুটিকে ময়ূরপালক রাজকুমার বলে ডাকল, কারণ শিশুটি সবসময় ময়ূরের নরম পালকের বিছানায় থাকে।
বছরের পর বছর পরে পালক রাজকুমার বড় হয়ে উঠল। আর সে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গেল। বিড়ালটি দেখাশোনার মাধ্যমে তাকে বড় করতে পেরে ভীষণ সুখী। বিড়াল বলল, পালক রাজকুমার! এবার আমি তোমার বিয়ে দিতে চাই।
পালক রাজকুমার জিজ্ঞেস করল, আমি কাকে বিয়ে করব? মেয়েটি কে?
বিড়াল বলল, আমি এই দেশের রাজার কাছে যাব। আমি রাজকুমারীকে তোমার জন্য চাইব।
পালক রাজকুমার অবাক হয়ে বলল, রাজকুমারী আমার বউ হবে? এটা কি কোনোদিন সম্ভব হতে পারে? তুমি কি স্বপ্ন দেখছো?
বিড়াল বলল, তোমার বিয়ের জন্য একমাত্র রাজকন্যা উপযুক্ত। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি যেভাবেই হোক এই বিয়ে করিয়ে দেব। অপেক্ষা করো আর দেখো। আমি আগামীকাল রাজার কাছে যাচ্ছি।
পরদিন সকালে ঘুম ভাঙল। রাজার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য বেরিয়ে পড়ল বিড়াল। একটি খরগোশ বনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিল। ভীত বিড়াল খরগোশের দিকে তাকিয়ে পালিয়ে গেল। বিড়ালটি ভয় পেয়ে দৌড়ানোর চেষ্টা করল। খরগোশও তার পিছু নিলো। পাশের পাহাড়ের কাছাকাছি আসতেই দু’জনে থেমে গেল। খরগোশ হাঁপাচ্ছে। বিড়ালও হাঁপাতে লাগল। অল্প পরেই খরগোশ জিজ্ঞেস করল, বিড়াল! তুমি কোথায় যাচ্ছ?
বিড়াল মিষ্টি করে বলল, আমি রাজার কাছে যাচ্ছি। শহরে কেউ আমাকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। তারা সবসময় আমাকে তাড়া করে। আমি ভয়ে বসবাস করি। আমি তাদের সম্পর্কে রাজার কাছে অভিযোগ করতে যাচ্ছি। অন্যায়কারীদের রাজা শাস্তি দেবে।
বিড়ালের দুঃখে খরগোশের চোখে পানি চলে এলো। সে বলল, বিড়াল ভাই! তুমি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছ। আমরাও তোমার মতো দুঃখে কষ্টে আছি। রাজার সৈন্যরা এখানে শিকারি নিয়ে আসে। তারা আমাদের তাড়া করছে। তারা ফাঁদ পেতে রাখে। আমাদের এখানে কিছুক্ষণের জন্যও আরামদায়ক থাকার জায়গা নেই। আমিও আসছি তোমার সঙ্গে। আমি রাজাকে সব ব্যাখ্যা করব। আমাদের বাঁচাতে বলব।
বিড়াল বলল, তুমি রাজার কাছে যেতে পারো। কিন্তু আমি আশা করি না যে তোমার প্রচেষ্টা সফল হবে।
খরগোশ জিজ্ঞেস করল, কেন?
আমি আমাদের শহরে একমাত্র বিড়াল। রাজা আমার কথা শুনবে এবং সাহায্য করবে। কিন্তু যখন সে তোমাকে দেখবে ভাববে, বনে শত শত খরগোশ আছে। তুমিই একমাত্র যে অভিযোগ করতে এসেছো। তবে তুমি যদি কমপক্ষে পঞ্চাশটি খরগোশ নিয়ে রাজার কাছে যেতে পারো তাহলে সে অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করবে।
বিড়াল ভাইয়া! তুমি এখানেই থাকো। আমি এখনই পঞ্চাশটি খরগোশ নিয়ে আসছি।
একথা বলেই খরগোশটি কাছাকাছি ঝোঁপে অদৃশ্য হয়ে গেল। অতি অল্প সময়ের মধ্যে পঞ্চাশটি খরগোশ নিয়ে এলো। বিড়াল এগিয়ে গেল। সব খরগোশ তাকে অনুসরণ করে পেছনে হাঁটতে থাকল।
একটি অদ্ভুত বাহিনীর মতো তারা শহরের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। শহরের লোকজন দেখে ভাবল, বিড়ালটি খরগোশ দলের নেতা। পঞ্চাশটি খরগোশ পেছনে নিয়ে যাচ্ছে। অবশেষে বাহিনীটি রাজার প্রাসাদে পৌঁছাল। সেখানে পাহারা দেওয়া যোদ্ধার দিকে তাকিয়ে বিড়াল বলল, আমাকে অবশ্যই রাজার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দিতে হবে।
সবাই প্রাসাদের গেটে অবস্থান করল। একজন যোদ্ধা কেবল বিড়ালটিকে রাজার কাছে নিয়ে গেল। বিড়াল বলল, রাজা মশায়, ময়ূরপালক রাজকুমার তোমাকে পঞ্চাশটি খরগোশ উপহার হিসেবে পাঠিয়েছে। সে রাজকন্যাকে বিয়ে করতে চায়। রাজকন্যার জন্য তার চেয়ে উপযুক্ত আর কেউ হতে পারে না।
রাজা বড় দরজার কাছে পঞ্চাশটি খরগোশ দেখে অবাক হয়ে গেল। সে বিস্মিত হয়ে ভাবল, পালক রাজকুমার অবশ্যই একজন দক্ষ শিকারি হবে। অন্যথায় সে কিভাবে পঞ্চাশটি খরগোশ ধরতে পারে। আমার সৈন্যরাও খরগোশ শিকারে যায়। তারা দুই বা তিনটির বেশি খরগোশ ধরতে পারে না। রাজা বলল, তোমার রাজপুত্রও পঞ্চাশটি খরগোশকে জীবিত ধরে রেখেছে।
বিড়াল বলল, রাজা মশায়! এই সব খরগোশ একটি ঘরে রাখা উচিত। তাদের পাহারা দেওয়ার কেউ নেই। রাজা রাঁধুনিকে ডেকে পাঠাল। এই সময়ে রাজার প্রাসাদে ভালো খাবার ব্যবস্থা নেই। পঞ্চাশটি খরগোশ দিয়ে ভালো ভোজ হবে। রাজা আদেশ দিলো, খরগোশ আটকে রাখার জন্য একটি ঘর খোলা হোক। বিড়াল এলো খরগোশের কাছে। বলল, রাজা আমাদের সবাইকে থাকার জায়গা দিয়েছে। আমাদের এখানে ভালো খাবার ব্যবস্থা আছে। রাজা পরে আসবে আর আমাদের সাহায্য করবে।
বাবুর্চি একটি ঘর খুলল। সব খরগোশ ঢুকল। সে তৎক্ষণাৎ দরজা ধাক্কা দিয়ে বন্ধ করে দিলো। সৈন্যরা বাইরে পাহারায় দাঁড়িয়ে থাকল। খরগোশ বুঝতে পারল যে বিড়াল তাদেরকে ঠকিয়েছে। কোন অপরাধে তাদের কী করবে? তাদের কী হবে ভেবে তারা কেঁদে ফেলল।
রাজা বিড়ালটিকে সেরা অতিথি ভোজ দিলো। রাজা ময়ূরপালক রাজকুমারের সবচেয়ে বেশি প্রশংসা করতে থাকল। বলল, রাজকুমারকে বলো আমার সঙ্গে দেখা করবে। বিড়াল বলল, রাজা মশায়! আমাদের রাজপুত্র তোমার সঙ্গে দেখা করে আনন্দিত হবে। কিন্তু তার এখন অনেক কাজ আছে। খাবার আয়োজন শেষ। রাজা বিড়ালকে অনেক উপহার দিলো। বিড়াল আনন্দের সঙ্গে তার বাড়িতে এলো।
পালক রাজকুমার! আমি তোমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছি।
পালক রাজকুমার আবার জিজ্ঞেস করল, কার সঙ্গে?
রাজকুমারীর সাথে।
এক সপ্তাহ কেটে গেল। আবার বিড়াল বনের ভেতর দিয়ে রাজার সঙ্গে দেখা করতে গেল। এবার তার সামনে একটি শিয়ালকে দেখল। দু’জনেই বিপরীত দিকে দৌড়ে গেল। পাহাড়ের পেছনে দু’জনের আবার দেখা হলো। শিয়াল বলল, বিড়াল ভাইয়া! তুমি কোথায় যাচ্ছো?
বিড়াল বলল, রাজার কাছে আমার সাহায্যের জন্য যাচ্ছি?
তোমার কিসের অভাব?
শহরের সবাই আমাকে মারধর করে। ঠিকমতো খেতে পারি না। আমাকে সবাই ঘৃণা করে। আমি বিচারের জন্য রাজার কাছে যাচ্ছি।
শিয়ালের চোখে পানি এলো। বলল, বিড়াল ভাইয়া তোমার মতো আমাদেরও অনেক দুঃখ। আমরা কখনই এই জঙ্গলে আর থাকতে পারব না। শিকারিরা কুকুর নিয়ে আসে এবং আমাদের তাড়া করে। তারা গর্তে লুকিয়ে থাকে। আমাদের ধরার জন্য ফাঁদ পেতে রাখে। আমাদেরকে ধরে ফেলে। আমাদের অনেকেই তাদের তীরের আঘাতে নিহত হয়েছে। আমি তোমার সঙ্গে আসব। রাজার কাছে বিচার চাইব। আমাকে তোমার সঙ্গে নাও।
বিড়াল বলল, শিয়াল ভাইয়া! একা একা তোমার আসা ঠিক হবে না। আমি আমাদের শহরে একমাত্র বিড়াল। তাই রাজা আমার কথা শুনবে। তুমি একা এসে অভিযোগ করলে সে মেনে নেবে না। রাজা জিজ্ঞেস করবে, বনে প্রচুর শিয়াল আছে। কেন তারা এসে অভিযোগ করে না!
শিয়াল জিজ্ঞেস করল, তাহলে এখন উপায় কী?
বিড়াল বলল, যদি পঞ্চাশটি শিয়াল একসঙ্গে রাজার কাছে গিয়ে অভিযোগ করে তাহলেই রাজা বিশ্বাস করবে।
এক মিনিট অপেক্ষা করো বিড়াল ভাইয়া।
শিয়াল দৌড়ে চলে গেল। কিছুক্ষণ বাদেই পঞ্চাশটি শিয়াল সঙ্গে নিয়ে ফিরে এলো। বিড়াল বলল, প্রাসাদে গিয়ে রাজার সঙ্গে কিভাবে কথা বলা উচিত আর কিভাবে সাহায্য চাইতে হবে, আমি সব শিখিয়ে দেব।
শিয়ালরা বলল, তুমি যা বলবে আমরা তাই করব।
বিড়াল এগিয়ে গেল। সব শিয়াল তাকে অনুসরণ করল। তাদের বাহিনী শহরের ভেতর দিয়ে গেল। লোকজন অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখল। আর ভাবল, কী মজা! মাত্র এক সপ্তাহ আগেই এই বিড়ালটি পঞ্চাশটি খরগোশের বাহিনী নিয়ে গেছে। আর এখন বাহিনী চলছে পঞ্চাশটি শিয়াল নিয়ে।
বাহিনীটি প্রাসাদে পৌঁছাল। প্রহরীরা বিড়ালটিকে রাজার কাছে নিয়ে গেল। বিড়াল ভদ্রভাবে মাথা নত করল। বলল, রাজা মশায়! ময়ূরপালক রাজকুমার তোমার কাছে উপহার হিসেবে পঞ্চাশটি শিয়াল পাঠিয়েছে। সে রাজকন্যাকে বিয়ে করতে চায়।
রাজা চাকরদের ডেকে শিয়ালদের একটি ঘরে আটকে রাখার আদেশ দিলো। বিড়ালটিকে একটি সুন্দর ঘরে আদর আপ্যায়নের ব্যবস্থা করে দিলো। বিড়াল প্রাসাদে শিয়ালদের নিয়ে আসে। এক ঘরে ছিল চাকররা, জবাই করা খরগোশের কিছু চামড়া। বাকি খরগোশ কাঁদছিল আর হাহাকার করছিল।
শিয়ালরা খরগোশের উচ্চস্বরে চিৎকার আর হাহাকার শুনতে পেল। শিয়ালরা ঘাবড়ে গিয়ে বিড়ালকে কারণ জিজ্ঞেস করল। বিড়াল মিষ্টি করে বলল, সাত দিন আগে কিছু খরগোশ এখানে এসেছে। তারা তাদের অভিযোগ রাজাকে জানিয়েছে। রাজা মনোযোগ দিয়ে শুনেছে আর তাদের ন্যায়বিচার করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, রাজা একটি বড় খাবার-দাবার ব্যবস্থাও করেছে। খাবার, আনন্দ, ফুর্তিতে খরগোশ চিৎকার করে যেন তাদের মাথা আনন্দে ফেটে যাচ্ছে। এজন্যই এতো গোলমাল।
শিয়াল বলল, যেই ঘরে খরগোশ আছে সেখানে আমাদের থাকা উচিত হবে না। তারা সর্বদা রঙ্গ রসে ব্যস্ত আছে। আমাদের কষ্ট হবে। আমরা অন্য ঘরে থাকব।
চাকর পাশের ঘরটা খুলে দিলো। সব শিয়াল ঢুকল। সে তৎক্ষণাৎ দরজা ধাক্কা দিয়ে বন্ধ করে দিলো। শিয়ালরা বুঝতে পারল তারা ভুল করেছে। তাদের কী হবে তা নিয়ে তারা দুঃখ প্রকাশ করতে লাগল।
রাজা ভোজের জন্য বিড়ালকে স্বাগত জানাল। টেবিলে বিভিন্ন ধরনের খাবার পরিবেশন করা হলো। রাজা আনন্দিত গলায় বলল, তোমার ময়ূরপালক রাজকুমার নিশ্চয়ই সেরা শিকারি। উদ্যমী আর মেধাবী। নইলে কি পঞ্চাশটি শিয়াল জীবিত ধরতে পারে? আমার শিকারিরা শিয়াল শিকার করতে যায় আর প্রায়শই খালি হাতে ফিরে আসে। কখনও কখনও একটি বা দুইটি শিয়ালকে হত্যা করে নিয়ে ফেরে তারা। তা-ও চামড়া টুকরা টুকরা হয়ে যায় আর অকেজো।
বিড়াল প্রশংসা করে বলল, রাজা মশায়! আমাদের রাজপুত্র বীর, শক্তিশালী। এই পৃথিবীতে তার মতো যোদ্ধা নেই।
রাজা বলল, এই প্রাসাদ গর্বিত হবে যদি সে আমার প্রাসাদে আসে। সে রাজকন্যার জন্য উপযুক্ত। আমার সঙ্গে জলদি দেখা করতে বলো। আমি বিয়ের কথা বলব।
বিড়াল খুশি হয়ে বলল, অবশ্যই, রাজকুমার তোমার সঙ্গে দেখা করতে আসবে।
রাজা বিড়ালকে বিপুল সংখ্যক দামি উপহার দিলো। সেসব নিয়ে সে বাড়ি ফিরে এলো। ঘুমন্ত কিশোরকে জাগিয়ে তুলল। বলল, তোমার আর রাজকন্যার মধ্যে বিবাহ নিশ্চিত। এখন আমি যা বলি, তাই করো।
বিড়াল পরিকল্পনা মতো সব বলে গেল। তারপর একদিন পথ দেখিয়ে রাজকুমারকে সঙ্গে নিয়ে চলল। দু’জনে হেঁটে গেল অনেকটা পথ। পথে একটা ব্রিজ এলো। বিড়াল বলল, ব্রিজের নিচে লুকিয়ে থাকো। আমি কিছুক্ষণের মধ্যে ফিরে আসব।
ময়ূরপালক রাজকুমার লুকিয়ে থাকল। এদিকে বিড়াল শহরে গিয়ে বিড়ালের প্রচুর যুদ্ধের পোশাক আর হেলমেট কিনল। সবকিছু নদীতে ফেলে দিলো। রাজকুমারকে বলল, ময়ূরপালক রাজকুমার! তুমি এখানেই থাকো। আমি এখানে রাজার সঙ্গে ফিরে আসব। আমাদের দেখলে বের হবে না। আমি তোমাকে সুন্দর পোশাক পরতে দেব। এর পরে বেরিয়ে আসতে পারবে।
রাজকুমার বলল, তুমি যা বলবে আমি তাই করব।
বিড়াল দ্রুত ছুটে গেল প্রাসাদের দিকে। তাকে দেখে রাজা আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করল, ময়ূরপালকের রাজপুত্র এখনও আসেনি?
বিড়াল উত্তেজনার সঙ্গে বলল, রাজা মশায়! রাজকুমার একটি বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে আসছিল। পথে নদী পার হওয়ার সময় সমস্ত সৈন্য ডুবে যায়। তাদের হেলমেট আর যুদ্ধের পোশাক পানিতে ভাসছে। আমি কোনোভাবে রাজপুত্রকে বাঁচালাম। সে যেসব দামি জিনিস এনেছিল তা নদীতে চলে গেছে। রাজকুমার এখন ব্রিজের নিচে, তার পরনে কাপড় নেই। এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটবে কেউ আশা করেনি।
রাজা বলল, আমার দেশের একজন রাজপুত্রের সাথে এমন হওয়া উচিত হয়নি। সৈন্যরা এখনই দামি কাপড় বের করো। বিড়ালকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এখনই রাজকুমারকে আনতে যাব।
রাজা এবং বিড়াল সৈন্যদের সঙ্গে নিয়ে ব্রিজের কাছে পৌঁছে গেল। রাজা অবাক হয়ে দেখল অনেক যুদ্ধ পোশাক আর হেলমেট নদীতে ভাসছে।
বিড়াল রাজকুমারের জন্য দামি কাপড় এনেছে। সে পোশাক পরে বেরিয়ে এলো। রাজা তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাল। সে তাকে সুন্দর স্থানে বসতে বলল। রাজকুমারের শোভাযাত্রা শুরু হলো হইচই দিয়ে। রাজবাড়ির গেটে রানী ও রাজকন্যা অপেক্ষা করছিল। রাজকুমারী রাজকুমারের সৌন্দর্য দেখে আনন্দিত হলো। রাজা অনেক ধুমধাম করে রাজকন্যার সঙ্গে ময়ূরপালক রাজকুমারের বিয়ে দিলো।
কয়েকদিন কেটে গেল। রাজা বিড়ালকে বলল, এবার আমি মনে করি তোমার রাজকুমারের রাজত্ব দেখব। তুমি কখন তোমার দেশে আমাকে নিয়ে যেতে পারবে? আমি একটি বিশাল বাহিনী নিয়ে রাজকুমারের রাজত্ব পরিদর্শনে যাব।
বিড়াল বলল, রাজা মশায়, যেকোনো সময় তুমি যেতে পারো।
রাজা বলল, আমরা পরের সপ্তাহে যাব।
এখন বিড়ালটি ভাবল কী করা যায়। ঠিক তখনই তার কিছু দানবের মালিকানাধীন প্রচুর জমি আর প্রাসাদের কথা মনে পড়ল। সে ভাবল যে, কোনোভাবে রাজাকে বোঝানো উচিত যে তারা রাজপুত্রের অন্তর্ভুক্ত। রাজা বিশাল বাহিনী নিয়ে প্রস্তুতি নিয়ে বসল। ময়ূরপালক রাজকুমারও কাছে বসল। বিপুল জনতা নিয়ে অনেক ধুমধাম করে রওয়ানা হলো রাজা।
বিড়াল পথ দেখিয়ে নিয়ে লোকজনের সঙ্গে সবার সামনে এগিয়ে চলল। রাজার বাহিনী চলতে চলতে এমন একটি জায়গায় চলে এলো, সেখানকার জমিতে প্রচুর লোক কাজ করছে। বিড়ালটি তাদের কাছে এসে বলল, কিছুক্ষণের মধ্যেই এক বিরাট সেনাবাহিনী নিয়ে রাজা এখানে আসবে। রাজা তোমাদের জিজ্ঞাসা করবে এই জমির মালিক কে? যদি তোমরা বলতে পারো এই সমস্ত জমি ময়ূরপালক রাজকুমারের। একথা শুনলে রাজা খুশি হয়ে তোমাদেরকে অনেক উপহার দেবে। যদি তা না করো তাহলে দৈত্যের সরদার তোমাদের সবাইকে হত্যা করবে।
রাজা সেখানে এলো। যারা জমি চাষ করছিল তাদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, এটা কার জমি?
সবাই বলল, ময়ূরপালক রাজকুমারের।
রাজা আনন্দিত হয়ে তাদের স্বর্ণমুদ্রা উপহার দিল।
বিড়াল পথে অনেক ভেড়া চরাতে দেখল। তাদের কাছে গিয়ে একই কথা বলল। যখন রাজা এসে জিজ্ঞাসা করল, তারা বলল যে সমস্ত পাল ময়ূরপালক রাজকুমারের।
রাজা খুশি হলো যে রাজকুমারের নিজের চেয়ে বেশি সম্পদ আছে।
রাজা বলল, এখন আমি রাজকুমারের প্রাসাদে যেতে চাই।
বিড়াল পূর্ব থেকেই সেই প্রাসাদে প্রবেশ করল যেখানে দানবরা বসবাস করছে। দানবদের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমরা সবাই বিপদে পড়তে যাচ্ছ। রাজা তোমাদেরকে মেরে ফেলার জন্য এক বিরাট সেনাবাহিনী নিয়ে আসছে।
দানবরা বাইরে তাকিয়ে দেখল বিশাল বাহিনী নিয়ে সেনা আসছে। তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে অনুরোধ করে বলল, বিড়াল সাহেব! তোমাকে আমাদের বাঁচাতে হবে। বিড়াল তাৎক্ষণিক বলে উঠল, তোমরা সবাই বাগানে খড়ের ভেতর লুকিয়ে থাকো। দেরি করো না, জলদি লুকাও।
দানবরা শুকনো খড়ের গাদার ভেতর নিজেদের লুকিয়ে রাখল। বিড়াল খড়ের মধ্যে আগুন ধরিয়ে দিলো। সমস্ত দানব আগুনে পুড়ে মারা যেতে থাকলো। এদিকে বিড়াল তখন রাজার বাহিনীর দিকে তাকিয়ে উত্তেজনায় কাঁপছিলো। বিজয়ের আনন্দে হাসছিলো। তখনই পেছন থেকে একটি আধপোড়া আহত দানবের ক্রুদ্ধ থাবায় মারা পড়লো বিড়ালটি। মারা যেতে যেতে হাতের থাবায় থাকা বিড়ালটিকে প্রতারক, ধূর্ত ইত্যাদি বলে অভিসম্পাত করলো দানব। চরম শাস্তি পেল বিড়াল।
এদিকে রাজার বাহিনী দানবদের প্রাসাদে পৌঁছে গেছে।
রাজা বলল, রাজকুমারের প্রাসাদ খুব সুন্দর।
রাজকুমার খুব খুশি হয়ে গেল। সুখে-শান্তিতে দিন কাটতে লাগলো তার। সবসময়ই সে বিড়ালের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকল। বিড়ালের বুদ্ধির প্রশংসা করতো সে। বিড়ালের বুদ্ধির কারণেই দেশ দানবমুক্ত হলো। কুমারের এবং জনসাধারণের ভাগ্যও প্রসন্ন হলো। কিন্তু বিড়ালের বুদ্ধির কারণেই যে কতগুলো নিরীহ প্রাণও ধ্বংস হলো তা আর জানা হলো না রাজকুমারের।

Share.

মন্তব্য করুন