মায়ের মতো আপন কেউ হয় না এই পৃথিবীতে। মায়ের চোখের মতো কোনো চোখে এতো মমতা থাকে না সন্তানের জন্য। মা সকল দোষ ক্ষমা করে আবার বুকে টেনে নেয় সন্তানকে। সন্তানও মায়ের বুকে জগতের সেরা শান্তি অনুভব করে। মা শব্দটির মধ্যে লুকিয়ে আছে পৃথিবীর সব মায়া-মমতা, আদর-যত্ন, স্নেহ ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসার সকল সুখের মন্ত্র। এই পৃথিবীতে মায়ের ভালোবাসার সঙ্গে কোনো ভালোবাসার তুলনা চলে না। মায়ের তুলনা শুধু মা নিজেই। মায়ের সাথে আর কারো তুলনা চলে না। তাই তো মায়ের মতো এমন মধুর শব্দ অভিধানে আর দ্বিতীয়টি নেই। সারা পৃথিবী জুড়ে সন্তানের কাছে মায়ের গুরুত্ব অন্যরকম। মায়ের কাছেও সন্তানের গুরুত্ব আর সব থেকে বেশি। এটি মহান আল্লাহ তায়ালার এক বিস্ময় সৃষ্টি। এবং এটি তাঁর একটি বরাট রহমত মানুষের প্রতি।

এই বিজ্ঞান প্রযুক্তির যুগে নদী-সাগরের তলদেশের গভীরতা মাপা যায়, উড়ন্ত বলের গতি তৎক্ষণাৎ মাপা যায় কিন্তু মায়ের ভালোবাসার গভীরতা পরিমাপ করা যায় না। মা যেন সীমার মাঝে অসীম। সৃষ্টির সেই আদিলগ্ন থেকে মধুর এই শব্দটি শুধু মমতার নয় ক্ষমতারও যেন সর্বোচ্চ আধার। মায়ের অনুগ্রহ ছাড়া কোনো প্রাণীরই প্রাণ ধারণ করা সম্ভব নয়। আর এই মা-ই তার বুকের কলিজা ছেঁড়া ধন সন্তানদেরকে নিয়ে হাজারো স্বপ্ন দেখেন।

কিন্তু বর্তমান এই আধুনিক বিশ্বায়নের যুগে মায়ের তেমন কোনো কদর হচ্ছে না। মা পাচ্ছে না মায়ের সম্মান। কারণ, আমাদের সমাজে আজকাল প্রতিনিয়ত লক্ষ্য করা যাচ্ছে, মায়ের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে সন্তানের কাছে মা বোঝা হয়ে যাচ্ছে। আমাদের সকল কাজ করার সময় হচ্ছে শুধু মায়ের জন্য আমাদের সময় কেবলই ফুরিয়ে যাচ্ছে। একটি বারও আমাদের মাথায় আসে না যে, এই মায়ের উসিলায়-ই আমারা পৃথিবীর আলো বাতাস দেখেছি। দেখতে পারছি। এই মা-ই জীবনের সর্বস্ব দিয়ে আমাদের আজকের এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। শুধু কি তাই! দীর্ঘ দশ মাসের উপর গর্ভে ধারন করে অতি যত্নে অসমযন্ত্রনায় ধৈর্য ধরে প্রতিনিয়ত সন্তানকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছে এই মা। একথা বাস্তব যে, যে নারী মা হয়েছে সে-ই একমাত্র এ উপলব্ধি করতে ও বুঝতে পেরেছে। এটি সত্য- মা না হলে মায়ের মমতা দেয়া সম্ভব নয় কোনোদিন।

এজন্যই একজন প্রকৃত সন্তানের মনে মা শব্দটি আসলেই মনের ভেতর মায়া মমতার ভার অসম্ভব মাত্রায় বেড়ে যায়। যেটার ভার বইবার সামর্থ্য মনে হয় না কোন রক্ত মাংসের মানুষকে দেওয়া হয়েছে…। কেননা, যে মমতা আর ভালবাসা রক্ষাকারী দেয়াল হয়ে আমাকে-তোমাকে সব সময় ঘিরে থাকে, প্রতিটি মুহূর্তে, সে মায়া-মমতা, পূর্ণ ভালবাসা আমি-তুমি একমাত্র মায়ের কাছ থেকেই পাই। আর কারও পক্ষে এভাবে নিঃস্বার্থভাবে ভালবাসা সম্ভব নয়। মা বরাবরই ভালবেসে যায় যদিও আমরা তাকে হাজারও কষ্ট দিই, দুঃখ দিই। দিন শেষে এই মা-ই কিন্তু আমাদের ভালোর জন্য প্রার্থনায় মুখরিত থাকে। আমরা যখন ছোট ছিলাম, আমাদের মা আমাদেরকে যেভাবে দিনের পর দিন নিজের জীবনের সব মায়া-মমতা ত্যাগ করে শুধুমাত্র আমাদের জন্য তার প্রতিটি মুহূর্ত কাটিয়ে দিয়েছে। যেই মুহূর্তগুলো আমাদেরকে ঘিরে রেখেছে এক অসম্ভব মায়া মমতার দেয়াল দ্বারা। হ্যাঁ, অসম্ভব বলছি এ কারণে যে, এটা একমাত্র মায়ের ক্ষেত্রেই সম্ভব। এছাড়া দুনিয়াতে নিঃস্বার্থ ভালবাসা কারও থেকে পাবার আশা করাটা বোকামি। আশা করলেও ঠকতে হবে। একমাত্র মা কখনও আমাদেরকে ঠকায়নি, ঠকাবেও না। কারণ এই মা নিজের জীবনে হাজারও কষ্ট সহ্য করে তিলে তিলে আমাদেরকে গড়ে তুলেছে, সেই মা কখনোই আমাদের প্রতি তার মায়া মমতার দেয়াল ভাঙতে দিবে না। তাই এরকম নিঃস্বার্থ ভালবাসা, পূর্ণ মায়া মমতা করা সম্ভব শুধুমাত্র মায়ের দ্বারা সম্ভব।

দুনিয়াতে আর কোন ব্যক্তি নেই যার পক্ষে এটা সম্ভব। আমার জানা মতে সৃষ্টির আনন্দ অন্য অনেক আনন্দের থেকে বহুগুণ বেশি। আর যে মা আমাদেরকে দুনিয়াতে এনেছে, সে যে আনন্দ পেয়েছে, সে সবসময় চাইবে সেই আনন্দ ধরে রাখতে এবং তার সে আনন্দের উৎসকে সব সময় সবথেকে বেশি যত্ন করতে। আর একারণেই মা এর ভালবাসার সমকক্ষ তো দূরের কথা, এর ধারে কাছের কোন অনুভূতিতে যাবার কারো সামর্থ্য নেই। এই তো সেদিন হঠাৎ করে প্রচণ্ড জ্বর। পুরো শরীর জ্বরে কাঁপতে ছিল। শরীরে হাত রাখা যাচ্ছিল না, পুড়ে যাচ্ছিল। পরিবারের ভাই-বোন, বাবা-মা ও সবাই দৌড়াদৌড়ি শুরু করছিল। কেউ পানি আনতে, কেউ সরিষার তেল হাত-পায়ে ঘষে দিতে। সেদিন বেশ লম্বা সময় মাথায় পানি দেয়ার পর জ্বর একটু কমেছিল। তখন রাত অনেক হওয়ায় ধীরে ধীরে সবাই যার যার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো। কিন্তু মাকে কতবার বললাম! মা এখন জ্বর বেশি নেই তুমি ঘুমি পড়- ইনশাআল্লাহ জ্বর আর আসবে না। কিন্তু কিছুতেই মা আমার কথা শুনছিল না। প্রায় সারারাত মাথার পাশে বসেছিল আর মাঝে মধ্যেই কপালে হাত দিয়ে দেখতেছিল জ্বর কতটা আছে বা আছে কি না। আর সারাদিনের ক্লান্ত শরীরে ঘুমহীন এভাবে পাশে থাকা শুধুমাত্র মায়ের পক্ষেই সম্ভব।

তাই আমাদের উচিত, মায়ের সাথে সব উত্তম আখলাক প্রদর্শন করা। তাদের মনে কখনো কষ্ট না দেওয়া। আর সব সময় ঐ মহান আরশের অধিপতির নিকট প্রার্থনা করা যে, তিনি যেন পৃথিবীর সব মায়ের দুঃখ-কষ্ট ও যাবতীয় সমস্যা দূর করে দেন। তাদের সব সময় সুস্থ রাখেন, তাদের নেক হায়াত দান করেন। আর সকল মা’কেই সব সময় সুখে এবং দুধেভাতে রাখেন, আমিন।

Share.

মন্তব্য করুন