মেরিলিন স্পেস স্টেশনের কন্ট্রোল রুমে বসে মনিটরের স্ক্রিনের দিকে সুতীক্ষè দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ক্যাপ্টেন হিলিস ও অন্য সবাই। যেন অন্য কোন এলিয়েনের স্পেসশিপ তাদের গ্রহে ঢুকতে না পারে। গতকাল তাদের গ্রহে বিলজিন গ্রহের একদল এলিয়েন হামলা করেছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল মেরিন গ্রহ দখল করা। কিন্তু তারা মেরিনদের উন্নত প্রযুক্তির কাছে টিকতেই পারেনি। হার মেনে চলে যায় তাদের গ্রহে।
মেরিন গ্রহ হলো জিমটন ছায়াপথের সবচেয়ে সুন্দর একটি গ্রহ। মেরিনরা অনেক বেশি বুদ্ধিমান। উন্নত সব প্রযুক্তি আছে তাদের কাছে। এসবের জন্য মেরিন গ্রহকে অন্য গ্রহের এলিয়েনরা দখল করতে চায়। কিন্তু মেরিনদের সংঘবদ্ধ লড়াইয়ের কাছে সবাই হার মেনে চলে যায়। ঠিক গতকালও এরকম হামলা করা হয়েছিল। কিন্তু তারাও মেরিনদের কাছে হার মেনে চলে যায়। তাই আজ থেকে মেরিন গ্রহে বেশি করে সিকিউরিটি সিস্টেম বসানো হয়েছে। যেন কোন স্পেসশিপ তাদের গ্রহের কাছাকাছি আসতে না পারে।
বেশকিছু দিন পর। ক্যাপ্টেন হিলিস ও অন্য সবাই কন্ট্রোল রুমে বসে আছে। এমন সময় মনিটরে একটা ঝাপসা কিছু দেখতে পেলো জেনারেল সেক্রেটারি ড. কানিস বিং। সবার চোখ পড়লো মনিটরের স্ক্রিনে।
মনে হচ্ছে বিশাল বড় একটা স্পেসশিপ তাদের গ্রহের কাছে আসছে। তক্ষুনি অ্যালার্ম বেজে উঠলো। তার মানে কোন স্পেসশিপ তাদের গ্রহ দখল করতে আসছে। ক্যাপ্টেন হিলিস হাই অ্যালার্ট জারি করে দিলো। স্পেসশিপটা আরো কাছাকাছি চলে এলো। স্পেসশিপটা দেখার পরে সবার চোখ কপালে উঠে গেল। এতো বড় স্পেসশিপ তারা এর আগে কখনো দেখেনি।

ক্যাপ্টেন হিলিস পাইলটদের মিসাইল দিয়ে আক্রমণ করতে বললেন। পাইলটরা মিসাইল লোড করল। ক্যাপ্টেন হিলিস ফায়ার বলার সাথে সাথে মিসাইল ছুড়লো স্পেসশিপকে লক্ষ্য করে। কিন্তু মিসাইল স্পেসশিপের কাছেই পৌঁছাতে পারল না। স্পেসশিপ থেকে বেরিয়ে আসা লেজার রশ্মিতে ধ্বংস হয়ে গেল সব মিসাইল।
ক্যাপ্টেন হিলিস আবারও মিসাইল লোড করতে বললেন পাইলটদের। আবার পাইলটরা মিসাইল লোড করল। ক্যাপ্টেন হিলিস ফায়ার বলার সাথে সাথে মিসাইল ছুড়ে মারলো পাইলটরা। আবারো ব্যর্থ হলো ক্যাপ্টেন হিলিসের পাইলটরা। স্পেসশিপ থেকে পাল্টা আক্রমণ করল পাইলটদের উপর। সাথে সাথে সব পাইলট মারা গেল।
ক্যাপ্টেন হিলিস পড়লো মহাবিপদে। আর এক ঘণ্টা পরেই সুরক্ষা প্রাচীর ভেদ করে স্পেসশিপ মেরিন গ্রহে ঢুকে পড়বে। আর একবার ঢুকে পড়লেই পুরো মেরিন গ্রহ তছনছ হয়ে যাবে। ঠিক তখনই ক্যাপ্টেন হিলিসের মনে পড়লো তার বাবা স্পেস চিফ জেনারেল হিলিংসনের কথা।
তিনি মরার আগে ক্যাপ্টেন হিলিসকে বলেছিল, ‘ও আসবে। একদিন ঠিকই আসবে। ও মেরিন গ্রহসহ পুরো জিমটন ছায়াপথ তছনছ করতে একদিন আসবেই।’
ক্যাপ্টেন হিলিস জানতে চেয়েছিল, ‘ও কে বাবা? তুমি কার কথা বলছ?’
জেনারেল হিলিংসন তার কথা বলতে যেতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
ক্যাপ্টেন হিলিসের মনে পড়লো তার বাবার ডায়েরির কথা। যেখানে তিনি সবকিছু লিখে রাখতেন। নিশ্চয়ই এর কথাও বাবা লিখে রেখেছেন। এই ভেবে ক্যাপ্টেন হিলিস জেনারেল ড. কানিস বিংকে কমান্ডের দায়িত্ব দিয়ে খুঁজতে গেল তার বাবার সেই ডায়েরি।

কিছুক্ষণ ঘাঁটাঘাঁটির পর খুঁজে পেল বাবার সেই ডায়েরি। এক এক করে ডায়েরির পাতা উল্টোতে থাকল। তিরিশ নম্বর পাতায় এসে ক্যাপ্টেনের চোখ কপালে উঠে যায়। ওখানে লেখা আছে- মেরিন গ্রহে একদিন মহাকাশের সবচেয়ে ভয়ানক এলিয়েন ডিমক্রাস হামলা করবে। আমাদের কাছ থেকে একটা শক্তিশালী অস্ত্র নেওয়ার জন্য। ওই অস্ত্র দিয়ে ও অনেক কয়টা গ্যালাক্সি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। আর ওই অস্ত্র দিয়েই ওর মৃত্যু হবে। তার স্পেসশিপ হবে পাঁচ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি। ওর কাছে মেরিনদের কোন অস্ত্রই টিকতে পারবে না। ক্যাপ্টেন হিলিস এবার সব বুঝে গেল। সেদিন মৃত্যুর আগে বাবা তাকে ডিমক্রাসের কথাই বলতে চেয়েছিলেন। সাথে সাথে ক্যাপ্টেন হিলিস সবাইকে বিষয়টা জানিয়ে দিল। ক্যাপ্টেন হিলিসের কথা শুনে সবাই ভয়ে অস্থির হয়ে গেল। কিন্তু ক্যাপ্টেন হিলিস দমবার পাত্র নয়। সে সবাইকে লড়াই চালিয়ে যেতে বলল।
তারপর ক্যাপ্টেন হিলিস ভাবলো, ‘বাবা জানতেন ডিমক্রাস এখানে আসবে। তাকে আমাদের অস্ত্র দিয়ে মারতে পারব না কিন্তু ওই অস্ত্র দিয়ে তো মারতে পারব। নিশ্চয়ই বাবা এটা ডায়েরিতে লিখে রেখেছে।’ আবার ডায়েরির পাতা উল্টোতে লাগলো ক্যাপ্টেন হিলিস। পঁয়ত্রিশ নম্বর পাতায় মিললো তার সমাধান। ওখানে লেখা আছে, ভয়ানক এলিয়েন ডিমক্রাসকে মারতে হলে নিলিন গ্রহের মহাকাশ বিজ্ঞানী ড. নিলকান এর কাছে যেতে হবে। তার কাছেই আছে ভয়ানক এলিয়েন ডিমক্রাসকে মারার অস্ত্র।

ওদিকে ডিমক্রাসের স্পেসশিপ মেরিন গ্রহে ঢুকতে আর মাত্র আধঘণ্টা বাকি। ক্যাপ্টেন হিলিস সবার উদ্দেশ্যে বলল, ‘তোমরা আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শোন। এই ভয়ানক ডিমক্রাসকে মারতে হলে আমাদের নিলিন গ্রহের অস্ত্র লাগবে। তোমরা যতটুকু পারো চালিয়ে যাও। আমি নিলিন গ্রহ থেকে ওই অস্ত্রটা নিয়ে আসবই।’
এই বলে ক্যাপ্টেন হিলিস তার স্পেসশিপ নিয়ে নিলিন গ্রহের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে গেল নিলিন গ্রহের মহাকাশ বিজ্ঞানী ড. নিলকানের কাছে। ক্যাপ্টেন হিলিস তাকে সব খুলে বলল। ড. নিলকান বলল, ‘আমি জানতাম এরকমটাই হবে। তোমার বাবা আমার খুব ভালো বন্ধু ছিল। এই অস্ত্রটা তোমার বাবার। রাতদিন পরিশ্রম করে তোমার বাবা এটা তৈরি করেছিল। এর শক্তি অনেক। এক নিমিষেই যেকোনো ছায়াপথকে ধ্বংস করে দিতে পারে। ডিমক্রাসের বাবা ডিলিংগাসও এই অস্ত্রটার জন্য একবার তোমাদের গ্রহ আক্রমণ করেছিল। কিন্তু তোমার বাবার বুদ্ধির কাছে হার মেনে যায় ডিমক্রাসের বাবা ডিলিংগাস। তোমার বাবা জানতো অস্ত্রটা মেরিন গ্রহে সুরক্ষিত নয়। তাই তিনি আমার কাছে রেখে গিয়েছিলেন। এখন এই অস্ত্রটা যদি ডিমক্রাসের কাছে যায় তাহলে পুরো জিমটন ছায়াপথ ধ্বংস হয়ে যাবে। এই অস্ত্র দিয়ে ডিমক্রাস যেমন পুরো জিমটন ছায়াপথ ধ্বংস করতে পারে। তেমনি এই অস্ত্র দিয়ে ডিমক্রাসকে ধ্বংস করা যাবে। অস্ত্রটা লোড করে ছুড়তে পারলেই তার স্পেসশিপসহ সে ধ্বংস হয়ে যাবে। তুমি এটা জলদি করে নিয়ে যাও। ধ্বংস করে দাও ভয়ানক ডিমক্রাসকে। তুমিই পারবে মেরিন গ্রহ আর পুরো জিমটন ছায়াপথ রক্ষা করতে।’

ক্যাপ্টেন হিলিস ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল আর মাত্র দশ মিনিট বাকি। অস্ত্রটা নিয়ে রওনা দিল মেরিন গ্রহের দিকে। মেরিন গ্রহের কাছাকাছি এসে ঘড়িতে দেখল আর মাত্র এক মিনিট বাকি। ডিমক্রাসকে যদি ধ্বংস করা না যায় তাহলে পুরো মেরিন গ্রহসহ জিমটন ছায়াপথ ধ্বংস হয়ে যাবে। ক্যাপ্টেন হিলিস স্পেসশিপের গতি বাড়িয়ে ডিসক্রাসের স্পেসশিপের কাছে গেল। আর মাত্র তিরিশ সেকেন্ড। অস্ত্রটা আগে থেকেই লোড করে রেখেছিল সে। ক্যাপ্টেন হিলিস বাবার নাম করে অস্ত্রটা ছুড়ে মারল ডিমক্রাসের স্পেসশিপকে লক্ষ্য করে। আর সাথে সাথে ডিমক্রাসে স্পেসশিপ ধ্বংস হয়ে গেল। ক্যাপ্টেন হিলিসের জন্য রক্ষা পেল পুরো মেরিন গ্রহসহ জিমটন ছায়াপথ। পুরো মেরিন গ্রহজুড়ে উৎসবের রোল পড়ে গেল।

Share.

মন্তব্য করুন