একটি শিশুর প্রথম জগৎ তার পরিবার। পরিবার মানে মা বাবা। বেশি হলে ভাই বোন। তার মানে মা বাবা ভাই বোন মিলেই শিশুর প্রথম জগৎ। কোথাও কোথাও বা কোনো কোনো পরিবারে দাদা দাদী অথবা নানা নানী থাকেন। কখনো খালা মামাও। তবে শহরে বসবাস করা পরিবার খুবই ছোট। অল্প কজন মাত্র সদস্য। শুধু মা বাবা আর শিশুটি মিলেও পরিবার আছে ভূরি ভূরি। আছে কারণ শহরে জীবন চালানো কঠিন। অনেক খরচ। অনেক কষ্ট। তাই শহুরে পরিবারগুলো ছোট হয়ে উঠেছে।
যাক সে কথা। কিন্তু ছোট হলে সুবিধা যেমন আছে। তেমনি আছে অসুবিধাও। সুবিধা ছোট বাসা ছোট খরচ। কম আয়োজনে দিন কেটে যায়। কিন্তু একটি শিশুকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অসুবিধা বেশ। শুধু বাবা মার কাছে একটি শিশু সবকিছু শেখে না। শিখতে পারে না। দাদা দাদী অথবা নানা নানীর সাথে সম্পর্কের অনেক বিষয় থাকে। যা মা বাবার সাথে হয়ে ওঠে না।
একটি শিশুর প্রথম অধিকার হলো তার আসার সময় হলে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা। তার কিছু বিষয় খুব জরুরি। যা বড়দের জিনিস দিয়ে চলে না। পোশাক এবং পরিবেশ দুটোই উপযুক্ত করে তোলা জরুরি। শিশুর একটি সুন্দর নাম রাখা বাবা মার কর্তব্য। একইসাথে সুন্দর নাম পাওয়া শিশুর অধিকার। নামটি অর্থবহ হতে হবে। শুনতে ভালোও লাগতে হবে। যাচ্ছে তাই নাম রাখা মোটেই উচিৎ নয়।

একটি শিশুর নাম রাখা হলো- তুকাজ্জেবান। এর অর্থ হলো মিথ্যা প্রতিপন্ন করা। জিজ্ঞেস করা হলো কেনো এই নাম? বাবা বললেন- আল্লাহ কোরআন শরীফে এতবার শব্দটি বলেছেন, নিশ্চয় এটি গুরুত্বপূর্ণ। নইলে এতবার কি বলতেন! হায়রে যুক্তি! হায়রে জ্ঞান! আবার কেউ নাম রাখেন ভোলা। কেউ রাখেন হাবা। কেউবা রাখেন আবুল। পটল রাখেন কেউ। কারো নাম- মরণ। একজনের নাম কালাচাঁদ মৃত্যু। একজনের নাম বাঘা। এধরনের নাম রাখা মোটেই উচিত নয়। শিশু অধিকারের প্রতি চূড়ান্ত অবহেলা এটি।
যতেœর সাথে লালন পালন করাও শিশুর অধিকার। অযত্ন অবহেলায় বেড়ে উঠলে শিশু ভালো মানুষ হয়ে বেড়ে উঠতে পারে না। শরীর সুঠাম হয় না। রোগশোকে বেড়ে ওঠে। মলিন মুখ থাকে তার। চিন্তাশক্তি সুগঠিত হয় না।
বয়স অনুযায়ী সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে দেয়াও শিশুর অধিকার। এমন খাবার নয় যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এমন খাবারও নয় যার মধ্যে পুষ্টিগুণ নেই। এখন তো এমন এক অবস্থা যে ফাস্টফুড অভ্যস্ত হয়ে যায় শিশু। ফাস্টফুড ছাড়া চলেই না। বার্গার, পিজ্জা, চিকেন ফ্রাসহ নানাধরনের লোভনীয় খাবার সাজিয়ে রাখে দোকানগুলোয়। একটি শিশু দেখেই কেমন লোভাতুর হয়ে ওঠে। খেতে চায় এসব বাহারি ফাস্টফুড। অনেকেই এসব খাবারে আসক্ত হয়ে যায়। সাথে নানাধরনের পানীয়। এসব পানীয়ের নাম দেয়া হয়েছে- কোল্ড ড্রিংকস অথবা- সফট ড্রিংকস! ইস কি যে জঘন্য এসব পানীয়। এতে ঘন চিনি, স্যাকারিন সঙ্গে এলকোহল। ফাস্টফুডের সাথে এসব পানীয় খেয়ে অতি মোটা হওয়ার একটি সুযোগ হয়ে যায়। গালের মাংস বাড়তে থাকে। পেট বড় হতে থাকে। শরীর ফুলতে থাকে। ফলে শিশু অলস হয়ে যায়। অতিরিক্ত ঘুম এবং শুয়ে থাকার প্রবণতা সৃষ্টি হয়! বুদ্ধি কমতে থাকে। কাজে আনন্দ থাকে না। এমনকি খেলায়ও আনন্দ পায় না। মিশতে পারে না বন্ধুর সাথে। সুতরাং উপযুক্ত খাবার এবং খাদ্য পাওয়া শিশুর অধিকার।

পরিবারে আরেকটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অধিকার হলো- শিশুকে নৈতিক শিক্ষা দেয়া। ভালো কাজের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া। ভালো কাজের মানসিকতা তৈরি করে দেয়া। সত্য বলা এবং সত্যের সাথে থাকার বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা। মিথ্যা পরিহার করা। মিথ্যা থেকে দূরে থাকার ইচ্ছে গড়ে দেয়া। খারাপ কাজ না করার মন তৈরি করে দেয়া। বড়দের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা করতে শেখানো। ছোটদের প্রতি স্নেহ এবং ভালোবাসার বিষয়ে সজাগ করা। আর সমবয়সীদের সাথে ভালো ব্যবহার করা। পিতা-মাতার সাথে সদাচারের গুণাবলি সৃষ্টি করে দেয়া। প্রতিবেশীর সাথে সুন্দর আচরণ করা। শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোর বিষয়ে সচেতন করা। অসহায়কে সাহায্য করা। গরিব-দুঃখীর প্রতি দয়া করার দায়িত্ব সম্পর্কে বলা।
কোনো বিষয়ে লোভ না করা। অপ্রয়োজনীয় কোনো কাজে জড়িয়ে না যাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা।
সময়ের যথাযথ ব্যবহার শিখিয়ে দেয়াও শিশুর প্রতি পরিবারের কর্তব্য।
কাউকে তিরস্কার না করা। কারো প্রতি জুলুম এবং অন্যায় না করা। অন্যায়ভাবে কোনো কিছু গ্রহণ না করা।
অকারণ কাউকে বিরক্ত না করা। সময়ের কাজ সময়ে করার অভ্যাস গড়ে দেয়া জরুরি।
কিভাবে সুন্দর জীবন গড়ে তুলতে হয় সে শিক্ষাও দিতে হবে শিশুকে। কিভাবে মানুষের সাথে মিশতে হয়। কিভাবে বন্ধুকে চিনতে হয় এবং সুন্দর ব্যবহার দিয়ে জয় করার কৌশলও শেখাতে হয়। এসব শিক্ষা পাওয়া শিশুর অধিকার।
এ পৃথিবীতে কেনো আসে মানুষ! মানুষের স্রষ্টা কে? কেমন তাঁর বিশালত্ব! বিরাটত্ব! তাঁর সাথে মানুষের সম্পর্ক কী এসব অবশ্যই জানাতে হবে শিশুকে।

একজন মানুষের মূল কাজ কী। এবং সে কাজ করার পদ্ধতি কী এটি জানাও শিশুর অধিকার। সৃষ্টি জগতের সাথে মানুষের সম্পর্ক কী। কিভাবে সৃষ্টি জগতে মানুষ শ্রেষ্ঠ। কেনো মানুষ মৃত্যুবরণ করে। মৃত্যুর পর কোথায় যায় মানুষেরা। মৃত্যুর পরের জীবন কেমন এসব ধারণা এবং এ বিষয়ে যথার্থ শিক্ষা পাওয়া শিশুর অধিকার।
লেখাপড়ার অধিকার শিশুর জন্মগত। এ অধিকার পরিবারের প্রতি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
সর্বোপরি সমাজের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে শিশুকে গড়ে দেয়া পরিবারের দায়িত্ব। বিভিন্ন ভয়-ভীতি থেকে মুক্ত থাকার অধিকার আছে শিশুর। নিরাপদ জীবনের অধিকারও আছে তার। মোট কথা পরিবার হলো একটি শিশুর প্রথম বিদ্যালয়। এবং এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যালয়। পরিবার থেকে মৌলিক শিক্ষা না পেলে সে শিশু ভালো মানুষ হয়ে বেড়ে উঠতে পারে না। সমাজ এবং দেশের ভালো নাগরিক হতে হলেও পরিবারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আর পরিবার থেকে এসব শিক্ষা পাওয়া হলো শিশুর অধিকার!

Share.

মন্তব্য করুন