মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. মসজিদে নববীতে বসতেন। বিভিন্ন বিষয়ে উপদেশ দিতেন তাঁর সাহাবীদেরকে। কোনো কোনো বিষয়ে আলোচনা করতেন। একদিনের ঘটনা- তিনি আলোচনা করছিলেন। সামনে বসা তাঁর সাহাবীরা। হঠাৎ তিনি দেখলেন- কিছু লোক তাঁর দিকে আসছে। নিকটে এলো লোকগুলো। রাসূল সা. দেখলেন তারা মুযার গোত্রের লোক। তারা বড় অভাবী। নজদ নামক জায়গা থেকে এসেছে তারা। এসেছে রাসূল সা. এর সাথে সাক্ষাৎ করতে। তারা এতই গরিব ছিলো যে পরনের পোশাকটিও ঠিক ছিলো না। তারা গলায় কাপড় ঝুলিয়ে পরেছিলো। যা সেলাই করা ছিলো না। কারণ সেলাই করার মতো সুঁই সুতা জোগাড়ের মতো অবস্থাও ছিলো না তাদের। তাই তারা কাপড়ের মাঝ বরাবর ছিঁড়ে তাতে মাথা ঢুকিয়ে বাকি অংশ শরীরে ঝুলিয়ে দিয়েছিলো। তাদের পরনে এই সেলাইহীন কাপড় এবং কোমরে ছিলো ঝোলানো তরবারি। এ ছাড়া কিছুই নেই। লুঙ্গি কিংবা পাজামা, পাগড়ি বা চাদর কিছুই ছিলো না। তাদের চেহারায় অভাব জেগে উঠেছে। ঠিক ভাবে খেতে না পেয়ে চেহারা ভেঙে গেছে প্রায়।

তাদের অভাব অনটন এবং খাদ্য ও বস্ত্রের এমন কষ্ট দেখে ভীষণ বেদনা অনুভব করলেন রাসূল সা.। তাঁর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেলো। সঙ্গে সঙ্গে তিনি উঠে নিজের ঘরে গেলেন। খুঁজলেন লোকগুলোকে দেয়ার মতো কিছু কি আছে? কিন্তু না তাদেরকে দেয়ার মতো কিছুই পেলেন না। বের হয়ে অন্য ঘরে গেলেন। সে ঘর থেকে অন্য ঘরে। এভাবে অনেকক্ষণ খুঁজেও পেলেন না কিছুই। এরপর রাসূল সা. মসজিদে গিয়ে জোহরের নামাজ আদায় করলেন। নামাজ শেষে মিম্বরে বসলেন তিনি। প্রথমে মহান আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা জ্ঞাপন করলেন।
তারপর পবিত্র কুরআনের সূরা নিসার প্রথম আয়াত পাঠ করলেন। যার অর্থ- হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এক ব্যক্তি থেকে এবং তার থেকে তার সঙ্গী সৃষ্টি করেছেন। আর তাদের উভয় থেকে বহু নারী পুরুষ ছড়িয়ে দিয়েছেন। আল্লাহকে ভয় করো, যার অসিলা দিয়ে তোমরা একজন আরেকজনের কাছে নিজেদের হক চেয়ে থাকো। আত্মীয়তার সম্পর্কের ব্যাপারে সচেতন হও। জেনে রাখো নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের সবকিছু দেখছেন।

এরপর সূরা হাশরের ১৮ নম্বর আয়াতটি পাঠ করলেন। যার অর্থ- হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় করো। আর প্রত্যেকেই ভেবে দেখো আগামীকালের জন্য সে কি পাঠিয়েছে। আর আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চিত ভাবে জেনে রাখো, তোমরা যা কিছু করো, সে সম্পর্কে তিনি পরিপূর্ণরূপে জানেন।
এরপর রাসূল সা. উচ্চকণ্ঠে বললেন- তোমরা সদকা করতে অক্ষম হওয়ার আগেই সদকা করো। দানের ওপর প্রতিবন্ধকতা আরোপিত হওয়ার আগেই দান করো। দিনার দিরহাম, গম যব যে যা পারো, দান করো। কোনো দানকেই কেউ তুচ্ছ মনে করবে না। বেশি না পারলে এক টুকরো খেজুর হলেও দান করো।

রাসূল সা. মিম্বরে থাকা অবস্থায় একজন আনসারি সাহাবী খেজুর ভর্তি বড় এক ঝাঁকা নিয়ে এলেন। রাসূল সা. মিম্বরে বসেই তা গ্রহণ করলেন। এসময় রাসূল সা. এর পবিত্র চেহারা খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। রাসূল সা. বললেন- যে ব্যক্তি কোনো সুন্দর নিয়ম ও আদর্শ চালু করে এবং তেমন করে কাজ করে, তাকে তার কাজের প্রতিদান দেয়া হবে। পরবর্তীতে তার দেখাদেখি কেউ যদি সে কাজ করে সে তার কাজেরও প্রতিদান পাবে। তবে এ কারণে আমলকারীর সওয়াব কমবে না। আর যে ব্যক্তি কোনো খারাপ নিয়ম চালু করে এবং সে অনুযায়ী কাজ করে, তাকে তার এ কাজের গুনাহ বহন করতে হবে। পরবর্তীতে কেউ যদি এর অনুসরণ করে সে তার বোঝাও বহন করবে। কিন্তু পরবর্তী অপরাধকারীর গুনাহ একটুও কমানো হবে না।
এভাবে একসময় রাসূল সা. তাঁর বক্তব্য শেষ করলেন। শেষ করার সাথে সাথে উপস্থিত সাহাবীরা উঠে গেলেন। গেলেন যে যার ঘরে। এবং যে যার মতো বিভিন্ন বস্তু নিয়ে ফিরে এলেন। কেউ দিনার নিয়ে এলেন। কেউ নিয়ে এলেন দেরহাম। কেউ গম। কেউ যব। কেউ খেজুর। এবং কেউ কেউ কাপড় চোপড়। এসব দেখে রাসূল সা. এর চেহারা খুশিতে ঝলমল করে উঠলো। মনে হচ্ছিলো তাঁর চেহারা পূর্ণিমা চাঁদের একটি টুকরো।
এরপর রাসূল সা. আগত সেই দরিদ্র লোকদের মধ্যে জিনিসগুলো ভাগ করে দিলেন। আনন্দে তাদের চেহারাও উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। ভীষণ খুশি মন নিয়ে লোকগুলো ফিরে গেলো তাদের নিজেদের এলাকায়।

Share.

মন্তব্য করুন