আব্দুল মতিন অত্যন্ত সহজ সরল ও সাদা মনের মানুষ। তিনি ঢাকায় একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন। এক ছেলে আর দুই মেয়ে নিয়ে সুখী সংসার। আসিফ ইন্টার প্রথম বর্ষে পড়ে, মেয়ে আফরোজা ক্লাস নাইনে পড়ে আর ছোট্ট মেয়ে আশা ক্লাস ফাইভে পড়ে। প্রতিদিনই ছেলেমেয়েদের সাথে মুঠোফোনে কথা হয়। কিন্তু পাশাপাশি বসে গল্প করা, পারিবারিক বৈঠক করা বা ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা কেমন করছে কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয় না। তেমন ছুটিও মিলে না যে ছেলেমেয়েদের একটু সময় দিবে। গত ঈদে মাত্র দুই দিন ছুটে পেয়েছে তার মধ্যে লকডাউন চলছে গাড়িঘোড়া বন্ধ, কেমনে বাড়িতে যাবে আবার কেমনে এই অল্প সময়ের মধ্যে ফিরে আসবে এমন নানাবিধ চিন্তা করে বাড়িতে আসা হয়নি।

আব্দুল মতিন সাহেব যে কোম্পানিতে চাকরি করেন সে কোম্পানির বস খুবই ভালো মনের মানুষ। আব্দুল মতিন মনে মনে ভাবছেন বসকে বলে কয়েকদিন ছুটি নিয়ে বাড়িতে গিয়ে ছেলেমেয়েদের একটু সময় দিবে। একদিন সাহস করে বসের রুমে ঢুকে মিষ্টি সুরে সালাম দিয়ে বলতে লাগলেন কেমন আছেন স্যার? আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি? আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। বস- আব্দুল মতিন সাহেব কিছু বলবেন?
আব্দুল মতিন- জি স্যার।
বস- বলেন।
আব্দুল মতিন- সত্যি কথা বলতে কী অনেকদিন থেকে বাড়িতে যাওয়া হয় না, কয়েকটা দিন ছুটি পেলে একটু বাড়িতে যেতাম।
বস- ও আচ্ছা এই কথা কোন সমস্যা নেই। আপনার জন্য আগামী বৃহস্পতিবার থেকে দশ দিন ছুটি মঞ্জুর করা হলো।
আব্দুল মতিন- শুকরিয়া, অনুপ্রাণিত হলাম আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানবেন শ্রদ্ধেয় স্যার।
আব্দুল মতিন সাহেব খুবই আনন্দিত ও অনুপ্রাণিত। হাসিখুশি মন নিয়ে বাড়িতে ফোন করেন। ফোন রিসিভ করলো ছোট মেয়ে আশা। কেমন আছেন বাবা? আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি? আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। আমি আগামীকাল বাড়িতে আসছি। দোয়া করো যাতে সহিসালামতে বাড়িতে পৌঁছাতে পারি।

পরের দিন সকালবেলা বাড়িতে পৌঁছে গেলেন। বাড়িতে এসে একটু ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে ছেলেমেয়েদের পাশে ডাকলেন। আসিফ কাছে এসে বলতে লাগলো বাবা এখন কোন গল্প নয় আপনি একটু ঘুমিয়ে রেস্ট নেন। আমরা রাতে গল্প করবো ইনশাআল্লাহ। আচ্ছা ঠিক আছে।
আব্দুল মতিন সাহেব ঘুম থেকে উঠে গোসল করে মসজিদে নামাজ আদায় করেন। ছেলেমেয়েদের সাথে নিয়ে রাতের খাবার খেয়ে গল্প শুরু করার আগে সবার জন্য ঢাকা থেকে আনা গিফটগুলো হাতে তুলে দেন। ছেলেমেয়েরা গিফট পেয়ে আনন্দিত ও খুশিতে আত্মহারা।
এবার আব্দুল মতিন সাহেব বলতে লাগলেন আচ্ছা সোনামণিরা তোমাদের পড়াশোনা কেমন চলছে। ছোটো মেয়ে আশা জবাব দিলো বাবা তেমন পড়াশোনা হচ্ছে না। কারণ স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় পড়াশোনায় ভাটা পড়েছে।
বাবা- তো এখন কেমনে সময় কাটছে?
মেয়ে- সত্যি বলতে খেলাধুলা, টিভি দেখা মুঠোফোনে গেমস খেলা আর হালকা পাতলা বই নিয়ে বসা এইভাবে সময় কেটে যাচ্ছে বাবা।

বাবা- আচ্ছা তোমরা কি জানো! পড়াশোনা কেমন করতে হয় আর নিজেকে কিভাবে গড়তে হয়?
মেয়ে- না বাবা!
বাবা- তাহলে এবার মনোযোগ দিয়ে শোনো। পড়াশোনা হচ্ছে নিজের কাছে স্কুল কলেজ বন্ধ থাকুক আর খোলা থাকুক এর সাথে পড়াশোনার কোনো সম্পর্ক নেই কারণ স্কুল কলেজ তোমাকে পড়াশোনা বা নিজেকে ভালো করে দিবে না, তোমার ভালোর জন্য তোমাকেই লড়তে হবে। নিজের উদ্যোগে বাড়িতে নিয়মিত পড়তে হবে। স্কুল কলেজ খোলা থাকলে পড়াশোনার অনেক চাপ থাকে। যেমন- স্কুলের পড়া, কোচিং-এর পড়া, বাড়ির পড়া। কিন্তু এখন সব বন্ধ শুধু বাড়ির পড়া। তাই আমি মনে করি বাড়িতে নিজের ইচ্ছে মতো ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পড়াশোনা করতে পারলে পাঠ্যবইয়ের সকল বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব সেই সাথে অন্যান্য ইসলামী জ্ঞান অর্জন বা হাতের কাজও শেখা সম্ভব। আর শুনে রেখো একজন ভালো স্টুডেন্টের জন্য নিয়মিত ৮-১০ ঘণ্টা পড়াশোনা করতে হয়। নইলে ভালো ছাত্র হওয়া সম্ভব নয়। তাই আমার পরামর্শ হচ্ছে ‘পড়াশোনা করো সফল জীবন গড়ো’।
বাবার মুখে পড়াশোনার গুরুত্বপূর্ণ কৌশল শুনে বাবাকে স্যালুট জানায় এবং প্রতিজ্ঞা করে আজ থেকে বাবার কথা মতো নিয়মিত পড়াশোনা করবো এবং নিজেকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

Share.

মন্তব্য করুন