একটি কবিতা! কবিতাটি প্রতিবাদী। অন্যায়ের বিরুদ্ধে এর উচ্চারণ! খুব খুব আবৃত্তি হয় কবিতাটি। হ্যাঁ, ক’টি লাইন তো বলতেই হবে সেই কবিতার। নাম কী? ওহো, তাই তো, কবিতাটির নামই তো বলা হলো না। তবে জানা যাক নামটি- ‘তখন সত্যি মানুষ ছিলাম’। এই হলো কবিতার নাম।
একদম ঠিক ধরেছো। কবিতাটি লিখেছেন কবি আসাদ চৌধুরী। তাঁর জন্ম ১৯৪৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। জেলা বরিশাল। কবিতার শেষের আটটি লাইন পাঠ করা যাক তবে-
আগুন ছিলো মুক্তি সেনার
স্বপ্ন ঢলের বন্যায়,
প্রতিবাদের প্রবল ঝড়ে
কাঁপছিল সব অন্যায়।

এখন এসব স্বপ্ন কথা
দূরের শোনা গল্প
তখন সত্যি মানুষ ছিলাম
এখন আছি অল্প।

পাঠ করে কি মনে হয়! কথা পরিস্কার খুব। একসময় প্রতিবাদ ছিলো অন্যায়ের! এখন আর তেমন প্রতিবাদ নেই! কারণ? কারণ তিনি তো বলেছেন কবিতায়- তখন সত্যি মানুষ ছিলাম, এখন আছি অল্প! এর কি অর্থ? অর্থ হলো এখন মানুষেরা আগের মতো অন্যায় দেখেও তার কোনো প্রতিবাদ করে না। করছে না। বা করতে পারছে না। তাহলে মানুষের সাহস কমে গেলো! নাকি অন্যায় মেনে চলার জন্য প্রস্তুত সকলেই। যদি তাই হয় তো আমরা সে অর্থে পুরোপুরি মানুষ হতে পারলাম কি? এর জবাব খুব সহজ। পারিনি। এভাবে কবি আসাদ চৌধুরী আমাদের সমাজে চলমান অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন।
আসাদ চৌধুরী একজন জনপ্রিয় কবি। সবার কাছে তিনি একজন ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত। একজন গুরুত্বপূর্ণ কবি তিনি। সবাই ভালোবাসেন তাঁকে। তিনি অন্যায় অসুন্দরের বিরুদ্ধে লেখেন। কথা বলেন। প্রতিবাদ করেন। তিনি কথা বলেন চমৎকার ভাষায়। শুদ্ধ কথায় বলেন সব। উচ্চারণ খুবই আনন্দময়। ভরাট কণ্ঠ তাঁর। আবৃত্তি করেন অসাধারণ! হাসি মুখেই কথা বলেন তিনি। কারো সাথে দুর্ব্যবহার বা খারাপ আচরণ করেন না। পরস্পরের বিরুদ্ধে গীবত অথবা কুৎসা রটান না। উদারতার সাথে গ্রহণ করেন সুন্দরকে। তরুণ কিশোরদের সাথে তিনি মেশেন আন্তরিকতার সাথে। বিশেষ করে শিশুকিশোরদের জন্য লিখেছেন অনেক। লিখেছেন ছড়া, কিশোর কবিতা, গল্প, রূপকথা এবং জীবনী গ্রন্থ। ঝটপট তাঁর ক’টি বইয়ের নাম জেনে নেয়া যাক-
‘ছোট্ট রাজপুত্র’, ‘মুচি ভূতের গল্প’, ‘রাজকন্যা ও একটি মটরশূঁটি’, ‘গল্প থেকে অন্য গল্প’, ‘ভিন দেশের মজার লোককাহিনী’, ‘জোয়ান অব আর্ক’, ‘কথার মধ্যে অন্য কথা’, ‘এককা দোককা’, ‘এন্ডারসনের কয়েকটি রূপকথার গল্প’, ‘মোল্লা নাসির উদ্দীন ও গুলজার বিবির কিসসা’, ‘কাছিম ও দুটি হাঁসের কথা’, ‘গানের পাখি এবং তোমাদের প্রিয় গল্প’। এমন আরও বই লিখেছেন তিনি।

আসাদ চৌধুরী হজ্ব করতে গেলেন। হজ্ব শেষে ফিরলেন দেশে। ফিরেই লিখলেন একটি চমৎকার কবিতা। কবিতাটির নাম- ‘সবুজ গম্বুজের নিচে’। মসজিদে নববী এবং আমাদের মহানবী সা.-কে নিয়ে লেখা কবিতাটি ভীষণ প্রিয় হয় পাঠকের।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন তিনি। ফিলিস্তিন নিয়ে আরবী ভাষায় রচিত প্রতিবাদী কবিতা অনুবাদ করেছেন তিনি। নাম রেখেছেন- ‘ফিলিস্তিন ও প্রতিবেশী দেশের প্রতিবাদী আরবী কবিতা’।
এভাবে আসাদ চৌধুরী সৌন্দর্য ধারণ করেছেন। প্রতিবাদ করেছেন অসুন্দরের। স্বপ্ন দেখিয়েছেন শিশুকিশোরদের। দেশপ্রেমের কথা বলেছেন তিনি। সত্য ও সুন্দরের কথা বলেছেন। বলেছেন বড় মানুষ হওয়ার কথা। ছোট-বড় সকলের সাথে আছে আসাদ চৌধুরীর সম্পর্ক! প্রাণখোলা হাসি তাঁর মুখে। রেডিও-টেলিভিশনের অসাধারণ উপস্থাপক। তিনি অনুবাদক। তিনি সাংবাদিক। এবং তিনি সাংস্কৃৃতিক যোদ্ধা। সুস্থ সংস্কৃতি চর্চায় কাজ করেন তিনি। তিনি বিশ্বাসে অটল। ভালোবাসেন বাংলাদেশ।

Share.

মন্তব্য করুন