মানুষের ইচ্ছের শেষ থাকে না। একটি ইচ্ছে পূর্ণ হতে না হতে আরেকটি উঁকি দেয় মনের আকাশে। জন্ম নেয় নতুন স্বপ্ন। সে স্বপ্ন সত্য করার পেছনে লেগে যায় মানুষ।
এমন ইচ্ছে ও স্বপ্ন থেকেই কত কি আবিষ্কার করলো মানুষ। পাখি উড়তে দেখে মানুষের সাধ জাগলো আকাশে ওড়ার! এমন ইচ্ছে থেকেই এক সময় আবিষ্কার হয়ে গেলো উড়োজাহাজ। উড়োজাহাজ থেকে বিমান। রকেট। তারপর যুদ্ধবিমান। এভাবে মনুষ্যবিহীন যান এবং গোয়েন্দা বিমান আবিষ্কৃত হয়ে যায়। এখন তো মঙ্গলেও যান পাঠিয়েছে।

মানুষের অদম্য ইচ্ছা থেকেই আবিষ্কার হলো কম্পিউটারের মতো বিস্ময়কর যন্ত্র! কম্পিউটার এখন জগতের সবকিছুকে নিজের পেটের ভেতর গুছিয়ে নিয়েছে। জগতের সবকিছু এখন কম্পিউটার বাস্তব করে তুলেছে।
একসময় মানুষ তার প্রিয়জনের সাথে কথা বলার মাধ্যম হিসেবে চিঠি ব্যবহার করতো। কাজের কথায় হয় যেতে হতো। অথবা চিঠি লিখতে হতো। এ অবস্থায় মানুষ ভাবলো এমন কি ব্যবস্থা আবিষ্কার করা যায়, যার মাধ্যমে সরাসরি যোগাযোগ করা যায়।

মনের কথা বলা যায় সহজে। বলা কাজের কথাও বলা যায় দ্রুত। এ চিন্তা থেকেই আবিষ্কার হয়ে গেলো টেলিফোন। আবিষ্কার করলেন মার্কিন বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল। সালটি ১৮৭৬।
এ আবিষ্কারে মহাখুশি হয়ে গেলো বিশ্ববাসী। খুশি হওয়ার মতোই ঘটনা। একজন মানুষ তার প্রয়োজনে কাউকে চিঠি লিখলো। যদি তিনি আমেরিকা থাকেন তো কত দিনে পাবেন। পেয়ে আবার তিনি জবাব দিলে সেটিই বা কত দিনে পৌঁছাবে!
এমন একটি অবস্থায় যখন একটি যন্ত্র কয়টি নম্বর ঘুরিয়ে সাথে সাথে কথা বলার সুযোগ তৈরি হলো, এটি কী যে আনন্দের সে কথা বলে বোঝানো যায় না। ঘরে ঘরে এ মোবাইলের সেট বসে গেলো। অফিসে আদালতে বসলো। একে নাম দেয়া হলো ল্যান্ডফোন। ল্যান্ডফোনের সংযোগে বেশ আয়োজন লাগে। সেট, তারসহ আনুষঙ্গিক অনেক বিষয় এবং সাথে খরচের পরিমাণও।
সেই যে কথা- মানুষের স্বপ্ন থেমে থাকে না। একটি হলে আরেকটি দেখতে থাকে। যা বাস্তব হয় তার চেয়ে আরও উন্নত কিছু। সে ভাবনার ধারাবাহিকতায় ফোন নিয়ে চললো গবেষণা। চিন্তা জাগলো মানুষের মনে তার ছাড়া ফোন আবিষ্কারের। রেডিও যদি তার ছাড়া শোনা যায় এবং তার ছাড়া যদি বেতার সঙ্কেত দেয়া যায় তো কেনো তার ছাড়া ফোন ব্যবহার করা যাবে না!

এমনই চিন্তা এবং গবেষণা থেকে এক সময় তৈরি হয়ে গেলো তারহীন ফোনসেট মোবাইল। সালটি ১৯৭৩। আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহরে হয়েছে এর প্রথম আবিষ্কার। এটি তৈরি করেছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মার্টিন কুপার। তাকেই বলা হয় মোবাইল ফোনের জনক। প্রথম তৈরি মোবাইল সেটটি ছিল ১০ ইঞ্চি লম্বা। দুই ইঞ্চি চওড়া এবং ৪ ইঞ্চি উঁচু। যন্ত্রটি ছিল বেশ ভারী। কিলোরও বেশি ছিলো ওজন। খুব অল্প সময়ের ক্ষমতা ছিলো ব্যাটারির। মাত্র ২০ মিনিট কথা বললেই তার ব্যাটারি শেষ হয়ে যেতো। সেই ফোন দেখে হয়তো লোকে হেসেছিল। হয় তো বলেছিলো এ কি আবিষ্কার! কিন্তু তখন কেউ কি ভেবেছিলো একসময় গোটা পৃথিবী ঢুকে পড়বে ছোট্ট একটি যন্ত্রের বুকে!
মাত্র কয় বছরের ব্যবধানে মোবাইল সেট ছোট হয়ে গেলো। স্লিম হয়ে গেলো তার শরীর। হালকা পাতলা গড়ন। হাতের মুঠোয় এঁটে যায়। পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট মোবাইল সেটের নাম টিনি টি-২। এটি তৈরি করেছে জাংকো কোম্পানি। কোম্পানিটি যুক্তরাজ্যভিত্তিক। এটি পকেটে রাখলে খুব অল্প জায়গা নেবে।
এসময় মোবাইল ফোন হয়ে উঠেছে অনেক বেশি নান্দনিক। অনেক সুন্দর এবং আকর্ষণীয়! যেখানে রয়েছে অনেক উন্নত মানের ক্যামেরা, সেন্সর, রেডিও, স্পিকার, গেমিং প্রোসেসর আরো অনেক কিছুই।
এক কথায় বলা চলে, ওয়ান ম্যান আর্মি।
আসল কথা লেগে থাকতে হয়। আবিষ্কারের নেশা থাকতে হয়। থাকতে হয় আরও আরও এগিয়ে যাবার স্বপ্ন। স্বপ্নই বড় করে তোলে মানুষকে। স্বপ্ন থেকেই তৈরি হয় নিত্য নতুন আবিষ্কার। যেমন হয়েছে আমাদের অতি প্রয়োজনীয় মোবাইল ফোন।

Share.

মন্তব্য করুন