বন্ধুরা, যদি তোমাদেরকে বলি- তোমাদের মাকে নিয়ে একটি গল্প লিখতে হবে, কয় লাইন লিখতে পারবে? তোমরা কি জানো একজন ব্যক্তি ‘মা’ নামে একটি উপন্যাস লিখে সারা পৃথিবীতে জনপ্রিয় হয়ে আছেন? তিনি ম্যাক্সিম গোর্কি।
ম্যাক্সিম গোর্কির ছোটবেলাটা ছিল খুবই বেদনাদায়ক। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তার বাবা-মারা যায়। মা দ্বিতীয় বিয়ে করে নিজের সুখের পথ বেছে নেন। ম্যাক্সিম গোর্কি বড় হতে থাকেন তার বদমেজাজি দাদার কাছে। দাদা তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়ে ছোটখাটো কাজে লাগিয়ে দেন। মুচির দোকানে জুতা পালিশ, ছবি আঁকিয়ের দোকানে বয়গিরি, জাহাজের বাবুর্চির সহকারী, এমন সব কাজ তাকে করতে হয়েছে পেটের তাগিদে। মন দিয়ে কাজ করতেন, কিন্তু কোথাও মালিকের কাছ থেকে ভালো ব্যবহার পাননি তিনি। সবখানেই তাকে সহ্য করতে হয়েছে অমানবিক নির্যাতন আর অত্যাচার। অনেক খাটাখাটনির পরও প্রায়ই তাকে না খেয়ে থাকতে হতো, শীতের রাতে গরম কাপড় জুটত না শরীরে। এমন কষ্টের জীবন তোমার হলে কী করতে তুমি?
বিদ্যালয়ের শিক্ষা তিনি না পেলেও জীবনকে খুব কাছ থেকে নিবিড় করে দেখার ও শেখার সুযোগ হয়েছিল তার। আর সেই বাস্তব শিক্ষাই তাকে ‘মা’ এর মতো কালজয়ী উপন্যাস সৃষ্টিতে সাহায্য করেছিল।
তখন ভলগা নদীতে চলাচলকারী এক জাহাজের বাবুর্চির সহকারী হিসেবে কাজ করেন ম্যাক্সিম গোর্কি। এসময় কাজের ফাঁকে প্রচুর বই পড়ার সুযোগ হয় তার। সেই বই পড়াই তাকে পরবর্তীতে বড় মাপের লেখক হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছিল। যদি তুমি বড় কোন লেখক হতে চাও, তবে অবশ্যই তোমাকে প্রচুর বই পড়তে হবে। বই পড়তে ভালো লাগে তো তোমার?
স্কুলে গিয়ে তোমরা কী করো? একটা ছেলে স্কুলে গিয়ে প্রায়ই তার শিক্ষকদেরকে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে অতিষ্ঠ করে তুলতো। যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে শিক্ষকরা ছেলেটির মায়ের কাছে নালিশ জানালো যে ছেলের মাথায় গণ্ডগোল আছে, মানে পাগল। কিন্তু মা জানতেন এটা পাগলামো নয়। সবকিছু জানার অসীম আগ্রহ থেকেই তার ছেলে এমনটা করে। সেই ছেলেটির নাম টমাস আলভা এডিসন, বড় হয়ে যে হলো পৃথিবী বিখ্যাত বিজ্ঞানী।
এডিসন সারা জীবনে প্রায় এগারশোটিরও বেশি জিনিস আবিষ্কার করেছেন, যা আর কোনো বিজ্ঞানীর পক্ষে এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।
তোমার বয়স কতো? এডিসনের বয়স তখন মাত্র দশ বছর। সেই বয়সেই তার আত্মমর্যাদা ছিলো বেশ টনটনে। তিনি স্বাধীনভাবে চলতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাইলেন। বাড়ির পাশে পতিত জমিতে শুরু করলেন শাক-সবজির চাষ। বড় একটা খাঁচা কিনে তাতে পুষতে থাকলেন কয়েকটা হাঁস মুরগি। শাক-সবজি আর হাঁস-মুরগির ডিম বেচে তিনি কিছু টাকা জমালেন, যেন এটা ওটা কেনার জন্য বাবা-মার কাছে টাকা চাইতে না হয়। তুমিও তো চাইলে এমন কিছু করতে পারো যাতে চকোলেট কেনার জন্য, খেলনা কেনার জন্য কারও কাছে হাত পাততে না হয়। এডিসনের বাবা যথেষ্ট বড়লোক ছিলেন। তবু বালক এডিসন বাবার অনুমতি নিয়ে রেলগাড়িতে সংবাদপত্র বিক্রি ও খাবার বিক্রির চাকরি নিলেন। উদ্দেশ্য নিজের পায়ে দাঁড়ানো, নিজের শক্তির প্রতি আত্মবিশ্বাস তৈরি করা।
এডিসনের আরেকটি গুণ ছিলো, ধৈর্য ধরার ক্ষমতা। বৈদ্যুতিক বাল্ব আবিষ্কার করতে গিয়ে তিনি প্রায় একশো বারের মতো ব্যর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু চেষ্টা ছেড়ে দেননি। সবশেষে তিনি সফল হয়েছিলেন বলেই আজ তোমরা ইলেকট্রনিক লাইটের নিচে বসে পড়াশোনা করতে পারো। তুমি বারবার ব্যর্থ হতে থাকলে কতবার চেষ্টা করতে? মনে রাখবে, ব্যর্থ হলে অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পায়।

Share.

মন্তব্য করুন