‘আম্মা বলেন পড়রে সোনা
আব্বা বলেন মন দে
পাঠে আমার মন বসে না
কাঁঠালচাঁপার গন্ধে।’
কবিতার লাইন দু’টো আল মাহমুদের। তোমরা নিশ্চয় আল মাহমুদের নাম জানো। অনেকে হয়তো চেনো। কারো সাথে হয়তোবা দেখাও হয়েছে। আবার কেউ কেউ খুব কাছে থেকে পেয়েছে কবিকে। আল মাহমুদ কিশোরদের জন্য চমৎকার সব কবিতা লিখেছেন। কত স্বপ্নের কথা। কত কল্পনার কথা লিখেছেন। লিখেছেন সহজ করে। মজা করে। উপরের দুটো লাইন পড়েই দেখো না। কী যে সুন্দর দুটো লাইন! গ্রামের একটি নিঝুম পরিবেশের বর্ণনা। কী মজার কথা! কী আনন্দের কথা! কাঁঠালচাঁপা ফুলের গন্ধ নাকে এসে লাগে। তখন আর পড়ায় মন থাকে না। তখন কেবল ফুলের গন্ধ নিতে ইচ্ছে করে। পাখির মতো ডাকতে ইচ্ছে করে। লুকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে বকুল ডালে।
কোথায় ফোটে এ ফুল? ফোটে গ্রামে। সবুজ গাছালির নীরব গাঁয়ে ফোটে কাঁঠালচাঁপা। গ্রামে বসবাস করে যারা তার জানে। কী সুন্দর গন্ধ এ ফুলের। ভোমর উড়ে যায়। প্রজাপতি নাচন তোলে। মৌমাছির গুঞ্জন জাগে। তখন একটি কিশোরের মন পাখির মতো ডেকে ওঠে।
সে কথাই বলেছেন তিনি-
‘তখন কেবল ভাবতে থাকি
কেমন করে উড়বো
কেমন করে শহর ছেড়ে
সবুজ গাঁয়ে ঘুরবো।’
এই যে সবুজ গাঁয়ে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দই আলাদা। খোলা আকাশ আর বিশাল সবুজ। এইতো বাংলাদেশের গ্রাম। এমন গ্রামে রাত নামে কী নিঝুমতা নিয়ে! রাতের আকাশে ওঠে চাঁদ। চাঁদটি যখন পূর্ণিমার রাতে ওঠে, আহা কী বিশাল! কী বিরাট! অন্যরকম সুন্দর চাঁদটি ভেসে থাকে আকাশে। তখন চাঁদটিকে কার কেমন লাগে। কেমন কল্পনা করো তোমরা! তোমাদের কল্পনায় চাঁদের সৌন্দর্য কিভাবে ধরা পড়ে।

এখন দেখি আল মাহমুদের কল্পনায় চাঁদটি কেমন-
‘সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে
কর্ণফুলীর কূলটায়
দুধ ভরা ঐ চাঁদের বাটি
ফেরেশতারা উল্টায়।’
কী মনে হলো? কেমন চাঁদটি? হ্যাঁ, একদম দুধের বাটি। সে বাটি কারা উল্টায়? ফেরেশতারা! আহা কী মন মাতানো উপমা। কি সুন্দর চিত্রকল্প! আল মাহমুদ এমনই। কিশোরদের জন্য তাঁর লেখা সত্যি বড় মজার! বড় আনন্দের! তাঁর একটি কিশোর কবিতা বইয়ের নাম হলো- ‘পাখির কাছে ফুলের কাছে’। নামটি কি মজার! আরেকটি বইয়ের নাম- ‘একটি পাখি লেজ ঝোলা।’ আরও বইয়ের নাম- ‘মোল্লাবাড়ির ছড়া’, ‘মরু মূষিকের উপত্যকা’, ‘সৌরভের কাছে পরাজিত’, ‘ফড়িং ধরার গল্প’, ‘ছড়াসমগ্র’, ‘কিশোর সমগ্র’সহ আরও আরও বই।
১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই আল মাহমুদের জন্ম। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তাঁর পরিবার একটি ধার্মিক পরিবার। আল মাহমুদের বাবা এবং তাঁর পূর্বপুরুষ সবাই ব্যবসার সাথে যুক্ত ছিলেন। তাঁরা সুগন্ধির ব্যবসা করতেন। যাকে আতর বলা হয়। এমন একটি বংশে জন্মেছেন তিনি। তাঁর কিশোরকাল গ্রামেই কেটেছে। পাখির সঙ্গে ফুলের সঙ্গে ছিলো তাঁর ভাব। পাখি ধরতেন। পাখির গান শুনতেন। প্রজাপতি ফড়িং ও পতঙ্গের সাথে কাটতো সময়। কিশোরকালেই কবিতা লেখা শুরু করেছিলেন। লিখলেন বড়দের জন্য। ছোটদের জন্য। নারী-পুরুষ সবার জন্য।
বাংলাদেশের একজন বড় কবি তিনি। শুধু বড় কেন বলি! শ্রেষ্ঠদের একজন। বড়দের ছোটদের মিলিয়ে একশটির বেশি বই লিখেছেন তিনি। লিখেছেন কবিতা, ছড়া, কিশোর কবিতা, উপন্যাস, গল্প, ভ্রমণ কাহিনি, থ্রিলার, প্রবন্ধ এবং কলাম। বাংলা ভাষার পাঠকের কাছে আল মাহমুদ একটি বরণীয় নাম। কলকাতায়ও আল মাহমুদের পাঠক বিশাল সংখ্যায় আছে। বাংলাদেশে তো আছেই।
২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি এই পৃথিবী থেকে চিরদিনের জন্য বিদায় নেন। আল মাহমুদ তাঁর লেখার ভেতর বেঁচে থাকবেন। বেঁচে থাকবেন পাঠকের হৃদয়ে।

Share.

মন্তব্য করুন