আমাদের সবারই কিছু না কিছু বিশেষ দক্ষতা থাকে যা আমাদের অন্যদের থেকে আলাদা করে। ছোটবেলায় আমাদের সবারই ইচ্ছা হতো যে যদি আমাদের কাছে কোনো অলৌকিক ক্ষমতা বা কোনো ঝঁঢ়বৎ চড়বিৎ থাকতো তাহলে কতই না ভালো হতো। কিন্তু আমরা এটাও বিশ্বাস করি যে এটা শুধু গল্প বা সিনেমাতেই সম্ভব। তবে সব সময় যে গল্প বা সিনেমাতেই এসব ঘটে তা কিন্তু নয়। আমাদের চলমান জীবনেও এর প্রতিফলন দেখতে পাই আমরা। এই বিশেষ ক্ষমতাটি বিশ্বের দেশে দেশে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের পাশাপাশি শিশুদের মধ্যে প্রায়শই পরিলক্ষিত হয়। তেমনি এক বিস্ময় শিশু নিকোল অলিভেইরার কথাই জানাব আলোচ্য নিবন্ধে। সম্প্রতি সারা বিশ্বে সাড়া পড়ে গেছে এই শিশুটিকে নিয়ে। মাত্র আট বছর বয়সেই ১৮টি গ্রহাণুর দেখা পেয়েছে নিকোল অলিভেইরা। ব্রাজিলের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ফরতালেজা শহরের মেয়ে ছোট্ট নিকোল অলিভেইরা। বাবা কম্পিউটার বিজ্ঞানী। উল্লেখ্য, সেই ছোটবেলা থেকেই অলিভেইরার ঝোঁক কম্পিউটারের দিকে নয়, বরং আকাশের দিকে। দুই বছর বয়সেই তারা ধরার জন্য আকাশের দিকে হাত বাড়াত সে। মার কাছে আবদার করে বলত, ‘আমাকে একটা তারা দাও না।’ আকাশে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য তারা দেখতে দেখতে আট বছরে পা দিয়েছে অলিভেইরা। এরই মধ্যে বিশ্বের কনিষ্ঠতম জ্যোতির্বিদ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে সে। আর তাই তো অলিভেইরার ঘরের দেয়ালজুড়ে সৌরজগৎ, ছোট রকেট ও স্টার ওয়ারের বিভিন্ন চরিত্রের পোস্টার। নিজের কম্পিউটারের দুটি বড় স্ক্রিনে আকাশের ছবি দেখে দেখে পড়াশোনা করে অলিভেইরা। দেশের মানুষ আদর করে অলিভেইরার নাম দিয়েছে নিকোলিনহা। অলিভেইরার জ্যোতির্বিজ্ঞানের শিক্ষক ওহলিওমারজিও রডরিগেজ মোরেইরার অভিমত, ‘তার দেখার ক্ষমতা অসাধারণ। গ্রহাণুর মতো দেখতে ছবির ছোট ছোট বিন্দু দ্রুতই শনাক্ত করতে পারে অলিভেইরা।’ ‘গ্রহাণু দেখতে পেলেই ক্লাসমেটদের জানায় সে, যেখানে তারা তখনো নিশ্চিত নয়, আদৌ কোনো গ্রহাণুর সন্ধান পেয়েছে কি না।’ জ্যোতির্বিজ্ঞানের শিক্ষক ওহলিওমারজিও রডরিগেজ মোরেইরা আরো বলেন, ‘সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, অলিভেইরা তার জানাবোঝা অন্য শিশুদের জানায়। ফলে বিজ্ঞানের প্রচারে অবদান রাখছে সে।’ ৪৩ বছর বয়সী অলিভেইরার মা জিলমা জানাকা বলেন, ‘জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রতি মেয়ের সীমাহীন আগ্রহ। চতুর্থ জন্মদিনের উপহার হিসেবে আমাদের কাছে টেলিস্কোপ চায় অলিভেইরা। ‘টেলিস্কোপ কী, তা তখন আমি জানতামই না।’ তিনি বলেন, ‘টেলিস্কোপের দাম অনেক বেশি বলে জানাই মেয়েকে।’ তখন মায়ের কথার উত্তরে অলিভেইরা বলে, তার আগামী দিনের সব জন্মদিনের উপহারের বিনিময়ে টেলিস্কোপ চায় সে।

অবশেষে অলিভেইরার জেদের কাছে হার মেনে তার সপ্তম জন্মদিনে মা-বাবা তাকে টেলিস্কোপ কিনে দেন। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, নাসা সংশ্লিষ্ট কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে অসীম উদ্দীপনার সঙ্গে গ্রহাণু খুঁজে বেড়ায় অলিভেইরা। অংশ নেয় আন্তর্জাতিক সেমিনারে। বৈঠক করে ব্রাজিলের নামকরা মহাকাশ বিজ্ঞানীদের সঙ্গে। নিকোল অলিভেইরা গর্বের সঙ্গে এএফপিকে জানান, এরই মধ্যে ১৮টি গ্রহাণুর দেখা পেয়েছে সে। অলিভেইরা ‘ওই গ্রহাণুদের ব্রাজিলের বিজ্ঞানী বা তার মা-বাবাসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের নাম দিয়েছে।’ উল্লেখ্য, ব্রাজিলের বিজ্ঞান মন্ত্রণালয়ের অংশীদারিত্বে নাগরিক বিজ্ঞান কর্মসূচি ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সার্চ কলাবরেশন’ পরিচালিত প্রকল্প অ্যাস্টেরয়েড হান্টার্স। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে নাসাও। এ প্রকল্পের মাধ্যমে শিশু-কিশোর তরুণদের নিজেদের মহাকাশ আবিষ্কারের সুযোগ করে দেয়ার মাধ্যমে তাদের বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী করা হয়। এক্ষেত্রে অলিভেইরার অনুসন্ধান প্রমাণিত হলে (যাতে কয়েক বছর সময় লেগে যেতে পারে), একটি গ্রহাণু আনুষ্ঠানিকভাবে আবিষ্কার করায় সে হবে বিশ্বের কনিষ্ঠতম জ্যোতির্বিদ। শুধু তাই নয়, ১৮ বছর বয়সী ইতালির নাগরিক লুইগি স্যানিনোর রেকর্ডও ভাঙবে সে। তাই বিশ্বের সকল বিজ্ঞানীর দৃষ্টি নিকোল অলিভেইরার নতুন ১৮টি গ্রহাণু আবিষ্কারের দিকে। আমাদের সবার বিশ্বাস অলিভেইরা তার নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছুবে এবং সফল হবে। আমাদের সবার শুভকামনা রইলো খুদে জ্যোতির্বিদ নিকোল অলিভেইরার প্রতি।

Share.

মন্তব্য করুন