বর্ষা না যেতেই আকাশে মেঘগুলো সাদা হয়ে ওঠে। সাদা মানে অনেক সাদা। একদম সাদা। ঠিক যেনো শিমুল তুলো। যেনো তুলোর কম্বল। আকাশের সারা গায়ে ছড়িয়ে থাকে মেঘগুলো। ছড়িয়ে থাকে দক্ষিণ ও উত্তর আকাশে। যখন বৃষ্টি হয়, কালো হয়ে ওঠে মেঘ। কালো মেঘ থেকে বৃষ্টি নামে। বৃষ্টি হয়ে গেলে আকাশ পরিষ্কার। পরিষ্কার আকাশেই উড়তে থাকে সাদা সাদা মেঘ। উড়তে থাকে মেঘের ডানা। উত্তর থেকে দক্ষিণে। কিংবা দক্ষিণ থেকে উত্তরে উড়ে বেড়ায়। ঘুরে বেড়ায়। ছুটে বেড়ায়। বাতাস নিয়ে যায় দূরে। আরও দূরে। কিংবা বহুদূরে। হয় তো কোনো জনপদে। হয় তো কোনো সবুজ অঞ্চলে। হয় তো কোনো পাহাড়ের দিকে।

পাহাড়ের উপরে মেঘগুলো অন্যরকম। যেনো পাহাড়ের চূড়ায় বসা। যেনো পাহাড়ের গায়ে জড়ানো সাদা কম্বল। যে কম্বলটি তুলা দিয়ে বানানো। আহা কি সুন্দর দেখায়। কি আনন্দময় দেখতে! ঠিক যাকে বলে মেঘের ঝাঁপি। পাহাড়ের পাঁজর জুড়ে সবুজ বৃক্ষ। ভীষণ সবুজ বৃক্ষগুলো। মেঘগুলো যেনো বৃক্ষকে জড়িয়ে রাখে। যেনো বৃক্ষের শরীর ঢেকে জমে থাকে। তখনও ছোট মেঘগুলো উড়ে যায়। বড় মেঘেরা খুব করে চুপচাপ। পাহাড় যেমন দৃঢ়। তেমনই পাহাড়ের গা ঘেঁষা মেঘেরাও স্থির। যখন কালো হয়ে ওঠে তখনই পাখিরা ছুটতে থাকে। পাখি বুঝতে পারে বৃষ্টি নামবে।

সাদা মেঘের কোল ঘেঁষে উড়ে যায় পাখি। কখনও একাকী। কখনও দু’চারটি। কখনও ঝাঁকে ঝাঁকে। সাদা মেঘের নিচে পাখির কালো ডানা। কি অদ্ভুত চিত্র! কি চমৎকার দৃশ্য! কি আনন্দময় নকশা। পাখির বিশাল ঝাঁক যখন ডানা ছড়ায়, আকাশ কালো হয়ে ওঠে। সাদা মেঘের বুক কালো পাখির উড়ালে বদলে যায় আকাশ।
এসব দৃশ্য দেখে মানুষ আনন্দিত হয়। অবাক হয় কেউ কেউ। দেখে শরতের আকাশ কেমন সুন্দর! কেমন শিল্পিত! তবে খুব কম মানুষ এসব দেখে। দেখে তারা যাদের অন্তর্চোখ আছে। যারা কোনো বিষয়কে খুব গভীর থেকে দেখে। ভাবে। ভেবে বলে ওঠে আহা কি সুন্দর আকাশ। কি সুন্দর আকাশের মেঘ। মেঘের ফাঁকে ফাঁকে ঘন নীল। চোখ জুড়িয়ে যায়। মন ভরে যায়। বারবার দেখতে ইচ্ছে করে। দেখেও। দেখতে দেখতে চোখ ক্লান্ত হয়ে ওঠে। তবু দেখার শেষ হয় না! তবুও তৃষ্ণা মেটে না।

শরতের আকাশ সত্যিই অনন্য সুন্দর! অন্যরকম রূপ তার। যেনো খানিক বেশি নীল! যেনো গভীর নীল। মনে হয় নতুন নীলের আয়োজন। মনে হয় আকাশ নিজেকে সাজিয়ে তোলে নীলের পোশাকে। কি যে আশ্চর্য সুন্দর! কার না ভালো লাগে এমন আকাশ। কার না চেয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।
প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা যাদের আছে তারা দেখে। খুব করে দেখে। আনন্দের সাথে দেখে। দেখে দেখে মন ভরায়। নয়ন জুড়ায়!। কতরকম স্বপ্ন বোনে তারা। স্বপ্নগুলো পাখির মতো উড়তে থাকে। উড়তে উড়তে ছুটতে থাকে। ছুটতে ছুটতে দূরে যায়। আকাশ থেকে আকাশে। দক্ষিণ দিগন্ত থেকে উত্তর দিগন্তে।
শরৎ আসে আমাদের কাছে। আমাদের বাংলাদেশে। আমাদের এই সবুজ মানচিত্রে।

এলেই শিশির ঝরে। ঝরে রাতভর। ঝরে ভোর বেলা। ঝরে সকালের আনন্দে। ঘাসের মাথায় ঝুলে থাকে শিশির ফোঁটা। কোমল রোদের আনন্দে জ্বলে ওঠে শিশির। দেখে মনে হয় মুক্তো জ্বলছে। ঘাসের শরীর ভিজে থাকে শিশিরের ফোঁটায়। মাথা থেকে মাটিতে পড়ে ফোঁটাগুলো। মাটিও ভিজে যায়। তরতাজা হয়ে ওঠে ঘাসের শরীর। কোথাও কোথাও ভেজা ঘাসে পড়ে থাকে শেফালি ফুল। আহা কি নয়নাভিরাম! কি মধুর দৃশ্য। ঘাসের ফাঁকে ফাঁকে কমলারঙ বোঁটার সাদা শেফালি। ফুলের ওপর পিঁপড়েরা হেঁটে যায় কখনো। কখনো ঝরা পাতা ঢেকে দেয় ফুলের শরীর।

শরতের সকাল মানে কোমল রোদের সোহাগ। নরম রোদের আগমন। না শীত। না গরম। খানিক ঝিরঝিরে হাওয়ার পরশ। আহা যেনো কোমল রুমালে গা বুলিয়ে যায়। যেনো আদর করে যায় হাওয়ার হাত। দিন বাড়তে থাকে। বাড়ে রোদের উষ্ণতা। বাড়লেও তাপ থাকে সহনীয়। যদিও শরৎ এখন বৃষ্টির কবলেই থাকে। বর্ষা যেনো কিছুটা দীর্ঘ হয়ে ওঠে। আবার আষাঢ় শ্রাবণে কম বৃষ্টি হয়। সে বৃষ্টিই যেনো হয় শরতে।

শরতের আনন্দময় ফুল হলো কাশফুল। বিশাল মাঠে ফোটে কাশফুল। ফোটে নদীর বুকে। তবে সব নদী নয়। যে নদী গ্রামের বুক চিরে বয়ে যায়। দু’পাশে সবুজ সমারোহ। বৃক্ষ। গাছালি আর লতাপাতার জমজমাট। এমন নদীর পারে খোলা জায়গায় ফোটে কাশফুল। কাশফুল কোমল খুব। দূর থেকে মনে হয় আকাশের সাদা মেঘ মাঠে নেমে দুলছে। বাতাস এসে ঢেউ তোলে কাশবনে। কাশবন চোখের সুন্দর! মনের সুন্দর! অনুভবের সুন্দর জাগায়। মানুষ ছুটে যায় কাশবনে। নরম কাশফুল ধরে দেখে। একসাথে একদলা ফুল জমিয়ে রাখে হাতে। ফুলের ভেতর দাঁড়িয়ে ছবি তোলে আনন্দে। ফুল টেনে সামনে মেলে ধরে। ফুলের ওপর মুখ বাড়িয়ে ছবি তোলে। আহা সেকি আনন্দ! সে কি খুশির ঝিলিক। সাথে সাথে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে ছবির কাশবন। কিংবা কাশবনের ছবি। লাইক কমেট আর নানারকম মন্তব্যে জমজমাট।

শরতের সন্ধ্যাও ভীষণ মনমাতানো। সাদা মেঘের ছিটানি সারা আকাশে। মেঘের ছিটার ভেতর সূর্যের ঝিলিক। ধীরে ধীরে সাদা মেঘ লাল হতে থাকে। আকাশ তখন রক্তজবার পাপড়িবাটা প্রান্তর। কিংবা লাল গোলাপের রঙ মাখা রঙ। লালিমা ছড়াতে ছড়াতে ডুবে যায় সূর্যের মুখ। এভাবে শরৎ আনন্দ নিয়ে আসে আমাদের বাংলাদেশে। এভাবে আনন্দময় হয় বাংলাদেশের শরৎ।

Share.

মন্তব্য করুন