সুপারস্টারদের সাথে একই দলে খেলার ইচ্ছা সব খেলোয়াড়েরই থাকে। কারো সেই সুযোগ হয়, কারো বা হয় না। তর্কসাপেক্ষে এই গ্রহের সেরা ফুটবলার মেসি। যে কারণে লিওনেল মেসির ক্লাবে খেলার স্বপ্ন অনেকেই দেখেন। অনেক সময় দেখা যায় সাধারণ মানের কোনো খেলোয়াড়ও কিংবদন্তিদের সংস্পর্শে এলে অসাধারণ হয়ে ওঠেন; কিন্তু এর বিপরীত চিত্রটাও রয়েছে ফুটবল বিশে^। যেখানে সুপারস্টারদের সাথে খেলতে গিয়ে উল্টো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক সম্ভাবনাময় তারকার ক্যারিয়ার। এবার তেমন কয়েকজন দুর্ভাগা ফুটবলারের কথাই জানাবো।

লিওনেল মেসি তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনাকে অনেক সাফল্য এনে দিয়েছেন। চলতি মৌসুমে ফরাসি ক্লাব প্যারিস সেন্ট জার্মেইতে যোগ দেয়ার আগে ক্লাবকে একজন খেলোয়াড়ের পক্ষে যা দেয়া সম্ভব তার কিছুই বাকি রাখেননি এই আর্জেন্টাইন। যে কারণে মেসি যতদিন খেলেছেন বার্সার কোচ, ম্যানেজমেন্ট সবাই মেসিকে নিয়েই সবচেয়ে বেশি আন্তরিক ছিলো। একাদশ গঠন, ফরম্যাশন ঠিক করা কিংবা গেমপ্ল্যান- সব কিছুতেই লিওনেল মেসিকে গুরুত্ব দেয়া হতো। আর তাইতো অনেক সময় অন্যদের থাকতে হতো উপেক্ষিত।

সুইডিশ ফরোয়ার্ড জøাতান ইব্রাহিমোভিচ তেমনই একজন। ২০০৯ সালে ইব্রাহিমোভিচকে ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলান থেকে কিনেছিলো বার্সেলোনা। বার্সায় যোগ দিয়ে স্বপ্ন পূরণের আনন্দে নেচেছিলেন তিনিও; বার্সার সেন্ট্রাল স্ট্রাইকার পজিশনে খেলতে নেমে প্রথম ৫ ম্যাচেই গোল করার রেকর্ড গড়েন। জায়গা পান ২০০৯ সালের উয়েফা বর্ষসেরা টিমে; কিন্তু যখনই মেসি সেন্ট্রাল স্ট্রাইকার পজিশনে খেলতে চান, তখন ইব্রাহিমোভিচকে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে নিজের আত্মজীবনীতে ইব্রাহিমোভিচ লিখেছেন, ‘বার্সায় খেলা ছিলো আমার শৈশবের স্বপ্ন। কাতালান ক্লাবটির হয়ে শুরুটাও দারুণ হয়েছিল; কিন্তু এরপরই মেসি নাক গলাতে শুরু করলো। সে উইংয়ের পরিবর্তে মাঝখানে খেলতে চাইলো। আর আমাকে ত্যাগ স্বীকার করতে হলো। এর ফলে মাঠে সফল হওয়ার জন্য যে স্বাধীনতা দরকার ছিলো সেটি আমার আর রইলো না।’
এক পর্যায়ে বার্সেলোনা ছাড়তেই হয় ইব্রাকে। এরপর এসি মিলান, পিএসজি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে দারুণ খেলেছেন। হয়তো বার্সার সোনালি সময়ে নিজের পছন্দের জায়গাটিতে খেলতে পারলে কিংবদন্তিদের তালিকায় স্থান হতো তারও।

স্পেনের যে দলটা ২০০৮ সালের ইউরো ও ২০১০ সালে বিশ^কাপ জিতেছে সেই দলের স্ট্রাইকার ছিলেন ডেভিড ভিয়া; কিন্তু ক্লাব ক্রিকেটে তিনি ততটা উজ্জ্বল হতে পারেননি মেসির কারণেই। ভিয়াকে ২০১০ সালে বার্সেলোনা কিনেছিল ৪০ মিলিয়ন ইউরোতে; কিন্তু ইব্রাহিমোভিচের মতো তাকেও সেন্ট্রাল স্ট্রাইকারের জায়গা ছেড়ে দিতে হয়েছিল মেসির জন্য। এরপর উইঙ্গার হিসেবে খেলে খুব একটা সফল হতে পারেননি। যে কারণে তিন মৌসুম পরই বার্সেলোনা ছেড়ে অ্যাথলেটিকে মাদ্রিদে চলে যান এই স্ট্রাইকার। ২০১৩ সালে অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদে গিয়ে ক্লাবটিকে দীর্ঘ ১৭ বছর পর এনে দেন লা লিগার শিরোপা। ওই মৌসুমে লিগে ১৩ গোল করেন ডেভিড ভিয়া। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালেও ওঠে ক্লাবটি।
ফুটবল বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্পেন জাতীয় দলের হয়ে ৯৮ ম্যাচে ৫৯ গোল করা ভিয়ার ক্লাব ক্যারিয়ারটা উজ্জ্বল হতে পারতো বার্সেলোনায় আরো কয়েক মৌসুম খেলতে পারলে। তার যে পরিমাণ গোল করার দক্ষতা ছিলো তাতে বার্সার মতো টিমের সাথে পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে খেলতে পারলে অনেক দূর যেতে পারতেন এই স্ট্রাইকার।

লিওনেল মেসির সাথে একই সময়ে শুরু হয়েছিল স্যামুয়েল ইতোর ক্যারিয়ারের বার্সেলোনা অধ্যায়। ক্যামেরুনের এই স্ট্রাইকার প্রচণ্ড পরিশ্রমী একজন খেলোয়াড় ছিলেন। ২০০৮-০৯ মৌসুমে বার্সেলোনার ট্রেবল জয়ে বড় ভূমিকা ছিলো তার; কিন্তু তারও ছিলো পোড়া কপাল। মেসির কারণে ইতোকে সেন্ট্রাল স্ট্রাইকারের জায়গা থেকে সরিয়ে দেন কোচ পেপ গার্দিওলা। মেসি দারুণ খেলতে থাকেন, যে কারণে এক পর্যায়ে ক্লাব ছেড়েই চলে যেতে হয় ইতোকে। বার্সেলোনার হয়ে ১৪৪ ম্যাচে ১০৮ গোল করেন ইতো, যা তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের চিত্রই তুলে ধরে। কিন্তু যে ক্লাবে মেসি আছেন, সেখানে একই পজিশনে অন্য কারো টেকার প্রশ্নই আসে না।

চিলির ফুটবলার অ্যালেক্সিজ সানচেজের বার্সেলোনায় আগমন ঘটেছিল তরুণ এক প্রতিভা হিসেবে। তার গতি আর কৌশল অল্পদিনেই প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের জন্য আতঙ্ক হয়ে উঠেছিল; কিন্তু তিনিও শেষ পর্যন্ত মেসির ছায়া থেকে বের হতে পারেননি। কোচ গার্দিওলা তাকে নিচের দিকে খেলতে বাধ্য করেন। তা সত্ত্বেও ২০১৩-১৪ মৌসুমে মেসি ইনজুরিতে থাকায় সানজেচ করেছিলেন ২১ গোল; কিন্তু মেসি সুস্থ হয়ে ফিরে আসায় তার গুরুত্ব কমে যায় ক্লাবটিতে। সব মিলে বার্সার হয়ে ৮৮ ম্যাচে ৩৯ গোল করেছিলেন সানচেজ। এরপর অনেকটা অভিমান করেই ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব আর্সেনালে যোগ দেন তিনি। চার মৌসুম দাপটের সাথে খেলেছেন আর্সেনালে। বার্সেলোনায় খেলতে পারলে হয়তো তার ক্যারিয়ার আরো বর্ণাঢ্য হতে পারতো।

Share.

মন্তব্য করুন