আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে হোটেল বা রেস্তোরাঁর গুরুত্ব অপরিসীম। আর তাইতো দেশে দেশে গড়ে উঠছে চোখ ধাঁধানো হোটেল বা রেস্তোরাঁ। আমাদের এই পৃথিবীর মানুষেরা আমরা প্রতিনিয়ত রেস্তোরাঁগুলোতে উপস্থিত হই খাবার খাওয়ার জন্য। অন্যদিকে নানা রকম মজার মজার খাবার নিয়ে হাজির হচ্ছেন রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ। ফলে সেই মজার মজার খাবার সমৃদ্ধ রেস্তোরাঁগুলোতে মানুষ তাদের রসনা তৃপ্তির জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন প্রতিদিন। বন্ধুরা, একটু ভেবে দেখতো, ঐ যে দূরের মহাকাশ! সেখানে যদি কেউ পৃথিবীর মতো করে রেস্তোরাঁ তৈরির পরিকল্পনা করে, তবে কেমন হবে? ভাবতেই বিস্ময়ে মনটা টগবগ করছে তাই না? ব্যাপারটি আসলেই তাই। প্রযুক্তির বদৌলতে আমরা এমন সব নতুন বিষয়ের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি যা সাধারণ মানুষ কখনও হয়তো কল্পনাও করেনি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় দৈনন্দিন জীবনে আধুনিকতা নতুনত্ব আনছে প্রতিনিয়ত। তারই ধারাবাহিকতায় এবার মহাকাশ পর্যটন ক্রমেই আলোচনার বিষয় হয়ে উঠছে। এবারও তেমনই এক ঘোষণার কথা শোনানো হচ্ছে পৃথিবীবাসীকে।

সামনে নাকি পৃথিবীর পরিসীমার বাইরে মহাকাশে চলছে বিলাসবহুল রেস্তোরাঁ তৈরির কাজ। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী ক্যালিফোর্নিয়ার সংস্থা গেটওয়ে ফাউন্ডেশন ২০১৯ সালে প্রথম এই হোটেলটির নকশা উন্মোচন করে। প্রাথমিকভাবে রেস্তোরাঁটির নাম রাখা হয়েছিল ‘দ্য ভন ব্রাউন স্টেশন’। তবে এর নতুন নামকরণ করা হয়েছে ‘ভয়েজার স্টেশন’। এটি নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে নির্মাণ সংস্থা অরবিটাল অ্যাসেম্বলি করপোরেশন। এটি গেটওয়ে ফাউন্ডেশনের প্রাক্তন পাইলট জন ব্লিনকো কর্তৃক পরিচালিত সংস্থা। অন্যান্য রেস্তোরাঁর সঙ্গে এর দৃশ্যগত তেমন পার্থক্য না থাকলেও এই রেস্তোরাঁতে বেশ কিছু ‘আউট অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’ অনুষঙ্গ থাকবে। রেস্তোরাঁটিতে থাকবে ২৪টি মডিউল যাদের ঘূর্ণনে কৃত্রিম অভিকর্ষজ বল তৈরি হবে। ফলে পৃথিবীর মতোই সেখানে ঘুরে কিংবা ভেসে বেড়ানো সম্ভব হবে। সবার জন্য মহাকাশ ভ্রমণের সুযোগ করে দেওয়ার লক্ষ্য তাদের। মহাকাশে রেস্তোরাঁটি চালুর পরপরই কম খরচে সেখানে সবাইকে থাকার সুযোগ দেওয়া হবে। দুই সপ্তাহের ভ্রমণে প্রায় ১০০ কোটি মার্কিন ডলার খরচের বিষয়টি অনেকের কল্পনার বাইরে। তবে ওরিয়ন স্প্যানের দাবি, সত্যিকারের মহাকাশচারীর অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে এতে। মহাকাশ বিজ্ঞানী বার্গনার বলেন, মহাকাশ স্টেশনে যেতে নভোচারীদের ২৪ মাসের বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু তারা একে তিন মাসে নামিয়ে এনেছেন। ১২ দিনের এ রোমাঞ্চকর যাত্রা পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে ২০০ মাইল ওপরে লো আর্থ অরবিটে (এলইপি) উড়বেন। সেখান থেকে পৃথিবীর চমৎকার দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন সবাই।

এ রেস্তোরাঁটি পৃথিবীকে প্রতি ৩০ মিনিটে প্রদক্ষিণ করবে। অর্থাৎ রেস্তোরাঁর অতিথিরা প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ১৬ বার সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখতে পাবেন। রেস্তোরাঁয় বসে অতিথিরা খাবার উৎপাদনের মতো গবেষণায় অংশ নিতে পারবেন। এসব খাবার তারা উপহার হিসেবে পৃথিবীতে সঙ্গে নিতে পারবেন। উচ্চগতির ওয়্যারলেস ইন্টারনেট সিস্টেম থাকবে সেখানে। সরাসরি পৃথিবীতে লাইভ ভিডিও চ্যাট করা যাবে। এছাড়া পৃথিবীতে ফেরার পর তাদের বিশেষ সম্মান জানানো হবে। ভরশূন্য অনুভূতির মজা নেওয়া ছাড়াও অতিথিরা মুক্তভাবে রেস্তোরাঁর ভেতর ভেসে থেকে উত্তর ও দক্ষিণ মেরু প্রভার দৃশ্য দেখতে পাবেন। তবে আয়োজকদের আশাবাদ ২০২৬এ এই মহাকাশ রেস্তোরাঁটির নির্মাণকাজ শুরু হবে এবং পরের বছরের ভেতরেই মহাকাশে অবকাশ যাপনের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেবে। উল্লেখ্য, মহাকাশের এই রেস্তোরাঁটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ওপরের স্তরে ভাসবে। এটি অনেকটা নাগরদোলার মতো চক্রাকার দেখতে হবে। ২০২৭ সালের মধ্যে অতিথিদের জন্য বিলাসবহুল এই রেস্তোরাঁটি চালু করে দেওয়ার ভাবনা রয়েছে বলেও জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।

Share.

মন্তব্য করুন