বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে রিয়ন। ছেলেটি খুব আদুরে মানুষ। না চাইতেই সব পায়। বলতে দেরি আছে কিন্তু তার বাবা-মায়ের দিতে দেরি নেই। রিয়নও খুব ভালো ছেলে। পড়ালেখায়ও খুব মনোযোগী।
রিয়ন নিয়মিত স্কুলে যায়। বন্ধুদের সাথে খুব আন্তরিকতার সাথে মিশে। সবাইকে পড়ালেখাসহ যাবতীয় সমস্যায় সাহায্য করে। তাই স্কুলের বন্ধুরাসহ সকল শিক্ষকও তাকে খুব ভালোবাসেন। সবার নয়নের মণি সে।
রিয়নের বাবারা দুই ভাই। তার চাচ্চু ঢাকা ভার্সিটিতে পড়েন। রিয়ন চাচ্চুরও খুব প্রিয়। চাচ্চুও রিয়নের প্রিয়। চাচ্চুর সাথে দিনে অন্তত একবার কথা না হলে তার কিছুই ভালো লাগে না। তাই রোজ-ই চাচ্চুর সাথে কথা হয় তার। চাচ্চুর সাথে বেশি পড়ালেখা নিয়েই কথা হয়। চাচ্চুই তাকে উৎসাহিত করে। বলে- ‘তুমি ভালোভাবে পড়ালেখা করলে আমার মতো ভার্সিটিতে পড়তে পারবে।’ রিয়নও চাচ্চুর কথা পীরের মতো মানে। মানবেই না কেন? চাচ্চুতো শুধু উপদেশ-ই দেন না, দেন তার প্রিয় চিপস, ক্যান্ডি, আইসক্রিম আরও কতো কী!
আজ রিয়নের স্কুল থেকে ফিরেই মন খারাপ। কারো সাথেই কথা বলছে না। অবশেষে চাচ্চুর ফোনে গম্ভীরতা ভাঙে তার। তারপর আম্মুকে বলে মন খারাপের কারণগুলো। স্কুলে তার এক বন্ধু গুলতি দিয়ে পাখি মারছিল। রিয়নেরও শখ হয়েছিল ওটা করতে কিন্তু সে দেয়নি। তাই তার মন খারাপ হয়েছে জানায়। তার মা শুনে বললো, তোমার বাবাকে এক্ষুনি গুলতি এনে দিতে বলবো। তুমিও গুলতি দিয়ে পাখি মারবে।
তার বাবাও ভালো-মন্দ বিচার না করেই ছেলের আবদার পূরণ করে। রিয়ন এবার মহা খুশি। সেও পাখি মারবে। কী যে মজা হবে!
রিয়নও স্কুলে যাওয়ার সময় গুলতি নিয়ে যায়। সারা পথে গাছে-গাছে পাখি খোঁজে। যদিও পায় কিন্তু পাখি মারতে পারে না। এজন্য মন আরও বেশি খারাপ হয় তার। মাথায় শুধু একটাই চিন্তা কাজ করে কিভাবে পাখি মারবে। কিন্তু উপায় খুঁজে পায় না। শেষমেশ চাচ্চুর কথা মনে পড়ে। তার চাচ্চুতো অনেক জ্ঞানী, ভার্সিটিতে পড়ে। নিশ্চয়ই সে জানবে গুলতি দিয়ে পাখি মারার কৌশল। সাথে সাথেই সে চাচ্চুকে ফোন দেয়। তার চাচ্চুও ফোনে রিং হতেই রিসিভ করে।

রিয়নের কণ্ঠ শুনেই তিনি বুঝতে পারেন তার কিছু একটা হয়েছে।
রিয়নসোনা, তোমার কী হয়েছে?
চাচ্চু, আমি গুলতি দিয়ে পাখি মারতে পারি না। আমাকে বলো না, কিভাবে গুলতি দিয়ে পাখি মারবো?
পাখি কেন মারবে?
আমার বন্ধুরা মারে। তাই আমারও শখ হয়েছে।
কিন্তু রিয়ন, এটাতো খুুব খারাপ।
খারাপ কেন হবে? আমি ওসব কিছুইই শুনতেই চাই না। তুমি আগে আমাকে কৌশলটা শিখাও চাচ্চু।
শিখাবো। তবে তার আগে তোমাকে একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। রাজিতো?
হ্যাঁ, বলো কি প্রশ্ন?
তোমার মায়ের কাছে থেকে যদি তোমাকে কেউ অন্য কোথায় নিয়ে যায়, তাহলে তোমার কেমন লাগবে?
আমার অনেক মন খারাপ হবে। তুমি, আব্বু, আম্মু ছাড়া আবার কোথাও গেলে ভালো লাগবে না।
তোমার মতো পাখিদেরও পরিবার আছে। মা, বাবা, চাচ্চু আছে। তুমি যদি বাসা থেকে ছোট্ট পাখিটিকে মারো কিংবা ধরে আনো তাহলে তারও খারাপ লাগবেতো? কী লাগবে?
হ্যাঁ চাচ্চু, তুমিতো ঠিক বলেছো। এটাতো খুব জঘন্যতম অপরাধ। আমি আর পাখি মারা শিখতে চাইবো না। আমার বন্ধুদেরকেও এটা করতে নিষেধ করবো।
এইতো আমার জাদুমণি, রিয়নসোনা বুঝতে পেরেছে। বোঝার জন্য তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমি কাল-ই বাড়ি আসছি রিয়ন? তোমার জন্য অনেক খেলনা আর মজার মজার খাবার আনবো।
রিয়ন খুব খুশি। তার চাচ্চু আসবে, কত্ত মজা হবে!
আচ্ছা চাচ্চু, তাড়াতাড়ি এসো। আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো।

Share.

মন্তব্য করুন