আমার শিশু সন্তানের জন্য সব সময় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকতাম, সেটা আজ খুব মনে পড়ছে। মনে পড়ছে, কারণ আমার সেই শিশু সন্তানটি বড় হয়ে গেছে। মানে, সে আর শিশু নেই। ১৮ বছরের বেশি বয়স হলেই আর কোনো সন্তানকে শিশু হিসেবে গণ্য হয় না। এটাই জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক কনভেনশনে নির্ধারিত বয়স-সীমা। সে-অনুযায়ী আমার শিশু সন্তানও বড় হয়ে আমাদের ¯েœহ-ভালোবাসা, আদর-সোহাগ আর আমাদের নিত্যদিনের পরিষ্কার-পরিচর্যার আওতার বাইরে চলে গেছে। তারা পরিপূর্ণ ‘মানুষ’ হয়ে গেছে। ফলে এখন আর তাদের জন্য বাবা-মায়ের সেই রকম পরিচর্যার দরকার পড়ে না। তারা অনেকটাই স্বাধীন, নিজের পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে জীবন ও জগৎ সম্পর্কে জানছে, পরখ করছে তার সব রকম রূপ আর চেখে দেখছে সে-সব। কিন্তু তারা যখন শিশু ছিলো তখন তারা বাবা-মায়ের আঁচলের নিচে থাকতো। তারাই লালন-পালন করে শিশুকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে।
এটাই হচ্ছে আমাদের দেশের বাবা-মায়ের নিত্য-বাস্তব কাজ। মায়া-মমতায় ভরা মায়ের সেবাই তাদের প্রথম ও প্রধান পাওয়া। এ-কারণেই জাতিসংঘের শিশু অধিকার সম্পর্কিত ধারাগুলোতে ফ্যামিলির দায়িত্ব-কর্তব্য আর তাদের জন্মগ্রহণের ওপর জোর দেয়া হয়েছে।

কিন্তু আমরা যারা সাধারণ মানুষ, তাদের সবাই কি জানি, জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক নীতিমালা? আমাদের দেশের সরকার যে সেই কনভেনশনে স্বাক্ষর করে শিশুদের সঠিকভাবে গড়ে তোলার দায়িত্ব নিয়েছে, সেটা দেশের সচেতন শিক্ষিতদের কত জন জানেন? সে-সব মেনে চলার প্রশ্নটি পরে আসছে। আসলে শিশুর প্রতি, নিজের বা নিজেদের শিশুর প্রতি বাবা-মা হিসেবে কেমনতর আচার-আচরণ করতে হবে, তা বলে দেয়া হয়েছে। ঠিক ওই সব শিশুরা হাঁটতে, পড়তে শেখার আগে থেকেই তাদের বেড়ে-ওঠার ব্যাপারে পূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হয় সরকারকে। জন্মের পরই যাতে একটি শিশু পুষ্টিকর খাদ্য পায়, সে যাতে সুস্থ-সবল দেহে ও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতেই পরিবারের পাশাপাশি সরকারকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। তার মানে ফ্যামিলি বা পরিবারের পরই শিশুর দায়িত্ব সরকারের। এই দুই পক্ষই শিশুর কাছে ‘বাবা-মা’। প্রথম পক্ষ জন্মদাতা বা বায়োলজিক্যাল বাবা-মা, দ্বিতীয় পক্ষ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অভিভাবক হিসেবে বাবা-মা। মা যেমন তাকে জন্ম দিয়েছেন, বাবা যেমন তার সন্তানের পরিচর্যায় আত্মনিয়োগ করেছেন এবং ব্যয় করেছেন তার হাড়ভাঙা পরিশ্রমের অর্থবিত্ত, তেমনি সরকার (দ্বিতীয় পর্যায়ের মা-বাবা) তার সন্তানদের পড়াশোনা, চিকিৎসা, শেল্টার বা বাসস্থান, বস্ত্রসহ অন্যান্য বিষয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত। সেই দায়িত্ব পালন করা হলেই মূলত একটি শিশু একজন পরিপূর্ণ সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।

এটা হচ্ছে জাতিসংঘের কনভেনশনের থিউরিজাত বিষয়। প্র্যাকটিক্যালি ওই শিশুরা সামাজিক দায়িত্বপ্রাপ্ত (মা-বাবা) সরকারের পক্ষ থেকে কেমনতর পরিচর্যা পায়? সেটাই আসল বিষয়। বলা হয় শিশুরা দেশের আগামী দিনের ভবিষ্যৎ নেতা। জাতিগঠনের নিয়ামক শক্তির উৎস। তারা কি রকম নিয়ামক শক্তি হিসেবে গড়ে ওঠে সেটা দেখা যাক।

শিশু অধিকারের ১২টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত। তবে তার মধ্যে ৪টি বিষয় অবশ্য (কোর প্রিন্সিপলস) পালনীয় করা হয়েছে।
– বৈষম্যহীনতা (ছেলে ও মেয়ে শিশুর মধ্যে বৈষম্য মনোভাব পোষণ না করা বা করা যাবে না। খাওয়া-দাওয়া, পরিচর্যায় কোনোরকম ঊনিশ-বিশ করা যাবে না)
– সন্তানের আগ্রহের প্রতি সজাগ বা সচেতন থাকা
–  শিশুর জীবনের নিরাপত্তার অধিকার কায়েম করা।
– বাঁচার এবং শিশুর মানসিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, নৈতিক ও সুস্থভাবে বেড়ে ওঠা বা তাদের সার্বিক উন্নতি বা উন্নয়ন সাধন।

কোর প্রিন্সিপলের এই চারটি বিষয় আমাদের শিশুদের জন্য আমাদের মা-বাবা, সরকার পালন করে কি না। বাকি ৮টি অধিকার নিয়ে কথা নাই-বা তুললাম।
আমাদের সমাজে মেয়ে শিশুকে ‘হীন’ চোখে দেখা হয়। ছেলে শিশুকে দেখা হয় বাবা-মায়ের ভবিষ্যতের খুঁটি হিসেবে। মানে বাবা-মা যখন বুড়ো হয়ে যাবেন, তখন ছেলেরাই তাদের লালন-পালন করবে- এই মন-মানসিকতার জন্য তারা ছেলে শিশুর প্রতি বেশি দরদ ঢালেন, আদরযত্ন করেন, বেশি খাবার দেন, পরিমাণে মেয়ে শিশুর চেয়ে বেশি খাদ্য দেয়া হয় ছেলে শিশুকে। অন্য দিকে মেয়ে শিশুর ব্যাপারে তেমন মনোযোগ তাদের থাকে না। খাবারও পরিমাণে কম দেওয়া হয় মেয়ে শিশুকে। সে-কারণেই শিশুর অধিকারের প্রথম শর্তই আরোপ করা হয়েছে ‘ননডিসক্রিমিনেশন’ বা বৈষম্যহীনতাকে। এই বাস্তবতা হয়তো মহানগর ঢাকায় তেমন প্রকট নয়। বিশেষ করে মহানগরের উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির পরিবারগুলো এ-বিষয়ে সচেতন। ধারণা করি, জাতিসংঘের শিশু অধিকার সম্পর্কে এরা পুরোপুরি জানেন। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা মানেন না। লক্ষ্য করা যায় যে শিশু নির্যাতনের বিষয়টি সমাজের সব এলাকাতেই বিদ্যমান। তাদের মনোভাব ‘আমার শিশুকে আমি মারতে পারবো না কেনো? মারতে পারবো না বা তাকে শাসন করতে পারবো না কেনো?
এই মনোভাব বাংলাদেশের প্রায় সব শ্রেণির পরিবারেই আছে। কিন্তু জাতিসংঘ শিশু অধিকারে বলা হয়েছে, না, সেটা করা যাবে না। ‘বি প্রটেকটেড ফ্রম ম্যালট্রিটমেন্টস, নেগলেক্ট, অ্যাবিউজ অ্যান্ড ডিগ্রেডেশন। অর্থাৎ তাকে বা তাদের সাথে কেউ বা কোনো ব্যক্তির দুর্ব্যবহার থেকে রক্ষা করা, তাদের উপেক্ষা বা অবহেলা করা যাবে না। তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার, বা গালাগালি করা যাবে না।
ব্যাসিক নিউট্রেশন বা পুষ্টিকর খাদ্য, শেল্টার বা সুরক্ষিত আবাস, স্বাস্থ্য পরিচর্যা দিতে হবে, সামাজিক সেবা ইত্যাদির নিশ্চয়তা দিতে হবে।

এখন দেখতে হবে আমাদের শিশুরা কতটা খাদ্য পায়, কতটা সুরক্ষিত থাকার বাড়ি বা ঘর পায়? পড়াশোনোর জন্য স্কুল পায়? স্বাস্থ্য পরিচর্যার বা চিকিৎসা পায়? পোশাক পরতে পায়? এ-গুলো তাদের মৌলিক অধিকার। বাংলাদেশ সরকার শিশুদের জন্য এই সব পূরণের অঙ্গীকার করেই স্বাক্ষর করেছে জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদে। কিন্তু সরকার তার রাজনৈতিক অঙ্গীকার, শিশুর প্রতি তার মানসিকতার বিকাশ করতে চেষ্টা করছে, কিন্তু এখনো সফল হতে পারেনি। এক্ষেত্রে সরকারের সীমাবদ্ধতা রয়েছে ঠিক, কিন্তু তা যদি শিশুর মৌলিক অধিকার হরণ করে থাকে, তাহলে তাকে তো মেনে নেয়া উচিত নয়।
আমাদের শিশুদের অধিকাংশেরই বসবাস গ্রামে। দেশের ৮৫ হাজার গ্রামের প্রত্যেকটিতে প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। ফলে শিশুরা তাদের মৌলিক শিক্ষা অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। গ্রামের শিশুদের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক নেই প্রতিটি গ্রামে। ফলে সেই শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে রোগ-শোকের চিকিৎসাসেবা থেকে। এটাও তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চনা। আমাদের গ্রাম বাংলার সব শিশুই কি পরনের বস্ত্র বা কাপড় কেনার সামর্থ্য রাখে? তারা মানে তাদের পরিবার-পরিজন কি শিশুদের কাপড় কিনে দিতে পারে? না, পারে না। অধিকাংশ শিশুই নেংটা জীবনের শিকার হয়। আর তাদের মাথা গোঁজার কি অবস্থা? তালপাতার ছাওনি দিয়ে ছাউয়া কুঁড়েঘর? নাকি খড়-কুটোর ছাউনি দেয়া কাঁচামাটিতে তারা ঘুমায়?
তাদের জন্য অঙ্গীকৃত মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের ওয়াদা দেয়া হয়েছে, সেখানে রাজনৈতিক সরকার সেই অধিকার কায়েমের কি কোনো উদ্যোগ আয়োজন অব্যাহত রেখেছেন? আমরা জানি সরকার বলবেন, তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ভবিষ্যতের নাগরিকদের গড়ে তোলার কাজে। কিন্তু গত ৫০ বছরে কি সেই প্রচেষ্টার সুফল মিলেছে? গত ৫০ বছরেও কেন শিশুর মৌলিক অধিকার কায়েম করা গেলো না?

এর একটাই জবার বা উত্তর, না -সরকার সেটা করতে পারেননি। নানা প্রতিকূলতার দরুন শিশুর মৌলিক অধিকার সর্বত্র কায়েম করা যায়নি। সরকারের সীমাবদ্ধতার প্রথমটি হচ্ছে এ-খাতে বাজেটের ঘাটতি বা কমতি। সরকার এই খাতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করতে পারেন না। শিশুর মৌলিক অধিকার কায়েমে উন্নয়নের রোডম্যাপের স্তরে স্তরে বাস্তবায়নের কাজটির ‘নীলনকশা’ আছে কি না, আমার জানা নেই। সেই নীলনকশা কি উপর থেকে নিচের দিকে গেছে? নাকি নিচ থেকে উপর দিকে শিশুর মানবিক-মানসিক মৌলিক উন্নয়নের কাজটি করার চেষ্টা হচ্ছে, সেটা জাতিকে জানানো প্রয়োজন। এ-কাজটি দেশের শাসনব্যবস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আগামী দিনের নাগরিকরাই দেশের সব সেক্টরের নেতৃত্বে আসবে। এটাই অবধারিত। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কায়েম থাকলে পারিবারিক শাসনতন্ত্র ভেঙে যেতে বাধ্য। আর গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কায়েম বা চালু না হতে দিলে কর্তৃত্ববাদী/ টাইরান্ট শাসনই বজায় থাকবে, যেখানে দেশের শিশুর ভবিষ্যৎ ও তাদের মৌলিক অধিকার কায়েমের কোনো চিন্তা থাকবে না। আমরা গত ৫০ বছরে প্রতিটি গ্রামে একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করতে পারিনি। কারণ আমাদের সরকার সেটা করতে চাননি। আজো সেই মনোভাবই বিদ্যমান সরকারি মহলে।

‘রাইট টু গুড কোয়ালিটি এডুকেশন’ বলে যে কথাটি আছে, তার বাস্তবায়নের কথা বাদ দিলাম। গুড কোয়ালিটি এডুকেশন নয়, স্বাভাবিক ও সাধারণ কোয়ালিটির শিক্ষাটাই যেখানে দেয়ার আয়োজন অত্যন্ত নাজুক, সে-দেশে আমরা আর কি আশা করতে পারি? পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ শিশুর জন্য অপরিহার্য। কিন্তু এই মহানগরেও কি তা আছে? এই মহানগর কি একটি সুস্থ বাসযোগ্য পরিবেশ আছে, যা আমাদের শিশুর জন্য প্রয়োজন? সেটা ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী বারিধারার সাথে দেশের প্রতিটি মহানগরে ও জেলা শহরের মধ্যে তফাত কতটা? গ্রামের কথা নাইবা বললাম। তাদের বসবাসের পরিবেশের কথা নাই বা তুললাম। অর্থাৎ শিশুর মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের সর্বত্রই ঘাটতি ন্যক্কারজনক স্তরে বিদ্যমান। এ-নিয়ে রাজনৈতিক সরকারের কোনো রকম মনোবেদনা নেই। সুস্বাস্থ্য রক্ষার যে নীতি আছে শিশুর জন্য তার ধারে-কাছেও নেই সরকার। রেসপনসিবিলিটি বা দায়িত্ব-কর্তব্য তাদের আছে, সেটা মনেই হয় না। তাহলে শিশুর নিরাপত্তা বিধানের প্রশ্নটি কি আমরা তুলতে পারি? যেখানে ভালো আবাস, ভালো খাবার, ভালো চিকিৎসা, ভালো শিক্ষা, ভালো কাপড়ের কোনো কার্যক্রমই বলতে গেলে নেই, যা আছে তাতে সরকারের রেসপনসিবিলিটির কোনো বালাই নেই, সেখানে এ-সব নিয়ে কথা বলা বা আলোচনার কোনো মানে হয় না। আমরা প্রতি বছরই জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ নিয়ে আলোচনায় মত্ত হই, সরকারের দোষ-ত্রুটি নিয়ে সমালোচনা করি, কিন্তু সমাজ বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিত থেকে, নিজেদের দায়িত্ব-কর্তব্য নিয়ে একবারও কথা বলি না। প্রত্যেক শিক্ষিত সুযোগপ্রাপ্ত নাগরিকের দায়িত্ব আছে শিশুর মৌলিক অধিকার তাদের চাহিদা পূরণে দায়িত্ব পালনের। কারণ ওদের ঠকিয়েই সুযোগপ্রাপ্তরা যে আজকে সমাজের কেউ-কেউটা হয়ে উঠেছেন, হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক-মোক্তার হতে পেরেছেন, সেটা বুঝে, গ্রামের শিশুদের জন্য কিছু একটা করা উচিত।

বাংলাদেশ এখন এমন এক অর্থনৈতিক ট্রেনের যাত্রী যাকে কেবল সামনের দিকেই নিয়ে যাবে। এই দেশের হাজার হাজার ইন্ডাস্ট্রির মালিকরা হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। তারা ইচ্ছা করলেই প্রতিটি গ্রামে একটি করে প্রাইমারি স্কুল প্রতিষ্ঠা করে তার পরিচালনার ভার বহন করতে পারেন। সরকার এদের দিয়ে সে কাজটি করাতে পারেন। গার্মেন্টস এর মালিকসহ অন্যান্য শিল্পের মালিকদের এই খাতে বিনিয়োগ করতে বাধ্য করা হোক। কোনো মালিক যদি এটা না করে তাহলে তার ইন্ডাস্ট্রিয়াল লাইসেন্স বাতিল করে দেবার আইন করা হোক। এবং সেই ব্যক্তি আর কখনোই এই সেক্টরের কোনো লাইসেন্স পারে না। ইন্ডাস্ট্রি করে ধনবান হবেন, দামি গাড়ি হাঁকাবেন অথচ দেশের গরিব মানুষের শিশুদের জন্য তাদের সামাজিক কর্তব্য-দায়িত্ব পালন করবেন না, এটা হতে পারে না। সরকারকে এটা বুঝতে হবে এবং তার কাঁধ থেকে প্রাইমারি স্কুল স্থাপনের দায়িত্ব সামাজিক শক্তির ওপর ন্যস্ত করতে হবে।

আর যদি এ-পথ অবলম্বনে সরকার গড়িমসি করে, তাহলে বুঝতে হবে উভয়পক্ষই একই গো-শালার অন্ধকারে বসে আছে। শিশু-কিশোরদের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন সব পদক্ষেপের আগে নেয়া হলে আমাদের অর্থনৈতিক দুরবস্থার অবসান হতো। দেশ লাভ করতো একটি কর্মদক্ষ জনশক্তি যারা স্ব স্ব ক্ষেত্রে শিক্ষিত ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এটা তো সরকার ও সংশ্লিষ্ট পক্ষ মানবেন যে গার্মেন্টস সেক্টরের বিভিন্ন কাজে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তির অভাব রয়েছে। সরকার চাইলে শিশু-কিশোরদের (১৮ বছরের কম বয়সীদের) প্রশিক্ষিত করে ওই ঘাটতি যেমন কমিয়ে আনতে পারতেন, তেমনি বিদেশি ৩৬ হাজার জনশক্তির বিপরীতে যে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে, তাও রোধ করা যেতো। আজকে যে দেশের লাখ লাখ যুবক বেকার, তার পেছনেও রয়েছে সরকারের অদূরদর্শী পরিকল্পনা। সরকারকে সেক্টর ধরে জনশক্তি গড়ে তুলতে হলে, তার বাস্তবায়ন রোডম্যাপ নকশা আঁকতে হবে। বাগাড়ম্বর, রাজনৈতিক বাগাড়ম্বর ও বানোয়াট তথ্যে বিভ্রাট সৃষ্টি না করে পরিকল্পিতভাবে শিশুদের মৌলিক অধিকার কায়েম করতে হবে। এর অন্য কোনো বিকল্প পথ নেই।

Share.

মন্তব্য করুন